পবিত্র কুরআনুল কারিম ও হাদিস শরিফে বজ্রপাতের কারণ ও প্রতিকার নিয়ে অনেক দিকনির্দেশনা রয়েছে। বাংলা শব্দ বজ্রর আরবি প্রতিশব্দ রাদ। যে নামে পবিত্র কুরআনুল কারিমের ১৩নং সূরাটির নামকরণ করা হয়েছে। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, বজ্রপাত আল্লাহতায়ালার শক্তির নিদর্শনগুলোর একটি, যা তিনি তাঁর প্রিয় বান্দাদের সাবধান করার জন্য রেখেছেন। তিনি চাইলেই যে কাউকে এর মাধ্যমে যে কোনো সময় শাস্তি দিতে পারেন। যদিও সব ক্ষেত্রে পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা এমনটি করেন না। যা আল্লাহতায়ালা নিজেই পবিত্র কুরআনে কারিমে ইরশাদ করেছেন, ‘বজ্র তাঁরই তাসবিহ ও হামদ জ্ঞাপন করে এবং তাঁর ভয়ে ফেরেশতারাও (তাসবিহরত রয়েছে)।
তিনিই গর্জমান বিজলি পাঠান, তারপর যার ওপর ইচ্ছা একে বিপদরূপে পতিত করেন। আর তাদের (অর্থাৎ কাফিরদের) অবস্থা এই যে, তারা আল্লাহ সম্পর্কেই তর্কবিতর্ক করছে, অথচ তাঁর শক্তি অতি প্রচণ্ড’ (সূরা রা’দ, আয়াত নং : ১৩)।
বজ্রপাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রিয় নবী (সা.) তাঁর উম্মতদের বিভিন্ন দোয়া শিখিয়েছেন, প্রতিকারের উপায় দেখিয়েছেন, বজ্রপাত খোদায়ী দুর্যোগ, এর থেকে বেঁচে থাকার কিছু বাহ্যিক করণীয়ও রয়েছে, যা ইদানীং বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। তবে হাদিসের পাতায় চোখ বুলালে দেখা যায়, বজ্রপাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রিয় নবী (সা.) তাঁর উম্মতদের বিভিন্ন দোয়া শিখিয়েছেন। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) তার বাবা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (সা.) যখন বজ্রের শব্দ শুনতেন তখন বলতেন, ‘আল্লাহুম্মা লা তাকতুলনা বিগজাবিকা ওয়ালা তুহলিকনা বিআজাবিকা ওয়া আ-ফিনা কবলা জালিকা।’ (তিরমিজি : ৩৪৫০)
অন্য রেওয়ায়েতে আছে, হজরত ইবনে আবি জাকারিয়া থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি বজ্রের আওয়াজ শোনে এ দোয়া পড়বে, ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি’, সে বজ্রে আঘাতপ্রাপ্ত হবে না। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ২৯২১৩।) তবে আমরা যদি সব ধরনের ঘৃণ্য কাজ থেকে সরে এসে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে তাওবা করতে পারি, তাহলে হয়তো এ ধরনের দুর্যোগ থেকে আল্লাহ আমাদের রক্ষা করবেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, তোমাদের প্রবল পরাক্রমশালী প্রভু বলেছেন, যদি আমার বান্দারা আমার বিধান মেনে চলত, তবে আমি তাদের রাতের বেলায় বৃষ্টি দিতাম, সকালবেলায় সূর্য দিতাম এবং কখনো তাদের বজ্রপাতের আওয়াজ শুনাতাম না। (মুসনাদে আহমদ : ৮৭০৮)।
বজ্রপাতে মৃত্যুকে কেউ কেউ ঠাডা পড়া মৃত্যু বা অভিশাপের মৃত্যুও বলে থাকেন যা একটি জঘন্যতম অপরাধ, কেননা পবিত্র কুরআনুল কারিম বা হাদিস গ্রন্থে কোথাও বজ্রপাতে মৃত্যুকে অপমৃত্যু বা আল্লাহর গজবের মৃত্যু বলা হয়নি সুতরাং যারা বজ্রপাতে মৃত্যুকে শহীদী মৃত্যু বা অভিশাপের মৃত্যু বলে আখ্যায়িত করছেন, এটি সঠিক নয় এবং এটা নিছক কুসংস্কার মাত্র।
কখনো কখনো শোনা যায়, বজ্রপাতে নিহত ব্যক্তির লাশ চুরি হয়ে যায়। বস্তুত এখানে যেমন দুটি গুজব কাজ করছে, তেমনি লাশ চুরি একটি ভয়াবহ অন্যায়ও। প্রথমত মনে করা হয় যে, বজ্রপাতে নিহত ব্যক্তির শরীর প্রাকৃতিক চুম্বক বা মূল্যবান ধাতুতে পরিণত হয় অপরদিকে এ জাতীয় মৃত ব্যক্তিদের কিছু হাড় দিয়ে বিশেষ প্রক্রিয়ায় সাধনা করলে অলৌকিক ক্ষমতা অর্জন করা যায় বা জাদু বিদ্যা করা যায়। যার কোনোটারই কোনো সত্যতা নেই। এবং যার পুরোটাই অপ্রমাণিত। আরও প্রচারিত আছে যে, যেখানে বজ্রপাত হয় তার আশপাশে মূল্যবান খনিজ টুকরা পাওয়া যায়। এটাও শতভাগ ভিত্তিহীন। দ্বিতীয়ত, মৃত মানুষ জীবিত ব্যক্তির মতো সমান সম্মানের, কেননা ইসলামে একজন জীবিত ব্যক্তিকে যেমন অসম্মান করা নিষেধ তেমনি মৃত ব্যক্তির সঙ্গেও কোনো প্রকারের মর্যাদাহানিকর আচরণ করা হারাম।
লেখক : গবেষক, কলামিস্ট
প্রিন্ট
																			
																নিজস্ব সংবাদ :								 




















