নিজের ভুল শুধরে সমাজের জন্য কাজ করার এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন সিলেটের তরুণ সমাজসেবক, সাংবাদিক ও ছড়াকার সৈয়দ মুহিবু রহমান মিছলু। ২০১৮ সালের ২৭ আগস্ট ধূমপানের বিষাক্ত নেশা চিরতরে ত্যাগ করেন তিনি। তবে সেখানেই শেষ নয়, তিনি একটি মহৎ অঙ্গীকার করেন: ধূমপানে যে অর্থ ব্যয় করতেন, সেই টাকায় তিনি সমাজের কল্যাণে বৃক্ষরোপণ করবেন। পরিবেশের ক্ষতি এবং স্বাস্থ্যের ঝুঁকি তাঁকে গভীরভাবে ভাবিয়ে তুলেছিল, আর সেই ভাবনা থেকেই জন্ম নেয় এই ‘নীরব বিপ্লব’।
এরপর থেকেই মিছলু তাঁর প্রতিদিনের আয়ের একটি অংশ সঞ্চয় করে চলেছেন। সেই সঞ্চিত অর্থ দিয়ে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে তিনি সিলেটের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফলজ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারা রোপণ করে আসছেন।
এই মহৎ ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবে, বুধবার (২৯ অক্টোবর ২০২৫) দুপুর ১২টার দিকে তিনি জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুরের শিকারখা সাকসেল গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে এক বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সভাপতি সাংবাদিক গোলজার আহমদ হেলাল। এ সময় প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও পরিচালক হেলাল উদ্দিন আহমদ সহ শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা সৈয়দ মুহিবু রহমান মিছলুর এই উদ্যোগকে ‘নিরব বিপ্লব’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তাঁরা জোর দিয়ে বলেন “একজন মানুষ নিজের ভুল সংশোধন করে যখন সমাজের জন্য কাজ শুরু করেন, তখন তা অন্যদের জন্য প্রেরণার উৎস হয়ে ওঠে। ধূমপান ত্যাগ করে মিছলু যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তা কেবল পরিবেশ রক্ষায় নয়, মানবিক মূল্যবোধেরও এক উজ্জ্বল প্রতিফলন। “বক্তারা তরুণ সমাজক মিছলুর এই সবুজ পথে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরাও ছিল উচ্ছ্বসিত। গাছের চারা হাতে নিয়ে হাসিমুখে তারা জানায়, “আমরা সবাই চাই আমাদের স্কুল সবুজে ঘেরা থাকুক। মিছলু ভাইয়ের মতো আমরাও প্রতিজ্ঞা করছি, গাছ লাগাব আর প্রকৃতিকে ভালোবাসব।”
নিজের উদ্যোগে বছরের পর বছর ধরে এই কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া সৈয়দ মুহিবু রহমান মিছলু জানান, তিনি বিশ্বাস করেন ছোট একটি ভালো কাজও যদি নিয়মিত করা যায়, তাহলে তা একসময় সমাজে বড় পরিবর্তন আনতে পারে।
“গাছ শুধু পরিবেশ রক্ষা করে না, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জীবনও বাঁচায়।”
পরিবেশ সচেতনতা, মানবিকতা ও নৈতিক দায়িত্ববোধের এক অনন্য মেলবন্ধন গড়ে তুলেছেন সৈয়দ মুহিবু রহমান মিছলু। তাঁর এই উদ্যোগ প্রমাণ করে প্রকৃতি ও মানুষের কল্যাণে আন্তরিক হলে, একজন মানুষও পরিবর্তনের সূচনা ঘটাতে পারে।
মিছলুর এই বার্তাই আজ অনুপ্রাণিত করছে, ধূমপান নয়, গাছ লাগানোই হোক অভ্যাস। ধোঁয়া নয়, সবুজেই বাঁচুক পৃথিবী।
প্রিন্ট
নিজস্ব প্রতিবেদক: 



















