ঢাকা ০২:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ৩০ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo শক্তিশালী পাসপোর্ট সূচকে শীর্ষ ১০ থেকে বাদ পড়ল যুক্তরাষ্ট্র Logo আশুলিয়ায় যানজট, মাদক ও সন্ত্রাস নিরসনে সুশীল সমাজের আলোচনা সভা Logo মিরপুর অগ্নিকাণ্ডে এখনো নিখোঁজ ১৩ জন Logo চাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু Logo ইসরায়েলকে সহায়তার অভিযোগে ৩৩ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করলো হামাস Logo ভালবাসার বন্ধনের বিরুদ্ধে মিথ্যে অপহরণ মামলা ছেলের বাবা কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে আবেদন Logo কালিয়াকৈরে জমির পাওয়ার অফ এ্যাটর্নি দলিল জাল জালিয়াতির অভিযোগ Logo ভৈরব জেলা বাস্তবায়নের দাবীতে মানব বন্ধন Logo আগামীর বাংলাদেশ হবে ইসলামের বাংলাদেশ-আল্লামা মামুনুল হক। Logo ভাঙ্গুড়ায় তারেক রহমানের সাক্ষাৎকার প্রদর্শনী, নেতাকর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস

ফিচার রিপোর্ট নামিদামি সুনামধন্য আড়ং-এর ডেইলি ফার্ম এর ডিলারশিপ নিয়ে অনায়াসে করছে জামানত বানিজ্য, টাকা দিলেও সিলিংয়ে ঝুলছে শাকিলের লাশ

📸 তথ্য ও ছবি: শাহিন

পল্লবী থানার ঝিলপাড় এলাকায় প্রতিদিন ভোরেই ঘুম ভাঙে একদল ভ্যানচালকের। দেশীয় পণ্য আড়ং দুধের ভ্যানগুলো ভর্তি হয় দুধে, আর সেই ভ্যানগুলো টেনে নিয়ে শহরের আনাচে-কানাচে দোকানে দোকানে পৌঁছে দেন শ্রমজীবী এই মানুষগুলো। বেতন সামান্য, কাজ ক্লান্তিকর। তবুও তারা টিকে থাকেন—কারণ, চাকরিটুকুই তাদের বেঁচে থাকার একমাত্র ভরসা। কিন্তু এই চাকরি টিকিয়ে রাখার জন্য শুধু ঘাম ঝরানোই যথেষ্ট নয়। দিতে হয় মোটা অঙ্কের জামানত—যেটা শুরু হয় ২০ হাজার থেকে, তারপর ৫০ হাজার, পরে আরও বেড়ে দাঁড়ায় এক লক্ষ টাকায়। ভ্যানচালক শাকিলও এই বাস্তবতার শিকার হন।

এক বছর আগে আড়ং দুধের কোম্পানিতে ভ্যানচালক হিসেবে চাকরি পান শাকিল। প্রথমেই তার কাছ থেকে জামানত হিসেবে নেওয়া হয় ২০ হাজার টাকা। চাকরির এক বছর পূর্ণ হতেই তাকে দেওয়া হয় বড় ভ্যান। বড় ভ্যান মানেই বড় বোঝা—শুধু দুধ বহনের নয়, জামানতেরও। এবার দাবি করা হলো ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু দিন আনে দিন খায় শাকিল, তার পক্ষে এই অঙ্ক জোগাড় করা ছিল পাহাড়সম বোঝা। প্রতিদিন সকালে কাজে যেতেন, কিন্তু ম্যানেজারের চাপ তাকে মানসিকভাবে ভেঙে দিচ্ছিল। ১৬ আগস্ট ভোরে কাজের উদ্দেশ্যে বের হন শাকিল। দুপুরের পর, আড়ং দুধ ফ্যাক্টরির ভেতরেই তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরিবার ও প্রতিবেশীদের দাবি—এটি আত্মহত্যা নয়, বরং পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।

শাকিলের মা ও বোন ভেঙে পড়েছেন। তাদের দাবি, “ছেলেটা সংসারের হাল ধরেছিল। বোনের বিয়ের দেনা শোধ করলো কষ্ট করে। এমন কোন কারণই ছিল না, যাতে সে আত্মহত্যা করবে। জামানতের টাকা দিতে না পারার কারণেই তাকে মেরে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।” ৭ নম্বর ঝিলপাড় বস্তির প্রতিটি ঘরে ঘরে এখন শুধু একটাই আলোচনা—শাকিলের মৃত্যু। প্রতিবেশীরাও বলছেন, “এটা আত্মহত্যা নয়, এটা চাপ সৃষ্টি করে হত্যার ঘটনা।” আড়ং দুধ ফ্যাক্টরির এই জামানত বাণিজ্য আসলে কীসের প্রতিফলন? দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষদের রক্ত-ঘামে উপার্জিত টাকা কেড়ে নেওয়া হয় এক প্রকার চাকরি টিকিয়ে রাখার শর্ত হিসেবে। তারা চাকরির নিরাপত্তার জন্যই নিজের জীবন পর্যন্ত বাজি রাখেন। আর শাকিলের মৃত্যু যেন সেই অন্যায়ের নির্মম প্রমাণ।

শাকিলের মরদেহ বর্তমানে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে। এখনো মামলা হয়নি। তবে পরিবারের দাবি—তারা হত্যা মামলা করবেন আড়ং কোম্পানি এবং সংশ্লিষ্ট ম্যানেজারের বিরুদ্ধে। মামলা দায়েরের পরই হবে দাফন।

এখন প্রশ্ন—কতদিন এই জামানত বাণিজ্যের শিকার হবেন দরিদ্র শ্রমিকরা? আর কত শাকিলের লাশ ঝুলবে সিলিংয়ে?


প্রিন্ট
ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

শক্তিশালী পাসপোর্ট সূচকে শীর্ষ ১০ থেকে বাদ পড়ল যুক্তরাষ্ট্র

ফিচার রিপোর্ট নামিদামি সুনামধন্য আড়ং-এর ডেইলি ফার্ম এর ডিলারশিপ নিয়ে অনায়াসে করছে জামানত বানিজ্য, টাকা দিলেও সিলিংয়ে ঝুলছে শাকিলের লাশ

আপডেট সময় ০৩:০১:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫

📸 তথ্য ও ছবি: শাহিন

পল্লবী থানার ঝিলপাড় এলাকায় প্রতিদিন ভোরেই ঘুম ভাঙে একদল ভ্যানচালকের। দেশীয় পণ্য আড়ং দুধের ভ্যানগুলো ভর্তি হয় দুধে, আর সেই ভ্যানগুলো টেনে নিয়ে শহরের আনাচে-কানাচে দোকানে দোকানে পৌঁছে দেন শ্রমজীবী এই মানুষগুলো। বেতন সামান্য, কাজ ক্লান্তিকর। তবুও তারা টিকে থাকেন—কারণ, চাকরিটুকুই তাদের বেঁচে থাকার একমাত্র ভরসা। কিন্তু এই চাকরি টিকিয়ে রাখার জন্য শুধু ঘাম ঝরানোই যথেষ্ট নয়। দিতে হয় মোটা অঙ্কের জামানত—যেটা শুরু হয় ২০ হাজার থেকে, তারপর ৫০ হাজার, পরে আরও বেড়ে দাঁড়ায় এক লক্ষ টাকায়। ভ্যানচালক শাকিলও এই বাস্তবতার শিকার হন।

এক বছর আগে আড়ং দুধের কোম্পানিতে ভ্যানচালক হিসেবে চাকরি পান শাকিল। প্রথমেই তার কাছ থেকে জামানত হিসেবে নেওয়া হয় ২০ হাজার টাকা। চাকরির এক বছর পূর্ণ হতেই তাকে দেওয়া হয় বড় ভ্যান। বড় ভ্যান মানেই বড় বোঝা—শুধু দুধ বহনের নয়, জামানতেরও। এবার দাবি করা হলো ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু দিন আনে দিন খায় শাকিল, তার পক্ষে এই অঙ্ক জোগাড় করা ছিল পাহাড়সম বোঝা। প্রতিদিন সকালে কাজে যেতেন, কিন্তু ম্যানেজারের চাপ তাকে মানসিকভাবে ভেঙে দিচ্ছিল। ১৬ আগস্ট ভোরে কাজের উদ্দেশ্যে বের হন শাকিল। দুপুরের পর, আড়ং দুধ ফ্যাক্টরির ভেতরেই তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরিবার ও প্রতিবেশীদের দাবি—এটি আত্মহত্যা নয়, বরং পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।

শাকিলের মা ও বোন ভেঙে পড়েছেন। তাদের দাবি, “ছেলেটা সংসারের হাল ধরেছিল। বোনের বিয়ের দেনা শোধ করলো কষ্ট করে। এমন কোন কারণই ছিল না, যাতে সে আত্মহত্যা করবে। জামানতের টাকা দিতে না পারার কারণেই তাকে মেরে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।” ৭ নম্বর ঝিলপাড় বস্তির প্রতিটি ঘরে ঘরে এখন শুধু একটাই আলোচনা—শাকিলের মৃত্যু। প্রতিবেশীরাও বলছেন, “এটা আত্মহত্যা নয়, এটা চাপ সৃষ্টি করে হত্যার ঘটনা।” আড়ং দুধ ফ্যাক্টরির এই জামানত বাণিজ্য আসলে কীসের প্রতিফলন? দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষদের রক্ত-ঘামে উপার্জিত টাকা কেড়ে নেওয়া হয় এক প্রকার চাকরি টিকিয়ে রাখার শর্ত হিসেবে। তারা চাকরির নিরাপত্তার জন্যই নিজের জীবন পর্যন্ত বাজি রাখেন। আর শাকিলের মৃত্যু যেন সেই অন্যায়ের নির্মম প্রমাণ।

শাকিলের মরদেহ বর্তমানে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে। এখনো মামলা হয়নি। তবে পরিবারের দাবি—তারা হত্যা মামলা করবেন আড়ং কোম্পানি এবং সংশ্লিষ্ট ম্যানেজারের বিরুদ্ধে। মামলা দায়েরের পরই হবে দাফন।

এখন প্রশ্ন—কতদিন এই জামানত বাণিজ্যের শিকার হবেন দরিদ্র শ্রমিকরা? আর কত শাকিলের লাশ ঝুলবে সিলিংয়ে?


প্রিন্ট