ঢাকা ১২:১৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ২০ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo হবিগঞ্জ-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী ডা: শাখায়াত হাসান জীবন আজমিরীগঞ্জ বানিয়াচংয়ে উচ্ছ্বাস Logo পটুয়াখালী-২ আসনে এনসিপি-জামায়াতে উচ্ছ্বাস, বিএনপিতে বিষাদ Logo ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন মাগুরা-২ আসনে ধানের শীষের কান্ডারী এ্যাড. নিতাই রায় চৌধুরী Logo ফরিদপুরে চেয়ারম্যানের শেল্টারে চায়না দুয়ারি জালের কারখানার রমরমা ব্যবসা, প্রশাসনের অভিযানে নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থা Logo রয়টার্সের প্রতিবেদন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সালিশের দ্বারস্থ হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে আদানি গ্রুপ Logo টানা কমছে দেশের রপ্তানি আয়, সামনে আরও কমার আশঙ্কা Logo বিএনপির ফাঁকা রাখা ৬৩ আসনে অগ্রাধিকার পাবেন যারা Logo আরপিও সংশোধন অধ্যাদেশ জারি জোট করলেও নিজ দলের প্রতীকেই ভোট করতে হবে Logo আশুলিয়া সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ৬ দলিল লেখক বরখাস্ত Logo সাভারে ট্রলি ভ্যানের ব্রেক ফেল আয়ারল্যান্ডের ওপরে এসে গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ

ফিচার রিপোর্ট নামিদামি সুনামধন্য আড়ং-এর ডেইলি ফার্ম এর ডিলারশিপ নিয়ে অনায়াসে করছে জামানত বানিজ্য, টাকা দিলেও সিলিংয়ে ঝুলছে শাকিলের লাশ

📸 তথ্য ও ছবি: শাহিন

পল্লবী থানার ঝিলপাড় এলাকায় প্রতিদিন ভোরেই ঘুম ভাঙে একদল ভ্যানচালকের। দেশীয় পণ্য আড়ং দুধের ভ্যানগুলো ভর্তি হয় দুধে, আর সেই ভ্যানগুলো টেনে নিয়ে শহরের আনাচে-কানাচে দোকানে দোকানে পৌঁছে দেন শ্রমজীবী এই মানুষগুলো। বেতন সামান্য, কাজ ক্লান্তিকর। তবুও তারা টিকে থাকেন—কারণ, চাকরিটুকুই তাদের বেঁচে থাকার একমাত্র ভরসা। কিন্তু এই চাকরি টিকিয়ে রাখার জন্য শুধু ঘাম ঝরানোই যথেষ্ট নয়। দিতে হয় মোটা অঙ্কের জামানত—যেটা শুরু হয় ২০ হাজার থেকে, তারপর ৫০ হাজার, পরে আরও বেড়ে দাঁড়ায় এক লক্ষ টাকায়। ভ্যানচালক শাকিলও এই বাস্তবতার শিকার হন।

এক বছর আগে আড়ং দুধের কোম্পানিতে ভ্যানচালক হিসেবে চাকরি পান শাকিল। প্রথমেই তার কাছ থেকে জামানত হিসেবে নেওয়া হয় ২০ হাজার টাকা। চাকরির এক বছর পূর্ণ হতেই তাকে দেওয়া হয় বড় ভ্যান। বড় ভ্যান মানেই বড় বোঝা—শুধু দুধ বহনের নয়, জামানতেরও। এবার দাবি করা হলো ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু দিন আনে দিন খায় শাকিল, তার পক্ষে এই অঙ্ক জোগাড় করা ছিল পাহাড়সম বোঝা। প্রতিদিন সকালে কাজে যেতেন, কিন্তু ম্যানেজারের চাপ তাকে মানসিকভাবে ভেঙে দিচ্ছিল। ১৬ আগস্ট ভোরে কাজের উদ্দেশ্যে বের হন শাকিল। দুপুরের পর, আড়ং দুধ ফ্যাক্টরির ভেতরেই তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরিবার ও প্রতিবেশীদের দাবি—এটি আত্মহত্যা নয়, বরং পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।

শাকিলের মা ও বোন ভেঙে পড়েছেন। তাদের দাবি, “ছেলেটা সংসারের হাল ধরেছিল। বোনের বিয়ের দেনা শোধ করলো কষ্ট করে। এমন কোন কারণই ছিল না, যাতে সে আত্মহত্যা করবে। জামানতের টাকা দিতে না পারার কারণেই তাকে মেরে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।” ৭ নম্বর ঝিলপাড় বস্তির প্রতিটি ঘরে ঘরে এখন শুধু একটাই আলোচনা—শাকিলের মৃত্যু। প্রতিবেশীরাও বলছেন, “এটা আত্মহত্যা নয়, এটা চাপ সৃষ্টি করে হত্যার ঘটনা।” আড়ং দুধ ফ্যাক্টরির এই জামানত বাণিজ্য আসলে কীসের প্রতিফলন? দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষদের রক্ত-ঘামে উপার্জিত টাকা কেড়ে নেওয়া হয় এক প্রকার চাকরি টিকিয়ে রাখার শর্ত হিসেবে। তারা চাকরির নিরাপত্তার জন্যই নিজের জীবন পর্যন্ত বাজি রাখেন। আর শাকিলের মৃত্যু যেন সেই অন্যায়ের নির্মম প্রমাণ।

শাকিলের মরদেহ বর্তমানে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে। এখনো মামলা হয়নি। তবে পরিবারের দাবি—তারা হত্যা মামলা করবেন আড়ং কোম্পানি এবং সংশ্লিষ্ট ম্যানেজারের বিরুদ্ধে। মামলা দায়েরের পরই হবে দাফন।

এখন প্রশ্ন—কতদিন এই জামানত বাণিজ্যের শিকার হবেন দরিদ্র শ্রমিকরা? আর কত শাকিলের লাশ ঝুলবে সিলিংয়ে?


প্রিন্ট
ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

হবিগঞ্জ-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী ডা: শাখায়াত হাসান জীবন আজমিরীগঞ্জ বানিয়াচংয়ে উচ্ছ্বাস

ফিচার রিপোর্ট নামিদামি সুনামধন্য আড়ং-এর ডেইলি ফার্ম এর ডিলারশিপ নিয়ে অনায়াসে করছে জামানত বানিজ্য, টাকা দিলেও সিলিংয়ে ঝুলছে শাকিলের লাশ

আপডেট সময় ০৩:০১:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫

📸 তথ্য ও ছবি: শাহিন

পল্লবী থানার ঝিলপাড় এলাকায় প্রতিদিন ভোরেই ঘুম ভাঙে একদল ভ্যানচালকের। দেশীয় পণ্য আড়ং দুধের ভ্যানগুলো ভর্তি হয় দুধে, আর সেই ভ্যানগুলো টেনে নিয়ে শহরের আনাচে-কানাচে দোকানে দোকানে পৌঁছে দেন শ্রমজীবী এই মানুষগুলো। বেতন সামান্য, কাজ ক্লান্তিকর। তবুও তারা টিকে থাকেন—কারণ, চাকরিটুকুই তাদের বেঁচে থাকার একমাত্র ভরসা। কিন্তু এই চাকরি টিকিয়ে রাখার জন্য শুধু ঘাম ঝরানোই যথেষ্ট নয়। দিতে হয় মোটা অঙ্কের জামানত—যেটা শুরু হয় ২০ হাজার থেকে, তারপর ৫০ হাজার, পরে আরও বেড়ে দাঁড়ায় এক লক্ষ টাকায়। ভ্যানচালক শাকিলও এই বাস্তবতার শিকার হন।

এক বছর আগে আড়ং দুধের কোম্পানিতে ভ্যানচালক হিসেবে চাকরি পান শাকিল। প্রথমেই তার কাছ থেকে জামানত হিসেবে নেওয়া হয় ২০ হাজার টাকা। চাকরির এক বছর পূর্ণ হতেই তাকে দেওয়া হয় বড় ভ্যান। বড় ভ্যান মানেই বড় বোঝা—শুধু দুধ বহনের নয়, জামানতেরও। এবার দাবি করা হলো ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু দিন আনে দিন খায় শাকিল, তার পক্ষে এই অঙ্ক জোগাড় করা ছিল পাহাড়সম বোঝা। প্রতিদিন সকালে কাজে যেতেন, কিন্তু ম্যানেজারের চাপ তাকে মানসিকভাবে ভেঙে দিচ্ছিল। ১৬ আগস্ট ভোরে কাজের উদ্দেশ্যে বের হন শাকিল। দুপুরের পর, আড়ং দুধ ফ্যাক্টরির ভেতরেই তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরিবার ও প্রতিবেশীদের দাবি—এটি আত্মহত্যা নয়, বরং পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।

শাকিলের মা ও বোন ভেঙে পড়েছেন। তাদের দাবি, “ছেলেটা সংসারের হাল ধরেছিল। বোনের বিয়ের দেনা শোধ করলো কষ্ট করে। এমন কোন কারণই ছিল না, যাতে সে আত্মহত্যা করবে। জামানতের টাকা দিতে না পারার কারণেই তাকে মেরে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।” ৭ নম্বর ঝিলপাড় বস্তির প্রতিটি ঘরে ঘরে এখন শুধু একটাই আলোচনা—শাকিলের মৃত্যু। প্রতিবেশীরাও বলছেন, “এটা আত্মহত্যা নয়, এটা চাপ সৃষ্টি করে হত্যার ঘটনা।” আড়ং দুধ ফ্যাক্টরির এই জামানত বাণিজ্য আসলে কীসের প্রতিফলন? দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষদের রক্ত-ঘামে উপার্জিত টাকা কেড়ে নেওয়া হয় এক প্রকার চাকরি টিকিয়ে রাখার শর্ত হিসেবে। তারা চাকরির নিরাপত্তার জন্যই নিজের জীবন পর্যন্ত বাজি রাখেন। আর শাকিলের মৃত্যু যেন সেই অন্যায়ের নির্মম প্রমাণ।

শাকিলের মরদেহ বর্তমানে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে। এখনো মামলা হয়নি। তবে পরিবারের দাবি—তারা হত্যা মামলা করবেন আড়ং কোম্পানি এবং সংশ্লিষ্ট ম্যানেজারের বিরুদ্ধে। মামলা দায়েরের পরই হবে দাফন।

এখন প্রশ্ন—কতদিন এই জামানত বাণিজ্যের শিকার হবেন দরিদ্র শ্রমিকরা? আর কত শাকিলের লাশ ঝুলবে সিলিংয়ে?


প্রিন্ট