ঢাকা ১০:০১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo পাবনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রধান নাজিরের বদলী নিয়ে চরম অসন্তোষ Logo মহম্মদপুরে বিএনপি’র নির্বাচনী পথ সভা অনুষ্ঠিত Logo পীরগঞ্জে বিএনপির উদ্যোগে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প অনুষ্ঠিত Logo দেশের ধন্যাঢ্য ব্যক্তিরাও প্রতারণার শিকার অনিক ও সোহেলের ভুয়া “প্রাচীন পিলার ও কয়েন” চক্র Logo দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই প্রায় অর্ধশত বদলি বানিজ্য পিএইচডি জালিয়াতি-বদলি বানিজ্য-ঠিকাদারি সিন্ডিকেটের মূলহোতা খালেকুজ্জামান চৌধুরী Logo কাচিঘাটা রেঞ্জে গাছকাটা সিন্ডিকেটের তাণ্ডব রাতে চার–পাঁচশ গাছ উজাড়—বন রক্ষাকারীরাই অভিযুক্ত!** স্থানীয়দের অভিযোগ: “৫ আগস্টের পর এলাকা একেবারে মগের মুল্লুক—বন কেটে লুটে খাচ্ছে সবাই Logo চীনে ট্রেন দুর্ঘটনায় ১১ জন নিহত Logo ১২ ঘণ্টায় দ্বিতীয়বার ভূমিকম্পে কাঁপল ইন্দোনেশিয়া Logo প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির মামলা জয় ও পুতুলের ৫ বছরের কারাদণ্ড Logo তিন মামলায় হাসিনার ২১ বছরের কারাদণ্ড

পাবনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রধান নাজিরের বদলী নিয়ে চরম অসন্তোষ

মাত্র দেড় মাসের ব্যবধানে জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কার্যালয়ের হেড নাজিরকে তার স্বপদে ফিরিয়ে আনা নিয়ে পাবনা ডিসি অফিসে চলছে চরম আলোচনা-সমালোচনা ও অসন্তোষ। হেড নাজির ইনসাফ আলীর বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তাকে এতো দ্রুত স্বপদে পুনর্বহাল করায় পুরো প্রশাসনে প্রশ্ন উঠেছে। এই নাজির ইনসাফের নানা অনিয়ম ও দূর্ণীতির বিষয়টি উল্লেখ করে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার বরাবর একটি আবেদনও করেছেন এক ব্যাক্তি।

জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, হেড নাজির ইনসাফকে চলতি বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত তার পদ থেকে বদলি করা হয়। কিন্তু জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের একটি মহলের সক্রিয় ভূমিকার কারণে মাত্র দেড় মাসের মধ্যেই তাকে পুনরায় হেড নাজিরের গুরুত্বপূর্ণ পদে ফিরিয়ে আনা হয়। ডিসি অফিসের মতো সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ কার্যালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তার ক্ষেত্রে এত অল্প সময়ের ব্যবধানে বদলি এবং আবারও স্বপদে প্রত্যাবর্তনের ঘটনায় সাধারণ কর্মচারীদের মধ্যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

এই ঘটনায় অসন্তোষের মাত্রা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, স্থানীয় ওই ব্যক্তির রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার বরাবর লিখিত আবেদনে হেড নাজির ইনসাফ আলীর বদলি ও প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষ তদন্ত এবং তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখার দাবি জানানো হয়েছে।

হেড নাজির ইনসাফের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় অর্থনৈতিক অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যবহার, এবং কর্মচারী নিয়োগ ও বদলিতে প্রভাব বিস্তারের মতো একাধিক অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই তাকে বদলি করা হয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছিল। কিন্তু অভিযোগগুলো নিষ্পত্তি না হতেই তাকে স্বপদে ফিরিয়ে আনায় জনমনে এবং প্রশাসনিক মহলে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। তাদের মতে, দুর্নীতির অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও দ্রুত পদে ফিরিয়ে আনা প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।
অপরদিকে অতি সম্প্রতি এই নাজির ইনসাফের বিরুদ্ধে গরীব, অসহায় ও দুস্থদের জন্য বরাদ্দকৃত দুম্বার মাংস নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারার বিষয়টি নিয়ে দেশের একাধিক সংবাদ মাধ্যম ভিত্তিক চ্যানেলে ও দেশের শীর্ষ গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়েল এক কর্মকর্তা বলেন, ইনসাফ নিজ পদ ব্যবহার করে অভৈধ ভাবে সম্পদ অর্জন করে গ্রামে বাড়ি জমির মালিক বনে গেছেন, পাশাপাশি সে শহরের পাওয়ার হাউসের পিছনে বহুতল বিশিষ্ট বাড়ি করেছেন। শুধু তাই নয় নামে বেনামে সে প্রচুর ধনসম্পদেও মালিক হয়েছেন। বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে দাপটের সাথে চাকুরী করেছেন, অথচ সরকার পতন হলেও তিনি ও তার লোকজন বহাল তবিয়তে ক্ষমতার দাপটে বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতি করে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের দায়িত্বশীল নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) কে এম মামুনুর রশীদ বলেন, বিষয়টি তো আমাদের এখতেয়ারের বাহিরে। আর যখনই যাকে বদলী করা হয়, যে কোন প্রয়েঅজনেই তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়।

তবে প্রশাসনের উচ্চপদস্থ একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, বিষয়টি তাদের নজরে এসেছে, বিভাগীয় কমিশনার স্যারের কাছে করা আবেদনের প্রেক্ষিতে ঊর্ধ্বতন মহল থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতে পারে। এছাড়াও তিনি গত সরকারের আমল থেকে এ পদে ছিলেন।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এ বিষয়ে আমাদের বলার কিছুই নেই। ডিসি স্যার কোন প্রয়োজনে বদলী করেছেন আমার জানান নেই।

বিষয়টি নিয়ে ইনসাফ আলীর বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, স্যাররা আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন, আমি কাজ করছি। কেন আমাকে দেড় মাসের ভেতর এই দায়িত্ব দিয়েছেন স্যাররাই ভালো জানেন।

জেলা প্রশাসক শাহেদ মোস্তফা বলেন, আমি এই কর্মস্থলে নতুন এসেছি, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। শুনলাম খোজ খবর নিয়ে কোন ত্রুটি থাকলে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রঞন করা হবে বলেও জানান তিনি।

পাবনার সচেতন মহল মনে করছে, প্রশাসনের স্বচ্ছতা বজায় রাখতে এবং সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে অবিলম্বে এই পুরো প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া জরুরি।


প্রিন্ট
ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

পাবনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রধান নাজিরের বদলী নিয়ে চরম অসন্তোষ

পাবনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রধান নাজিরের বদলী নিয়ে চরম অসন্তোষ

আপডেট সময় ০৯:৩৩:২৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫

মাত্র দেড় মাসের ব্যবধানে জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কার্যালয়ের হেড নাজিরকে তার স্বপদে ফিরিয়ে আনা নিয়ে পাবনা ডিসি অফিসে চলছে চরম আলোচনা-সমালোচনা ও অসন্তোষ। হেড নাজির ইনসাফ আলীর বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তাকে এতো দ্রুত স্বপদে পুনর্বহাল করায় পুরো প্রশাসনে প্রশ্ন উঠেছে। এই নাজির ইনসাফের নানা অনিয়ম ও দূর্ণীতির বিষয়টি উল্লেখ করে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার বরাবর একটি আবেদনও করেছেন এক ব্যাক্তি।

জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, হেড নাজির ইনসাফকে চলতি বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত তার পদ থেকে বদলি করা হয়। কিন্তু জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের একটি মহলের সক্রিয় ভূমিকার কারণে মাত্র দেড় মাসের মধ্যেই তাকে পুনরায় হেড নাজিরের গুরুত্বপূর্ণ পদে ফিরিয়ে আনা হয়। ডিসি অফিসের মতো সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ কার্যালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তার ক্ষেত্রে এত অল্প সময়ের ব্যবধানে বদলি এবং আবারও স্বপদে প্রত্যাবর্তনের ঘটনায় সাধারণ কর্মচারীদের মধ্যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

এই ঘটনায় অসন্তোষের মাত্রা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, স্থানীয় ওই ব্যক্তির রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার বরাবর লিখিত আবেদনে হেড নাজির ইনসাফ আলীর বদলি ও প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষ তদন্ত এবং তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখার দাবি জানানো হয়েছে।

হেড নাজির ইনসাফের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় অর্থনৈতিক অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যবহার, এবং কর্মচারী নিয়োগ ও বদলিতে প্রভাব বিস্তারের মতো একাধিক অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই তাকে বদলি করা হয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছিল। কিন্তু অভিযোগগুলো নিষ্পত্তি না হতেই তাকে স্বপদে ফিরিয়ে আনায় জনমনে এবং প্রশাসনিক মহলে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। তাদের মতে, দুর্নীতির অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও দ্রুত পদে ফিরিয়ে আনা প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।
অপরদিকে অতি সম্প্রতি এই নাজির ইনসাফের বিরুদ্ধে গরীব, অসহায় ও দুস্থদের জন্য বরাদ্দকৃত দুম্বার মাংস নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারার বিষয়টি নিয়ে দেশের একাধিক সংবাদ মাধ্যম ভিত্তিক চ্যানেলে ও দেশের শীর্ষ গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়েল এক কর্মকর্তা বলেন, ইনসাফ নিজ পদ ব্যবহার করে অভৈধ ভাবে সম্পদ অর্জন করে গ্রামে বাড়ি জমির মালিক বনে গেছেন, পাশাপাশি সে শহরের পাওয়ার হাউসের পিছনে বহুতল বিশিষ্ট বাড়ি করেছেন। শুধু তাই নয় নামে বেনামে সে প্রচুর ধনসম্পদেও মালিক হয়েছেন। বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে দাপটের সাথে চাকুরী করেছেন, অথচ সরকার পতন হলেও তিনি ও তার লোকজন বহাল তবিয়তে ক্ষমতার দাপটে বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতি করে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের দায়িত্বশীল নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) কে এম মামুনুর রশীদ বলেন, বিষয়টি তো আমাদের এখতেয়ারের বাহিরে। আর যখনই যাকে বদলী করা হয়, যে কোন প্রয়েঅজনেই তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়।

তবে প্রশাসনের উচ্চপদস্থ একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, বিষয়টি তাদের নজরে এসেছে, বিভাগীয় কমিশনার স্যারের কাছে করা আবেদনের প্রেক্ষিতে ঊর্ধ্বতন মহল থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতে পারে। এছাড়াও তিনি গত সরকারের আমল থেকে এ পদে ছিলেন।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এ বিষয়ে আমাদের বলার কিছুই নেই। ডিসি স্যার কোন প্রয়োজনে বদলী করেছেন আমার জানান নেই।

বিষয়টি নিয়ে ইনসাফ আলীর বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, স্যাররা আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন, আমি কাজ করছি। কেন আমাকে দেড় মাসের ভেতর এই দায়িত্ব দিয়েছেন স্যাররাই ভালো জানেন।

জেলা প্রশাসক শাহেদ মোস্তফা বলেন, আমি এই কর্মস্থলে নতুন এসেছি, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। শুনলাম খোজ খবর নিয়ে কোন ত্রুটি থাকলে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রঞন করা হবে বলেও জানান তিনি।

পাবনার সচেতন মহল মনে করছে, প্রশাসনের স্বচ্ছতা বজায় রাখতে এবং সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে অবিলম্বে এই পুরো প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া জরুরি।


প্রিন্ট