ভয়াবহ ঘটনার পর অদৃশ্য ক্ষত থেকে সাবধান থাকা খুবই জরুরি! যেমন– আগুন, বিস্ফোরণ বা বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার মতো ঘটনার সরাসরি শিকার না হয়েও আমরা মানসিকভাবে আক্রান্ত হয়ে পড়ি। চোখের সামনে ভয়াবহ দৃশ্য দেখা, বড় শব্দে আতঙ্কে জড়সড় হয়ে যাওয়া, নিজের প্রিয়জনের বা পরিচিতদের মৃত্যু/ক্ষতি দেখা—এসবই শরীর ও মনের গভীরে ক্ষত তৈরি করে।
এই ক্ষত হয়তো তৎক্ষণাৎ বোঝা যায় না, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এটি শারীরিক ও মানসিক নানা অসুস্থতার জন্ম দেয়। যেমন:
মাথাব্যথা
ঘাড়-কোমর টান
নিদ্রাহীনতা
নার্ভ দুর্বলতা
খাদ্যের অরুচি
পেটের গোলযোগ
আতঙ্ক, দুশ্চিন্তা, মনোযোগে ঘাটতি
ট্রমাজনিত রোগ
কেন প্রাথমিক সহায়ক থেরাপি জরুরি–
এমন পরিস্থিতিতে সবার জন্য প্রাথমিকভাবে কিছু সহায়ক চিকিৎসা পদ্ধতি জানা ও চর্চা করা জরুরি। এগুলো হলো:
ম্যাসেজ থেরাপি
সহজ ব্যায়াম
ম্যানুয়াল থেরাপি
হালকা ফিজিওথেরাপি
এগুলো ওষুধ ছাড়াই শরীর ও মনকে স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে। প্রতিটি পদ্ধতি সহজ, সাশ্রয়ী এবং বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত।
ম্যাসেজ থেরাপি
প্রাকৃতিক তেল যেমন নারকেল, তিল বা কালোজিরা তেল হালকা গরম করে কাঁধ, ঘাড়, পিঠ, পেট বা পায়ে মালিশ করলে:
রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হয়
পেশি নরম হয়
স্নায়ু শিথিল হয়
প্রতিদিন মাত্র ১০–১৫ মিনিটের ম্যাসেজ ঘুমের সমস্যা, মাথাব্যথা ও মানসিক চাপ কমাতে উপকারী।
নাভি থেরাপি
নাভির চারপাশে আঙুল দিয়ে হালকা চাপে ৫–৭ মিনিট ঘূর্ণন করলে:
নার্ভের ভারসাম্য ফিরে আসে
হজম শক্তি বাড়ে
ঘুম ও মানসিক প্রশান্তি আসে
সকাল ও রাতে একবার করে চর্চা করুন।
হট ম্যাসেজ
গরম পানি প্যাড বা হট বোতল দিয়ে ঘাড়, কাঁধ বা পিঠে ১০ মিনিট সেঁক দিলে:
নার্ভ শান্ত হয়
পেশির টান কমে যায়
রক্ত চলাচল বাড়ে
সহজ ব্যায়াম
প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় কয়েকটি ব্যায়াম মানসিক চাপ ও শরীরের জড়তা কমায়:
গভীর শ্বাসপ্রশ্বাস – ৩ সেকেন্ড শ্বাস নিন, ৫ সেকেন্ড ছাড়ুন
ঘাড় ঘোরানো – ডানে-বামে ও সামনে-পেছনে
হাত ঘষে চোখে রাখা – চোখ ও স্নায়ুর প্রশান্তি
“So Hum” বা “Om” ধ্বনি উচ্চারণ – মনঃসংযোগ বাড়ানো
দেয়ালে ঠেলা বা মুঠি শক্ত ধরা – স্নায়ু সক্রিয় রাখা
দিনে ২ বার, ৫–৭ মিনিট করলেই উপকার।
ম্যানুয়াল থেরাপি
প্রশিক্ষিত থেরাপিস্টের মাধ্যমে ঘাড়, কাঁধ, পিঠ বা হাঁটুতে হালকা টান, টোকা বা ঘূর্ণন:
নার্ভ ও জয়েন্ট সচল রাখে
শরীরের নমনীয়তা ফিরিয়ে আনে
ফিজিওথেরাপির সহজ উপায়
প্যাসিভ মুভমেন্ট থেরাপি: সহকারী রোগীর হাত/পা আলতোভাবে নাড়ায়
Coordination therapy: শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে হালকা নড়াচড়া
স্ট্রেচিং ব্যায়াম: দেয়ালে ঠেলা, মুঠি শক্ত ধরা
অতিরিক্ত পরামর্শ
যদি কেউ খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয়, চিকিৎসা নিতে অস্বীকৃতি জানায় বা অস্বাভাবিক আচরণ করে—
সহজ নিউট্রিশন/ডায়েট ব্যবস্থা নিন
রিফ্লেক্সলজি, এরোমা থেরাপি, হিজামা, ডিটক্স পদ্ধতি প্রয়োগ করুন
ডাক্তারের পরামর্শ অবশ্যই নিন
কেন এটি প্রয়োজন
মানসিক ট্রমা ও ভয় শুধু মাথায় নয়, শরীরেও জমে। তা যদি দূর না করা যায়, ভবিষ্যতে তা নানা রোগে রূপ নেয়। ওষুধ ছাড়াই এসব সহজ থেরাপি আগে থেকে প্রতিরোধে সাহায্য করে।
উপসংহার ও আহ্বান
একটি ভয়াবহ মুহূর্তের মানসিক ও শারীরিক ক্ষতি দীর্ঘমেয়াদে নানা সমস্যায় পরিণত হতে পারে। এখনই এসব পদ্ধতি ঘরে ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চালু করা জরুরি।
সরকারি দপ্তর, সচেতন ব্যক্তি, শিক্ষক, অভিভাবক, স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও দেশি-বিদেশি সংস্থাগুলো এগিয়ে এলে কম খরচে অসংখ্য মানুষের শরীর ও মনের সুস্থতা নিশ্চিত করা সম্ভব।
আজ থেকেই নিজের ও প্রিয়জনের সুস্থতার জন্য অন্তত একটি পদ্ধতি চর্চা শুরু করুন। চলবে —–
প্রতিবেদন:
মো: শোয়েব হোসেন
সংগীত প্রশিক্ষক, চিন্তাবিদ, মানবাধিকার কর্মী
সহায়ক থেরাপি ও বিকল্প চিকিৎসা গবেষক
📱 01912241933 | ✉️ [email protected]
প্রিন্ট