ঢাকা ১২:২২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৭ অগাস্ট ২০২৫, ২৩ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরও ৪১ ফিলিস্তিনি Logo সচিবালয়ে প্রধান উপদেষ্টা, কঠোর নিরাপত্তা Logo কেনাকাটা চলছে, সেপ্টেম্বরে বড় প্রস্তুতিমূলক কাজগুলো শেষ হবে, ফেব্রুয়ারিতে ভোটের তারিখের দুই মাস আগে তফসিল সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন নির্বাচন ঘোষণায় রাজনৈতিক অচলাবস্থা কেটে যাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর : ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন’ জামায়াতের আমিরের দাবির বাস্তবায়ন; ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের সর্বত্র নির্বাচনী উচ্ছ্বাস Logo আ.লীগ আমলের বৈদেশিক ঋণ নিয়ে বিপাকে অন্তর্বর্তী সরকার Logo ট্রাম্প-নীতির কড়া বিরোধিতা, ভারতের পাশে থাকার বার্তা রাশিয়ার মোদির সঙ্গে পুতিন Logo মির্জা ফখরুলের নিজ জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে বিএনপি’র বিজয় র‌্যালি Logo তরিকতের নামে ‘জবাই’র হুমকি: মৌলবাদী সন্ত্রাসে কচুয়ার ২ পরিবার প্রাননাশের হুমকিতে বাড়িছাড়া Logo বরিশাল জেলা লিটন শিকদার লিটু হত্যার মাস্টারমাইন্ড মিল্টন গ্রেফতার Logo স্বৈরাচার হাসিনা নেতাকর্মীদের পালাতে দেয়নি অথচ আত্মীয়দের পালাতে সহায়তা! নেপথ্যে কী? Logo বিগত তিন সংসদ নির্বাচনে দায়িত্বে থাকা ম্যাজিস্ট্রেটদের তথ্য চেয়েছে ইসি

কেনাকাটা চলছে, সেপ্টেম্বরে বড় প্রস্তুতিমূলক কাজগুলো শেষ হবে, ফেব্রুয়ারিতে ভোটের তারিখের দুই মাস আগে তফসিল সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন নির্বাচন ঘোষণায় রাজনৈতিক অচলাবস্থা কেটে যাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর : ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন’ জামায়াতের আমিরের দাবির বাস্তবায়ন; ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের সর্বত্র নির্বাচনী উচ্ছ্বাস

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ১১:৩৯:৩৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ অগাস্ট ২০২৫
  • ২ ১০.০০০ বার পড়া হয়েছে

প্রধান উপদেষ্টার এক ঘোষণায় পাল্টে গেছে দেশের রাজনীতির দৃশ্যপট। ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে পবিত্র রমজানের আগেই ‘ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে’ প্রধান উপদেষ্টার এ ঘোষণায় সর্বত্রই নির্বাচনী সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। রাজনৈতিক দলগুলো যেমন নির্বাচনের প্রস্তুতির দিকে যাচ্ছে; তেমন ব্যবসায়ী মহলেও আশার আলো সৃষ্টি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের নিশ্চয়তা পাবেন এবং বিনিয়োগ করবেন। অন্যদিকে নির্বাচন নিয়ে এখন অফিস-আদালত, হাটে-মাঠে-ঘাটে সর্বত্রই আলোচনা শুরু হয়েছে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত ৫ আগস্ট জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে সুনির্দিষ্ট করে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করায় নির্বাচন নিয়ে যে ‘দোদুল্যমান অবস্থা’ সৃষ্টি হয়েছিল তার অবসান হয়েছে। এর মাধ্যমে গণতন্ত্রে উত্তরণের পথ সুগম হলো। অর্থাৎ দেশে নির্বাচনের ট্রেন এবার লাইনে উঠে নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে যাত্রা শুরু করেছে। তফসিল ঘোষণার আগেই নির্বাচনের নির্দিষ্ট সময় ঘোষণার পর থেকে দেশে এখন নির্বাচনী আমেজ শুরু হয়ে গেছে। রাজনৈতিক অঙ্গন, অফিস পাড়া, ব্যবসায়ী মহল, শিক্ষাঙ্গন, হাট-বাজার থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লার চায়ের দোকান সর্বত্র শুরু হয়েছে নির্বাচনী আলোচনা। সবার মধ্যে উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। ব্যবসায়ীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে তাদের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, এনসিপি, এবি পার্টি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণ অধিকার পরিষদ, গণ সংহতি আন্দোলনসহ ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে অশংগ্রহণকারী সব দলই নির্বাচনের বিষয়ে নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রস্তুতি নিচ্ছে।

নির্বাচন কমিশনও ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট আয়োজনের সার্বিক প্রস্তুতি শুরু করেছে। পুলিশসহ প্রশাসনের সর্বস্তরে বদলি, পদোন্নতিসহ সব ধরনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলে ওএসডি হওয়া ৭৮ পুলিশ কর্মকর্তাকে গতকাল পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন বিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণ নিয়ে আয়োজিত সভা গতকাল সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, তফসিলের আগে লটারির মাধ্যমে পুলিশ সুপার (এসপি) ও ওসিদের (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) পদায়ন করা হবে। আগামী নির্বাচনে ৮ লাখ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে এবং তাদের সবাইকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে বলেও জানান উপদেষ্টা।

আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন আয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিশনও (ইসি) তাদের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করে নিয়েছে। নির্বাচনের প্রস্তুতি বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক বড় কাজগুলোর মধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ শেষ পর্যায়ে, সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের খসড়া প্রকাশ করা হয়েছে, নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের কাজ চলছে, কেনাকাটাও চলছে। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে বড় প্রস্তুতিমূলক কাজগুলো শেষ হয়ে যাবে। এরপরই তফসিল ঘোষণা করতে পারবেন বলে তিনি আশা করেন। সিইসি বলেন, নির্বাচন কমিশন একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়, ভোটারদের ব্যাপক অংশগ্রহণ চায়। নির্বাচন কমিশনের ওপর মানুষের আস্থা সৃষ্টি করা, ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করা, এআইয়ের অপব্যবহার রোধ করা এগুলোকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে নির্বাচন কমিশন। তবে তাঁরা আশা করছেন, আগামী নির্বাচন আয়নার মতো স্বচ্ছ হবে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। আরো কয়েক মাস সময় আছে। এর মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাবে বলে তাঁরা আশা করছেন। তিনি বলেন, আশা করছি খুব দ্রুতই পেয়ে যাব। আমরা ফেব্রুয়ারিকে টাইমফ্রেমে রেখেই আমাদের কাজ এগিয়ে নিচ্ছি। সেপ্টেম্বরের মধ্যে আমাদের প্রধান কাজগুলো শেষ হয়ে যাবে। চিঠি পাওয়ার পর আলোচনা করে ভোটের তারিখের ঠিক দুইমাস আগে আমরা তফসিল ঘোষণা করব।

এদিকে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষণাকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে অভিহিত করে একে স্বাগত জানিয়েছে বিএনপি। গতকাল রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপি মনে করে, এই ঐতিহাসিক ঘোষণায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক অচলাবস্থা কেটে যাবে, গণতন্ত্র উত্তরণের পথকে সুগম করবে। এই নির্বাচন অতি জরুরি বলে উল্লেখ করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, এখন এই নির্বাচনটা দেশের জনগণই চায়। জনগণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সবচেয়ে বড় প্রহরী হয়ে দাঁড়াবে। তিনি বলেন, বিএনপি আশা করছে, এই নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করার জন্য সরকার ও নির্বাচন কমিশন সব ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। একটি কার্যকরী জাতীয় সংসদ গঠনের জন্য বিএনপি সব রাজনৈতিক দল ও জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছে।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীও এ তারিখ ঘোষণাতে অখুশি নয়। বরং তারা আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের ঘোষণাকে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমানের দাবির বাস্তবায়ন বলে মনে করে। গতকাল রাজধানীর মগবাজারের আল ফালাহ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের হওয়ার ক্ষেত্রে জামায়াতের কোনো আপত্তি নেই। তবে তার আগে জুলাই সনদদের আইনি ভিত্তি ও নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। সরকার চাইলে এই দাবিগুলো বাস্তবায়ন সম্ভব বলে মনে করে জামায়াত।
জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেছেন, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে সরকার যে সময়সীমার মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করতে চায়, তাতে আমাাদের আপত্তির কোনো জায়গা নেই। কিন্তু নির্বাচন আয়োজনের আগে অন্তর্বর্তী সরকারের অবশ্যপালনীয় কিছু কর্তব্য রয়েছে। এগুলো করতে হবে। গণহত্যাকারীদের বিচার করা এবং রাষ্ট্রকাঠামোর গুণগত পরিবর্তনের জন্য সংস্কারের ম্যান্ডেট নিয়ে এ সরকারের যাত্রা শুরু হয়েছে। অতএব নির্বাচনের আগেই বিচারকে দৃশ্যমান করা এবং সংস্কারকে বাস্তবায়ন করা এ সরকারের অবশ্য কর্তব্য। একই সঙ্গে নির্বাচনের আগেই সরকারকে মাঠ প্রশাসনের নিরপেক্ষতা এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি ও নিশ্চয়তা দিতে হবে। জুলাই ঘোষণাপত্রে দেয়া প্রতিশ্রুতিগুলো অবশ্যই বাংলাদেশে বাস্তবায়িত করতে হবে।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি প্রধান উপদেষ্টার জাতীয় নির্বাচন সংক্রান্ত ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে। গতকাল বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক গণমাধ্যমে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন, প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণার মধ্য দিয়ে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট অনিশ্চয়তা ও সন্দেহের অবসান ঘটবে। একইসাথে এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে সরকারের সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর যে মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব তৈরি হয়েছিল তাও কিছুটা দূর হবে বলে আশা করা যায়। তিনি উল্লেখ করেন, প্রধান উপদেষ্টার গতকালের ঘোষণার পর সরকারের দুটো গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে, সরকারের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা এবং অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করা।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য জাতীয় নির্বাচন অত্যাবশ্যক, এর সুনির্দিষ্ট সময় ঘোষণা জনজীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে বলে মনে করি। তিনি বলেন, জনগণের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের মাধ্যমে যাতে রাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হতে পারে তার জন্য আগামী নির্বাচনকে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ এবং সমস্ত পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হিসেবে অনুষ্ঠান এই সরকারের একটি বড় দায়িত্ব এবং চ্যালেঞ্জ। অবিলম্বে নির্বাচনে সকলের সম সুযোগ সৃষ্টি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ওপরে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে নিয়ে আসার উদ্যোগ নিতেও তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. জাহেদ উর রহমান বলেন, নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা না হলেও প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলেছেন। এটাকে দেশবাসী সাধুবাদ জানাচ্ছে। এতে দেশের সর্বত্রই স্বস্তির সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। নির্বাচনকে ঘিরে রাজনীতিতে এক ধরনের দোলাচল চলছিল। নির্বাচন আদৌ হবে কি না এ ধরনের একটা আশঙ্কাও কারো কারো মধ্যে তৈরি হয়েছিল। এখন এসব কিছুর অবসান হয়েছে। সারাদেশে এখন নির্বাচনের আমেজ শুরু হয়ে যাবে।


প্রিন্ট
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরও ৪১ ফিলিস্তিনি

কেনাকাটা চলছে, সেপ্টেম্বরে বড় প্রস্তুতিমূলক কাজগুলো শেষ হবে, ফেব্রুয়ারিতে ভোটের তারিখের দুই মাস আগে তফসিল সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন নির্বাচন ঘোষণায় রাজনৈতিক অচলাবস্থা কেটে যাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর : ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন’ জামায়াতের আমিরের দাবির বাস্তবায়ন; ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের সর্বত্র নির্বাচনী উচ্ছ্বাস

আপডেট সময় ১১:৩৯:৩৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ অগাস্ট ২০২৫

প্রধান উপদেষ্টার এক ঘোষণায় পাল্টে গেছে দেশের রাজনীতির দৃশ্যপট। ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে পবিত্র রমজানের আগেই ‘ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে’ প্রধান উপদেষ্টার এ ঘোষণায় সর্বত্রই নির্বাচনী সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। রাজনৈতিক দলগুলো যেমন নির্বাচনের প্রস্তুতির দিকে যাচ্ছে; তেমন ব্যবসায়ী মহলেও আশার আলো সৃষ্টি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের নিশ্চয়তা পাবেন এবং বিনিয়োগ করবেন। অন্যদিকে নির্বাচন নিয়ে এখন অফিস-আদালত, হাটে-মাঠে-ঘাটে সর্বত্রই আলোচনা শুরু হয়েছে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত ৫ আগস্ট জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে সুনির্দিষ্ট করে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করায় নির্বাচন নিয়ে যে ‘দোদুল্যমান অবস্থা’ সৃষ্টি হয়েছিল তার অবসান হয়েছে। এর মাধ্যমে গণতন্ত্রে উত্তরণের পথ সুগম হলো। অর্থাৎ দেশে নির্বাচনের ট্রেন এবার লাইনে উঠে নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে যাত্রা শুরু করেছে। তফসিল ঘোষণার আগেই নির্বাচনের নির্দিষ্ট সময় ঘোষণার পর থেকে দেশে এখন নির্বাচনী আমেজ শুরু হয়ে গেছে। রাজনৈতিক অঙ্গন, অফিস পাড়া, ব্যবসায়ী মহল, শিক্ষাঙ্গন, হাট-বাজার থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লার চায়ের দোকান সর্বত্র শুরু হয়েছে নির্বাচনী আলোচনা। সবার মধ্যে উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। ব্যবসায়ীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে তাদের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, এনসিপি, এবি পার্টি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণ অধিকার পরিষদ, গণ সংহতি আন্দোলনসহ ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে অশংগ্রহণকারী সব দলই নির্বাচনের বিষয়ে নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রস্তুতি নিচ্ছে।

নির্বাচন কমিশনও ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট আয়োজনের সার্বিক প্রস্তুতি শুরু করেছে। পুলিশসহ প্রশাসনের সর্বস্তরে বদলি, পদোন্নতিসহ সব ধরনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলে ওএসডি হওয়া ৭৮ পুলিশ কর্মকর্তাকে গতকাল পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন বিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণ নিয়ে আয়োজিত সভা গতকাল সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, তফসিলের আগে লটারির মাধ্যমে পুলিশ সুপার (এসপি) ও ওসিদের (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) পদায়ন করা হবে। আগামী নির্বাচনে ৮ লাখ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে এবং তাদের সবাইকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে বলেও জানান উপদেষ্টা।

আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন আয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিশনও (ইসি) তাদের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করে নিয়েছে। নির্বাচনের প্রস্তুতি বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক বড় কাজগুলোর মধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ শেষ পর্যায়ে, সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের খসড়া প্রকাশ করা হয়েছে, নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের কাজ চলছে, কেনাকাটাও চলছে। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে বড় প্রস্তুতিমূলক কাজগুলো শেষ হয়ে যাবে। এরপরই তফসিল ঘোষণা করতে পারবেন বলে তিনি আশা করেন। সিইসি বলেন, নির্বাচন কমিশন একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়, ভোটারদের ব্যাপক অংশগ্রহণ চায়। নির্বাচন কমিশনের ওপর মানুষের আস্থা সৃষ্টি করা, ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করা, এআইয়ের অপব্যবহার রোধ করা এগুলোকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে নির্বাচন কমিশন। তবে তাঁরা আশা করছেন, আগামী নির্বাচন আয়নার মতো স্বচ্ছ হবে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। আরো কয়েক মাস সময় আছে। এর মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাবে বলে তাঁরা আশা করছেন। তিনি বলেন, আশা করছি খুব দ্রুতই পেয়ে যাব। আমরা ফেব্রুয়ারিকে টাইমফ্রেমে রেখেই আমাদের কাজ এগিয়ে নিচ্ছি। সেপ্টেম্বরের মধ্যে আমাদের প্রধান কাজগুলো শেষ হয়ে যাবে। চিঠি পাওয়ার পর আলোচনা করে ভোটের তারিখের ঠিক দুইমাস আগে আমরা তফসিল ঘোষণা করব।

এদিকে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষণাকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে অভিহিত করে একে স্বাগত জানিয়েছে বিএনপি। গতকাল রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপি মনে করে, এই ঐতিহাসিক ঘোষণায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক অচলাবস্থা কেটে যাবে, গণতন্ত্র উত্তরণের পথকে সুগম করবে। এই নির্বাচন অতি জরুরি বলে উল্লেখ করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, এখন এই নির্বাচনটা দেশের জনগণই চায়। জনগণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সবচেয়ে বড় প্রহরী হয়ে দাঁড়াবে। তিনি বলেন, বিএনপি আশা করছে, এই নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করার জন্য সরকার ও নির্বাচন কমিশন সব ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। একটি কার্যকরী জাতীয় সংসদ গঠনের জন্য বিএনপি সব রাজনৈতিক দল ও জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছে।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীও এ তারিখ ঘোষণাতে অখুশি নয়। বরং তারা আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের ঘোষণাকে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমানের দাবির বাস্তবায়ন বলে মনে করে। গতকাল রাজধানীর মগবাজারের আল ফালাহ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের হওয়ার ক্ষেত্রে জামায়াতের কোনো আপত্তি নেই। তবে তার আগে জুলাই সনদদের আইনি ভিত্তি ও নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। সরকার চাইলে এই দাবিগুলো বাস্তবায়ন সম্ভব বলে মনে করে জামায়াত।
জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেছেন, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে সরকার যে সময়সীমার মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করতে চায়, তাতে আমাাদের আপত্তির কোনো জায়গা নেই। কিন্তু নির্বাচন আয়োজনের আগে অন্তর্বর্তী সরকারের অবশ্যপালনীয় কিছু কর্তব্য রয়েছে। এগুলো করতে হবে। গণহত্যাকারীদের বিচার করা এবং রাষ্ট্রকাঠামোর গুণগত পরিবর্তনের জন্য সংস্কারের ম্যান্ডেট নিয়ে এ সরকারের যাত্রা শুরু হয়েছে। অতএব নির্বাচনের আগেই বিচারকে দৃশ্যমান করা এবং সংস্কারকে বাস্তবায়ন করা এ সরকারের অবশ্য কর্তব্য। একই সঙ্গে নির্বাচনের আগেই সরকারকে মাঠ প্রশাসনের নিরপেক্ষতা এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি ও নিশ্চয়তা দিতে হবে। জুলাই ঘোষণাপত্রে দেয়া প্রতিশ্রুতিগুলো অবশ্যই বাংলাদেশে বাস্তবায়িত করতে হবে।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি প্রধান উপদেষ্টার জাতীয় নির্বাচন সংক্রান্ত ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে। গতকাল বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক গণমাধ্যমে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন, প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণার মধ্য দিয়ে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট অনিশ্চয়তা ও সন্দেহের অবসান ঘটবে। একইসাথে এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে সরকারের সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর যে মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব তৈরি হয়েছিল তাও কিছুটা দূর হবে বলে আশা করা যায়। তিনি উল্লেখ করেন, প্রধান উপদেষ্টার গতকালের ঘোষণার পর সরকারের দুটো গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে, সরকারের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা এবং অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করা।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য জাতীয় নির্বাচন অত্যাবশ্যক, এর সুনির্দিষ্ট সময় ঘোষণা জনজীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে বলে মনে করি। তিনি বলেন, জনগণের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের মাধ্যমে যাতে রাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হতে পারে তার জন্য আগামী নির্বাচনকে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ এবং সমস্ত পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হিসেবে অনুষ্ঠান এই সরকারের একটি বড় দায়িত্ব এবং চ্যালেঞ্জ। অবিলম্বে নির্বাচনে সকলের সম সুযোগ সৃষ্টি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ওপরে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে নিয়ে আসার উদ্যোগ নিতেও তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. জাহেদ উর রহমান বলেন, নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা না হলেও প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলেছেন। এটাকে দেশবাসী সাধুবাদ জানাচ্ছে। এতে দেশের সর্বত্রই স্বস্তির সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। নির্বাচনকে ঘিরে রাজনীতিতে এক ধরনের দোলাচল চলছিল। নির্বাচন আদৌ হবে কি না এ ধরনের একটা আশঙ্কাও কারো কারো মধ্যে তৈরি হয়েছিল। এখন এসব কিছুর অবসান হয়েছে। সারাদেশে এখন নির্বাচনের আমেজ শুরু হয়ে যাবে।


প্রিন্ট