ঢাকা ০৮:১৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৫, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo পাবনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রধান নাজিরের বদলী নিয়ে চরম অসন্তোষ Logo মহম্মদপুরে বিএনপি’র নির্বাচনী পথ সভা অনুষ্ঠিত Logo পীরগঞ্জে বিএনপির উদ্যোগে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প অনুষ্ঠিত Logo দেশের ধন্যাঢ্য ব্যক্তিরাও প্রতারণার শিকার অনিক ও সোহেলের ভুয়া “প্রাচীন পিলার ও কয়েন” চক্র Logo দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই প্রায় অর্ধশত বদলি বানিজ্য পিএইচডি জালিয়াতি-বদলি বানিজ্য-ঠিকাদারি সিন্ডিকেটের মূলহোতা খালেকুজ্জামান চৌধুরী Logo কাচিঘাটা রেঞ্জে গাছকাটা সিন্ডিকেটের তাণ্ডব রাতে চার–পাঁচশ গাছ উজাড়—বন রক্ষাকারীরাই অভিযুক্ত!** স্থানীয়দের অভিযোগ: “৫ আগস্টের পর এলাকা একেবারে মগের মুল্লুক—বন কেটে লুটে খাচ্ছে সবাই Logo চীনে ট্রেন দুর্ঘটনায় ১১ জন নিহত Logo ১২ ঘণ্টায় দ্বিতীয়বার ভূমিকম্পে কাঁপল ইন্দোনেশিয়া Logo প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির মামলা জয় ও পুতুলের ৫ বছরের কারাদণ্ড Logo তিন মামলায় হাসিনার ২১ বছরের কারাদণ্ড

বাংলাদেশিদের ভিসা বন্ধে কলকাতার ব্যবসায়ীদের ক্ষতি ৫০০০ কোটি রুপি

বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা কার্যত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কলকাতার পর্যটননির্ভর অর্থনীতিতে ধস নেমেছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ভিসা জটিলতার প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ‘মিনি বাংলাদেশ’ নামে পরিচিত নিউ মার্কেট, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট এবং মারকুইস স্ট্রিট সংলগ্ন অঞ্চলটি। শুধু এই এলাকাতেই আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ছাড়িয়েছে ১ হাজার কোটি রুপি। আর সামগ্রিকভাবে কলকাতার ব্যবসায়ীদের ক্ষতি ছুঁয়েছে প্রায় ৫ হাজার কোটি রুপি।

gnewsদৈনিক ইত্তেফাকের সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
ভারতের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরের জুলাইয়ে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় নয়াদিল্লি বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভিসা কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। যদিও খুব সীমিত পরিসরে এখনো কিছু জরুরি ভিত্তির ভিসা দেওয়া হচ্ছে, তবে সেটির সংখ্যা নগণ্য।

এমন এক সময়ে, যখন করোনাকাল কাটিয়ে পর্যটন খাত কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিল, তখন এই ভিসা নিষেধাজ্ঞা নতুন করে বড় আঘাত হানে। এক বছর আগেও যেসব রাস্তাঘাট ছিল বাংলাদেশি পর্যটকে মুখর, আজ তা জনশূন্য। কম খরচে থাকা, ওপার বাংলার স্বাদবহুল খাবার এবং নিকটস্থ হাসপাতালের জন্য বিখ্যাত এই এলাকাগুলো পর্যটকদের অভাবে এখন নিস্তব্ধ।

কলকাতার ব্যবসায়ীদের সংগঠন ফ্রি স্কুল স্ট্রিট ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন জানায়, পর্যটন, হোটেল, রেস্তোরাঁ, ট্র্যাভেল এজেন্সি, মানি এক্সচেঞ্জ, চিকিৎসা সেবা এবং পরিবহন—সব মিলিয়ে এই অঞ্চলে প্রতিদিন প্রায় ৩ কোটি রুপির লেনদেন হতো। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলী খান বলেন, ‘শুধু নিউ মার্কেট ও বড়বাজার অঞ্চল যুক্ত করলে এই ক্ষতির পরিমাণ ৫ হাজার কোটি রুপি ছাড়িয়ে যাবে।’

বর্তমানে অনেক ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে, আর যারা টিকে আছে, তারাও বড় আর্থিক ক্ষতির মুখে। স্থানীয় এক ট্র্যাভেল কোম্পানির ব্যবস্থাপক প্রবীর বিশ্বাস বলেন, ‘আগে দিনে দিনে একাধিক বাসভর্তি পর্যটক আসত, এখন অনেক দিন একটিও দেখা যায় না।’ মুদ্রা বিনিময়ের ব্যবসাও মুখ থুবড়ে পড়েছে। মারকুইস স্ট্রিটের কারেন্সি এক্সচেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশন–এর সম্পাদক মোহাম্মদ ইন্তেজার বলেন, ‘আমরা সম্পূর্ণরূপে বাংলাদেশি পর্যটকদের ওপর নির্ভরশীল ছিলাম। এখন টিকে থাকাই কঠিন হয়ে পড়েছে।’

বেশ কিছু ছোট ও মাঝারি রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে গেছে। বড় রেস্তোরাঁগুলোর ব্যবসাও অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে। রাঁধুনি রেস্তোরাঁর মালিক এন সি ভৌমিক বলেন, ‘আমাদের আয় মাত্র ২০ শতাংশে এসে ঠেকেছে। এই অবস্থা বেশিদিন চললে আমাদের টিকে থাকাও অসম্ভব হয়ে পড়বে।’

শুধু ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানই নয়, পর্যটননির্ভর অনেক অনানুষ্ঠানিক খাতের মানুষের জীবনেও আঘাত হেনেছে এই সংকট। হোটেল কর্মী, গাইড, রাঁধুনি, গাড়িচালক থেকে শুরু করে হোম-স্টে অপারেটররাও উপার্জন হারিয়ে দিশেহারা। এলিয়ট রোডের বাসিন্দা ফারহান রসুল বলেন, ‘কোভিড পরবর্তী চাহিদা দেখে আমি দুটি গাড়িতে বিনিয়োগ করেছিলাম। মাসে এখন পাঁচ-ছয়ের বেশি বুকিং হয় না। অথচ প্রতি মাসে আমাকে দেড় লাখ রুপি কিস্তি পরিশোধ করতে হয়।’

বণিকেরা বলছেন, মহামারি-পরবর্তী ঘুরে দাঁড়ানোর আগেই আবারও এমন সংকট তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাকেই কঠিন করে তুলেছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা দ্রুত পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের আশায় প্রহর গুনছেন।


প্রিন্ট
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

পাবনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রধান নাজিরের বদলী নিয়ে চরম অসন্তোষ

বাংলাদেশিদের ভিসা বন্ধে কলকাতার ব্যবসায়ীদের ক্ষতি ৫০০০ কোটি রুপি

আপডেট সময় ০১:০৬:২৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ অগাস্ট ২০২৫

বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা কার্যত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কলকাতার পর্যটননির্ভর অর্থনীতিতে ধস নেমেছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ভিসা জটিলতার প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ‘মিনি বাংলাদেশ’ নামে পরিচিত নিউ মার্কেট, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট এবং মারকুইস স্ট্রিট সংলগ্ন অঞ্চলটি। শুধু এই এলাকাতেই আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ছাড়িয়েছে ১ হাজার কোটি রুপি। আর সামগ্রিকভাবে কলকাতার ব্যবসায়ীদের ক্ষতি ছুঁয়েছে প্রায় ৫ হাজার কোটি রুপি।

gnewsদৈনিক ইত্তেফাকের সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
ভারতের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরের জুলাইয়ে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় নয়াদিল্লি বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভিসা কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। যদিও খুব সীমিত পরিসরে এখনো কিছু জরুরি ভিত্তির ভিসা দেওয়া হচ্ছে, তবে সেটির সংখ্যা নগণ্য।

এমন এক সময়ে, যখন করোনাকাল কাটিয়ে পর্যটন খাত কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিল, তখন এই ভিসা নিষেধাজ্ঞা নতুন করে বড় আঘাত হানে। এক বছর আগেও যেসব রাস্তাঘাট ছিল বাংলাদেশি পর্যটকে মুখর, আজ তা জনশূন্য। কম খরচে থাকা, ওপার বাংলার স্বাদবহুল খাবার এবং নিকটস্থ হাসপাতালের জন্য বিখ্যাত এই এলাকাগুলো পর্যটকদের অভাবে এখন নিস্তব্ধ।

কলকাতার ব্যবসায়ীদের সংগঠন ফ্রি স্কুল স্ট্রিট ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন জানায়, পর্যটন, হোটেল, রেস্তোরাঁ, ট্র্যাভেল এজেন্সি, মানি এক্সচেঞ্জ, চিকিৎসা সেবা এবং পরিবহন—সব মিলিয়ে এই অঞ্চলে প্রতিদিন প্রায় ৩ কোটি রুপির লেনদেন হতো। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলী খান বলেন, ‘শুধু নিউ মার্কেট ও বড়বাজার অঞ্চল যুক্ত করলে এই ক্ষতির পরিমাণ ৫ হাজার কোটি রুপি ছাড়িয়ে যাবে।’

বর্তমানে অনেক ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে, আর যারা টিকে আছে, তারাও বড় আর্থিক ক্ষতির মুখে। স্থানীয় এক ট্র্যাভেল কোম্পানির ব্যবস্থাপক প্রবীর বিশ্বাস বলেন, ‘আগে দিনে দিনে একাধিক বাসভর্তি পর্যটক আসত, এখন অনেক দিন একটিও দেখা যায় না।’ মুদ্রা বিনিময়ের ব্যবসাও মুখ থুবড়ে পড়েছে। মারকুইস স্ট্রিটের কারেন্সি এক্সচেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশন–এর সম্পাদক মোহাম্মদ ইন্তেজার বলেন, ‘আমরা সম্পূর্ণরূপে বাংলাদেশি পর্যটকদের ওপর নির্ভরশীল ছিলাম। এখন টিকে থাকাই কঠিন হয়ে পড়েছে।’

বেশ কিছু ছোট ও মাঝারি রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে গেছে। বড় রেস্তোরাঁগুলোর ব্যবসাও অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে। রাঁধুনি রেস্তোরাঁর মালিক এন সি ভৌমিক বলেন, ‘আমাদের আয় মাত্র ২০ শতাংশে এসে ঠেকেছে। এই অবস্থা বেশিদিন চললে আমাদের টিকে থাকাও অসম্ভব হয়ে পড়বে।’

শুধু ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানই নয়, পর্যটননির্ভর অনেক অনানুষ্ঠানিক খাতের মানুষের জীবনেও আঘাত হেনেছে এই সংকট। হোটেল কর্মী, গাইড, রাঁধুনি, গাড়িচালক থেকে শুরু করে হোম-স্টে অপারেটররাও উপার্জন হারিয়ে দিশেহারা। এলিয়ট রোডের বাসিন্দা ফারহান রসুল বলেন, ‘কোভিড পরবর্তী চাহিদা দেখে আমি দুটি গাড়িতে বিনিয়োগ করেছিলাম। মাসে এখন পাঁচ-ছয়ের বেশি বুকিং হয় না। অথচ প্রতি মাসে আমাকে দেড় লাখ রুপি কিস্তি পরিশোধ করতে হয়।’

বণিকেরা বলছেন, মহামারি-পরবর্তী ঘুরে দাঁড়ানোর আগেই আবারও এমন সংকট তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাকেই কঠিন করে তুলেছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা দ্রুত পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের আশায় প্রহর গুনছেন।


প্রিন্ট