ঢাকা ০৩:২৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo বাঞ্ছারামপুরে এমপি পদে লড়বেন যারা ১৩ প্রার্থীর মনোনয়ন দাখিল Logo টেন্ডারবাণিজ্যে শতকোটি টাকার মালিক গণপূর্তের আহসান হাবীব Logo ফ্যাসিবাদের দোসর ঠিকাদার সাইদুলের দাপটে অসহায় গণপূর্তের প্রকৌশলী ও ঠিকাদাররা Logo শোক সংবাদ Logo খালেদা জিয়া ছিলেন বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় Logo তার কৃতিত্ব কেউ কেড়ে নিতে পারবে না Logo বাংলাদেশের মানুষের কি মনে আছে ইনক্লাব মঞ্চের থেকে কি বলেছিল শহীদ হাদী ওয়াকারকে চ‍্যালেঞ্জ দিয়ে বলেছিলো—সাহস থাকলে ক‍্যু করে দেখান, জনগন আর্মি ক‍্যান্টনমেন্টের ইটসহ খুলে নিয়ে আসবে Logo আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে পাবনার পাঁচটি আসনে ৩২ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন Logo ভাঙ্গুড়ায় বিএনপি অফিসের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ মামলায় আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার Logo দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া, তীব্র শীতে কাঁপছে সারা দেশ

তার কৃতিত্ব কেউ কেড়ে নিতে পারবে না

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় ০৯:০০:৪৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫
  • ৬ ১৮৪৪.০০০ বার পড়া হয়েছে

দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার ব্যক্তিত্ব ও আভিজাত্য তাকে অনন্য উচ্চতায় আসীন করেছে। রাজনীতির বাঁকে বাঁকে তিনি নিজেকে তুলে ধরেছেন পরমতসহিষ্ণু এক দৃঢ়েচেতা দেশপ্রেমিক নেত্রী হিসেবে। ১৯৮২ সালে রাজনীতিতে যোগ দিয়ে ১৯৮৩ সালে স্বৈরশাসক এরশাদবিরোধী আন্দোলনে নামেন খালেদা জিয়া। তার নেতৃত্বে গঠিত হয় ৭ দলীয় ঐক্যজোট।

রাজনৈতিক গবেষকেরা বলছেন, মূলত তার নেতৃত্বই এরশাদের পতনে মুখ্য ভূমিকা রাখে। দীর্ঘ ৯ বছরের আন্দোলনে তিনি ‘আপসহীন নেত্রী’র পরিচিতি পান। নব্বইয়ের গণআন্দোলনের পর ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অভাবনীয় জনসমর্থন পেয়ে বিএনপি ক্ষমতায় আসে। খালেদা জিয়া দেশের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হন। পরে আরো দুবার তিনি প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন।

এ বিষয়ে লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ ‘খালেদা’ শীর্ষক গ্রন্থে লিখেছেন, ‘বাস্তবিক অর্থে তিনি ছিলেন একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচিত স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। তার এই কৃতিত্ব কেউ কেড়ে নিতে পারবে না।’

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবরআন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবর
গৃহবধূ থেকে রাজনীতিতে এসে এভাবে জায়গা করে নেওয়া, মুসলিমপ্রধান একটি দেশে একজন নারীর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বিষয়টিকে একটু ভিন্ন চোখে মূল্যায়ন করেছেন মরহুম সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ। ‘বেগম খালেদা জিয়া: জীবন ও সংগ্রাম’ বইয়ের ভূমিকায় মাহফুজ উল্লাহ লিখেছেন, ‘তিনি (খালেদা জিয়া) এমন একটি সময়ে স্বকীয় রাজনৈতিক অবস্থান তৈরি করেছেন, যখন পুরুষশাসিত সমাজের একচেটিয়া আধিপত্য ছিল।’

খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড কাছে থেকে ঘনিষ্ঠভাবে দেখেছেন এমন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, তার চরিত্রের বড় একটি দিক হলো, তিনি পরমতসহিষ্ণু ছিলেন। নিজে কম বলতেন, শুনতেন বেশি। তার চরিত্রের আরেকটি দিক ছিল বৃহত্তর স্বার্থে অন্য রাজনৈতিক দল-মতের সঙ্গে সমঝোতার প্রচেষ্টা। দেখা গেছে, রাষ্ট্রক্ষমতার চর্চায় তিনি দলীয় আদর্শের বিপরীতে গিয়ে কারও কারও সঙ্গে ‘সন্ধি’ করেছেন। সমঝোতা করে একসঙ্গে চলেছেন রাষ্ট্রক্ষমতার ভেতরে কিংবা বাইরে থেকে।

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার শোকখালেদা জিয়ার মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার শোক
আন্দোলন-সংগ্রামে খালেদা জিয়াকে আপসহীন ভূমিকায় দেখা গেলেও রাজনীতিতে ‘সংলাপ-সমঝোতার’ চিন্তাকে তিনি কখনো একেবারে নাকচ করে দেননি। প্রয়োজনে তিনি নিজের অবস্থান থেকে সরে আসতে পারতেন। যেমন নির্বাচনকালীন নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানে যুক্ত করার ক্ষেত্রে এমনটা দেখা যায়। এর সঙ্গে প্রথমে একমত ছিল না বিএনপি। পরবর্তী সময় জনদাবি মেনে তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানে যুক্ত করেন।

খালেদা জিয়ার সামগ্রিক রাজনৈতিক জীবন বিশ্লেষণ করে রাজনৈতিক ও গবেষকেরা বলছেন, দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পর রাষ্ট্রক্ষমতায় আরোহণ, পরবর্তী সময় জেল-জুলুম-নিগ্রহ, শেষ সময়ে অভূতপূর্ব রাষ্ট্রীয় সম্মান—সব মিলিয়ে খালেদা জিয়া বাংলাদেশের এক শক্তিশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বে পরিণত হন, যা তাকে ‘ঐক্যের প্রতীক’ করে তুলেছিল। আর রাষ্ট্র পরিচালনায় গণতন্ত্র বিনির্মাণ, জনপ্রত্যাশা পূরণ, প্রশাসনে সফল নেতৃত্ব, দুর্যোগ-দুর্বিপাক, বৈদেশিক সম্পর্কসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার ভূমিকা ছিল অতুলনীয়। খালেদা জিয়া ছিলেন একজন পরিস্থিতিবোদ্ধা নেতা। তিনি প্রয়োজন হলে নিজের ক্ষমতাকেও সীমাবদ্ধ করতে প্রস্তুত ছিলেন।

‘বেগম খালেদা জিয়া: জীবন ও সংগ্রাম’ গ্রন্থের ভূমিকায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর লিখেছেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া শুধু একজন ব্যক্তি নন, নিজ কর্মগুণে নিজেকে একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন। হয়ে উঠেছেন জীবন ইতিহাস। তবে বৈরী রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে গবেষণালব্ধ আলোচনা কমই হয়েছে।


প্রিন্ট
ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বাঞ্ছারামপুরে এমপি পদে লড়বেন যারা ১৩ প্রার্থীর মনোনয়ন দাখিল

তার কৃতিত্ব কেউ কেড়ে নিতে পারবে না

আপডেট সময় ০৯:০০:৪৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫

দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার ব্যক্তিত্ব ও আভিজাত্য তাকে অনন্য উচ্চতায় আসীন করেছে। রাজনীতির বাঁকে বাঁকে তিনি নিজেকে তুলে ধরেছেন পরমতসহিষ্ণু এক দৃঢ়েচেতা দেশপ্রেমিক নেত্রী হিসেবে। ১৯৮২ সালে রাজনীতিতে যোগ দিয়ে ১৯৮৩ সালে স্বৈরশাসক এরশাদবিরোধী আন্দোলনে নামেন খালেদা জিয়া। তার নেতৃত্বে গঠিত হয় ৭ দলীয় ঐক্যজোট।

রাজনৈতিক গবেষকেরা বলছেন, মূলত তার নেতৃত্বই এরশাদের পতনে মুখ্য ভূমিকা রাখে। দীর্ঘ ৯ বছরের আন্দোলনে তিনি ‘আপসহীন নেত্রী’র পরিচিতি পান। নব্বইয়ের গণআন্দোলনের পর ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অভাবনীয় জনসমর্থন পেয়ে বিএনপি ক্ষমতায় আসে। খালেদা জিয়া দেশের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হন। পরে আরো দুবার তিনি প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন।

এ বিষয়ে লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ ‘খালেদা’ শীর্ষক গ্রন্থে লিখেছেন, ‘বাস্তবিক অর্থে তিনি ছিলেন একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচিত স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। তার এই কৃতিত্ব কেউ কেড়ে নিতে পারবে না।’

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবরআন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবর
গৃহবধূ থেকে রাজনীতিতে এসে এভাবে জায়গা করে নেওয়া, মুসলিমপ্রধান একটি দেশে একজন নারীর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বিষয়টিকে একটু ভিন্ন চোখে মূল্যায়ন করেছেন মরহুম সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ। ‘বেগম খালেদা জিয়া: জীবন ও সংগ্রাম’ বইয়ের ভূমিকায় মাহফুজ উল্লাহ লিখেছেন, ‘তিনি (খালেদা জিয়া) এমন একটি সময়ে স্বকীয় রাজনৈতিক অবস্থান তৈরি করেছেন, যখন পুরুষশাসিত সমাজের একচেটিয়া আধিপত্য ছিল।’

খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড কাছে থেকে ঘনিষ্ঠভাবে দেখেছেন এমন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, তার চরিত্রের বড় একটি দিক হলো, তিনি পরমতসহিষ্ণু ছিলেন। নিজে কম বলতেন, শুনতেন বেশি। তার চরিত্রের আরেকটি দিক ছিল বৃহত্তর স্বার্থে অন্য রাজনৈতিক দল-মতের সঙ্গে সমঝোতার প্রচেষ্টা। দেখা গেছে, রাষ্ট্রক্ষমতার চর্চায় তিনি দলীয় আদর্শের বিপরীতে গিয়ে কারও কারও সঙ্গে ‘সন্ধি’ করেছেন। সমঝোতা করে একসঙ্গে চলেছেন রাষ্ট্রক্ষমতার ভেতরে কিংবা বাইরে থেকে।

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার শোকখালেদা জিয়ার মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার শোক
আন্দোলন-সংগ্রামে খালেদা জিয়াকে আপসহীন ভূমিকায় দেখা গেলেও রাজনীতিতে ‘সংলাপ-সমঝোতার’ চিন্তাকে তিনি কখনো একেবারে নাকচ করে দেননি। প্রয়োজনে তিনি নিজের অবস্থান থেকে সরে আসতে পারতেন। যেমন নির্বাচনকালীন নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানে যুক্ত করার ক্ষেত্রে এমনটা দেখা যায়। এর সঙ্গে প্রথমে একমত ছিল না বিএনপি। পরবর্তী সময় জনদাবি মেনে তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানে যুক্ত করেন।

খালেদা জিয়ার সামগ্রিক রাজনৈতিক জীবন বিশ্লেষণ করে রাজনৈতিক ও গবেষকেরা বলছেন, দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পর রাষ্ট্রক্ষমতায় আরোহণ, পরবর্তী সময় জেল-জুলুম-নিগ্রহ, শেষ সময়ে অভূতপূর্ব রাষ্ট্রীয় সম্মান—সব মিলিয়ে খালেদা জিয়া বাংলাদেশের এক শক্তিশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বে পরিণত হন, যা তাকে ‘ঐক্যের প্রতীক’ করে তুলেছিল। আর রাষ্ট্র পরিচালনায় গণতন্ত্র বিনির্মাণ, জনপ্রত্যাশা পূরণ, প্রশাসনে সফল নেতৃত্ব, দুর্যোগ-দুর্বিপাক, বৈদেশিক সম্পর্কসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার ভূমিকা ছিল অতুলনীয়। খালেদা জিয়া ছিলেন একজন পরিস্থিতিবোদ্ধা নেতা। তিনি প্রয়োজন হলে নিজের ক্ষমতাকেও সীমাবদ্ধ করতে প্রস্তুত ছিলেন।

‘বেগম খালেদা জিয়া: জীবন ও সংগ্রাম’ গ্রন্থের ভূমিকায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর লিখেছেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া শুধু একজন ব্যক্তি নন, নিজ কর্মগুণে নিজেকে একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন। হয়ে উঠেছেন জীবন ইতিহাস। তবে বৈরী রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে গবেষণালব্ধ আলোচনা কমই হয়েছে।


প্রিন্ট