সহিংসতা বন্ধে আসিয়ান-জান্তা সমঝোতা প্রত্যাখ্যান করল মিয়ানমারের জনতা
- আপডেট টাইম : ০৮:৩৫:৪৭ পূর্বাহ্ণ, রবিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২১
- / ২৪৫ ৫০০০.০ বার পাঠক
আন্তর্জাতিক রিপোর্ট।।
সহিংসতায় জর্জরিত মিয়ানমারের সংকট নিরসনে জান্তাপ্রধান ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর নেতাদের মধ্যে যে সমঝোতা হয়েছে তাতে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও বেসামরিক নাগরিক হত্যায় সেনাবাহিনীকে জবাবদিহি করার প্রসঙ্গগুলো স্থান না পাওয়ায় এর কড়া সমালোচনা করছে মিয়ানমারের জনগণ।
শনিবার ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় জ্যেষ্ঠ জেনারেল মিন অং হ্লাইংকে সঙ্গে নিয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনসের (আসিয়ান) বৈঠকে মিয়ানমারে সহিংসতা বন্ধে ঐক্যমত্য হলেও কিভাবে তা অর্জিত হবে তার কোনো রোডম্যাপ দেওয়া হয়নি।
মিয়ানমারের অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসিয়ানের বৈঠকে হওয়া সমঝোতার সমালোচনা করলেও রবিবার দেশটির বড় শহরগুলোতে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো বিক্ষোভের খবর পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
“আসিয়ানের বিবৃতি নির্যাতিত, হত্যাকাণ্ডের শিকার ও সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ডে সন্ত্রস্ত জনগণের মুখে চপেটাঘাত। এমন মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গি থাকলে আপনাদের সহযোগিতার দরকার নেই আমাদের,” বলেছেন মওচি তুন নামে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী।
দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার ১০ দেশের জোট আসিয়ানের বর্তমান চেয়ার ব্রুনেই এক বিবৃতিতে শনিবারের বৈঠকে পাঁচটি পয়েন্টে ঐক্যমত্য হয়েছে বলে জানায়। এগুলো হল- সহিংসতা বন্ধ, সবপক্ষের মধ্যে গঠনমূলক আলোচনা, আলোচনার মধ্যস্থতায় আসিয়ানের পক্ষ থেকে বিশেষ দূত মনোনয়ন, সহায়তা নেওয়া ও বিশেষ দূতের মিয়ানমার সফর।
এই পাঁচ পয়েন্টের মধ্যে বন্দি রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের প্রসঙ্গটি স্থান না পেলেও বৈঠক তাদের মুক্তির ‘ডাক শুনেছে’ বলেও আসিয়ান চেয়ারম্যানের বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
আসিয়ান নেতারা মূলত হ্লাইংয়ের কাছ থেকে তার নিয়ন্ত্রণাধীন নিরাপত্তা বাহিনীর সংযত থাকার প্রতিশ্রুতি আদায় করতে বেশি সচেষ্ট ছিলেন। মিয়ানমারে গত ১ ফেব্রুয়ারি গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলের পর দেশজুড়ে বিক্ষোভ ও আইন অমান্যের যে আন্দোলন শুরু হয় তা দমনে নিরাপত্তা বাহিনী এখন পর্যন্ত ৭৪৮ জনকে হত্যা করেছে বলে জানিয়েছে অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিকাল প্রিজনার্স (এএপিপি)।
বিক্ষোভ দমনে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী এখন পর্যন্ত ৩৩০০ জনেরও বেশি লোককে আটক করেছে বলেও জানিয়েছে তারা।
“বন্দি ও আটক ব্যক্তিদের মুক্তি, প্রাণহানির ঘটনার জবাবদিহিতা, নির্বাচনের ফলাফলের প্রতি শ্রদ্ধা এবং গণতান্ত্রিক বেসামরিক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা- জনগণের কোনো আকাঙ্ক্ষারই প্রতিফলন দেখা যায়নি বিবৃতিতে,” আসিয়ানের বৈঠকে হওয়া সমঝোতা নিয়ে মিয়ানমারের স্থানীয় একটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে করা মন্তব্যে এমনটাই বলেছেন নাং থিট লুইন।
“সাতশর বেশি নিরীহ প্রাণের মূল্য কে চুকাবে,” প্রশ্ন ছুড়েছেন ফেসবুক ব্যবহারকারী অ্যারন হাতুই।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তাদের অভ্যুত্থানের পক্ষে দেশটিতে গত বছরের সাধারণ নির্বাচনে তাদের কথিত ‘ব্যাপক ভোট জালিয়াতিকে’ কারণ দেখাচ্ছে।
নবেম্বরের ওই নির্বাচনে অং সান সুচির দল নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করেছিল। দেশটির নির্বাচন কমিশন পরে ভোটে জালিয়াতির অভিযোগ খারিজও করে দিয়েছিল।
আসিয়ানের এবারের সম্মেলনটি ছিল মিয়ানমারের সংকট নিরসনে প্রথম কোনো সমন্বিত আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা। অভ্যুত্থানের পর থেকে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দরিদ্র দেশটি টালমাটাল দিন কাটাচ্ছে। বিক্ষোভ, মৃত্যু, গ্রেফতারের পাশাপাশি দেশজুড়ে ধর্মঘট মিয়ানমারের অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে পঙ্গু করে দিয়েছে।
অভ্যুত্থানে উৎখাত হওয়া পার্লামেন্ট সদস্যদের একাংশ, গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলনের সুপরিচিত মুখ ও বিভিন্ন জাতিগত সংখ্যালঘু নেতাদের নিয়ে গঠিত ‘জাতীয় ঐক্য সরকার’ আসিয়ানের বৈঠকে হওয়া সমঝোতাকে স্বাগত জানিয়েছে।
“আসিয়ান তার সিদ্ধান্তের অনুসরণে এবং আমাদের দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় দৃঢ় ও কার্যকর পদক্ষেপ নেবে তা দেখতে তাকিয়ে আছি আমরা,” বলেছেন ঐক্য সরকারের মুখপাত্র ড. সাসা।
জাকার্তার বৈঠকে মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান ছাড়াও ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, কম্বোডিয়া ও ব্রুনেইয়ের শীর্ষ নেতারা ছিলেন। লাওস, থাইল্যান্ড ও ফিলিপিন্স থেকে ছিলেন দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।