ঢাকা ০২:৫২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ২০ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo ফরিদপুরে চেয়ারম্যানের শেল্টারে চায়না দুয়ারি জালের কারখানার রমরমা ব্যবসা, প্রশাসনের অভিযানে নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থা Logo রয়টার্সের প্রতিবেদন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সালিশের দ্বারস্থ হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে আদানি গ্রুপ Logo টানা কমছে দেশের রপ্তানি আয়, সামনে আরও কমার আশঙ্কা Logo বিএনপির ফাঁকা রাখা ৬৩ আসনে অগ্রাধিকার পাবেন যারা Logo আরপিও সংশোধন অধ্যাদেশ জারি জোট করলেও নিজ দলের প্রতীকেই ভোট করতে হবে Logo আশুলিয়া সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ৬ দলিল লেখক বরখাস্ত Logo সাভারে ট্রলি ভ্যানের ব্রেক ফেল আয়ারল্যান্ডের ওপরে এসে গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ Logo তৌহিদুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে ঘুষ বানিজ্যের অভিযোগ Logo ৪৮ তম বিসিএস পরীক্ষায় উওীর্ণদের নিয়োগ এর দাবি তে মানববন্ধন Logo বিএনপির প্রার্থী তালিকায় নেই রুমিন ফারহানার পদত্যাগ করেন

২২০ টাকায় পুলিশে চাকরি, অভাবের সংসারে স্বপ্নপূরণ

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৭:১২:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ৮৩ ১০.০০০ বার পড়া হয়েছে

অর্থের বিনিময়ে নয়, মেধা আর যোগ্যতা দিয়েই পুলিশে চাকরি পাওয়া যায়- এমনটাই প্রমাণ করে দেখালেন ফরিদপুরের ২৩ জন তরুণ-তরুণী। তাদের মধ্যে অনেকেই এসেছেন দরিদ্র পরিবার থেকে। মাহিন্দ্রা চালকের মেয়ে তন্দ্রা আক্তার, ট্রাকচালকের ছেলে তামিম মণ্ডল এবং কৃষি শ্রমিকের ছেলে সিয়াম মোল্যার মতো অনেকেই মাত্র ২২০ টাকার সরকারি ফি জমা দিয়ে নিজেদের স্বপ্নপূরণ করেছেন। তাদের এ সাফল্য পরিবার এবং সমাজের চোখে এনেছে এক নতুন দিন।

অভাবের সংসারে স্বপ্নপূরণ

ফরিদপুর জেলা সদরের ঘনশ্যামপুর গ্রামের বাসিন্দা তন্দ্রা আক্তার (১৮)। তার বাবা একজন মাহিন্দ্রা চালক। সমাজে একটি ধারণা প্রচলিত ছিল যে, টাকা ছাড়া পুলিশের চাকরি হয় না; কিন্তু তন্দ্রা তার মেধা ও যোগ্যতার ওপর ভরসা রেখেছিলেন। আর তাই তার স্বপ্নপূরণ হয়েছে।

তন্দ্রা বলেন, মানুষ বলাবলি করত টাকা ছাড়া পুলিশে চাকরি হবে না। আমার বাবার পক্ষে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা জোগাড় করা সম্ভব ছিল না; কিন্তু আমার যোগ্যতার মূল্যায়ন করা হয়েছে। মাত্র ২২০ টাকায় চাকরিটা হয়েছে। একজন পুলিশ সদস্য হিসেবে বাবার পাশে দাঁড়াতে পেরে আমি গর্বিত।

কৃষি শ্রমিকের ছেলের অদম্য লড়াই

সিয়াম মোল্যা। যার বাবা একজন কৃষি শ্রমিক। তিনি মৌখিক পরীক্ষার সময় বন্ধুর পোশাক ধার করে এসেছিলেন। অভাবের সাথে তার লড়াই যেন অন্য সবার চেয়ে বেশি ছিল।

সিয়াম বলেন, ছোটবেলা থেকে আমার স্বপ্ন ছিল পুলিশ হওয়ার। বাবার সাথে কৃষিকাজ করে পড়াশোনা করেছি। আজ আমার মেধাকে মূল্যায়ন করা হয়েছে। এ সাফল্য আমি আমার বাবার হাত ধরেই পেয়েছি।

ট্রাকচালকের ছেলের ইচ্ছাপূরণ

জেলা শহরের রঘুনন্দনপুর এলাকার ট্রাকচালকের ছেলে তামিম মণ্ডলও মাত্র ২২০ টাকায় চাকরি পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তার চোখে-মুখে ছিল বাবার অক্লান্ত পরিশ্রমের প্রতি কৃতজ্ঞতা। ছোটবেলা থেকেই পুলিশে চাকরির ইচ্ছাপূরণ হয় তার।

ফরিদপুর পুলিশ সুপার কার্যালয় সূত্র অনুযায়ী এ বছর কনস্টেবল পদে ফরিদপুর থেকে ১ হাজার ২১১ জন আবেদন করেছিলেন। কঠিন শারীরিক ও লিখিত পরীক্ষার ধাপ পেরিয়ে মাত্র ২৩ জনকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করা হয়েছে। এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আব্দুল জলিল কঠোর ভূমিকা পালন করেছেন।

পুলিশ সুপার জানান, পুলিশের নিয়োগ নিয়ে নানা অভিযোগ থাকলেও আমরা ফরিদপুরে মেধা ও যোগ্যতাকে একমাত্র ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করেছি। আমরা কারও পারিবারিক পরিচয় দেখিনি। যারা নির্বাচিত হয়েছে, প্রত্যেকেই তাদের নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে চাকরি পেয়েছে।

তিনি আরও জানান, এই ২৩ জন তরুণ-তরুণীর সাফল্য প্রমাণ করে যে, সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে এবং স্বচ্ছতা বজায় রাখলে যোগ্যতার ভিত্তিতেই সরকারি চাকরি পাওয়া সম্ভব। তাদের গল্পগুলো অসংখ্য স্বপ্ন দেখা মানুষকে অনুপ্রেরণা জোগাবে, যারা শুধু মেধা আর পরিশ্রমকে পুঁজি করে নিজেদের ভাগ্য বদলাতে চায়।


প্রিন্ট
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

ফরিদপুরে চেয়ারম্যানের শেল্টারে চায়না দুয়ারি জালের কারখানার রমরমা ব্যবসা, প্রশাসনের অভিযানে নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থা

২২০ টাকায় পুলিশে চাকরি, অভাবের সংসারে স্বপ্নপূরণ

আপডেট সময় ০৭:১২:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

অর্থের বিনিময়ে নয়, মেধা আর যোগ্যতা দিয়েই পুলিশে চাকরি পাওয়া যায়- এমনটাই প্রমাণ করে দেখালেন ফরিদপুরের ২৩ জন তরুণ-তরুণী। তাদের মধ্যে অনেকেই এসেছেন দরিদ্র পরিবার থেকে। মাহিন্দ্রা চালকের মেয়ে তন্দ্রা আক্তার, ট্রাকচালকের ছেলে তামিম মণ্ডল এবং কৃষি শ্রমিকের ছেলে সিয়াম মোল্যার মতো অনেকেই মাত্র ২২০ টাকার সরকারি ফি জমা দিয়ে নিজেদের স্বপ্নপূরণ করেছেন। তাদের এ সাফল্য পরিবার এবং সমাজের চোখে এনেছে এক নতুন দিন।

অভাবের সংসারে স্বপ্নপূরণ

ফরিদপুর জেলা সদরের ঘনশ্যামপুর গ্রামের বাসিন্দা তন্দ্রা আক্তার (১৮)। তার বাবা একজন মাহিন্দ্রা চালক। সমাজে একটি ধারণা প্রচলিত ছিল যে, টাকা ছাড়া পুলিশের চাকরি হয় না; কিন্তু তন্দ্রা তার মেধা ও যোগ্যতার ওপর ভরসা রেখেছিলেন। আর তাই তার স্বপ্নপূরণ হয়েছে।

তন্দ্রা বলেন, মানুষ বলাবলি করত টাকা ছাড়া পুলিশে চাকরি হবে না। আমার বাবার পক্ষে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা জোগাড় করা সম্ভব ছিল না; কিন্তু আমার যোগ্যতার মূল্যায়ন করা হয়েছে। মাত্র ২২০ টাকায় চাকরিটা হয়েছে। একজন পুলিশ সদস্য হিসেবে বাবার পাশে দাঁড়াতে পেরে আমি গর্বিত।

কৃষি শ্রমিকের ছেলের অদম্য লড়াই

সিয়াম মোল্যা। যার বাবা একজন কৃষি শ্রমিক। তিনি মৌখিক পরীক্ষার সময় বন্ধুর পোশাক ধার করে এসেছিলেন। অভাবের সাথে তার লড়াই যেন অন্য সবার চেয়ে বেশি ছিল।

সিয়াম বলেন, ছোটবেলা থেকে আমার স্বপ্ন ছিল পুলিশ হওয়ার। বাবার সাথে কৃষিকাজ করে পড়াশোনা করেছি। আজ আমার মেধাকে মূল্যায়ন করা হয়েছে। এ সাফল্য আমি আমার বাবার হাত ধরেই পেয়েছি।

ট্রাকচালকের ছেলের ইচ্ছাপূরণ

জেলা শহরের রঘুনন্দনপুর এলাকার ট্রাকচালকের ছেলে তামিম মণ্ডলও মাত্র ২২০ টাকায় চাকরি পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তার চোখে-মুখে ছিল বাবার অক্লান্ত পরিশ্রমের প্রতি কৃতজ্ঞতা। ছোটবেলা থেকেই পুলিশে চাকরির ইচ্ছাপূরণ হয় তার।

ফরিদপুর পুলিশ সুপার কার্যালয় সূত্র অনুযায়ী এ বছর কনস্টেবল পদে ফরিদপুর থেকে ১ হাজার ২১১ জন আবেদন করেছিলেন। কঠিন শারীরিক ও লিখিত পরীক্ষার ধাপ পেরিয়ে মাত্র ২৩ জনকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করা হয়েছে। এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আব্দুল জলিল কঠোর ভূমিকা পালন করেছেন।

পুলিশ সুপার জানান, পুলিশের নিয়োগ নিয়ে নানা অভিযোগ থাকলেও আমরা ফরিদপুরে মেধা ও যোগ্যতাকে একমাত্র ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করেছি। আমরা কারও পারিবারিক পরিচয় দেখিনি। যারা নির্বাচিত হয়েছে, প্রত্যেকেই তাদের নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে চাকরি পেয়েছে।

তিনি আরও জানান, এই ২৩ জন তরুণ-তরুণীর সাফল্য প্রমাণ করে যে, সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে এবং স্বচ্ছতা বজায় রাখলে যোগ্যতার ভিত্তিতেই সরকারি চাকরি পাওয়া সম্ভব। তাদের গল্পগুলো অসংখ্য স্বপ্ন দেখা মানুষকে অনুপ্রেরণা জোগাবে, যারা শুধু মেধা আর পরিশ্রমকে পুঁজি করে নিজেদের ভাগ্য বদলাতে চায়।


প্রিন্ট