চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলার বিতারা ইউনিয়নের মাঝিগাছা গ্রামে ভিন্নধর্মী ইসলামী তরিকত চর্চার কারণে মাসুদ মোল্লা ও আবুল বাশার নামের দুই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। অভিযোগ রয়েছে, গ্রামের একদল মৌলবাদী উগ্রপন্থী ব্যক্তি তাদের প্রাণনাশ ও বাড়িঘর আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন।
ধর্মচর্চায় বাধা, প্রাণনাশের হুমকি
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাসুদ মোল্লা ও আবুল বাশার দীর্ঘদিন ধরে আধ্যাত্মিক ধারার একটি তরিকত অনুসরণ করে আসছেন। তবে গ্রামের একাংশ তাদের এই ভিন্নমত ও ধর্মচর্চাকে “ভ্রান্ত মতবাদ” আখ্যা দিয়ে সহ্য করতে পারছে না। তাদের হুমকি দেওয়া হয়েছে—“এই মতবাদ চলবে না, বন্ধ না করলে জবাই করে ফেলা হবে।”
অভিযুক্ত উগ্রপন্থী ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন: কামাল মোল্লা, জিলানী মোল্লা, ফারুক মোল্লা, মোস্তাক মিয়াজী, আরিফ শিকদার, হালিম শিকদার, মসজিদের সভাপতি মোজাম্মেল হক, কৃষি ব্যাংকের পিয়ন বাদশা মিয়া, হোসেন মিয়া, শফিক খলিফা, মাসুদ খলিফা, শরীফ শিকদার, লিটন মোল্লা, আরিফ মোল্লা, আবুল হোসেন পাটোয়ারী, মসজিদের ইমাম এসাহাক প্রধান, জিসান প্রধান, মোবারক মোল্লা, ইমান মোল্লা, রুবেল শিকদার, মোস্তাক এবং বকাটে হাসান মিয়া।
ভুক্তভোগীদের বক্তব্য
মাসুদ মোল্লা বলেন,
> “আমরা কারো ক্ষতি করিনি, কেবল আল্লাহর প্রেমে ইবাদত করি। অথচ এখন ধর্মচর্চার কারণেই প্রাণনাশের হুমকি পাচ্ছি। ভয়ে পরিবারসহ রাতের আঁধারে গ্রাম ত্যাগ করে ঢাকায় চলে এসেছি।”
আবুল বাশার জানান,
> “রাতে ঘুমাতেও পারছিলাম না। আমি আমার স্ত্রী ও দশ বছরের ছেলেকে ফেলে রেখে প্রথমে পালিয়ে এসেছি। এখন পরিবারও ঘর ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।”
আজ (৬ আগস্ট) সকালে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ভুক্তভোগীরা মানববন্ধন করে। এসময় তাঁরা প্রধান উপদেষ্টা ডা. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জান-মাল ও বসতবাড়ির নিরাপত্তার দাবি জানান।
প্রশাসনের বক্তব্য
কচুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন,
> “এখনও লিখিত কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিক্রিয়া
হিউম্যান এইড অ্যান্ড ট্রাস্ট ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বলেন,
> “ঘটনাটি স্পষ্টভাবে ধর্মীয় স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের অধিকারের বিরুদ্ধে হুমকি। আমরা প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ ও স্বচ্ছ তদন্ত দাবি করছি।
—
প্রশ্ন উঠছে—বাংলাদেশে কি কেউ ভিন্নমত নিয়ে নিরাপদে বাঁচতে পারবে না?
এই ঘটনা শুধু একটি গ্রামের চিত্র নয়; বরং গোটা দেশের ধর্মীয় সহনশীলতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও নাগরিক নিরাপত্তা নিয়ে বড় প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছে।
প্রিন্ট
প্রতিবেদক: শোয়েব হোসেন 




















