বরগুনার পাথরঘাটায় মাদক সেবীর দাবী কৃত চাঁদা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় বিজয় কৃষ্ণ হালদার (৭০) নামের অবসরপ্রাপ্ত এক শিক্ষককে লোহার পাইপ দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত কারার অভিযোগ পাওয়া গেছে কাকচিড়া ইউনিয়ন কৃষক দলের সহ-সভাপতি ইদ্রিসের বিরুদ্ধে ।
এসময়ে শিক্ষকের বসত ঘরের আসবাবপত্র ব্যাপক ভাংচুর করা হয়।
গুরতর আহত অবস্থায় শিক্ষককে পাথরঘাটা হাসপাতাল থেকে বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বিজয় কৃষ্ণ হালদার বর্তমানে পল্লি চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত আছেন।
৪ আগস্ট সোমবার বেলা সাড়ে ১০ টার দিকে পাথরঘাটা কাকচিড়া ইউনিয়নের রুপধন বাজারে তার প্রতিবেশী মাদকাসক্ত ইদ্রিস মুন্সী (৪০) নামের এক যুবক এই হামলা চালায়।
আহত শিক্ষক অভিযোগ করেন, তিনি রুপধন মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে অবসর নেয়ার পর পল্লী চিকিৎসক হিসাবে রুপধন বাজারে তার নিজ বাসায় চেম্বার করে লোকজনদের ফ্রি চিকিৎসা প্রদান করে আসছেন।
রোববার রাত ১২টার দিকে ইদ্রিস মুন্সী তার কিছু লোকজন নিয়ে বিজয় কৃষ্ণ হালদারের বাসায় আসেন। এবং ইদ্রিসের মা অসুস্থতার কথা বলে শিক্ষককে ইদ্রিস তার বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এসময় ইদ্রিসের কথাবার্তা অসংলগ্ন দেখে গভীর রাতে ইদ্রিসের সাথে তার বাড়িতে যেতে অপারগতা প্রকাশ করেন শিক্ষক বিজয় কৃষ্ণ হালদার । এতে ইদ্রিস ক্ষেপে গিয়ে শিক্ষককে দেখে নেয়ার হুমকি দেয়। পরে ৪ আগস্ট (সোমবার) সকালে ইদ্রিস শিক্ষকের বাড়িতে এসে তাকে মারধর করে একটি হাত ভেঙ্গে দেয় এবং ঘরের আসবাবপত্র ব্যাপক ভাংচুর চালায়।
স্থানীয় জালাল বিশ্বাস জানান, ঘটনার সময় আমরা ইদ্রিসকে থামানোর চেষ্টা করছি। তিনি মাদক আসক্ত হওয়ায় বেপরোয়া ছিল। হাতে মোটরসাইকেলের হ্যান্ডেলের রড (জাম্পার) দিয়ে পিটিয়ে স্যারের দুই হাত ভেঙ্গে দিয়েছে। এবং ঘরের মধ্যে যত আসবাবপত্র ছিল তা ভেঙ্গে তছনছ করেছে। সে মাদকের পাইকারি ডিলার হিসাবে এলাকায় পরিচিত। এধরনের ঘটনা সে নিয়মিত করে থাকে। আমরা শিক্ষকের ওপর হামলার কঠোর বিচার দাবী করি। তিনি আরো বলেন, এলাকার লোকজন ঐক্যবদ্ধ হয়ে ইদ্রিসকে ধরতে গেলে সে খাল সাতরিয়ে পালিয়ে গেছে।
সোমবার বিকেলে সরেজমিন রূপধন বাজারে গিয়ে
জানা গেছে ৫ আগস্টের পরে নাম বিহীন গোপনে একটি চিরকুট দেওয়া হয়েছিল উল্লেখিত বিজয় কৃষ্ণ হালদারকে।
ওই চিরকুটে ১০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়েছিল, পরে বিভিন্ন সময়ে উল্লেখিত শিক্ষকের কাছে চাঁদা চাওয়া হয়েছে সর্বশেষ তার কাছে ২ লক্ষ টাকা চাঁদা চাওয়া হয়েছিল।
এলাকাবাসী বলেন ইদ্রিসের দাবিকৃত চাঁদা না দেয়ার কারণেই শিক্ষকের উপর অতর্কিত হামলা চালায় ইদ্রিস।
তারা বলেন চলতি বছরের ২০ এপ্রিল কাকচিড়া ইউনিয়ন কৃষক দলের কমিটি অনুমোদন হলে ওই কমিটিতে ইদ্রিস কাকচিড়া ইউনিয়ন কৃষক দলের সহ-সভাপতি পদ প্রাপ্ত হন। তিনি কাকচিড়া ইউনিয়নের কৃষক দলের সহ-সভাপতি পদ পাওয়ার পরে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে বিভিন্ন স্থানে চাঁদা দাবি করেন ইদ্রিসের হাত থেকে রক্ষা পায়নি কৃষকরা, কৃষকদের কাছেও তিনি চাঁদা দাবি করেছেন।
এদিকে গরিবের ডাক্তার হিসেবে পরিচিত অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বিজয় কৃষ্ণ হালদার এর উপর হামলার ঘটনায় ফুঁসে উঠছে এলাকাবাসী।
এ ঘটনায় ইদ্রিসের বিচারের দাবিতে মঙ্গলবার
সকালে রুপধন আমীরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন সড়কে ও দুপুর ১২ টায় পাথরঘাটা গোল চত্বরসহ একাধিক স্থানে মানববন্ধন করেছেন উপজেলার শিক্ষক শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের সহস্রাদিক সাধারণ মানুষ।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন ইসলামী আন্দোলনের বরগুনা ২ আসনের মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী মিজানুর রহমান কাসেমী, হাজী জালাল উদ্দিন সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষক মোঃ মশিউর রহমান , বীর মুক্তিযুদ্ধা মনিমন্ডল,ইউপি সদস্য, আব্দুস ছত্তার মন্টু, সাবেক ইউপি সদস্য বিএনপি নেতা মকবুল হোসেন মিলন, প্রমুখ।
জানতে চাইলে পাথরঘাটা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোঃ শামীম আহসান বলেন একজন প্রবীন শিক্ষকের গায়ে হাত দেয়ার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই, তিনি বলেন এই ঘটনায় অপরাধী মাদকাসক্ত ইদ্রিসের দৃষ্টান্তমূল বিচার না হলে আমরা কঠোর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হব।
এ ব্যাপারে পাথরঘাটা থানার ওসি মোঃ মেহেদী হাসান এর কাছে জানতে চাইলে , তিনি বলেন উল্লেখিত ঘটনায় মামলা হয়েছে এবং আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
প্রিন্ট