ঢাকা ০৬:২০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৫, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo পাবনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রধান নাজিরের বদলী নিয়ে চরম অসন্তোষ Logo মহম্মদপুরে বিএনপি’র নির্বাচনী পথ সভা অনুষ্ঠিত Logo পীরগঞ্জে বিএনপির উদ্যোগে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প অনুষ্ঠিত Logo দেশের ধন্যাঢ্য ব্যক্তিরাও প্রতারণার শিকার অনিক ও সোহেলের ভুয়া “প্রাচীন পিলার ও কয়েন” চক্র Logo দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই প্রায় অর্ধশত বদলি বানিজ্য পিএইচডি জালিয়াতি-বদলি বানিজ্য-ঠিকাদারি সিন্ডিকেটের মূলহোতা খালেকুজ্জামান চৌধুরী Logo কাচিঘাটা রেঞ্জে গাছকাটা সিন্ডিকেটের তাণ্ডব রাতে চার–পাঁচশ গাছ উজাড়—বন রক্ষাকারীরাই অভিযুক্ত!** স্থানীয়দের অভিযোগ: “৫ আগস্টের পর এলাকা একেবারে মগের মুল্লুক—বন কেটে লুটে খাচ্ছে সবাই Logo চীনে ট্রেন দুর্ঘটনায় ১১ জন নিহত Logo ১২ ঘণ্টায় দ্বিতীয়বার ভূমিকম্পে কাঁপল ইন্দোনেশিয়া Logo প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির মামলা জয় ও পুতুলের ৫ বছরের কারাদণ্ড Logo তিন মামলায় হাসিনার ২১ বছরের কারাদণ্ড

হাসিনার গুলির নির্দেশসহ ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ডিং যেভাবে যাচাই করেছে বিবিসি

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৬:৩৬:১৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫
  • ১৭১ ১৮৪৪.০০০ বার পড়া হয়েছে

ছবি: সংগৃহীত

গত বছর শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন গণ-আন্দোলন দমাতে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ তৎকালীন ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই দিয়েছিলেন বলে তার সে সময়ের কথোপকথনের ফাঁস হওয়া একটি অডিও রেকর্ডিং থেকে জানা গেছে।

চলতি বছরের মার্চে অনলাইনে ফাঁস হওয়া ওই অডিও রেকর্ডিং যাচাই করেছে বিবিসি আই ও বিবিসি বাংলার অনুসন্ধানী টিম। তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার’ করার জন্য নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে নির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা।

নির্দেশনায় বলা হয়, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা আন্দোলনকারীদের ‘যেখানে পাবে, সোজা গুলি করবে’।

অজ্ঞাতনামা একজন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে শেখ হাসিনার সেই কথোপকথনের ফাঁস হওয়া অডিওটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ যে, তিনি সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের গুলি করার জন্য সরাসরি নির্দেশনা দিয়েছিলেন।

জাতিসংঘের তদন্তকারী দলের তথ্যমতে, গত জুলাই-আগস্টের ওই আন্দোলন ও সহিংসতায় অন্তত ১,৪০০ জন মানুষ প্রাণ হারান।

মানবতাবিরোধী অপরাধের একাধিক অভিযোগে হাসিনার বিরুদ্ধে যে বিচার শুরু হয়েছে, সেখানে অডিও এই রেকর্ডিংটি গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করার পরিকল্পনা করছেন বাংলাদেশের বিশেষ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটররা।

তবে গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। টেপ রেকর্ডিংটি সত্য কি-না, তা আমরা নিশ্চিত করতে পারছি না বলে বিবিসি‘কে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের একজন মুখপাত্র। ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ডিংটি ‘শেখ হাসিনার বেআইনি কোনো উদ্দেশ্যের প্রতিফলন ঘটায় না বলেও মন্তব্য করেছেন তারা।

অডিও রেকর্ডিংটি যেভাবে যাচাই করেছে বিবিসি

ফাঁস হওয়া অডিওটি সম্পর্কে জানেন এমন একটি সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, গত ১৮ জুলাই নিজের সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে শেখ হাসিনা ওই ফোনালাপটি করেন।

চলতি বছরের মার্চের শুরুতে ফোনালাপের অডিওটি কে ফাঁস করেছে তা স্পষ্ট নয়। বিক্ষোভের পর থেকে হাসিনার কলের অসংখ্য ক্লিপ অনলাইনে প্রকাশিত হয়েছে যার অনেকগুলোই যাচাই করা হয়নি।

১৮ জুলাইয়ের ফাঁস হওয়া রেকর্ডিংয়ের কণ্ঠের সঙ্গে শেখ হাসিনার কণ্ঠস্বরের মিল শনাক্ত করেছে বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ।

বিবিসি আলাদাভাবে ইয়ারশটের অডিও ফরেনসিক এক্সপার্টদের দিয়ে এই রেকর্ডিংয়ের সত্যতা যাচাই করেছে এবং তারা এটিতে এডিট করার বা কোনো রকম পরিবর্তন করার কোনো প্রমাণ পায়নি। অডিওটি কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়েছে এমন সম্ভাবনাও খুবই কম বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

মানবাধিকার বা পরিবেশ রক্ষার ইস্যুতে অডিও সংক্রান্ত তদন্তের কাজ করে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ইয়ারশট।

তারা বলছে, ফাঁস হওয়া রেকর্ডিংটি সম্ভবত এমন একটি ঘরে ধারণ করা হয়েছিল যেখানে ফোন কলটি স্পিকারে বাজানো হয়েছিল। কারণ এতে স্বতন্ত্র টেলিফোনিক ফ্রিকোয়েন্সি এবং ব্যাকগ্রাউন্ডে কিছু শব্দ ছিল।

ইয়ারশটের বিশেষজ্ঞরা রেকর্ডিংজুড়ে ইলেকট্রিক নেটওয়ার্ক ফ্রিকোয়েন্সি বা ইএনএফ শনাক্ত করেছে, যে ফ্রিকোয়েন্সি অন্য একটি ডিভাইস থেকে অডিও রেকর্ডিংয়ের ক্ষেত্রে প্রায়ই উপস্থিত থাকে। এটি এমন এক সূচক যার মানে হলো অডিওটিতে হেরফের করা হয়নি।

তারা শেখ হাসিনার বক্তব্যে ছন্দ, স্বর এবং শ্বাসের শব্দ বিশ্লেষণ করেছে এবং ধারাবাহিক নয়েজের স্তরও শনাক্ত করেছে। অডিওতে কৃত্রিম কোনো পরিবর্তন আনার প্রমাণও খুঁজে পায়নি।

ব্রিটিশ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনজীবী টবি ক্যাডম্যান বিবিসিকে বলেছেন, রেকর্ডিংগুলো তার (শেখ হাসিনার) ভূমিকা প্রমাণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এগুলো স্পষ্ট এবং সঠিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে এবং অন্যান্য প্রমাণ দ্বারা সমর্থিত।

তিনি বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন যেখানে শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে মামলা চলছে। আইসিটি মোট ২০৩ জনকে অভিযুক্ত করেছে, যার মধ্যে ৭৩ জন গ্রেফতার রয়েছেন। আন্দোলনে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও বাংলাদেশের আদালতে বিচার চলছে।

তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা


প্রিন্ট
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

পাবনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রধান নাজিরের বদলী নিয়ে চরম অসন্তোষ

হাসিনার গুলির নির্দেশসহ ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ডিং যেভাবে যাচাই করেছে বিবিসি

আপডেট সময় ০৬:৩৬:১৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫

ছবি: সংগৃহীত

গত বছর শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন গণ-আন্দোলন দমাতে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ তৎকালীন ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই দিয়েছিলেন বলে তার সে সময়ের কথোপকথনের ফাঁস হওয়া একটি অডিও রেকর্ডিং থেকে জানা গেছে।

চলতি বছরের মার্চে অনলাইনে ফাঁস হওয়া ওই অডিও রেকর্ডিং যাচাই করেছে বিবিসি আই ও বিবিসি বাংলার অনুসন্ধানী টিম। তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার’ করার জন্য নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে নির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা।

নির্দেশনায় বলা হয়, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা আন্দোলনকারীদের ‘যেখানে পাবে, সোজা গুলি করবে’।

অজ্ঞাতনামা একজন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে শেখ হাসিনার সেই কথোপকথনের ফাঁস হওয়া অডিওটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ যে, তিনি সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের গুলি করার জন্য সরাসরি নির্দেশনা দিয়েছিলেন।

জাতিসংঘের তদন্তকারী দলের তথ্যমতে, গত জুলাই-আগস্টের ওই আন্দোলন ও সহিংসতায় অন্তত ১,৪০০ জন মানুষ প্রাণ হারান।

মানবতাবিরোধী অপরাধের একাধিক অভিযোগে হাসিনার বিরুদ্ধে যে বিচার শুরু হয়েছে, সেখানে অডিও এই রেকর্ডিংটি গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করার পরিকল্পনা করছেন বাংলাদেশের বিশেষ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটররা।

তবে গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। টেপ রেকর্ডিংটি সত্য কি-না, তা আমরা নিশ্চিত করতে পারছি না বলে বিবিসি‘কে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের একজন মুখপাত্র। ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ডিংটি ‘শেখ হাসিনার বেআইনি কোনো উদ্দেশ্যের প্রতিফলন ঘটায় না বলেও মন্তব্য করেছেন তারা।

অডিও রেকর্ডিংটি যেভাবে যাচাই করেছে বিবিসি

ফাঁস হওয়া অডিওটি সম্পর্কে জানেন এমন একটি সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, গত ১৮ জুলাই নিজের সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে শেখ হাসিনা ওই ফোনালাপটি করেন।

চলতি বছরের মার্চের শুরুতে ফোনালাপের অডিওটি কে ফাঁস করেছে তা স্পষ্ট নয়। বিক্ষোভের পর থেকে হাসিনার কলের অসংখ্য ক্লিপ অনলাইনে প্রকাশিত হয়েছে যার অনেকগুলোই যাচাই করা হয়নি।

১৮ জুলাইয়ের ফাঁস হওয়া রেকর্ডিংয়ের কণ্ঠের সঙ্গে শেখ হাসিনার কণ্ঠস্বরের মিল শনাক্ত করেছে বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ।

বিবিসি আলাদাভাবে ইয়ারশটের অডিও ফরেনসিক এক্সপার্টদের দিয়ে এই রেকর্ডিংয়ের সত্যতা যাচাই করেছে এবং তারা এটিতে এডিট করার বা কোনো রকম পরিবর্তন করার কোনো প্রমাণ পায়নি। অডিওটি কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়েছে এমন সম্ভাবনাও খুবই কম বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

মানবাধিকার বা পরিবেশ রক্ষার ইস্যুতে অডিও সংক্রান্ত তদন্তের কাজ করে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ইয়ারশট।

তারা বলছে, ফাঁস হওয়া রেকর্ডিংটি সম্ভবত এমন একটি ঘরে ধারণ করা হয়েছিল যেখানে ফোন কলটি স্পিকারে বাজানো হয়েছিল। কারণ এতে স্বতন্ত্র টেলিফোনিক ফ্রিকোয়েন্সি এবং ব্যাকগ্রাউন্ডে কিছু শব্দ ছিল।

ইয়ারশটের বিশেষজ্ঞরা রেকর্ডিংজুড়ে ইলেকট্রিক নেটওয়ার্ক ফ্রিকোয়েন্সি বা ইএনএফ শনাক্ত করেছে, যে ফ্রিকোয়েন্সি অন্য একটি ডিভাইস থেকে অডিও রেকর্ডিংয়ের ক্ষেত্রে প্রায়ই উপস্থিত থাকে। এটি এমন এক সূচক যার মানে হলো অডিওটিতে হেরফের করা হয়নি।

তারা শেখ হাসিনার বক্তব্যে ছন্দ, স্বর এবং শ্বাসের শব্দ বিশ্লেষণ করেছে এবং ধারাবাহিক নয়েজের স্তরও শনাক্ত করেছে। অডিওতে কৃত্রিম কোনো পরিবর্তন আনার প্রমাণও খুঁজে পায়নি।

ব্রিটিশ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনজীবী টবি ক্যাডম্যান বিবিসিকে বলেছেন, রেকর্ডিংগুলো তার (শেখ হাসিনার) ভূমিকা প্রমাণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এগুলো স্পষ্ট এবং সঠিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে এবং অন্যান্য প্রমাণ দ্বারা সমর্থিত।

তিনি বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন যেখানে শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে মামলা চলছে। আইসিটি মোট ২০৩ জনকে অভিযুক্ত করেছে, যার মধ্যে ৭৩ জন গ্রেফতার রয়েছেন। আন্দোলনে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও বাংলাদেশের আদালতে বিচার চলছে।

তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা


প্রিন্ট