ঢাকা ০২:৩৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo মঠবাড়িয়া পৌর বিএনপির সম্মেলন পতাকা উত্তোলন ও পায়রা উড়িয়ে উদ্বোধন করেন পিরোজপুর জেলা বি এন পির আহবায়ক অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেন Logo বাশার আল-আসাদ: লন্ডনের চক্ষু চিকিৎসক থেকে সিরিয়ার কর্তৃত্ববাদী প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ Logo সমুদ্রে নেমে ভেসে গেল চবির ৩ ছাত্র, একজনের লাশ উদ্ধার Logo চট্টগ্রামে দুই জিকা রোগী শনাক্ত Logo মোংলা-ঢাকা আন্তঃনগর ট্রেন চালুর দাবিতে বৃষ্টিতে ভিজে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান Logo সাভারে পিস্তল ও ৭ রাউন্ড গুলিসহ শীর্ষ সন্ত্রাসী টুটুল গ্রেপ্তার Logo বাংলাদেশসহ ১৪ দেশের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপ করলেন ট্রাম্প Logo আশুলিয়ায় চাকুরীর দাবিতে ডিইপিজেডের সামনে মহাসড়ক অবরোধ করে চাকুরীর দাবি জানায় চাকুরী প্রত্যাশীরা। পরে যৌথ বাহিনীর হস্তক্ষেপ অবরোধকারীরা সরে গেলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয় Logo মামলা বাণিজ্যের অভিযোগে কৃষক দলের নেতা বহিষ্কার Logo খুলশীতে পাহাড় কেটে স্থাপনা নির্মাণের সময় অভিযান, ৩ শ্রমিক আটক : ভূমি মালিকের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ

বাশার আল-আসাদ: লন্ডনের চক্ষু চিকিৎসক থেকে সিরিয়ার কর্তৃত্ববাদী প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ

ছবির ক্যাপশান,২০০০ সালে মাত্র ৩৪ বছর বয়সে প্রেসিডেন্টের পদে আসীন হন বাশার আল-আসাদ
৮ ডিসেম্বর ২০২৪
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মূহুর্ত এসেছে, তবে, একটি গাড়ী দূর্ঘটনাই সম্ভবত তার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রভাবক ছিলো।

এটি আবার ঘটেছে তিনি যেখানে বসবাস করতেন, তার থেকে কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরে।

পিতার হাত থেকে ক্ষমতা নেয়ার জন্য তাকে তৈরি করা হয়নি।

কিন্তু ক্ষমতার পথে আসাদের যাত্রা শুরু হয়েছিলো তার বড় ভাই বাসেলের গাড়ী দূর্ঘটনায় মৃত্যুর পর। ১৯৯৪ সালে দামেস্কের কাছে ওই দূর্ঘটনা যখন ঘটে আসাদ তখন লন্ডনে চক্ষু চিকিৎসা নিয়ে পড়ছিলেন।

বাসেলের মৃত্যুর পর আসাদকে ক্ষমতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা শুরু হয়।

Skip সর্বাধিক পঠিত and continue reading
সর্বাধিক পঠিত
শিল্পীর স্কেচে আদালতে এরিন প্যাটারসন
একটি ‘লাঞ্চ’ কিভাবে আলোচিত একটি হত্যা মামলায় পরিণত হলো?
চব্বিশের জুলাই – অগাস্টে এই দেশে কোন যুদ্ধ সংঘটিত হয় নাই, যা হয়েছে সেটা ছিল রাজনৈতিক বিরোধ, এমন যুক্তি তুলে ধরেছেন শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী আমির হোসেন।
‘চব্বিশের জুলাই-অগাস্টে কোনো যুদ্ধ হয়নি বরং হয়েছিল রাজনৈতিক বিরোধ’
মীর জাফরের ভগ্নপ্রায় প্রাসাদ
মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকতা নিয়ে কী বলেন তার বংশধররা?
সঞ্চয়পত্রের মুনাফা কমানোয় দুশ্চিন্তা বাড়ছে মধ্যবিত্তের
সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমানোর ঘোষণায় চিন্তায় অনেক পরিবার
End of সর্বাধিক পঠিত
পরে তিনিই দেশের নেতৃত্ব দিয়েছে রক্তক্ষয়ী এক যুদ্ধের মধ্য দিয়ে, যে যুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ মারা গেছেন, বাস্তুচ্যুত হয়েছেন অনেকে।

মি. আসাদের পিতা হাফিজ আল আসাদ প্রায় ৩০ বছর সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন।

১৯৬৫ সালে বাশার আল-আসাদের জন্মের সময়টাতেও সিরিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যে নাটকীয় ঘটনা ঘটেছিলো।

ওই সময়ই মিশর ও সিরিয়া মিলে স্বল্পকালীন যে আরব প্রজাতন্ত্র করেছিলো তা ভেস্তে যাওয়ার পর বাথ পার্টি ক্ষমতা দখল করে।

অন্য আরব দেশের মতো সিরিয়াতেও গণতন্ত্র ছিলো না ও বহুদলীয় নির্বাচন হতো না। আঞ্চলিক রাজনীতিতে সেখানকার সব দেশেই আরব জাতীয়তাবাদ নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় ছিলো।

বিবিসি বাংলায় আরও পড়ুন:
মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতের পেছনে সক্রিয় শক্তিধর জোটগুলো কারা?
৩০ জানুয়ারি ২০২৪
হামাস ইসরায়েলের সৃষ্টি- এই দাবি কতটা সত্যি?
২৩ জানুয়ারি ২০২৪
সিরিয়ায় রাসায়নিক হামলা:কী হয়েছে সেখানে?
১১ এপ্রিল ২০১৮
সিরিয়ায় উল্লাস
ছবির উৎস,Getty Images
আসাদের পরিবার যে সম্প্রদায়ের ছিলেন তারা ছিলেন সিরিয়ার খুবই অনগ্রসর একটি সম্প্রদায়। অর্থনৈতিক সংকটের কারণে তাদের অনেক সদস্য সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলো।

হাফিজ আল-আসাদ সামরিক কর্মকর্তা হিসেবে উঠে আসেন। ১৯৬৬ সালে তিনি বাথ পার্টির সরকারে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হন।

পরে দেশের প্রেসিডেন্ট হন ১৯৭১ সালে। এরপর ২০০০ সালে মৃত্যু পর্যন্ত তিনি ওই পদেই বহাল ছিলেন।

তার সময়ে অনেকগুলো সামরিক অভ্যুত্থান হলেও তা সফল হয়নি। বরং বিরোধীদের দমন ও গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে তিনি কঠোর হাতে দেশ শাসন করেছেন।

মেডিসিন ও লন্ডন
রাজনীতি ও সামরিক বাহিনী থেকে দূরে থাকতে বাশার আল-আসাদ ডাক্তার হিসেবেই তার ক্যারিয়ার গড়তে চেয়েছিলেন।

দামেস্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রাজুয়েশন শেষে তিনি ১৯৯২ সালে যুক্তরাজ্যে যান লন্ডনের ওয়েস্টার্ন আই হসপিটালে চোখের ডাক্তার হিসেবে পড়ালেখার জন্য।

এ সময় তিনি ইংরেজ গায়ক ফিল কলিন্সের অনুরক্ত হন ও পশ্চিমা সংস্কৃতিতে উদ্বুদ্ধ হন।

লন্ডনেই আসমা আল-আখরাস এর সাথে তার দেখা হয়। পরবর্তীতে তারা বিয়ে করেন।

আসমা কিংস কলেজে কম্পিউটার সায়েন্সে পড়তেন। তিনি হার্ভার্ডে ভর্তির জন্য বিবেচিত হয়েছিলেন।

কিন্তু বাশার আল আসাদের জীবনের গতিপথ পাল্টে যায় বড় ভাইয়ের মৃত্যুর পর। ওই মৃত্যুই মূলতঃ বাশার আল-আসাদের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।

তৎক্ষণাৎ তাকে ফিরে যেতে হয় সিরিয়ায় এবং এরপর তাকে সিরিয়ার পরবর্তী নেতা হিসেবে প্রস্তুত করার কাজ শুরু হয়।

বাশার সামরিক বাহিনীতে যোগ দেন এবং ভবিষ্যতের জন্য জনগণের সামনে নিজের ইমেজ তৈরির প্রস্তুতি নিতে থাকেন।

বাশার আল আসাদ ও তার স্ত্রী আসমা আল আসাদ
ছবির উৎস,Getty Images
ছবির ক্যাপশান,বাশার আল আসাদ ও তার স্ত্রী আসমা আল আসাদ
বিবিসি বাংলার খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল অনুসরণ করুন।

পরিবর্তনের স্বপ্ন
হাফিজ আল-আসাদের মৃত্যুর পর ২০০০ সালে মাত্র ৩৪ বছর বয়সে দ্রুতই প্রেসিডেন্টের পদে আসীন হন বাশারআল-আসাদ।

তবে, এজন্য দেশটির সংবিধানে প্রেসিডেন্টের সর্বনিন্ম বয়স ৪০ বছর থাকার যে বিধান ছিলো তা পরিবর্তন করতে হয়।

দায়িত্ব নিয়ে তিনি ‘স্বচ্ছতা, গণতন্ত্র, উন্নয়ন, আধুনিকায়ন, জবাবদিহিতা ও প্রাতিষ্ঠানিক ভাবনা’র কথা বলেছিলেন।

প্রেসিডেন্ট হওয়ার কয়েক মাস পর তিনি আসমা আল-আখরাসকে বিয়ে করেন। তাদের তিন সন্তান- হাফিজ, জেইন এবং কারিম।

প্রথমদিকে তার রাজনৈতিক সংস্কার ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বিষয়ক বক্তব্য অনেককে আশাবাদী করেছিল।

তার নেতৃত্বের স্টাইল ও পশ্চিমা শিক্ষায় শিক্ষিত আসমার সাথে জুটিবদ্ধ হওয়া- অনেককে স্বপ্ন দেখিয়েছিলো।

কিন্তু ২০০১ সালে নিরাপত্তা বাহিনী ব্যাপক দমন অভিযান চালায় ও বহু সোচ্চার কণ্ঠকে আটক করে।

বাশার আল-আসাদ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সীমিত সংস্কার করলে ব্যক্তি খাত উৎসাহী হয়ে ওঠে।

তবে আর শাসনের প্রথম দিকে উত্থান হয় তার চাচাতো ভাই রামি মাখলৌফের। তিনি সম্পদ আর ক্ষমতার সমন্বয়ে বিশাল ব্যবসা সাম্রাজ্য তৈরি করেছেন।

ইরাক এবং লেবানন
২০০৩ সালের ইরাক যুদ্ধকে ঘিরে বাশার আল-আসাদের সাথে পশ্চিমাদের সম্পর্কের অবনতি হয়। তিনি ইরাকে মার্কিন আগ্রাসনের বিরোধিতা করেছিলেন।

সম্ভবত তার আশংকা ছিলো যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর পরবর্তী টার্গেট সিরিয়া হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র সেসময় ইরাকে তাদের বিরোধীদের কাছে অস্ত্র চোরাচালানে সহায়তার জন্য দামেস্ককে দায়ী করছিলো।

সে সময় ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়।

এরপর ২০০৫ সালে লেবাননের প্রধানমন্ত্রী রফিক হারিরি বৈরুতে বিস্ফোরণে নিহত হলে এ ঘটনার জন্য অনেকে সিরিয়া ও তার সহযোগীদের দিকেই অঙ্গুলি নির্দেশ করে।

লেবাননের এর বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিবাদ হয় ও দামেস্কের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে লেবাননে থাকা সিরিয়ার ৩০ বছরের সামরিক উপস্থিতি প্রত্যাহার করতে হয়।

আসাদ ও তার লেবাননের সহযোগী হেজবুল্লাহ অবশ্য ওই হত্যাকাণ্ডে তাদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে।

যদিও পরে বিচারে বিশেষ আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে হেজবুল্লাহর কয়েকজন সদস্যকে শাস্তি দেয়া হয়।

ছবির উৎস,Getty Images
ছবির ক্যাপশান,আসাদ পরিবার ৫৪ বছর শাসন করেছে সিরিয়া
আরব বসন্ত
বাশার আল-আসাদের শাসনের প্রথম দশকে ইরান, কাতার এবং তুরস্কের সাথে সম্পর্কের উন্নতি হয়।

সৌদি আরবের সাথে সম্পর্ক উত্থান পতনের মধ্য দিয়ে গেছে। যদিও শুরুতে রিয়াদ তরুণ প্রেসিডেন্টের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলো।

মূলতঃ পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে বাশার তার পিতাকে অনুসরণ করেছেন। কিন্তু শাসন শুরুর এক দশক পর কর্তৃত্ববাদের দিকে হাঁটতে শুরু করেন তিনি।

শুরু হয় বিরোধীদের ওপর দমন পীড়ন।

২০১০ সালে আসাদের স্ত্রী ভোগ ম্যাগাজিনকে দেয়া সাক্ষাতকার দিয়েছিলেন, তাতে তার ঘরে গণতন্ত্র আছে বলে উল্লেখ করেছিলেন তিনি।

ওই একই সময়ে তিউনিসিয়ায় একজন সবজি বিক্রেতা পুলিশের চড় খেয়ে ক্ষোভে নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে বিক্ষোভ হয়, সেটিই আরব বসন্তে রূপ নেয় ও এক পর্যায়ে বিদায় নিতে বাধ্য হন তিউনিসিয়ার তখনকার প্রেসিডেন্ট বেন আলি।

এটিই তখন পুরো আরব অঞ্চলে, বিশেষ করে মিশর, লিবিয়া, ইয়েমেন, বাহরাইন এবং সিরিয়ায় বিপ্লবী আন্দোলনগুলোকে উৎসাহী করে তোলে।

এক পর্যায়ে ২০১১ সালের মার্চে দামেস্কে বিক্ষোভ দেখা যায় এবং পরে দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর দারারাতে দেয়ালে আসাদ বিরোধী শ্লোগান লেখার দায়ে শিশুদের আটক করা হলে সেখানেও আন্দোলন শুরু হয়।

দুই সপ্তাহ অপেক্ষা করে আসাদ পার্লামেন্টে দেয়া ভাষণে সিরিয়াকে টার্গেট করে ‘ষড়যন্ত্র’ হচ্ছে বলে একে মোকাবেলার কথা বলেছিলেন।

তবে, অনেক মানুষের যে মৌলিক চাহিদা পূরণ হচ্ছে না তাও স্বীকার করেন তিনি। এরপর নিরাপত্তা বাহিনী দারারাতে শক্তি প্রয়োগ করলে বিক্ষোভ আরও জোরদার হয়।

অনেকগুলো শহরে আসাদের পদত্যাগের দাবি উঠে। কর্তৃপক্ষ সহিংস পন্থায় তা দমনের চেষ্টা করে।

কয়েক মাসের মধ্যে পরিস্থিতি সহিংস হয়ে ওঠে, কারণ সরকারি বাহিনী ও সশস্ত্র বিরোধী গ্রুপগুলোর মধ্যে দেশজুড়ে সংঘর্ষ হতে শুরু করে।

ছবির উৎস,Getty Images
ছবির ক্যাপশান,বাশার আল-আসাদের পতনের খবরে দামেস্কে উল্লাস করেন অনেকে
আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ, জিহাদ ও যুদ্ধাপরাধ
সংঘাত বেড়ে যাওয়ার পর জাতিসংঘের হিসেবে লাখ লাখ মানুষ হতাহত হয়েছে। একই সাথে আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোও জড়িয়ে পড়তে শুরু করে।

রাশিয়া, ইরান এবং ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো আসাদের বাহিনীকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়।

অন্যদিকে, তুরস্কসহ কিছু উপসাগরীয় দেশ সশস্ত্র বিরোধী গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন দেয়।

শুরুতে আসাদ বিরোধীরা গণতন্ত্র ও মুক্তির কথা বললেও দ্রুতই সাম্প্রদায়িকতার বিষয়টিও উঠে আসে। সংখ্যাগরিষ্ঠ সুন্নিদের বদলে আসাদ নিজের অ্যালাউইটস গোত্রের লোকজনকে সুবিধা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ ওঠে।

সাম্প্রদায়িক বিভাজনের সূত্র ধরে অ্যালাউইটসদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় ইসলামপন্থী কিছু গ্রুপ। আবার ইরান সমর্থিত শিয়া মিলিশিয়ারা আসাদ সরকারকে সমর্থন দেয়।

প্রতিবেশী ইরাকে ইসলামিক স্টেট বা আইএস এর উত্থান হয়ে গেছে। তারা সিরিয়ারও কিছু জায়গা দখল করে সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় শহর রাক্কাকে রাজধানী ঘোষণা করে।

২০১৩ সালে দামেস্কের কাছে বিরোধী অধ্যুষিত পূর্বাঞ্চলীয় ঘৌতায় রাসায়নিক হামলা হলে শত শত মানুষ মারা যায়।

পশ্চিমারা এবং সিরিয়ার বিরোধী গোষ্ঠীগুলো এই হামলার জন্য আসাদ সরকারকে দায়ী করে। তবে দামেস্ক এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে।

পরে আন্তর্জাতিক চাপে তারা রাসায়নিক অস্ত্রের মজুদ ধ্বংস করতে রাজী হয়।

কিন্তু তাতে করে সিরিয়া যুদ্ধের নৃশংসতা কমেনি। আরও রাসায়নিক হামলা হয়েছে পরবর্তীতে। জাতিসংঘের একটি কমিশন সংঘাতে জড়িত সব পক্ষের বিরুদ্ধেই হত্যা, নির্যাতন ও ধর্ষণের মতো যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ করেছে।

২০১৫ সালে প্রায় পতনের দ্বারপ্রান্তে চলে যায় আসাদ সরকার। দেশের বড় অংশের ওপরই তখন বাশার আল-আসাদে আর কর্তৃত্ব ছিলো না।

তবে, পরে রাশিয়ার সামরিক হস্তক্ষেপ পরিস্থিতি পাল্টে যায়, গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো আবার পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হন বাশার আল-আসাদ।

ছবির উৎস,Getty Images
ছবির ক্যাপশান,ছবিতে বাশার আল আসাদ ও তার পিতা হাফেজ আল-আসাদ
গাজা যুদ্ধ
২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে আন্তর্জাতিক সমঝোতার আলোকে সরকারি বাহিনী সিরিয়ার বেশিরভাগ এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়।

যদিও ইসলামপন্থী বিরোধী গ্রুপগুলো এবং কুর্দি মিলিশিয়ারা দেশটির উত্তর ও উত্তরপূর্ব এলাকায় কিছুটা নিয়ন্ত্রণ রাখতে পেরেছিলো।

ওই সমঝোতা আসাদের অবস্থানকে শক্তিশালী করে এবং তিনি আরব কূটনৈতিক অঙ্গনে ফিরে আসেন। ২০২৩ সালে আরব লীগের সদস্যপদ ফিরে পায় সিরিয়া। বেশ কিছু আরব দেশ আবার দামেস্কে দূতাবাস চালু করে।

নিজের শাসনের তৃতীয় দশকে দেশের ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট সত্ত্বেও মনে হচ্ছিলো যে প্রেসিডেন্ট তার বড় চ্যালেঞ্জগুলো উতরে গেছেন।

তবে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাস ইসরায়েলে হামলা করলে গাজা যুদ্ধের সূচনা হয় যা লেবাননেও ছড়িয়ে পড়ে।

যার প্রভাব পড়ে আসাদের সহযোগী হেজবুল্লাহর ওপর। হেজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহও নিহত হন।

লেবাননে যেদিন যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয় সেদিনই বিস্ময়করভাবে হামলা করে দ্রুত আলেপ্পো দখল করে নেয় হায়াত তাহরির আল-শাম বা এইচটিএস এর নেতৃত্বে সিরিয়ার বিরোধী গোষ্ঠী।

তারা দ্রুত গতিতে এগিয়ে হামা ও অন্য শহরগুলো দখল করে নেয়। দক্ষিণাঞ্চলে তখনো সরকারি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ ছিলো।

কিন্তু আসাদের অবস্থান দ্রুতই নড়বড়ে হয়ে পড়ে, কারণ গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী ইরান ও রাশিয়া তার সহায়তায় এগিয়ে আসতে পারছে না।

শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহীরা দামেস্ক ঢুকে পড়েছে এবং বাশার আল-আসাদ ব্যক্তিগত বিমানে করে অজানা গন্তব্যে চলে গেছেন।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন এর মাধ্যমেই অবসান হলো সিরিয়ায় আসাদ পরিবারের ৫৪ বছরের শাসন।


প্রিন্ট
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

মঠবাড়িয়া পৌর বিএনপির সম্মেলন পতাকা উত্তোলন ও পায়রা উড়িয়ে উদ্বোধন করেন পিরোজপুর জেলা বি এন পির আহবায়ক অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেন

বাশার আল-আসাদ: লন্ডনের চক্ষু চিকিৎসক থেকে সিরিয়ার কর্তৃত্ববাদী প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ

আপডেট সময় ০১:২৯:৩৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫

ছবির ক্যাপশান,২০০০ সালে মাত্র ৩৪ বছর বয়সে প্রেসিডেন্টের পদে আসীন হন বাশার আল-আসাদ
৮ ডিসেম্বর ২০২৪
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মূহুর্ত এসেছে, তবে, একটি গাড়ী দূর্ঘটনাই সম্ভবত তার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রভাবক ছিলো।

এটি আবার ঘটেছে তিনি যেখানে বসবাস করতেন, তার থেকে কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরে।

পিতার হাত থেকে ক্ষমতা নেয়ার জন্য তাকে তৈরি করা হয়নি।

কিন্তু ক্ষমতার পথে আসাদের যাত্রা শুরু হয়েছিলো তার বড় ভাই বাসেলের গাড়ী দূর্ঘটনায় মৃত্যুর পর। ১৯৯৪ সালে দামেস্কের কাছে ওই দূর্ঘটনা যখন ঘটে আসাদ তখন লন্ডনে চক্ষু চিকিৎসা নিয়ে পড়ছিলেন।

বাসেলের মৃত্যুর পর আসাদকে ক্ষমতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা শুরু হয়।

Skip সর্বাধিক পঠিত and continue reading
সর্বাধিক পঠিত
শিল্পীর স্কেচে আদালতে এরিন প্যাটারসন
একটি ‘লাঞ্চ’ কিভাবে আলোচিত একটি হত্যা মামলায় পরিণত হলো?
চব্বিশের জুলাই – অগাস্টে এই দেশে কোন যুদ্ধ সংঘটিত হয় নাই, যা হয়েছে সেটা ছিল রাজনৈতিক বিরোধ, এমন যুক্তি তুলে ধরেছেন শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী আমির হোসেন।
‘চব্বিশের জুলাই-অগাস্টে কোনো যুদ্ধ হয়নি বরং হয়েছিল রাজনৈতিক বিরোধ’
মীর জাফরের ভগ্নপ্রায় প্রাসাদ
মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকতা নিয়ে কী বলেন তার বংশধররা?
সঞ্চয়পত্রের মুনাফা কমানোয় দুশ্চিন্তা বাড়ছে মধ্যবিত্তের
সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমানোর ঘোষণায় চিন্তায় অনেক পরিবার
End of সর্বাধিক পঠিত
পরে তিনিই দেশের নেতৃত্ব দিয়েছে রক্তক্ষয়ী এক যুদ্ধের মধ্য দিয়ে, যে যুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ মারা গেছেন, বাস্তুচ্যুত হয়েছেন অনেকে।

মি. আসাদের পিতা হাফিজ আল আসাদ প্রায় ৩০ বছর সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন।

১৯৬৫ সালে বাশার আল-আসাদের জন্মের সময়টাতেও সিরিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যে নাটকীয় ঘটনা ঘটেছিলো।

ওই সময়ই মিশর ও সিরিয়া মিলে স্বল্পকালীন যে আরব প্রজাতন্ত্র করেছিলো তা ভেস্তে যাওয়ার পর বাথ পার্টি ক্ষমতা দখল করে।

অন্য আরব দেশের মতো সিরিয়াতেও গণতন্ত্র ছিলো না ও বহুদলীয় নির্বাচন হতো না। আঞ্চলিক রাজনীতিতে সেখানকার সব দেশেই আরব জাতীয়তাবাদ নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় ছিলো।

বিবিসি বাংলায় আরও পড়ুন:
মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতের পেছনে সক্রিয় শক্তিধর জোটগুলো কারা?
৩০ জানুয়ারি ২০২৪
হামাস ইসরায়েলের সৃষ্টি- এই দাবি কতটা সত্যি?
২৩ জানুয়ারি ২০২৪
সিরিয়ায় রাসায়নিক হামলা:কী হয়েছে সেখানে?
১১ এপ্রিল ২০১৮
সিরিয়ায় উল্লাস
ছবির উৎস,Getty Images
আসাদের পরিবার যে সম্প্রদায়ের ছিলেন তারা ছিলেন সিরিয়ার খুবই অনগ্রসর একটি সম্প্রদায়। অর্থনৈতিক সংকটের কারণে তাদের অনেক সদস্য সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলো।

হাফিজ আল-আসাদ সামরিক কর্মকর্তা হিসেবে উঠে আসেন। ১৯৬৬ সালে তিনি বাথ পার্টির সরকারে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হন।

পরে দেশের প্রেসিডেন্ট হন ১৯৭১ সালে। এরপর ২০০০ সালে মৃত্যু পর্যন্ত তিনি ওই পদেই বহাল ছিলেন।

তার সময়ে অনেকগুলো সামরিক অভ্যুত্থান হলেও তা সফল হয়নি। বরং বিরোধীদের দমন ও গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে তিনি কঠোর হাতে দেশ শাসন করেছেন।

মেডিসিন ও লন্ডন
রাজনীতি ও সামরিক বাহিনী থেকে দূরে থাকতে বাশার আল-আসাদ ডাক্তার হিসেবেই তার ক্যারিয়ার গড়তে চেয়েছিলেন।

দামেস্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রাজুয়েশন শেষে তিনি ১৯৯২ সালে যুক্তরাজ্যে যান লন্ডনের ওয়েস্টার্ন আই হসপিটালে চোখের ডাক্তার হিসেবে পড়ালেখার জন্য।

এ সময় তিনি ইংরেজ গায়ক ফিল কলিন্সের অনুরক্ত হন ও পশ্চিমা সংস্কৃতিতে উদ্বুদ্ধ হন।

লন্ডনেই আসমা আল-আখরাস এর সাথে তার দেখা হয়। পরবর্তীতে তারা বিয়ে করেন।

আসমা কিংস কলেজে কম্পিউটার সায়েন্সে পড়তেন। তিনি হার্ভার্ডে ভর্তির জন্য বিবেচিত হয়েছিলেন।

কিন্তু বাশার আল আসাদের জীবনের গতিপথ পাল্টে যায় বড় ভাইয়ের মৃত্যুর পর। ওই মৃত্যুই মূলতঃ বাশার আল-আসাদের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।

তৎক্ষণাৎ তাকে ফিরে যেতে হয় সিরিয়ায় এবং এরপর তাকে সিরিয়ার পরবর্তী নেতা হিসেবে প্রস্তুত করার কাজ শুরু হয়।

বাশার সামরিক বাহিনীতে যোগ দেন এবং ভবিষ্যতের জন্য জনগণের সামনে নিজের ইমেজ তৈরির প্রস্তুতি নিতে থাকেন।

বাশার আল আসাদ ও তার স্ত্রী আসমা আল আসাদ
ছবির উৎস,Getty Images
ছবির ক্যাপশান,বাশার আল আসাদ ও তার স্ত্রী আসমা আল আসাদ
বিবিসি বাংলার খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল অনুসরণ করুন।

পরিবর্তনের স্বপ্ন
হাফিজ আল-আসাদের মৃত্যুর পর ২০০০ সালে মাত্র ৩৪ বছর বয়সে দ্রুতই প্রেসিডেন্টের পদে আসীন হন বাশারআল-আসাদ।

তবে, এজন্য দেশটির সংবিধানে প্রেসিডেন্টের সর্বনিন্ম বয়স ৪০ বছর থাকার যে বিধান ছিলো তা পরিবর্তন করতে হয়।

দায়িত্ব নিয়ে তিনি ‘স্বচ্ছতা, গণতন্ত্র, উন্নয়ন, আধুনিকায়ন, জবাবদিহিতা ও প্রাতিষ্ঠানিক ভাবনা’র কথা বলেছিলেন।

প্রেসিডেন্ট হওয়ার কয়েক মাস পর তিনি আসমা আল-আখরাসকে বিয়ে করেন। তাদের তিন সন্তান- হাফিজ, জেইন এবং কারিম।

প্রথমদিকে তার রাজনৈতিক সংস্কার ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বিষয়ক বক্তব্য অনেককে আশাবাদী করেছিল।

তার নেতৃত্বের স্টাইল ও পশ্চিমা শিক্ষায় শিক্ষিত আসমার সাথে জুটিবদ্ধ হওয়া- অনেককে স্বপ্ন দেখিয়েছিলো।

কিন্তু ২০০১ সালে নিরাপত্তা বাহিনী ব্যাপক দমন অভিযান চালায় ও বহু সোচ্চার কণ্ঠকে আটক করে।

বাশার আল-আসাদ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সীমিত সংস্কার করলে ব্যক্তি খাত উৎসাহী হয়ে ওঠে।

তবে আর শাসনের প্রথম দিকে উত্থান হয় তার চাচাতো ভাই রামি মাখলৌফের। তিনি সম্পদ আর ক্ষমতার সমন্বয়ে বিশাল ব্যবসা সাম্রাজ্য তৈরি করেছেন।

ইরাক এবং লেবানন
২০০৩ সালের ইরাক যুদ্ধকে ঘিরে বাশার আল-আসাদের সাথে পশ্চিমাদের সম্পর্কের অবনতি হয়। তিনি ইরাকে মার্কিন আগ্রাসনের বিরোধিতা করেছিলেন।

সম্ভবত তার আশংকা ছিলো যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর পরবর্তী টার্গেট সিরিয়া হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র সেসময় ইরাকে তাদের বিরোধীদের কাছে অস্ত্র চোরাচালানে সহায়তার জন্য দামেস্ককে দায়ী করছিলো।

সে সময় ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়।

এরপর ২০০৫ সালে লেবাননের প্রধানমন্ত্রী রফিক হারিরি বৈরুতে বিস্ফোরণে নিহত হলে এ ঘটনার জন্য অনেকে সিরিয়া ও তার সহযোগীদের দিকেই অঙ্গুলি নির্দেশ করে।

লেবাননের এর বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিবাদ হয় ও দামেস্কের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে লেবাননে থাকা সিরিয়ার ৩০ বছরের সামরিক উপস্থিতি প্রত্যাহার করতে হয়।

আসাদ ও তার লেবাননের সহযোগী হেজবুল্লাহ অবশ্য ওই হত্যাকাণ্ডে তাদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে।

যদিও পরে বিচারে বিশেষ আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে হেজবুল্লাহর কয়েকজন সদস্যকে শাস্তি দেয়া হয়।

ছবির উৎস,Getty Images
ছবির ক্যাপশান,আসাদ পরিবার ৫৪ বছর শাসন করেছে সিরিয়া
আরব বসন্ত
বাশার আল-আসাদের শাসনের প্রথম দশকে ইরান, কাতার এবং তুরস্কের সাথে সম্পর্কের উন্নতি হয়।

সৌদি আরবের সাথে সম্পর্ক উত্থান পতনের মধ্য দিয়ে গেছে। যদিও শুরুতে রিয়াদ তরুণ প্রেসিডেন্টের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলো।

মূলতঃ পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে বাশার তার পিতাকে অনুসরণ করেছেন। কিন্তু শাসন শুরুর এক দশক পর কর্তৃত্ববাদের দিকে হাঁটতে শুরু করেন তিনি।

শুরু হয় বিরোধীদের ওপর দমন পীড়ন।

২০১০ সালে আসাদের স্ত্রী ভোগ ম্যাগাজিনকে দেয়া সাক্ষাতকার দিয়েছিলেন, তাতে তার ঘরে গণতন্ত্র আছে বলে উল্লেখ করেছিলেন তিনি।

ওই একই সময়ে তিউনিসিয়ায় একজন সবজি বিক্রেতা পুলিশের চড় খেয়ে ক্ষোভে নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে বিক্ষোভ হয়, সেটিই আরব বসন্তে রূপ নেয় ও এক পর্যায়ে বিদায় নিতে বাধ্য হন তিউনিসিয়ার তখনকার প্রেসিডেন্ট বেন আলি।

এটিই তখন পুরো আরব অঞ্চলে, বিশেষ করে মিশর, লিবিয়া, ইয়েমেন, বাহরাইন এবং সিরিয়ায় বিপ্লবী আন্দোলনগুলোকে উৎসাহী করে তোলে।

এক পর্যায়ে ২০১১ সালের মার্চে দামেস্কে বিক্ষোভ দেখা যায় এবং পরে দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর দারারাতে দেয়ালে আসাদ বিরোধী শ্লোগান লেখার দায়ে শিশুদের আটক করা হলে সেখানেও আন্দোলন শুরু হয়।

দুই সপ্তাহ অপেক্ষা করে আসাদ পার্লামেন্টে দেয়া ভাষণে সিরিয়াকে টার্গেট করে ‘ষড়যন্ত্র’ হচ্ছে বলে একে মোকাবেলার কথা বলেছিলেন।

তবে, অনেক মানুষের যে মৌলিক চাহিদা পূরণ হচ্ছে না তাও স্বীকার করেন তিনি। এরপর নিরাপত্তা বাহিনী দারারাতে শক্তি প্রয়োগ করলে বিক্ষোভ আরও জোরদার হয়।

অনেকগুলো শহরে আসাদের পদত্যাগের দাবি উঠে। কর্তৃপক্ষ সহিংস পন্থায় তা দমনের চেষ্টা করে।

কয়েক মাসের মধ্যে পরিস্থিতি সহিংস হয়ে ওঠে, কারণ সরকারি বাহিনী ও সশস্ত্র বিরোধী গ্রুপগুলোর মধ্যে দেশজুড়ে সংঘর্ষ হতে শুরু করে।

ছবির উৎস,Getty Images
ছবির ক্যাপশান,বাশার আল-আসাদের পতনের খবরে দামেস্কে উল্লাস করেন অনেকে
আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ, জিহাদ ও যুদ্ধাপরাধ
সংঘাত বেড়ে যাওয়ার পর জাতিসংঘের হিসেবে লাখ লাখ মানুষ হতাহত হয়েছে। একই সাথে আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোও জড়িয়ে পড়তে শুরু করে।

রাশিয়া, ইরান এবং ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো আসাদের বাহিনীকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়।

অন্যদিকে, তুরস্কসহ কিছু উপসাগরীয় দেশ সশস্ত্র বিরোধী গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন দেয়।

শুরুতে আসাদ বিরোধীরা গণতন্ত্র ও মুক্তির কথা বললেও দ্রুতই সাম্প্রদায়িকতার বিষয়টিও উঠে আসে। সংখ্যাগরিষ্ঠ সুন্নিদের বদলে আসাদ নিজের অ্যালাউইটস গোত্রের লোকজনকে সুবিধা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ ওঠে।

সাম্প্রদায়িক বিভাজনের সূত্র ধরে অ্যালাউইটসদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় ইসলামপন্থী কিছু গ্রুপ। আবার ইরান সমর্থিত শিয়া মিলিশিয়ারা আসাদ সরকারকে সমর্থন দেয়।

প্রতিবেশী ইরাকে ইসলামিক স্টেট বা আইএস এর উত্থান হয়ে গেছে। তারা সিরিয়ারও কিছু জায়গা দখল করে সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় শহর রাক্কাকে রাজধানী ঘোষণা করে।

২০১৩ সালে দামেস্কের কাছে বিরোধী অধ্যুষিত পূর্বাঞ্চলীয় ঘৌতায় রাসায়নিক হামলা হলে শত শত মানুষ মারা যায়।

পশ্চিমারা এবং সিরিয়ার বিরোধী গোষ্ঠীগুলো এই হামলার জন্য আসাদ সরকারকে দায়ী করে। তবে দামেস্ক এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে।

পরে আন্তর্জাতিক চাপে তারা রাসায়নিক অস্ত্রের মজুদ ধ্বংস করতে রাজী হয়।

কিন্তু তাতে করে সিরিয়া যুদ্ধের নৃশংসতা কমেনি। আরও রাসায়নিক হামলা হয়েছে পরবর্তীতে। জাতিসংঘের একটি কমিশন সংঘাতে জড়িত সব পক্ষের বিরুদ্ধেই হত্যা, নির্যাতন ও ধর্ষণের মতো যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ করেছে।

২০১৫ সালে প্রায় পতনের দ্বারপ্রান্তে চলে যায় আসাদ সরকার। দেশের বড় অংশের ওপরই তখন বাশার আল-আসাদে আর কর্তৃত্ব ছিলো না।

তবে, পরে রাশিয়ার সামরিক হস্তক্ষেপ পরিস্থিতি পাল্টে যায়, গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো আবার পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হন বাশার আল-আসাদ।

ছবির উৎস,Getty Images
ছবির ক্যাপশান,ছবিতে বাশার আল আসাদ ও তার পিতা হাফেজ আল-আসাদ
গাজা যুদ্ধ
২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে আন্তর্জাতিক সমঝোতার আলোকে সরকারি বাহিনী সিরিয়ার বেশিরভাগ এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়।

যদিও ইসলামপন্থী বিরোধী গ্রুপগুলো এবং কুর্দি মিলিশিয়ারা দেশটির উত্তর ও উত্তরপূর্ব এলাকায় কিছুটা নিয়ন্ত্রণ রাখতে পেরেছিলো।

ওই সমঝোতা আসাদের অবস্থানকে শক্তিশালী করে এবং তিনি আরব কূটনৈতিক অঙ্গনে ফিরে আসেন। ২০২৩ সালে আরব লীগের সদস্যপদ ফিরে পায় সিরিয়া। বেশ কিছু আরব দেশ আবার দামেস্কে দূতাবাস চালু করে।

নিজের শাসনের তৃতীয় দশকে দেশের ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট সত্ত্বেও মনে হচ্ছিলো যে প্রেসিডেন্ট তার বড় চ্যালেঞ্জগুলো উতরে গেছেন।

তবে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাস ইসরায়েলে হামলা করলে গাজা যুদ্ধের সূচনা হয় যা লেবাননেও ছড়িয়ে পড়ে।

যার প্রভাব পড়ে আসাদের সহযোগী হেজবুল্লাহর ওপর। হেজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহও নিহত হন।

লেবাননে যেদিন যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয় সেদিনই বিস্ময়করভাবে হামলা করে দ্রুত আলেপ্পো দখল করে নেয় হায়াত তাহরির আল-শাম বা এইচটিএস এর নেতৃত্বে সিরিয়ার বিরোধী গোষ্ঠী।

তারা দ্রুত গতিতে এগিয়ে হামা ও অন্য শহরগুলো দখল করে নেয়। দক্ষিণাঞ্চলে তখনো সরকারি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ ছিলো।

কিন্তু আসাদের অবস্থান দ্রুতই নড়বড়ে হয়ে পড়ে, কারণ গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী ইরান ও রাশিয়া তার সহায়তায় এগিয়ে আসতে পারছে না।

শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহীরা দামেস্ক ঢুকে পড়েছে এবং বাশার আল-আসাদ ব্যক্তিগত বিমানে করে অজানা গন্তব্যে চলে গেছেন।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন এর মাধ্যমেই অবসান হলো সিরিয়ায় আসাদ পরিবারের ৫৪ বছরের শাসন।


প্রিন্ট