দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে এ সরকারের দরকার নেই; ঠাকুরগাঁওয়ে মুজাহিদুল ইসলাম
- আপডেট টাইম : ০৪:০২:২২ অপরাহ্ণ, রবিবার, ২৯ মে ২০২২
- / ১৭২ ৫০০০.০ বার পাঠক
আল মামুন, ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি।।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি, ডাকসুর সাবেক ভিপি বীর মুক্তিযোদ্ধা কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, ভাত কাপড়ের জন্য আমরা লড়াই করবো আপনারা প্রস্তুত আছেন? যখন প্রধানমন্ত্রীকে বলা হয় জিনিসের দাম বাড়ে কেন আপনি কমানোর ব্যবস্থা করেন। তিনি বলেন বাজারের কাজ বাজার করবে, আমার তো কিছুই করার নাই।
সরকারকে বলবো বাজারের কাজ যদি বাজার করে এটাই যদি আপনার কথা হয় তাহলে এ সরকারের কোন দরকার নাই। তোমরা ক্ষমতা ছেড়ে চলে যাও।
রবিবার (২৯ মে) ঠাকুরগাঁও জেলা সিপিবির আয়োজনে ঠাকুরগাঁও চৌরাস্তায় এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথা বলেন।
দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতির প্রতিবাদে তিনি বলেন, ঈদের আগে বাজার থেকে সোয়াবিন তেল উধাও হয়ে গেল। বোতলের উপরে লেখা ১৬০ টাকা। কিন্তু বাস্তবে তা অনেক বেশি দামে বিক্রি হতে দেখা যায়। আর এই সুযোগে প্রত্যেকটা ব্যবসায়ি বিনা পরিশ্রমে লিটার প্রতি ৩০ টাকা ৪০ টাকা কামাই করে নিল।
বর্তমান সরকার ব্যবসায়িদের সঙ্গে আলোচনা করেছে, কিন্তু আমরা যারা তেল কিনে খাই, আমাদের সঙ্গে কোন পরামর্শ করেনি। আজকে সোয়াবিন তেলের দাম যদি ১৪০ টাকা থেকে ২শ টাকা করা হবে তাহলে আপনারা কি সরকারকে ভোট দিবেন। আর যদি বলা হয় আন্তর্জাতিক বাজার দরের সাথে মিলিয়ে সোয়াবিন তেলের দাম ১৪০ টাকার কম করতে হবে তাহলে তো আপনারা তার পক্ষে ভোট দিবেন। হাসিনা অসাধু ব্যবসায়িদের হাতে টাকা তুলে দিতে চায়। তেলের দাম বেড়েছে, বিদ্যুতের দাম বেড়েছে, আটার দাম বেড়েছে।
প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বেড়ে যায়। কিন্তু কৃষক ফসল উৎপাদন করে ফসলের দাম নাই। এইভাবে আমাদের উপর জুলুম অত্যাচার চলছে। আজকে আইন শৃংখলার অবনতি হয়েছে। আজকে নীতি নৈতিকতা ধ্বংস হয়েছে। দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার হচ্ছে। ৬১ হাজার কোটি টাকা প্রত্যেক বছর বিদেশে পাচার করা হচ্ছে। একসময় বাংলার সম্পদ রাজ পরিবারের লোকজন পাচার করতো। তার বিরুদ্ধে লড়াই করে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম। লুটপাটকারী, পাচারকারীদের কোন ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। দরকার হলে আমরা আবার মুক্তিযুদ্ধ ও দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবো। কিন্তু বাংলাদেশের সম্পদ বিদেশে পাচার হতে দেব না।
লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করতে দেব না। আজকে দেখেন ভোটে ১৫৪ জন বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত হয়েছে। আগামীদিনেও জনগনের ভোটাধিকার হরণ করে জোর জবরদস্তিমূলকভাবে নির্বাচনের নামে প্রহসন সংঘটিত করে আবার ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করছে। আমাদের দেশে সামনে বাজেট করা হবে ৭ লক্ষ কোটি টাকার বেশি। ওইটা দেখেন আপনার আমার টাকা। ওই বাজেটের টাকা যদি আমরা মাথাপিছু ভাগ করে দেই তাহলে প্রত্যেকজনে ৪০ হাজার টাকা পাওয়া যাবে। সরকারের কোন দরকার নাই। লুটপারের রাজত্ব কায়েমের জন্য ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছে।
তাই আমাদের ভাত কাপড়ের জন্য লড়াই করতে হবে। এই লড়াই সফল করতে হলে, গণতন্ত্রের জন্য ভোটাধিকারের জন্য লড়াই করতে হবে। কোনকিছুই মানুষ ভুলে নাই। আ’লীগকে ক্ষমতা থেকে সড়াতে হবে। সেই জায়গায় বিএনপি আসলে কোন লাভ হবে না। আপনারা লক্ষ্য করলে দেখবেন শেখ হাসিনা যখন বিরোধী দলে থাকে তখন পাবলিকের কথা বলে। একইভাবে খালেদা জিয়া যখন বিরোধী দলে থাকে তখন পাবলিকের কথা বলে। তাহলে আসুন না একটা বুদ্ধি করি।
তারা ২ জনই যেহেতু বিরোধী দলে পাবলিকের কথা বলে তাদের দুজনকে স্থায়ীভাবে বিরোধী দলে রাখার ব্যবস্থা করি। তাহলে ক্ষমতায় যাবে কারা? ক্ষমতায় যেতে হবে গরীব, দু:খি মেহনতি মানুষের স্বার্থ রক্ষাকারী রাজনৈতিক শক্তিকে। আমরা পরীক্ষায় পাশ হয়ে গেছি। তিনি আরও বলেন, সরকার গঠন করে আ’লীগ ফেইল, বিএনপি ফেইল, জাতীয় পার্টি ফেইল, জামায়াতে ইসলামী ফেইল, তত্ত¡াবধায়ক সরকার ফেইল, একমাত্র বাকি আছে কমিউনিস্ট পার্টি এবং বাম পন্থি শক্তি। তাদেরকে এখন ক্ষমতায় আনতে হবে। এই সরকার ক্ষমতায় কিংবা কোন দলীয় সরকার যদি ক্ষমতা থাকে তার অধিনে কোন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়।
দলীয় সরকারের অধীনে যেহেতু সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। সেহেতু দলীয় সরকারের অধিনে নির্বাচন হলে কমিউনিস্ট পার্টি অংশগ্রহন করবে না। আমাদের ভোটাধিকারের জন্য লড়াই করতে হবে। আমরা একটা বিকল্প শক্তি গড়ে তুলবো। যেটা মুক্তিযুদ্ধ ও সমাজতন্ত্রের ধারাই দেশটাকে গড়ে তুলবে। আমরা আওয়াজ তুলেছি মানুষের ভাতের অধিকার ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম। তবে এ সংগ্রাম আ’লীগের মাধ্যমেহবে না। বিএনপির মাধ্যমে হবে না। জনগণের শক্তিকে ক্ষমতায় আনার জন্য ঘরে ঘরে প্রস্তুত হউন। বিজয় আসবেই।
পরে মির্জা রুহুল আমিন মিলনায়তনে সভায় জেলা সিপিবির সভাপতি কমরেড ইয়াকুব আলীর সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন, কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সদস্য কমরেড কাফি রতন, জেলা সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. আবু সায়েম, হরিপুর উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাহাব উদ্দীন, রানীশংকৈলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান, পীরগঞ্জের সাধারণ সম্পাদ মর্তুজা আলম, বালিয়াডাঙ্গীর সাধারণ সম্পাদক মুসলেম উদ্দীন, সদর উপজেলার সাধারণ সম্পাদক অনিল রায়, জেলা উদীচীর সাধারণ সম্পাদক রেজওয়ানুল হক রিজু, জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দিক প্রমুখ।
এর আগে একটি লাল পতাকা মিছিল বের হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।