দুর্নীতির আখড়া বরগুনার পাসপোর্ট অফিস, দালাল ছাড়া মিলছে না পাসপোর্ট
- আপডেট টাইম : ০৮:৫৯:০১ পূর্বাহ্ণ, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪
- / ৩ ৫০০০.০ বার পাঠক
দালালের শরণাপন্ন না হলে বরগুনার পাসপোর্ট অফিসে পদে পদে হয়রানি হতে হয় বলে অভিযোগ সেবাপ্রার্থীদের। এ ছাড়াও নিয়মিত অফিস না করার অভিযোগ রয়েছে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। এতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সেবাপ্রত্যাশীরা। তবে অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস প্রশাসনের।
অনুসন্ধানে জানাযায় প্রায় প্রতিদিনই দালালের মাধ্যমে ঘুষের ফাইল জমা নেওয়া হয়। ঘুষ ছাড়া কোন ফাইল গেলে সাধারণত কারণ দেখিয়ে জমা নেওয়া হয়না বলে সেবা গ্রহণকারীদের ফেরত পাঠান বরগুনা পাসপোর্ট অফিসের লোকজন। কিন্তু দেখা যায় ঘুষ দিলে ফাইল নিয়ে সরাসরি পাসপোর্ট অফিসের দ্বিতীয় তলার ২০৫ নং কক্ষে গেলেই ফাইল জমা করে ছবি, বায়োমেট্রি, স্বাক্ষর নিয়ে আবেদন সম্পন্ন করা হয়। দালালের মাধ্যমে সেবা গ্রহণকারীদের নিকট হতে আদায় করা ঘুষের টাকা, ভাগবাঁটোয়ারা হয় রাত গভীর হলে। এজন্য অফিস সময়ের পরও কর্মকর্তাদের অনেকে অফিসেই বসে থাকেন।
ঘুস না দিলে পদে পদে হয়রানি আর চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় সেবা গ্রহণকারীদের। নানাবিধ উদ্যোগ সত্ত্বেও পাসপোর্ট সেবা অনেকটাই যেন আটকে গেছে দুর্নীতির দুষ্টচক্রে। পাসপোর্ট অফিসের ঘাটে ঘাটে ঘুষের রেট বাঁধা।
স্থানীয় সূত্র বলছে, বরগুনা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে প্রতিদিন ৩০-৫০টি আবেদন জমা পড়ে। এর মধ্যে বেশির ভাগ আবেদন জমা হয় ‘ঘুষ চ্যানেলে’। আবেদনপ্রতি ন্যূনতম ঘুষ নেওয়া হয় ২ হাজার টাকা। এ হিসাবে দৈনিক ঘুষের পরিমাণ দাঁড়ায় কমপক্ষে ৬০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা। মাসে আসে প্রায় ১৮-৩০ লাখ টাকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কম্পিউটার টাইপিং ব্যবসায়ী বলেন, পাসপোর্টের আবেদন ফরম বর্তমানে অনলাইনে পূরণ করতে হয়। ফরম পূরণ করার পরে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ টাকা জমা নেয়। টাকা জমা দিয়ে ঘুষ না দিয়ে কেউ অফিসে গেলে পড়তে হয় ভোগান্তিতে। বাবা মায়ের আইডি কার্ডের সাথে আবেদনকারীর আইডি কার্ডে ‘া’ ‘’ি অথবা ‘ধ’ তে ‘ব’ অথবা ‘র’ মিল না থাকলেই চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় আবেদনকারীকে। সবকিছু মিল থাকলেও সর্বশেষ ফরমে টাকা জমা দেওয়ার তথ্য পূরণ করতে হবে বলে ফেরত পাঠায়।
কিন্তু অনলাইনে আবেদন করতে টাকা জমার তথ্য পূরণের কোন অপশন নেই। ফরম ডাউনলোড করলে পিডিএফ ফাইলের তৃতীয় পৃষ্ঠায় টাকা জমা দেওয়ার তথ্য চাহিত ছক থাকে। এভাবে নানা কারণ দেখিয়ে আবেদনকারীকে হয়রানি করা হয়। কেউ প্রতিবাদ করলে তার আবেদন ফরম জমা নিলেও পরতে হয় ভিন্ন ঝামেলায়। আবেদন ফরম জমা রেখে ফেলে রাখা হয়। কোন কার্যক্রম করা হয় না। পাসপোর্টে বেশ কয়েকটি তথ্য সংশোধনের ওপর কড়াকড়ির কারণে ব্যাপক ঘুষ বাণিজ্যের সুযোগ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে নাম, পিতা-মাতার নাম এবং জন্মতারিখ সংশোধনের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার কারণে এসব বিষয়ে ঘুষের রেট খুবই চড়া। তবে ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য এ ধরনের পাসপোর্ট করে নিতে অনেকে দালালদের কাছে ধরনা দেন। নাম অথবা জন্মতারিখ সংশোধনে মোটা অঙ্কের ঘুষ নেওয়া হয়।
অনুসন্ধানে আরও বেড়িয়ে আসে , খুব সুক্ষ্ম প্রতিটি আবেদনে ভিন্ন ভিন্ন চিহ্ন দিয়ে প্রেরণ করলেই কোন ঝামেলা ছাড়াই আবেদন জমা হয়। আর চিহ্ন পেতে দিতে হয় মোটা অংকের টাকা। ঘুষের টাকা না দিলে চিহ্ন পাওয়া যায় না। আর চিহ্ন ছাড়া ফাইল জমা হওয়ার কোন প্রশ্নই আসে না। চিহ্ন সম্পর্কে অবগত আছেন অফিসের সকল কর্মকর্তা কর্মচারী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি বলেন- তাদের সকল কাগজপত্র সঠিক থাকার পরেও পড়তে হয়েছে ভিন্ন ভোগান্তিতে। আবেদন ফরমে কেন টাকা জমা দেওয়ার তথ্য পূরণ করা হয়নি? প্রশ্ন করে বের করে দেয় অফিস কর্তৃপক্ষ। এছাড়া পুরোনো এমআরপি (মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট) নবায়নের আবেদন নেয় না বরগুনা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস।
রাকিব নামের এক ভুক্তভোগী জানায়, আমি দালালের মাধ্যমে যায়নি বিদায় আমাকে এক সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন কাগজের কথা বলে হয়রানি করা হচ্ছে। আজ সকল কাগজ নিয়ে আসার পরে বলা হচ্ছে আমার বিবাহের কাবিন নামা আনার জন্য। দেশে পরিবর্তন এসেছে কিন্তু এই অসাধু কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এখনই ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।
এবিষয়ে জনার জন্য বরগুনা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে সহকারী পরিচালক মোঃ আলী আশরাফ কে পাওয়া যায়নি তার রুমে। অফিস থেকে জানানো হয় তিনি আছেন মিটিংয়ে। কোথায় কার সাথে মিটিং করছেন এ বিষয়ে তথ্য দিতে পারেননি কর্মরতরা।
এবিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলম জানায়,আমি জরুরী কাজে একটু ক্যান্টনমেন্ট যাচ্ছি। সেখান থেকে ফিরে পাসপোর্ট অফিস দালালমুক্ত করার পাশাপাশি কর্মকর্তাদের অফিস না করার বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।