ঢাকা ১১:৪৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ১ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo চট্টগ্রাম সিইপিজেডে আল হামিদ টেক্সটাইল ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড Logo পিআর নিয়ে গণভোটে অনড় জামায়াত, মানলেই জুলাই সনদে স্বাক্ষর Logo ৫ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও ইপিজেডের আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি, ভেঙে পড়ছে দেয়াল Logo ভাঙ্গুড়ায় আড়াই লক্ষ টাকার নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারী জাল পুড়িয়ে ধ্বংস Logo বরগুনার তালতলীতে সুশীলনের উদ্যোগে নারীদের মাঝে কৃষি উপকরণ বিতরণ, Logo মহম্মদপুরে শহীদ আবীর হোসেন দিবস পালিত Logo কালিয়াকৈরে জমির দলিল জালিয়াতির অভিযোগ Logo অতিরিক্ত নম্বর দিয়ে সন্তুষ্টি নয়, ন্যায্য নম্বর দিয়ে সততাকে বেছে নিয়েছি Logo হাসিনার অর্থ জোগানদাতা কে এই দিলীপ, তার কারামুক্তির নেপথ্যে কারা? Logo HSC Result 2025 : কোন বোর্ডে পাশের হার কত শতাংশ? জিপিএ-৫ কত?

হাসিনার অর্থ জোগানদাতা কে এই দিলীপ, তার কারামুক্তির নেপথ্যে কারা?

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০১:২১:১০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫
  • ৪ ১০.০০০ বার পড়া হয়েছে

জুলাই হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামি শেখ হাসিনার অন্যতম অর্থ জোগানদাতা এবং বিতর্কিত স্বর্ণালংকার ব্যবসায়ী ও ধনকুবের দিলীপ কুমার আগরওয়ালা। তাকে জামিন দিয়েছেন আদালত। এর পরপরই দ্রুত তার জামিননামা কারাগারে পৌঁছায়। একপর্যায়ে কঠোর গোপনীয়তায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। দিলীপের এমন আকস্মিক কারামুক্তি নিয়ে আদালত অঙ্গনে তোলপাড় চলছে।

আইনজীবীদের অভিযোগ রাষ্ট্রপক্ষের প্রত্যক্ষ সহায়তা ছাড়া তার এভাবে কারামুক্তি কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কারণ বর্তমানে যে কোনো বন্দি মুক্তির ক্ষেত্রে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার ক্লিয়ারেন্স লাগে। এছাড়া পুলিশসহ আরও কয়েকটি সংস্থার কর্তাব্যক্তিদের কাছে ধরনা দিতে হয়। সেখানে দিলীপ একজন হাইপ্রোফাইল আসামি। রাষ্ট্রপক্ষের কারও প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ছাড়া তার এত দ্রুত কারামুক্তি কিছুতেই সম্ভব নয়।

গুলশান থানার একটি হত্যা মামলায় ২৭ সেপ্টেম্বর জামিন পান দিলীপ। এর তিন দিনের মাথায় ৩০ সেপ্টেম্বর কঠোর গোপনীয়তায় তিনি কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বেরিয়ে যান। অজ্ঞাত কারণে এ সময় কোনো ধরনের গোয়েন্দা রিপোর্ট দেওয়া হয়নি। এছাড়া কারা কর্তৃপক্ষ ছাড়াও পুলিশের বিশেষ শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্যরা ছিলেন নীরব।

সূত্র জানায়, কারাগার থেকে ছাড়া পাওয়ার পরপরই গা ঢাকা দিয়েছেন দিলীপ। বর্তমানে তার কোনো হদিস মিলছে না। তিনি সীমান্ত পার হয়ে ওপারে চলে গেছেন এমন গুঞ্জন রয়েছে।

সূত্র জানায়, দিলীপ আগরওয়ালা আওয়ামী লীগের বাণিজ্য উপকমিটির নেতা ছিলেন। এছাড়া তিনি ২০২৪ সালের ‘আমি এবং ডামি’খ্যাত নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গা-১ আসন থেকে এমপি পদে নির্বাচন করে পরাজিত হন। তবে ৫ আগস্ট সরকার পতনের পরপরই তিনি ভোল পালটে বিএনপিতে ভিড়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। ৪ সেপ্টেম্বর তাকে গ্রেফতার করে গুলশান থানা পুলিশ। পরে জুলাই হত্যাকাণ্ডের একাধিক মামলায় তাকে আসামি করা হয়। বর্তমানে দিলীপের বিরুদ্ধে ডজনখানেক মামলা বিচারাধীন।

এক আইনজীবী যুগান্তরকে বলেন, দিলীপের মুক্তির নেপথ্যে রাষ্ট্রপক্ষের এক প্রভাবশালী কর্মকর্তা কলকাঠি নাড়েন। ওই কর্মকর্তার সঙ্গে দিলীপের ঘনিষ্ঠতা বেশ পুরোনো। একই জেলায় তাদের বাড়ি। এ কারণে গ্রেফতারের পরপরই একাধিকবার দিলীপকে মুক্তি দেওয়ার চেষ্টা হয়। কিন্তু ঢাকার বাইরে কয়েকটি মামলা থাকায় তার মুক্তি কিছুটা বিলম্বিত হয়।

সূত্র জানায়, গ্রেফতারের পর বছরখানেক ধরে বন্দি ছিলেন দিলীপ। তবে কারাজীবনের বেশির ভাগ সময় তিনি ছিলেন হাসপাতালের ভিআইপি কেবিনে। সেখানে আরাম-আয়েশের কোনো কমতি ছিল না। স্ত্রী-সন্তানসহ আত্মীয়-পরিজন নিয়মিত সাক্ষাৎ করেছেন। এমনকি হাসপাতালে বসেই মোবাইল ফোনে মামলার বাদীকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগও ওঠে তার বিরুদ্ধে।

আরও পড়ুন
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হচ্ছে
এদিকে বিপুল অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দিলীপ ও তার স্ত্রী সবিতা আগরওয়ালার বিরুদ্ধে গত ৮ অক্টোবর মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এতে উভয়ের বিরুদ্ধে হাজার কোটি টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। এছাড়া দিলীপের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের বিরুদ্ধে স্বর্ণ চোরাচালান, ভারত, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশে অর্থ পাচারসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে।

বক্তব্য : দিলীপ কুমার আগরওয়ালার কারামুক্তির ক্ষেত্রে প্রভাবশালীদের হাত রয়েছে এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী বুধবার যুগান্তরকে বলেন, যে কাউকে জামিন দেওয়া আদালতের এখতিয়ার। বেশ কয়েকটি মামলায় দিলীপ কুমার আগরওয়ালা জামিনে ছিলেন। তবে তার চূড়ান্ত কারামুক্তির বিষয়টি আমার জানা নেই।

জামিনের বিষয়ে জানতে চাইলে আসামিপক্ষের আইনজীবী জাহাঙ্গীর আলম যুগান্তরকে বলেন, আদালত তাকে জামিন দিয়েছেন। যথানিয়মে বেইলবন্ড কারাগারে পৌঁছানোর পর তিনি মুক্ত হন। এক্ষেত্রে অনিয়মের কিছু নেই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তার পাসপোর্ট জব্দ অবস্থায় আছে। ফলে তার বিদেশে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তিনি দেশেই আছেন।


প্রিন্ট
ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

চট্টগ্রাম সিইপিজেডে আল হামিদ টেক্সটাইল ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড

হাসিনার অর্থ জোগানদাতা কে এই দিলীপ, তার কারামুক্তির নেপথ্যে কারা?

আপডেট সময় ০১:২১:১০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫

জুলাই হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামি শেখ হাসিনার অন্যতম অর্থ জোগানদাতা এবং বিতর্কিত স্বর্ণালংকার ব্যবসায়ী ও ধনকুবের দিলীপ কুমার আগরওয়ালা। তাকে জামিন দিয়েছেন আদালত। এর পরপরই দ্রুত তার জামিননামা কারাগারে পৌঁছায়। একপর্যায়ে কঠোর গোপনীয়তায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। দিলীপের এমন আকস্মিক কারামুক্তি নিয়ে আদালত অঙ্গনে তোলপাড় চলছে।

আইনজীবীদের অভিযোগ রাষ্ট্রপক্ষের প্রত্যক্ষ সহায়তা ছাড়া তার এভাবে কারামুক্তি কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কারণ বর্তমানে যে কোনো বন্দি মুক্তির ক্ষেত্রে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার ক্লিয়ারেন্স লাগে। এছাড়া পুলিশসহ আরও কয়েকটি সংস্থার কর্তাব্যক্তিদের কাছে ধরনা দিতে হয়। সেখানে দিলীপ একজন হাইপ্রোফাইল আসামি। রাষ্ট্রপক্ষের কারও প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ছাড়া তার এত দ্রুত কারামুক্তি কিছুতেই সম্ভব নয়।

গুলশান থানার একটি হত্যা মামলায় ২৭ সেপ্টেম্বর জামিন পান দিলীপ। এর তিন দিনের মাথায় ৩০ সেপ্টেম্বর কঠোর গোপনীয়তায় তিনি কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বেরিয়ে যান। অজ্ঞাত কারণে এ সময় কোনো ধরনের গোয়েন্দা রিপোর্ট দেওয়া হয়নি। এছাড়া কারা কর্তৃপক্ষ ছাড়াও পুলিশের বিশেষ শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্যরা ছিলেন নীরব।

সূত্র জানায়, কারাগার থেকে ছাড়া পাওয়ার পরপরই গা ঢাকা দিয়েছেন দিলীপ। বর্তমানে তার কোনো হদিস মিলছে না। তিনি সীমান্ত পার হয়ে ওপারে চলে গেছেন এমন গুঞ্জন রয়েছে।

সূত্র জানায়, দিলীপ আগরওয়ালা আওয়ামী লীগের বাণিজ্য উপকমিটির নেতা ছিলেন। এছাড়া তিনি ২০২৪ সালের ‘আমি এবং ডামি’খ্যাত নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গা-১ আসন থেকে এমপি পদে নির্বাচন করে পরাজিত হন। তবে ৫ আগস্ট সরকার পতনের পরপরই তিনি ভোল পালটে বিএনপিতে ভিড়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। ৪ সেপ্টেম্বর তাকে গ্রেফতার করে গুলশান থানা পুলিশ। পরে জুলাই হত্যাকাণ্ডের একাধিক মামলায় তাকে আসামি করা হয়। বর্তমানে দিলীপের বিরুদ্ধে ডজনখানেক মামলা বিচারাধীন।

এক আইনজীবী যুগান্তরকে বলেন, দিলীপের মুক্তির নেপথ্যে রাষ্ট্রপক্ষের এক প্রভাবশালী কর্মকর্তা কলকাঠি নাড়েন। ওই কর্মকর্তার সঙ্গে দিলীপের ঘনিষ্ঠতা বেশ পুরোনো। একই জেলায় তাদের বাড়ি। এ কারণে গ্রেফতারের পরপরই একাধিকবার দিলীপকে মুক্তি দেওয়ার চেষ্টা হয়। কিন্তু ঢাকার বাইরে কয়েকটি মামলা থাকায় তার মুক্তি কিছুটা বিলম্বিত হয়।

সূত্র জানায়, গ্রেফতারের পর বছরখানেক ধরে বন্দি ছিলেন দিলীপ। তবে কারাজীবনের বেশির ভাগ সময় তিনি ছিলেন হাসপাতালের ভিআইপি কেবিনে। সেখানে আরাম-আয়েশের কোনো কমতি ছিল না। স্ত্রী-সন্তানসহ আত্মীয়-পরিজন নিয়মিত সাক্ষাৎ করেছেন। এমনকি হাসপাতালে বসেই মোবাইল ফোনে মামলার বাদীকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগও ওঠে তার বিরুদ্ধে।

আরও পড়ুন
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হচ্ছে
এদিকে বিপুল অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দিলীপ ও তার স্ত্রী সবিতা আগরওয়ালার বিরুদ্ধে গত ৮ অক্টোবর মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এতে উভয়ের বিরুদ্ধে হাজার কোটি টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। এছাড়া দিলীপের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের বিরুদ্ধে স্বর্ণ চোরাচালান, ভারত, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশে অর্থ পাচারসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে।

বক্তব্য : দিলীপ কুমার আগরওয়ালার কারামুক্তির ক্ষেত্রে প্রভাবশালীদের হাত রয়েছে এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী বুধবার যুগান্তরকে বলেন, যে কাউকে জামিন দেওয়া আদালতের এখতিয়ার। বেশ কয়েকটি মামলায় দিলীপ কুমার আগরওয়ালা জামিনে ছিলেন। তবে তার চূড়ান্ত কারামুক্তির বিষয়টি আমার জানা নেই।

জামিনের বিষয়ে জানতে চাইলে আসামিপক্ষের আইনজীবী জাহাঙ্গীর আলম যুগান্তরকে বলেন, আদালত তাকে জামিন দিয়েছেন। যথানিয়মে বেইলবন্ড কারাগারে পৌঁছানোর পর তিনি মুক্ত হন। এক্ষেত্রে অনিয়মের কিছু নেই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তার পাসপোর্ট জব্দ অবস্থায় আছে। ফলে তার বিদেশে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তিনি দেশেই আছেন।


প্রিন্ট