ঢাকা ১২:২০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ৩০ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo আশুলিয়ায় যানজট, মাদক ও সন্ত্রাস নিরসনে সুশীল সমাজের আলোচনা সভা Logo মিরপুর অগ্নিকাণ্ডে এখনো নিখোঁজ ১৩ জন Logo চাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু Logo ইসরায়েলকে সহায়তার অভিযোগে ৩৩ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করলো হামাস Logo ভালবাসার বন্ধনের বিরুদ্ধে মিথ্যে অপহরণ মামলা ছেলের বাবা কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে আবেদন Logo কালিয়াকৈরে জমির পাওয়ার অফ এ্যাটর্নি দলিল জাল জালিয়াতির অভিযোগ Logo ভৈরব জেলা বাস্তবায়নের দাবীতে মানব বন্ধন Logo আগামীর বাংলাদেশ হবে ইসলামের বাংলাদেশ-আল্লামা মামুনুল হক। Logo ভাঙ্গুড়ায় তারেক রহমানের সাক্ষাৎকার প্রদর্শনী, নেতাকর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস Logo ইলিশ রক্ষায় ব্যার্থ মৎস অধিদপ্তর সাংবাদিক দেখে দৌড়ে পালালেন ইলিশ বোঝায় ট্রলার

চোখ হারিয়েও অদ্ভুত কৌশলে ক্রিকেটে দাপিয়ে বেড়িয়েছিলেন যে ‘নবাব’

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ১২:৩৭:২৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ অগাস্ট ২০২৫
  • ১১৬ ১০.০০০ বার পড়া হয়েছে

মনসুর আলী খান পতৌদি/ফাইল ছবি

দ্য ওভালে ইংল্যান্ড-ভারত পঞ্চম টেস্ট শেষে সিরিজজয়ী অধিনায়কের হাতে তুলে দেওয়া হবে অ্যান্ডারসন-টেন্ডুলকার ট্রফি। সেই সঙ্গে এক টুকরো ইতিহাসও পকেটে পুরবেন তিনি। কী সেই ইতিহাস। প্রথম ‘পতৌদি মেডেল অব এক্সেলেন্স’। যার নামে এই পদক দেওয়া হবে, তিনি একটি রাজকীয় ঐতিহ্যের প্রতীক। পতৌদির অষ্টম নবাব ইফতেখার আলী খান ১৯৩০ ও ১৯৪০ এর দশকে ইংল্যান্ড ও ভারতের হয়ে খেলেছেন। তার ছেলে মনসুর আলী খান, যিনি টাইগার নামে পরিচিত, ভারতের অন্যতম সেরা অধিনায়ক। ২০২৫ সিরিজের আগে দীর্ঘ ১৮ বছর ভারত-ইংল্যান্ড টেস্ট সিরিজ ছিল তার নামে। এবারই প্রথম নাম বদলে অ্যান্ডারসন-টেন্ডুলকার করা হয়েছে। পতৌদির নাম বাদ দেওয়ায় বিতর্ক দেখা দেওয়ায় নবাব সাহেবের নামে ঘোষণা করা হয় ‘পতৌদি মেডেল’। সেই পদক পাবেন সিরিজজয়ী অধিনায়ক।

ভারতীয় ক্রিকেটের খোলনলচে বদলে দেওয়া টাইগার পতৌদি দেখতে ছিলেন নায়কের মতো। এজন্যই হয়তো বলিউডের বাঙালি অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর তার প্রেমে পড়েন। অটোগ্রাফ নিতে গিয়ে যে সম্পর্কের সূচনা, শেষতক সেটি গড়ায় প্রণয় ও পরিণয়ে। পতৌদি-শর্মিলার ছেলে সাইফ আলী খান বলিউড অভিনেতা। অকুতোভয় ক্রিকেটের প্রবক্তা পতৌদি, যার ধমনীতে বইত ‘নীল রক্ত’, সেই তিনি মাত্র ২১ বছর বয়সে ভারতের কনিষ্ঠতম অধিনায়ক হয়ে প্রতিপক্ষের চোখে চোখ রেখে লড়াই করার বীজ রোপণ করে দিয়েছিলেন। ভারতীয় ক্রিকেটের বাঁকবদলের সেই শুরু। এক চোখ নিয়ে তার ব্যাট করার রূপকথা ক্রিকেট ইতিহাসের অমূল্য অর্ঘ্য।

১৯৬১ সালের জুলাইয়ে হোভে এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হয়ে এক চোখ হারান পতৌদি। তখন তার বয়স মাত্র ২০। পতৌদি তখন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিনায়ক। সাসেক্সের বিপক্ষে দিনের খেলা শেষে গাড়িতে যাচ্ছিলেন পাশের রেস্তোরাঁয় খেতে। অথচ, রেস্তোরাঁ মাঠ থেকে ৩০০ গজও হবে না। ওইটুকু দূরত্বে গাড়িতে যাওয়ার সময় দুর্ঘটনা ঘটে। আরেকটি গাড়ির সঙ্গে ধাক্কায় কাচ বিঁধে তার ডান চোখে। অস্ত্রোপচার হয়। কনট্যাক্ট লেন্স পরানো হয় চোখে। স্বাভাবিক জীবনযাপনে তেমন সমস্যা হয়নি। কিন্তু বাইশ গজে দাঁড়িয়ে দেখলেন, একটি নয়, দুটি বল তার দিকে ছুটে আসছে। প্রথমে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যান। পরে বুঝতে পারেন, ভেতরের বলটাই আসল।

দুর্ঘটনায় তার ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যেতে পারত। অথচ, এক চোখ নিয়েই খেলে গেছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। সেঞ্চুরি, ডাবল সেঞ্চুরিও করেছেন। সবশুদ্ধ খেলা ৪৬ টেস্টের মধ্যে অধিনায়ক ছিলেন ৪০টিতে। এর মধ্যে নয়টিতে জিতেছিল ভারত। একবার ইয়ান চ্যাপেল তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ক্রিকেটের বাইরে তিনি কী করেন। তখন শুধু ক্রিকেট খেলে সংসার চালানো যেত না। মনসুর আলী খান জবাব দিয়েছিলেন, ‘আমি একজন নবাব। নবাবী করি।’ রাজপুত্রের রাজকীয়তা চিরঅম্লান থাকে। ২০১১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ৭০ বছর বয়সে মারা যান নবাব।


প্রিন্ট
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

আশুলিয়ায় যানজট, মাদক ও সন্ত্রাস নিরসনে সুশীল সমাজের আলোচনা সভা

চোখ হারিয়েও অদ্ভুত কৌশলে ক্রিকেটে দাপিয়ে বেড়িয়েছিলেন যে ‘নবাব’

আপডেট সময় ১২:৩৭:২৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ অগাস্ট ২০২৫

মনসুর আলী খান পতৌদি/ফাইল ছবি

দ্য ওভালে ইংল্যান্ড-ভারত পঞ্চম টেস্ট শেষে সিরিজজয়ী অধিনায়কের হাতে তুলে দেওয়া হবে অ্যান্ডারসন-টেন্ডুলকার ট্রফি। সেই সঙ্গে এক টুকরো ইতিহাসও পকেটে পুরবেন তিনি। কী সেই ইতিহাস। প্রথম ‘পতৌদি মেডেল অব এক্সেলেন্স’। যার নামে এই পদক দেওয়া হবে, তিনি একটি রাজকীয় ঐতিহ্যের প্রতীক। পতৌদির অষ্টম নবাব ইফতেখার আলী খান ১৯৩০ ও ১৯৪০ এর দশকে ইংল্যান্ড ও ভারতের হয়ে খেলেছেন। তার ছেলে মনসুর আলী খান, যিনি টাইগার নামে পরিচিত, ভারতের অন্যতম সেরা অধিনায়ক। ২০২৫ সিরিজের আগে দীর্ঘ ১৮ বছর ভারত-ইংল্যান্ড টেস্ট সিরিজ ছিল তার নামে। এবারই প্রথম নাম বদলে অ্যান্ডারসন-টেন্ডুলকার করা হয়েছে। পতৌদির নাম বাদ দেওয়ায় বিতর্ক দেখা দেওয়ায় নবাব সাহেবের নামে ঘোষণা করা হয় ‘পতৌদি মেডেল’। সেই পদক পাবেন সিরিজজয়ী অধিনায়ক।

ভারতীয় ক্রিকেটের খোলনলচে বদলে দেওয়া টাইগার পতৌদি দেখতে ছিলেন নায়কের মতো। এজন্যই হয়তো বলিউডের বাঙালি অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর তার প্রেমে পড়েন। অটোগ্রাফ নিতে গিয়ে যে সম্পর্কের সূচনা, শেষতক সেটি গড়ায় প্রণয় ও পরিণয়ে। পতৌদি-শর্মিলার ছেলে সাইফ আলী খান বলিউড অভিনেতা। অকুতোভয় ক্রিকেটের প্রবক্তা পতৌদি, যার ধমনীতে বইত ‘নীল রক্ত’, সেই তিনি মাত্র ২১ বছর বয়সে ভারতের কনিষ্ঠতম অধিনায়ক হয়ে প্রতিপক্ষের চোখে চোখ রেখে লড়াই করার বীজ রোপণ করে দিয়েছিলেন। ভারতীয় ক্রিকেটের বাঁকবদলের সেই শুরু। এক চোখ নিয়ে তার ব্যাট করার রূপকথা ক্রিকেট ইতিহাসের অমূল্য অর্ঘ্য।

১৯৬১ সালের জুলাইয়ে হোভে এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হয়ে এক চোখ হারান পতৌদি। তখন তার বয়স মাত্র ২০। পতৌদি তখন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিনায়ক। সাসেক্সের বিপক্ষে দিনের খেলা শেষে গাড়িতে যাচ্ছিলেন পাশের রেস্তোরাঁয় খেতে। অথচ, রেস্তোরাঁ মাঠ থেকে ৩০০ গজও হবে না। ওইটুকু দূরত্বে গাড়িতে যাওয়ার সময় দুর্ঘটনা ঘটে। আরেকটি গাড়ির সঙ্গে ধাক্কায় কাচ বিঁধে তার ডান চোখে। অস্ত্রোপচার হয়। কনট্যাক্ট লেন্স পরানো হয় চোখে। স্বাভাবিক জীবনযাপনে তেমন সমস্যা হয়নি। কিন্তু বাইশ গজে দাঁড়িয়ে দেখলেন, একটি নয়, দুটি বল তার দিকে ছুটে আসছে। প্রথমে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যান। পরে বুঝতে পারেন, ভেতরের বলটাই আসল।

দুর্ঘটনায় তার ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যেতে পারত। অথচ, এক চোখ নিয়েই খেলে গেছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। সেঞ্চুরি, ডাবল সেঞ্চুরিও করেছেন। সবশুদ্ধ খেলা ৪৬ টেস্টের মধ্যে অধিনায়ক ছিলেন ৪০টিতে। এর মধ্যে নয়টিতে জিতেছিল ভারত। একবার ইয়ান চ্যাপেল তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ক্রিকেটের বাইরে তিনি কী করেন। তখন শুধু ক্রিকেট খেলে সংসার চালানো যেত না। মনসুর আলী খান জবাব দিয়েছিলেন, ‘আমি একজন নবাব। নবাবী করি।’ রাজপুত্রের রাজকীয়তা চিরঅম্লান থাকে। ২০১১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ৭০ বছর বয়সে মারা যান নবাব।


প্রিন্ট