ঢাকা ০৮:০০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৫, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo পাবনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রধান নাজিরের বদলী নিয়ে চরম অসন্তোষ Logo মহম্মদপুরে বিএনপি’র নির্বাচনী পথ সভা অনুষ্ঠিত Logo পীরগঞ্জে বিএনপির উদ্যোগে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প অনুষ্ঠিত Logo দেশের ধন্যাঢ্য ব্যক্তিরাও প্রতারণার শিকার অনিক ও সোহেলের ভুয়া “প্রাচীন পিলার ও কয়েন” চক্র Logo দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই প্রায় অর্ধশত বদলি বানিজ্য পিএইচডি জালিয়াতি-বদলি বানিজ্য-ঠিকাদারি সিন্ডিকেটের মূলহোতা খালেকুজ্জামান চৌধুরী Logo কাচিঘাটা রেঞ্জে গাছকাটা সিন্ডিকেটের তাণ্ডব রাতে চার–পাঁচশ গাছ উজাড়—বন রক্ষাকারীরাই অভিযুক্ত!** স্থানীয়দের অভিযোগ: “৫ আগস্টের পর এলাকা একেবারে মগের মুল্লুক—বন কেটে লুটে খাচ্ছে সবাই Logo চীনে ট্রেন দুর্ঘটনায় ১১ জন নিহত Logo ১২ ঘণ্টায় দ্বিতীয়বার ভূমিকম্পে কাঁপল ইন্দোনেশিয়া Logo প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির মামলা জয় ও পুতুলের ৫ বছরের কারাদণ্ড Logo তিন মামলায় হাসিনার ২১ বছরের কারাদণ্ড

চীনা দূতাবাসের সতর্কতা জারি নিতে হবে সকল সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগ : সরকারকে গোয়েন্দাদের পরামর্শ জামায়াত-আ.লীগের কর্মসূচি ঘিরে অস্থিরতা

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ১১:৩৭:৪৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫
  • ৩৩ ১৮৪৪.০০০ বার পড়া হয়েছে

জামায়াত ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঘিরে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে সারাদেশে। তাদের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ সারাদেশেই হত্যা, গুলি, অগ্নিসংযোগ এবং আতঙ্ক সৃষ্টি করতে মিছিলসহ নানা ঘটনা ঘটছে। দেশের রাজনীতির মাঠে বর্তমানে বিরাজ করছে এক অদ্ভুত টানাপড়েন। ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের ১৪ মাস পর দেশে শুধু রাজনৈতিক অস্থিরতাই বাড়াচ্ছে না, বরং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের স্থিতিশীলতা নিয়েও জনমনে শঙ্কা সৃষ্টি করছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সম্প্রতি জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের জন্য যে সুপারিশমালা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জমা দিয়েছে, তা নিয়েই শুরু হয়েছে বিরোধ।

পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে দুর্বৃত্তদের গুলিতে শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাইফ মামুন খুন হয়েছেন। সোমবার আদালতে তিনি একটি মামলার হাজিরা দিতে গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন তার স্ত্রী রিপা আক্তার। একই দিনে রাজধানীর চারটি স্থানে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া সোমবার ভোরের দিকে মেরুল বাড্ডার ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সামনে আকাশ পরিবহনের একটি বাসে এবং শাহজাদপুর বাঁশতলায় ভিক্টর ক্লাসিক নামের অপর একটি বাসে এ অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। সোমবার সন্ধ্যার সাড়ে ৭টার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডিতে ল্যাবএইড হাসপাতালের সামনে একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। আগুন নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে পৌঁছে কাজ করে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট।

এদিকে দেশের প্রধান রাজনৈতিক শক্তিগুলোর ঘোষিত কর্মসূচি ঘিরে বড় ধরনের সহিংসতার আশঙ্কা দেখা দেয়ার জেরে বাংলাদেশে অবস্থানরত চীনা নাগরিকদের জন্য চরম সতর্কবার্তা জারি করেছে ঢাকায় অবস্থিত চীনা দূতাবাস। দূতাবাসের কনস্যুলার বিভাগ থেকে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জানানো হয়, ‘সম্প্রতি বাংলাদেশে একাধিক স্থানে হাতে তৈরি বোমার বিস্ফোরণ ঘটেছে।’ এতে আরো বলা হয়, চলতি সপ্তাহেই জামায়াতে ইসলামী ও এর সহযোগী দলগুলো এবং অন্যদিকে আওয়ামী লীগ ও অন্যদের পক্ষ থেকে বড় আকারের বিক্ষোভ ও সমাবেশ আয়োজনের সম্ভাবনা রয়েছে। এই অস্থিরতা সামনে রেখে চীনা দূতাবাস তাদের নাগরিকদের সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে ‘বাংলাদেশে অবস্থানরত সকল চীনা নাগরিকের প্রতি পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে যেন তাঁরা অত্যন্ত সতর্ক থাকেন, ভ্রমণের সময় সাবধানতা অবলম্বন করেন এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিক্ষোভ, গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রতিষ্ঠান, বা ধর্মীয়ভাবে সংবেদনশীল স্থানগুলোর আশপাশে যাওয়া এড়িয়ে চলেন।’ এতে করে বিশে^র দরবারে দেশের সুনাম ক্ষুণœ হচ্ছে।

জামায়াত ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ১১ ও ১৩ নভেম্বর কর্মসূচি ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। ইতোমধ্যে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে মাঠ পর্যায়ে নিরাপত্তা জোরদারের বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সোমবার থেকে রাজধানীসহ সারাদেশে বাড়ানো হয় পুলিশের টহল, চেকপোস্ট ও গোয়েন্দা নজরদারি। যেকোনো ধরনের সহিংসতা ঠেকাতে মাঠে থাকবে সেনাবাহিনী, র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থা।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বাধীন ৮ দল ৫ দফা দাবিতে আজ ঢাকায় মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে। সেই সাথে এই মহাসমাবেশ থেকে আরো কঠোর কর্মসূচি দেয়ারও হুমকি দিয়েছে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার রায় কবে হবে তা জানানো হবে আগামী ১৩ নভেম্বর। তাই ওই দিন রাজপথে থাকার ঘোষণা দিয়েছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগ। দেশের মানুষ যখন একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটের অপেক্ষায় দিন গুনছে, ঠিক তখন জামায়াতসহ কয়েকটি দল নিজেদের স্বার্থে রাজপথে আন্দোলন শুরু করেছে। তাদের এই আন্দোলন আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্যই করছে। অনেকে বলছেন, আওয়ামী লীগের সাথে গোপন আঁতাত করেই হয়তো জামায়াত ও তার মিত্ররা এ আন্দোলন শুরু করেছে। কেননা জামায়াতের সাথে বর্তমানে যে ৮টি দল যুগপৎ আন্দোলন করছে তাদের মধ্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, এ দলটি এর আগে আওয়ামী লীগের সহযোগী হিসেবেও কাজ করেছে। আগামী নির্বাচন বানচালের দেশি-বিদেশি এরকম ষড়যন্ত্রের বিষয় যখন সরকারকেও শঙ্কিত করছে তখন জামায়াত এবং আওয়ামী লীগের এমন তৎপরতা সে শঙ্কাকে আরো বাড়িয়ে দেয়।

সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রাজধানীর সব গির্জা, মন্দির, মসজিদসহ অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। ধর্মীয় সহাবস্থান, আন্তঃধর্মীয় ঐক্য ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, এসব ঘটনার পেছনে সংঘটিত নাশকতার পরিকল্পনা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শহরজুড়ে চেকপোস্ট স্থাপনসহ গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে ব্যাপকভাবে নাশকতাসহ বিভিন্ন ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মুখে বাংলাদেশ পড়তে পারে। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি দেশি-বিদেশি চক্রান্ত চলছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হঠাৎ হঠাৎ কয়েক মিনিটের মিছিল করে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে পতিত আওয়ামী লীগের পলাতক নেতা-কর্মীরা।

রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত হবে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করা এবং নাগরিক স্বার্থে দৃঢ় অবস্থান নেওয়া। ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করা এখন রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব। গণভোটের সময়সূচি নিয়ে বিতর্কে সময় নষ্ট করা অপ্রয়োজনীয়। রাজনৈতিক সংকট নিরসনের পরিবর্তে এই বিভক্তি ‘ফ্যাসিস্ট শক্তিদের’ পুনরুত্থানের সুযোগ করে দিতে পারে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জামায়াত ও এনসিপি দলের সুবিধার জন্য নির্বাচন বাতিল বা পেছাতে চাইছে। এই মুহূর্তে নিঃসন্দেহে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল বিএনপি। দেশজুড়ে দলটির সংগঠন বিস্তৃত। সঠিক এবং যোগ্য প্রার্থী মনোনয়ন দিয়ে তারা নির্বাচনের মাঠে নেমেছে। বিএনপির এই সুবিধার কথা তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা ভালো করেই জানে। এ জন্যই নির্বাচনকে অনিশ্চিত করে তোলার চেষ্টা চলছে বলে কোনো কোনো মহল মনে করে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঘিরে কোনো শঙ্কা নেই। সকল পরিস্থিতিতে সক্রিয় থাকবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এদিকে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, সরকারি স্থাপনা, দলীয় কার্যালয় ও পরিবহন টার্মিনালে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য। ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে বসানো হয়েছে বাড়তি চেকপোস্ট। একই সঙ্গে সাইবার ইউনিটও সক্রিয় রয়েছে, যাতে সামাজিক মাধ্যমে গুজব বা উস্কানিমূলক পোস্ট শনাক্ত করে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া যায়। রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের চলাচল, যোগাযোগ ও সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত বার্তাগুলো পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় কবে হবে, তা ১৩ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ঘোষণা করবেন। এই দিনকে ঘিরে সামাজিক মাধ্যমে পলাতক অনেক আওয়ামী লীগ নেতা ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা দেন। ডিএমপির একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বেআইনি কর্মকা- চালানোর উদ্দেশ্যে ঢাকায় অবস্থান করতে পারে। এটা ঠেকাতে বিভিন্ন মেস, হোস্টেল ও আবাসিক হোটেলে অভিযান চালানো হচ্ছে। এ ছাড়া নজরদারি থাকবে ঝটিকা মিছিলের দিকে। মিছিল বের হলেই ছত্রভঙ্গ এবং সবাইকে আটক করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

জামায়াতের সমাবেশের দিকে ইঙ্গিত করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, কথায় কথায় আপনি রাস্তায় যাবেন। এখন অন্য দল যদি তার প্রতিবাদে আবার রাস্তায় যায়, তাহলে কী হবে, সংঘর্ষ হবে না? বৃহত্তর দল বাংলাদেশে যদি রাস্তায় নামে এগুলোর প্রতিবাদে সংঘর্ষ হবে।

জামায়াত ও আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে চরম অনিশ্চয়তার দিকে নিয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও উপস্থাপক জিল্লুর রহমান। তিনি বলেছেন, ১১ নভেম্বর ঢাকায় জামায়াতের সমাবেশ। ১৩ তারিখ আওয়ামী লীগের লকডাউন কর্মসূচি। দুই দলের দুই কমসূচি ঘিরে কে কোন ঘটনা ঢাকায় ঘটাবে, কোনটার দায় কে কার ওপর চাপাবে এগুলো জনমনে আশঙ্কা সৃষ্টি করছে।

নিতে হবে সকল সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগ-নির্বাচনে সরকারকে গোয়েন্দাদের পরামর্শ: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব ও আনসারসহ সকল সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচ্চ পর্যায়ে পরামর্শ দেয়া হয়েছে গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে। একই সাথে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের সময় অন্যায়ভাবে ওই সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তির আদেশ পালনকারী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সিভিল প্রশাসন এবং গোয়েন্দা সংস্থায় কর্মরত কর্মকর্তা-সদস্যদের নির্বাচনের সকল দায়িত্ব থেকে দূরে রাখারও পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে। পুলিশ ও আনসার বাহিনীতে কর্মরত ফ্যাসিস্টদের অনেক সহযোগী এখনও নির্বাচনের মাঠে দায়িত্ব পালন করছে। এতে পলাতক আওয়ামী নেতা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে নির্বাচনের গোপন তথ্য চলে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে ওই গোয়েন্দা প্রতিবেদনে। নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচ্চ পর্যায়ে ওই প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে বলে গোয়েন্দা সূত্র নিশ্চিত করেছে।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, যেকোনো অপতৎপরতা রোধে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া, যেকোনো অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতিতে যে বাহিনী ঘটনাস্থলের আশপাশে থাকবে, সেই বাহিনীকেই সর্বপ্রথম রেসপন্স করতে হবে, সব বাহিনীকে সমন্বিত উদ্যোগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার রোধে রাখতে হবে আগাম প্রস্তুতি। এছাড়া নারীদের প্রতি সাইবার বুলিং প্রতিরোধ, সংখ্যালঘু ও জঙ্গি ইস্যু মোকাবিলা, ভয়েস ক্লোন করে চরিত্র হনন মোকাবিলা, খারাপ তথ্য প্রতিরোধে নিয়মিত ও দ্রুততার সঙ্গে ভালো তথ্য সরবরাহ, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে চিহ্নিত ও তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী গ্রেফতার, বৈধ অস্ত্র জমা নেওয়ার মতো ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যদিকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন নাশকতা প্রতিরোধ, তফসিল ঘোষণার পর থেকে বিদেশি নাগরিকদের তালিকা করে তাদের নিরাপত্তা দেওয়া, কালো টাকার ব্যবহার রোধে আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার, রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে আগত ও সংরক্ষিত পোস্টাল ভোটের নিরাপত্তা নিশ্চিত, বাহিনীর সদস্যরা দীর্ঘদিন একই স্থানে পদায়নে আছেন, তাদের বদলি, অধিক ঝুঁকিপূর্ণ, ঝুঁকিপূর্ণ ও সাধারণ ভোটকেন্দ্রের তালিকা যথাসময়ে কমিশনে দাখিল এবং নির্বাচন অফিসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে ইসি। জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) শফিকুল ইসলাম বলেন, কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এসব ঘটনা ঘটানো হয়েছে। আওয়ামী লীগসহ এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা ফেসবুকে নানা ধরনের প্রোপাগান্ডা ও হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। সবাই সেটা দেখছেন। এরই অংশ হিসেবে ককটেল বিস্ফোরণসহ নানা ধরনের নাশকতামূলক কার্যক্রমের চেষ্টা চলছে। আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ঢাকা মহানগর পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থেকে নগরবাসীর নিরাপত্তায় কাজ করছি।


প্রিন্ট
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

পাবনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রধান নাজিরের বদলী নিয়ে চরম অসন্তোষ

চীনা দূতাবাসের সতর্কতা জারি নিতে হবে সকল সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগ : সরকারকে গোয়েন্দাদের পরামর্শ জামায়াত-আ.লীগের কর্মসূচি ঘিরে অস্থিরতা

আপডেট সময় ১১:৩৭:৪৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫

জামায়াত ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঘিরে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে সারাদেশে। তাদের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ সারাদেশেই হত্যা, গুলি, অগ্নিসংযোগ এবং আতঙ্ক সৃষ্টি করতে মিছিলসহ নানা ঘটনা ঘটছে। দেশের রাজনীতির মাঠে বর্তমানে বিরাজ করছে এক অদ্ভুত টানাপড়েন। ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের ১৪ মাস পর দেশে শুধু রাজনৈতিক অস্থিরতাই বাড়াচ্ছে না, বরং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের স্থিতিশীলতা নিয়েও জনমনে শঙ্কা সৃষ্টি করছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সম্প্রতি জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের জন্য যে সুপারিশমালা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জমা দিয়েছে, তা নিয়েই শুরু হয়েছে বিরোধ।

পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে দুর্বৃত্তদের গুলিতে শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাইফ মামুন খুন হয়েছেন। সোমবার আদালতে তিনি একটি মামলার হাজিরা দিতে গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন তার স্ত্রী রিপা আক্তার। একই দিনে রাজধানীর চারটি স্থানে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া সোমবার ভোরের দিকে মেরুল বাড্ডার ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সামনে আকাশ পরিবহনের একটি বাসে এবং শাহজাদপুর বাঁশতলায় ভিক্টর ক্লাসিক নামের অপর একটি বাসে এ অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। সোমবার সন্ধ্যার সাড়ে ৭টার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডিতে ল্যাবএইড হাসপাতালের সামনে একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। আগুন নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে পৌঁছে কাজ করে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট।

এদিকে দেশের প্রধান রাজনৈতিক শক্তিগুলোর ঘোষিত কর্মসূচি ঘিরে বড় ধরনের সহিংসতার আশঙ্কা দেখা দেয়ার জেরে বাংলাদেশে অবস্থানরত চীনা নাগরিকদের জন্য চরম সতর্কবার্তা জারি করেছে ঢাকায় অবস্থিত চীনা দূতাবাস। দূতাবাসের কনস্যুলার বিভাগ থেকে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জানানো হয়, ‘সম্প্রতি বাংলাদেশে একাধিক স্থানে হাতে তৈরি বোমার বিস্ফোরণ ঘটেছে।’ এতে আরো বলা হয়, চলতি সপ্তাহেই জামায়াতে ইসলামী ও এর সহযোগী দলগুলো এবং অন্যদিকে আওয়ামী লীগ ও অন্যদের পক্ষ থেকে বড় আকারের বিক্ষোভ ও সমাবেশ আয়োজনের সম্ভাবনা রয়েছে। এই অস্থিরতা সামনে রেখে চীনা দূতাবাস তাদের নাগরিকদের সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে ‘বাংলাদেশে অবস্থানরত সকল চীনা নাগরিকের প্রতি পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে যেন তাঁরা অত্যন্ত সতর্ক থাকেন, ভ্রমণের সময় সাবধানতা অবলম্বন করেন এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিক্ষোভ, গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রতিষ্ঠান, বা ধর্মীয়ভাবে সংবেদনশীল স্থানগুলোর আশপাশে যাওয়া এড়িয়ে চলেন।’ এতে করে বিশে^র দরবারে দেশের সুনাম ক্ষুণœ হচ্ছে।

জামায়াত ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ১১ ও ১৩ নভেম্বর কর্মসূচি ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। ইতোমধ্যে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে মাঠ পর্যায়ে নিরাপত্তা জোরদারের বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সোমবার থেকে রাজধানীসহ সারাদেশে বাড়ানো হয় পুলিশের টহল, চেকপোস্ট ও গোয়েন্দা নজরদারি। যেকোনো ধরনের সহিংসতা ঠেকাতে মাঠে থাকবে সেনাবাহিনী, র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থা।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বাধীন ৮ দল ৫ দফা দাবিতে আজ ঢাকায় মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে। সেই সাথে এই মহাসমাবেশ থেকে আরো কঠোর কর্মসূচি দেয়ারও হুমকি দিয়েছে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার রায় কবে হবে তা জানানো হবে আগামী ১৩ নভেম্বর। তাই ওই দিন রাজপথে থাকার ঘোষণা দিয়েছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগ। দেশের মানুষ যখন একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটের অপেক্ষায় দিন গুনছে, ঠিক তখন জামায়াতসহ কয়েকটি দল নিজেদের স্বার্থে রাজপথে আন্দোলন শুরু করেছে। তাদের এই আন্দোলন আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্যই করছে। অনেকে বলছেন, আওয়ামী লীগের সাথে গোপন আঁতাত করেই হয়তো জামায়াত ও তার মিত্ররা এ আন্দোলন শুরু করেছে। কেননা জামায়াতের সাথে বর্তমানে যে ৮টি দল যুগপৎ আন্দোলন করছে তাদের মধ্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, এ দলটি এর আগে আওয়ামী লীগের সহযোগী হিসেবেও কাজ করেছে। আগামী নির্বাচন বানচালের দেশি-বিদেশি এরকম ষড়যন্ত্রের বিষয় যখন সরকারকেও শঙ্কিত করছে তখন জামায়াত এবং আওয়ামী লীগের এমন তৎপরতা সে শঙ্কাকে আরো বাড়িয়ে দেয়।

সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রাজধানীর সব গির্জা, মন্দির, মসজিদসহ অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। ধর্মীয় সহাবস্থান, আন্তঃধর্মীয় ঐক্য ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, এসব ঘটনার পেছনে সংঘটিত নাশকতার পরিকল্পনা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শহরজুড়ে চেকপোস্ট স্থাপনসহ গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে ব্যাপকভাবে নাশকতাসহ বিভিন্ন ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মুখে বাংলাদেশ পড়তে পারে। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি দেশি-বিদেশি চক্রান্ত চলছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হঠাৎ হঠাৎ কয়েক মিনিটের মিছিল করে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে পতিত আওয়ামী লীগের পলাতক নেতা-কর্মীরা।

রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত হবে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করা এবং নাগরিক স্বার্থে দৃঢ় অবস্থান নেওয়া। ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করা এখন রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব। গণভোটের সময়সূচি নিয়ে বিতর্কে সময় নষ্ট করা অপ্রয়োজনীয়। রাজনৈতিক সংকট নিরসনের পরিবর্তে এই বিভক্তি ‘ফ্যাসিস্ট শক্তিদের’ পুনরুত্থানের সুযোগ করে দিতে পারে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জামায়াত ও এনসিপি দলের সুবিধার জন্য নির্বাচন বাতিল বা পেছাতে চাইছে। এই মুহূর্তে নিঃসন্দেহে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল বিএনপি। দেশজুড়ে দলটির সংগঠন বিস্তৃত। সঠিক এবং যোগ্য প্রার্থী মনোনয়ন দিয়ে তারা নির্বাচনের মাঠে নেমেছে। বিএনপির এই সুবিধার কথা তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা ভালো করেই জানে। এ জন্যই নির্বাচনকে অনিশ্চিত করে তোলার চেষ্টা চলছে বলে কোনো কোনো মহল মনে করে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঘিরে কোনো শঙ্কা নেই। সকল পরিস্থিতিতে সক্রিয় থাকবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এদিকে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, সরকারি স্থাপনা, দলীয় কার্যালয় ও পরিবহন টার্মিনালে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য। ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে বসানো হয়েছে বাড়তি চেকপোস্ট। একই সঙ্গে সাইবার ইউনিটও সক্রিয় রয়েছে, যাতে সামাজিক মাধ্যমে গুজব বা উস্কানিমূলক পোস্ট শনাক্ত করে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া যায়। রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের চলাচল, যোগাযোগ ও সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত বার্তাগুলো পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় কবে হবে, তা ১৩ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ঘোষণা করবেন। এই দিনকে ঘিরে সামাজিক মাধ্যমে পলাতক অনেক আওয়ামী লীগ নেতা ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা দেন। ডিএমপির একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বেআইনি কর্মকা- চালানোর উদ্দেশ্যে ঢাকায় অবস্থান করতে পারে। এটা ঠেকাতে বিভিন্ন মেস, হোস্টেল ও আবাসিক হোটেলে অভিযান চালানো হচ্ছে। এ ছাড়া নজরদারি থাকবে ঝটিকা মিছিলের দিকে। মিছিল বের হলেই ছত্রভঙ্গ এবং সবাইকে আটক করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

জামায়াতের সমাবেশের দিকে ইঙ্গিত করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, কথায় কথায় আপনি রাস্তায় যাবেন। এখন অন্য দল যদি তার প্রতিবাদে আবার রাস্তায় যায়, তাহলে কী হবে, সংঘর্ষ হবে না? বৃহত্তর দল বাংলাদেশে যদি রাস্তায় নামে এগুলোর প্রতিবাদে সংঘর্ষ হবে।

জামায়াত ও আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে চরম অনিশ্চয়তার দিকে নিয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও উপস্থাপক জিল্লুর রহমান। তিনি বলেছেন, ১১ নভেম্বর ঢাকায় জামায়াতের সমাবেশ। ১৩ তারিখ আওয়ামী লীগের লকডাউন কর্মসূচি। দুই দলের দুই কমসূচি ঘিরে কে কোন ঘটনা ঢাকায় ঘটাবে, কোনটার দায় কে কার ওপর চাপাবে এগুলো জনমনে আশঙ্কা সৃষ্টি করছে।

নিতে হবে সকল সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগ-নির্বাচনে সরকারকে গোয়েন্দাদের পরামর্শ: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব ও আনসারসহ সকল সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচ্চ পর্যায়ে পরামর্শ দেয়া হয়েছে গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে। একই সাথে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের সময় অন্যায়ভাবে ওই সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তির আদেশ পালনকারী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সিভিল প্রশাসন এবং গোয়েন্দা সংস্থায় কর্মরত কর্মকর্তা-সদস্যদের নির্বাচনের সকল দায়িত্ব থেকে দূরে রাখারও পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে। পুলিশ ও আনসার বাহিনীতে কর্মরত ফ্যাসিস্টদের অনেক সহযোগী এখনও নির্বাচনের মাঠে দায়িত্ব পালন করছে। এতে পলাতক আওয়ামী নেতা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে নির্বাচনের গোপন তথ্য চলে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে ওই গোয়েন্দা প্রতিবেদনে। নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচ্চ পর্যায়ে ওই প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে বলে গোয়েন্দা সূত্র নিশ্চিত করেছে।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, যেকোনো অপতৎপরতা রোধে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া, যেকোনো অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতিতে যে বাহিনী ঘটনাস্থলের আশপাশে থাকবে, সেই বাহিনীকেই সর্বপ্রথম রেসপন্স করতে হবে, সব বাহিনীকে সমন্বিত উদ্যোগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার রোধে রাখতে হবে আগাম প্রস্তুতি। এছাড়া নারীদের প্রতি সাইবার বুলিং প্রতিরোধ, সংখ্যালঘু ও জঙ্গি ইস্যু মোকাবিলা, ভয়েস ক্লোন করে চরিত্র হনন মোকাবিলা, খারাপ তথ্য প্রতিরোধে নিয়মিত ও দ্রুততার সঙ্গে ভালো তথ্য সরবরাহ, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে চিহ্নিত ও তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী গ্রেফতার, বৈধ অস্ত্র জমা নেওয়ার মতো ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যদিকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন নাশকতা প্রতিরোধ, তফসিল ঘোষণার পর থেকে বিদেশি নাগরিকদের তালিকা করে তাদের নিরাপত্তা দেওয়া, কালো টাকার ব্যবহার রোধে আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার, রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে আগত ও সংরক্ষিত পোস্টাল ভোটের নিরাপত্তা নিশ্চিত, বাহিনীর সদস্যরা দীর্ঘদিন একই স্থানে পদায়নে আছেন, তাদের বদলি, অধিক ঝুঁকিপূর্ণ, ঝুঁকিপূর্ণ ও সাধারণ ভোটকেন্দ্রের তালিকা যথাসময়ে কমিশনে দাখিল এবং নির্বাচন অফিসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে ইসি। জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) শফিকুল ইসলাম বলেন, কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এসব ঘটনা ঘটানো হয়েছে। আওয়ামী লীগসহ এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা ফেসবুকে নানা ধরনের প্রোপাগান্ডা ও হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। সবাই সেটা দেখছেন। এরই অংশ হিসেবে ককটেল বিস্ফোরণসহ নানা ধরনের নাশকতামূলক কার্যক্রমের চেষ্টা চলছে। আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ঢাকা মহানগর পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থেকে নগরবাসীর নিরাপত্তায় কাজ করছি।


প্রিন্ট