ঢাকা ০৩:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ২০ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo ফরিদপুরে চেয়ারম্যানের শেল্টারে চায়না দুয়ারি জালের কারখানার রমরমা ব্যবসা, প্রশাসনের অভিযানে নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থা Logo রয়টার্সের প্রতিবেদন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সালিশের দ্বারস্থ হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে আদানি গ্রুপ Logo টানা কমছে দেশের রপ্তানি আয়, সামনে আরও কমার আশঙ্কা Logo বিএনপির ফাঁকা রাখা ৬৩ আসনে অগ্রাধিকার পাবেন যারা Logo আরপিও সংশোধন অধ্যাদেশ জারি জোট করলেও নিজ দলের প্রতীকেই ভোট করতে হবে Logo আশুলিয়া সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ৬ দলিল লেখক বরখাস্ত Logo সাভারে ট্রলি ভ্যানের ব্রেক ফেল আয়ারল্যান্ডের ওপরে এসে গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ Logo তৌহিদুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে ঘুষ বানিজ্যের অভিযোগ Logo ৪৮ তম বিসিএস পরীক্ষায় উওীর্ণদের নিয়োগ এর দাবি তে মানববন্ধন Logo বিএনপির প্রার্থী তালিকায় নেই রুমিন ফারহানার পদত্যাগ করেন

সামান্য বৃষ্টিতেই সড়কে হাঁটুপানি ঢাকার পানিবদ্ধতা দূর করতে একটি সামগ্রিক, সমন্বিত ও জনসম্পৃক্ত প্রকল্প প্রয়োজন

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ১২:১৩:০৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ৫৫ ১০.০০০ বার পড়া হয়েছে

সামান্য বৃষ্টিতেই রাজধানীর সড়কগুলো পানিতে তলিয়ে যায়। ফলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় নগরবাসীকে। একটু বৃষ্টি হলেই নগরীর সড়কগুলোতে কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও কোমড় পানি পর্যন্ত হয়ে যায়। তখন এই পানি ভেঙ্গে মানুষকে কর্মস্থলে যেতে হয়, শিক্ষার্থীদের যেতে হয় স্কুল-কলেজে। রাস্তায় জমে থাকা পানিতে অনেক সময় খানাখন্দকে যানবাহন পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হয় পথচারীরা। ঘনবসতিপূর্ণ এই শহরে এমনিতেই দীর্ঘ যানজটের কারণে প্রতিদিন রাজধানীবাসীকে নাকাল হতে হয়। তার উপর একটু বৃষ্টি হলেই রাজপথে পানি জমে যে ভোগান্তির সৃষ্টি হয় সেটা নগরবাসীর জীবনে এক বিভীষিকা।

রাজধানীর এমন ভয়াবহ পানিবদ্ধতার পেছনে রয়েছে অসংখ্য কারণ। নগরবিদরা বলছেন, নদী ভরাট রোধ, দখল হওয়া খাল উদ্ধার, পলিথিনের অবাধ ব্যবহার বন্ধ, অপরিকল্পিত বক্স কালভার্ট ও কার্যকর ড্রেনেজ সিস্টেম চালু করতে না পারলে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। এ জন্য সরকারের উদ্যোগের পাশাপাশি নাগরিক সচেতনতাও জরুরি বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। ঢাকায় ময়লা ফেলার জন্য বেছে নেওয়া হয় রাস্তাঘাট। এ ছাড়া বিভিন্ন উন্নয়নকাজে ব্যবহারের পর ফেলে রাখা জিনিসপত্র বৃষ্টি বা বিভিন্নভাবে গিয়ে ঠাঁই নেয় ড্রেনে। এতে ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায় পানিপ্রবাহ। ঢাকাসহ সারাদেশেই পলিথিনের অবাধ ব্যবহার। এ ব্যবসার পেছনে রয়েছেন কয়েকজন প্রভাবশালী। ফলে নিষিদ্ধ এ পলিথিন অনেকটাই সহজলভ্য। পরিবেশ উপদেষ্টা পলিথিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার পর এখন নিরব হয়ে গেছেন। তার এই নিরবতার পিছনে এক ধরনের সমঝোতার গুঞ্জন শোনা যায়।
বেপরোয়া দখলদারিত্বে ভরাট হয়ে যাচ্ছে রাজধানীর চারপাশের নদীগুলো। খালের বুকে উঠছে দালান। রাজধানীর আশপাশে কয়েকটি খাল মৃতপ্রায় অবস্থায় থাকলেও অধিকাংশ খালের অস্তিত্বই আর নেই। এক সময় বেশ কয়েকটি জলাশয় থাকলেও এগুলোর অস্তিত্ব হারিয়েছে অনেক আগেই। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর এসব দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দিলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তাদের গালভরা বুলি এখন কথার কথা হিসাবেই জনগণের কাছে প্রতীয়মান হচ্ছে।

পরিবেশবাদী আন্দোলন ও নদী রক্ষা কমিটির নেতা শরীফ জামিল বলেন, রাজধানী ঢাকাকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি বর্তমান সরকারের অনেক উপদেষ্টা দিলেও কার্যত তারা এ ক্ষেত্রে একেবারেই ব্যর্থ। পরিবেশ উপদেষ্টা অনেক সুন্দর সুন্দর কথা বললেও পলিথিন তিনি বন্ধ করতে পারেনি। রাজধানীর নদীগুলো দখলমুক্ত করতে পারেননি। খালগুলোকে পরিষ্কার ও দখলমুক্ত করতে পারেনি। সব মিলিয়ে এসব বিষয়ে তাদের আন্তরিকতা নিয়েও এখন জনমনে নানান প্রশ্নের উদয় হয়েছে।

ঢাকাকে নিয়ে সরকারের নেই কোন সুষ্ঠু পরিকল্পনা। কোনো সমন্বয় ছাড়াই যে যার মতো উন্নয়নকাজ করে যায়। বিভিন্ন প্রয়োজনে সারাবছরই চলতে থাকে খোঁড়াখুঁড়ি। আর বর্ষাকাল এলে যেন এর হিড়িক পড়ে। এক সংস্থা তাদের কাজ শেষ করে চলে যাওয়ার কদিন পর আরেক সংস্থা এসে সেই একই রাস্তা কাটতে শুরু করে। সব মিলিয়ে এক অপরিকল্পিত নগর উন্নয়নের কুফল ঢাকাবাসীর বিড়ম্বনার মূল কারণ। রাজধানীর ড্রেনেজ ব্যবস্থা বর্তমানে অনেকটাই অকেজো বলা যায়। রাজধানীর সড়কগুলোতে দুই হাজারের মতো ক্যাচপিট রয়েছে। এর মধ্যে ময়লা আবর্জনা জমে এক হাজারের বেশি ক্যাচপিট বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে বৃষ্টির পানি নেমে যাওয়ার সুযোগ থাকছে না।

নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ ও খাল দখল, সমন্বয়হীনতা এবং নগরীর কংক্রিটাইজেশনের কারণে পানিবদ্ধতা বাড়ছে, যা নিরসনে একটি সমন্বিত ও জনসম্পৃক্ত প্রকল্প প্রয়োজন। ড্রেনেজ ও খালগুলোর সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে এবং বিদ্যমান অবকাঠামোর সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। ঢাকা শহরের পানি নিষ্কাশন ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা সাতটি সরকারি সংস্থা দ্বারা পরিচালিত হয়, কিন্তু এদের মধ্যে কার্যকর সমন্বয়ের অভাব সমস্যা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। ঢাকার পানিবদ্ধতা দূর করতে একটি সামগ্রিক, সমন্বিত ও জনসম্পৃক্ত প্রকল্প প্রয়োজন। শহরের খালগুলো উদ্ধার করে সেগুলোর পানি চলাচলের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

গতকাল ঢাকায় টানা বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে পানিবদ্ধতা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন শিক্ষার্থী, কর্মজীবী মানুষ ও সাধারণ মানুষ। গত রোববার রাত থেকে টানা ১২ ঘণ্টায় ঢাকায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ১০৭ মিলিমিটার। এর মধ্যে ভোর ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত মাত্র ৩ ঘণ্টায় হয়েছে ৭১ মিলিমিটার বৃষ্টি। কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতেই বিভিন্ন সড়ক ও অলিগলিতে জমে যায় পানি। রাস্তায় পানি থাকায় যান চলাচলে তৈরি হয় জটলা। কোথাও কোথাও হাঁটু সমান পানি, আবার কোথাও তার চেয়েও বেশি। এতে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয় স্কুল, কলেজ এবং অফিসগামী মানুষকে। পানিবদ্ধতার কারণে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েন রাজধানীর মালিবাগ, মৌচাক, রাজারবাগ, মুগদা, বাসাবো, খিলগাঁও এলাকার মানুষ। এছাড়া পুরান ঢাকার বংশাল, নাজিরাবাজার, চকবাজারেও পানিবদ্ধতা দেখা দেয়। পুরান ঢাকার বংশালে জমে থাকা পানিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এক বেকারি কর্মচারীর মৃত্যু হয়েছে।

এছাড়াও ঢাকার অনেক এলাকায় সড়কের মেরামত কাজের কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। নিত্যদিনই দুর্ভোগ পোহাতে হয় বাসিন্দাদের। সেবা সংস্থার ও সড়ক উন্নয়ন কাজে এসেছে স্থবিরতা। মূল সড়ক, অধিকাংশ অলিগলির সড়কের অবস্থাই বেহাল। তীব্র যানজট, দূষণের পাশাপাশি সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি করায় শহরে নাগরিক দুর্ভোগ বেড়েছে কয়েকগুণ। অনেক সড়কে যান চলাচলও বন্ধ। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সংশ্লিষ্টদের দাবি, চলতি বর্ষা মৌসুমে অতিভারী বৃষ্টি ও পানিবদ্ধতার কারণে ঢাকার সড়কের এই বেহাল দশা। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, ঢাকা নগরীর বাসিন্দাদের ভোগান্তি লাঘব করার জন্য তারা কাজ করছে। ইতোমধ্যে অনেকগুলো সড়কের খানাখন্দ ও বড় বড় গর্ত মেরামত করা হয়েছে। বৃষ্টি পুরোপুরি থেমে গেলে প্রয়োজনীয়তা অনুসারে কিছু কিছু সড়ক পুনঃনির্মাণ ও মেরামত করা হবে। এসব সড়কের নির্মাণ, পুনঃনির্মাণ ও পূর্ণাঙ্গভাবে সংস্কার কার্যক্রম শুরু হবে এবং নগরবাসী সেসব কাজেরও পূর্ণ সুফল ভোগ করবে।

বৃষ্টির কারণে নিত্যপ্রয়োজনের কাজে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষ পড়েন বিপাকে। কর্মজীবী মানুষ, শিক্ষার্থী সবাইকে ভোগান্তি পোহাতে হয়। পানির কারণে যানবাহন চলাচলে বিঘœ ঘটে। অনেকে বাধ্য হন পায়ে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছাতে। মাত্র কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতেই অচল হয়ে পড়ে নগর জীবন। ঝুম বৃষ্টিতে মিরপুর, বনানী, ফার্মগেট, ধানমন্ডি, গ্রিন রোড, মোহাম্মদপুর, রামপুরা ও মালিবাগে রাস্তায় হাঁটুসমান পানি জমে যায়। কিছু কিছু এলাকায় নালার পানি উপচে বাসাবাড়ি ও দোকানপাটে পানি ঢুকে পড়ে। বৃষ্টির কারণে পানিবদ্ধ সৃষ্টি হওয়া অনেক সড়কের হাঁটু সমান পানি দেখা দেয়। এতে চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যানবাহনকে। অনেক জায়গায় রিকশা ও বাস চলাচল বন্ধ ছিল। যেসব যানবাহন চলেছিল, সেগুলোও ট্রাফিক জ্যামে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। ফলে কর্মস্থলে পৌঁছাতে অনেকের সময় লেগেছে অনেক গুণ বেশি। বৃষ্টির কারণে ঢাকার কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে। কারণ অনেক প্রতিষ্ঠানের রাস্তায় পানি জমে যাওয়ায় সেখানে যাওয়া সম্ভব হচ্ছিল না।

আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী কয়েক দিন দেশের প্রায় সব বিভাগেই হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও হতে পারে মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণও। বজ্রসহ বৃষ্টির সময় দমকা হাওয়াও বইতে পারে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান জানান, অল্প সময়ের মধ্যে এত বেশি বৃষ্টির কারণেই অনেক এলাকায় পানি জমে গেছে। ফলে তৈরি হয়েছে পানিবদ্ধতা। তবে দুপুরের পর বৃষ্টির প্রবণতা কিছুটা কমেছে। তবে আজ থেকে বৃষ্টি আরও কমে আসবে বলেও জানান তিনি।

পানিবদ্ধতা নিরসনে নানা পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। যদিও বাস্তবে এর তেমন কার্যকারিতা দেখা যায়নি। নাগরিকদের অভিযোগ বেশ কিছু স্থানে ড্রেনেজ ব্যবস্থা খারাপ থাকার কারণে অল্প বৃষ্টিতেই পানি জমে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা।

বৃষ্টিতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় দ্রুত পানি নিষ্কাশনে কাজ শুরু করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। বিশেষ করে গ্রিন রোড, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, শান্তিনগর, বেইলি রোড, কাকরাইল, পল্টন, সাত মসজিদ রোড ও ধানমন্ডি এলাকায় রাস্তায় পানি জমে যায়। এসব জায়গায় ইতোমধ্যে পাম্প বসিয়ে পানি সরানোর কাজ শুরু হয়েছে। প্রবল বৃষ্টি চলতে থাকলে কিছু এলাকায় অস্থায়ীভাবে পানিবদ্ধতা থাকতে পারে। তাই ডিএসসিসি নাগরিকদের নিরাপদ স্থানে অবস্থান করার পরামর্শ দিয়েছে এবং প্রয়োজন হলে দ্রুত জরুরি নম্বরে যোগাযোগ করতে বলেছে। বৃষ্টির কারণে কিছু সময় যান চলাচলে সমস্যা হলেও, ডিএসসিসির দ্রুত পদক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। পানি নিষ্কাশনের কাজে ব্যবহৃত পাম্পগুলো ২৪ ঘণ্টা সক্রিয় রাখা হবে বলে জানিয়েছে সিটি করপোরেশন।

ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. রাসেল রহমান জানান, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে ঢাকায় দমকা হাওয়ার সঙ্গে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। এতে কিছু এলাকায় অতি ভারী বর্ষণ হয়েছে, যার ফলে পানিবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। আমাদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মীরা প্রতিটি ওয়ার্ডে নিরলসভাবে কাজ করছেন। একইসঙ্গে ওয়ার্ডভিত্তিক ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিমও পরিস্থিতি নজরদারিতে রেখেছে। পানিবদ্ধতা নিরসনে ডিএসসিসি বর্তমানে অস্থায়ী পোর্টেবল পাম্প ব্যবহার করছে। তবে পানি নিষ্কাশনের আউটলেট এবং আশপাশের খাল-নদীর পানির স্তর প্রায় সমান হয়ে যাওয়ায় কিছু এলাকায় পানি সরে যেতে সময় লাগছে।

টিকাটুলীর বাসিন্দা রেজাউল করিম বলেন, ঢাকা কেন যেন দিনদিন বসবাসের অযোগ্য শহরে পরিণত হচ্ছে। সড়কের সংস্কারের কাজ চলমান থাকে দিনের পর দিন। মূল সড়কের বেহাল দশা। সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তায় পানি জমে যায়। বাসার সামনের রাস্তা থেকে শুরু করে শহরের প্রধান রাস্তাও পানিতে ঢুবে যায়। এতে মানুষের চলাচল করতে খুবই অসুবিধা হয়। অনেক সড়কে বিশাল বিশাল গর্ত হয়ে যানবাহন পড়ে যায়। ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন কার্যক্রম স্থবির।

বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রফেসর শামসুল হক বলেন, রাজধানী শহর, এই শহরে সারা বছর চলাচলযোগ্য রাখতে হলে মানসম্মত সড়ক বানাতে হবে। পাশাপাশি বর্ষায় পানিবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে হবে। পিচঢালাই দেওয়া সড়ক যত ভালোভাবেই তৈরি করা হোক না কেন, পানিবদ্ধতা হলে তা টিকিয়ে রাখা কঠিন। বর্ষা হলেই যে পানিবদ্ধতা হয় তা নয়, অনেক সময় ড্রেন উপচে, ম্যানহোল উপচেও সড়কে পানি আসে। গুণগত মান ঠিক না থাকায় অলিগলির রাস্তা টেকে না। তদারকির অভাব কমবেশি থাকেই। সড়কে কিছুদিন পর কাটাকাটির মানে হলো সঠিক পরিকল্পনার অভাব।


প্রিন্ট
ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

ফরিদপুরে চেয়ারম্যানের শেল্টারে চায়না দুয়ারি জালের কারখানার রমরমা ব্যবসা, প্রশাসনের অভিযানে নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থা

সামান্য বৃষ্টিতেই সড়কে হাঁটুপানি ঢাকার পানিবদ্ধতা দূর করতে একটি সামগ্রিক, সমন্বিত ও জনসম্পৃক্ত প্রকল্প প্রয়োজন

আপডেট সময় ১২:১৩:০৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সামান্য বৃষ্টিতেই রাজধানীর সড়কগুলো পানিতে তলিয়ে যায়। ফলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় নগরবাসীকে। একটু বৃষ্টি হলেই নগরীর সড়কগুলোতে কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও কোমড় পানি পর্যন্ত হয়ে যায়। তখন এই পানি ভেঙ্গে মানুষকে কর্মস্থলে যেতে হয়, শিক্ষার্থীদের যেতে হয় স্কুল-কলেজে। রাস্তায় জমে থাকা পানিতে অনেক সময় খানাখন্দকে যানবাহন পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হয় পথচারীরা। ঘনবসতিপূর্ণ এই শহরে এমনিতেই দীর্ঘ যানজটের কারণে প্রতিদিন রাজধানীবাসীকে নাকাল হতে হয়। তার উপর একটু বৃষ্টি হলেই রাজপথে পানি জমে যে ভোগান্তির সৃষ্টি হয় সেটা নগরবাসীর জীবনে এক বিভীষিকা।

রাজধানীর এমন ভয়াবহ পানিবদ্ধতার পেছনে রয়েছে অসংখ্য কারণ। নগরবিদরা বলছেন, নদী ভরাট রোধ, দখল হওয়া খাল উদ্ধার, পলিথিনের অবাধ ব্যবহার বন্ধ, অপরিকল্পিত বক্স কালভার্ট ও কার্যকর ড্রেনেজ সিস্টেম চালু করতে না পারলে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। এ জন্য সরকারের উদ্যোগের পাশাপাশি নাগরিক সচেতনতাও জরুরি বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। ঢাকায় ময়লা ফেলার জন্য বেছে নেওয়া হয় রাস্তাঘাট। এ ছাড়া বিভিন্ন উন্নয়নকাজে ব্যবহারের পর ফেলে রাখা জিনিসপত্র বৃষ্টি বা বিভিন্নভাবে গিয়ে ঠাঁই নেয় ড্রেনে। এতে ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায় পানিপ্রবাহ। ঢাকাসহ সারাদেশেই পলিথিনের অবাধ ব্যবহার। এ ব্যবসার পেছনে রয়েছেন কয়েকজন প্রভাবশালী। ফলে নিষিদ্ধ এ পলিথিন অনেকটাই সহজলভ্য। পরিবেশ উপদেষ্টা পলিথিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার পর এখন নিরব হয়ে গেছেন। তার এই নিরবতার পিছনে এক ধরনের সমঝোতার গুঞ্জন শোনা যায়।
বেপরোয়া দখলদারিত্বে ভরাট হয়ে যাচ্ছে রাজধানীর চারপাশের নদীগুলো। খালের বুকে উঠছে দালান। রাজধানীর আশপাশে কয়েকটি খাল মৃতপ্রায় অবস্থায় থাকলেও অধিকাংশ খালের অস্তিত্বই আর নেই। এক সময় বেশ কয়েকটি জলাশয় থাকলেও এগুলোর অস্তিত্ব হারিয়েছে অনেক আগেই। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর এসব দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দিলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তাদের গালভরা বুলি এখন কথার কথা হিসাবেই জনগণের কাছে প্রতীয়মান হচ্ছে।

পরিবেশবাদী আন্দোলন ও নদী রক্ষা কমিটির নেতা শরীফ জামিল বলেন, রাজধানী ঢাকাকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি বর্তমান সরকারের অনেক উপদেষ্টা দিলেও কার্যত তারা এ ক্ষেত্রে একেবারেই ব্যর্থ। পরিবেশ উপদেষ্টা অনেক সুন্দর সুন্দর কথা বললেও পলিথিন তিনি বন্ধ করতে পারেনি। রাজধানীর নদীগুলো দখলমুক্ত করতে পারেননি। খালগুলোকে পরিষ্কার ও দখলমুক্ত করতে পারেনি। সব মিলিয়ে এসব বিষয়ে তাদের আন্তরিকতা নিয়েও এখন জনমনে নানান প্রশ্নের উদয় হয়েছে।

ঢাকাকে নিয়ে সরকারের নেই কোন সুষ্ঠু পরিকল্পনা। কোনো সমন্বয় ছাড়াই যে যার মতো উন্নয়নকাজ করে যায়। বিভিন্ন প্রয়োজনে সারাবছরই চলতে থাকে খোঁড়াখুঁড়ি। আর বর্ষাকাল এলে যেন এর হিড়িক পড়ে। এক সংস্থা তাদের কাজ শেষ করে চলে যাওয়ার কদিন পর আরেক সংস্থা এসে সেই একই রাস্তা কাটতে শুরু করে। সব মিলিয়ে এক অপরিকল্পিত নগর উন্নয়নের কুফল ঢাকাবাসীর বিড়ম্বনার মূল কারণ। রাজধানীর ড্রেনেজ ব্যবস্থা বর্তমানে অনেকটাই অকেজো বলা যায়। রাজধানীর সড়কগুলোতে দুই হাজারের মতো ক্যাচপিট রয়েছে। এর মধ্যে ময়লা আবর্জনা জমে এক হাজারের বেশি ক্যাচপিট বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে বৃষ্টির পানি নেমে যাওয়ার সুযোগ থাকছে না।

নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ ও খাল দখল, সমন্বয়হীনতা এবং নগরীর কংক্রিটাইজেশনের কারণে পানিবদ্ধতা বাড়ছে, যা নিরসনে একটি সমন্বিত ও জনসম্পৃক্ত প্রকল্প প্রয়োজন। ড্রেনেজ ও খালগুলোর সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে এবং বিদ্যমান অবকাঠামোর সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। ঢাকা শহরের পানি নিষ্কাশন ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা সাতটি সরকারি সংস্থা দ্বারা পরিচালিত হয়, কিন্তু এদের মধ্যে কার্যকর সমন্বয়ের অভাব সমস্যা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। ঢাকার পানিবদ্ধতা দূর করতে একটি সামগ্রিক, সমন্বিত ও জনসম্পৃক্ত প্রকল্প প্রয়োজন। শহরের খালগুলো উদ্ধার করে সেগুলোর পানি চলাচলের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

গতকাল ঢাকায় টানা বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে পানিবদ্ধতা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন শিক্ষার্থী, কর্মজীবী মানুষ ও সাধারণ মানুষ। গত রোববার রাত থেকে টানা ১২ ঘণ্টায় ঢাকায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ১০৭ মিলিমিটার। এর মধ্যে ভোর ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত মাত্র ৩ ঘণ্টায় হয়েছে ৭১ মিলিমিটার বৃষ্টি। কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতেই বিভিন্ন সড়ক ও অলিগলিতে জমে যায় পানি। রাস্তায় পানি থাকায় যান চলাচলে তৈরি হয় জটলা। কোথাও কোথাও হাঁটু সমান পানি, আবার কোথাও তার চেয়েও বেশি। এতে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয় স্কুল, কলেজ এবং অফিসগামী মানুষকে। পানিবদ্ধতার কারণে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েন রাজধানীর মালিবাগ, মৌচাক, রাজারবাগ, মুগদা, বাসাবো, খিলগাঁও এলাকার মানুষ। এছাড়া পুরান ঢাকার বংশাল, নাজিরাবাজার, চকবাজারেও পানিবদ্ধতা দেখা দেয়। পুরান ঢাকার বংশালে জমে থাকা পানিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এক বেকারি কর্মচারীর মৃত্যু হয়েছে।

এছাড়াও ঢাকার অনেক এলাকায় সড়কের মেরামত কাজের কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। নিত্যদিনই দুর্ভোগ পোহাতে হয় বাসিন্দাদের। সেবা সংস্থার ও সড়ক উন্নয়ন কাজে এসেছে স্থবিরতা। মূল সড়ক, অধিকাংশ অলিগলির সড়কের অবস্থাই বেহাল। তীব্র যানজট, দূষণের পাশাপাশি সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি করায় শহরে নাগরিক দুর্ভোগ বেড়েছে কয়েকগুণ। অনেক সড়কে যান চলাচলও বন্ধ। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সংশ্লিষ্টদের দাবি, চলতি বর্ষা মৌসুমে অতিভারী বৃষ্টি ও পানিবদ্ধতার কারণে ঢাকার সড়কের এই বেহাল দশা। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, ঢাকা নগরীর বাসিন্দাদের ভোগান্তি লাঘব করার জন্য তারা কাজ করছে। ইতোমধ্যে অনেকগুলো সড়কের খানাখন্দ ও বড় বড় গর্ত মেরামত করা হয়েছে। বৃষ্টি পুরোপুরি থেমে গেলে প্রয়োজনীয়তা অনুসারে কিছু কিছু সড়ক পুনঃনির্মাণ ও মেরামত করা হবে। এসব সড়কের নির্মাণ, পুনঃনির্মাণ ও পূর্ণাঙ্গভাবে সংস্কার কার্যক্রম শুরু হবে এবং নগরবাসী সেসব কাজেরও পূর্ণ সুফল ভোগ করবে।

বৃষ্টির কারণে নিত্যপ্রয়োজনের কাজে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষ পড়েন বিপাকে। কর্মজীবী মানুষ, শিক্ষার্থী সবাইকে ভোগান্তি পোহাতে হয়। পানির কারণে যানবাহন চলাচলে বিঘœ ঘটে। অনেকে বাধ্য হন পায়ে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছাতে। মাত্র কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতেই অচল হয়ে পড়ে নগর জীবন। ঝুম বৃষ্টিতে মিরপুর, বনানী, ফার্মগেট, ধানমন্ডি, গ্রিন রোড, মোহাম্মদপুর, রামপুরা ও মালিবাগে রাস্তায় হাঁটুসমান পানি জমে যায়। কিছু কিছু এলাকায় নালার পানি উপচে বাসাবাড়ি ও দোকানপাটে পানি ঢুকে পড়ে। বৃষ্টির কারণে পানিবদ্ধ সৃষ্টি হওয়া অনেক সড়কের হাঁটু সমান পানি দেখা দেয়। এতে চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যানবাহনকে। অনেক জায়গায় রিকশা ও বাস চলাচল বন্ধ ছিল। যেসব যানবাহন চলেছিল, সেগুলোও ট্রাফিক জ্যামে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। ফলে কর্মস্থলে পৌঁছাতে অনেকের সময় লেগেছে অনেক গুণ বেশি। বৃষ্টির কারণে ঢাকার কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে। কারণ অনেক প্রতিষ্ঠানের রাস্তায় পানি জমে যাওয়ায় সেখানে যাওয়া সম্ভব হচ্ছিল না।

আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী কয়েক দিন দেশের প্রায় সব বিভাগেই হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও হতে পারে মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণও। বজ্রসহ বৃষ্টির সময় দমকা হাওয়াও বইতে পারে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান জানান, অল্প সময়ের মধ্যে এত বেশি বৃষ্টির কারণেই অনেক এলাকায় পানি জমে গেছে। ফলে তৈরি হয়েছে পানিবদ্ধতা। তবে দুপুরের পর বৃষ্টির প্রবণতা কিছুটা কমেছে। তবে আজ থেকে বৃষ্টি আরও কমে আসবে বলেও জানান তিনি।

পানিবদ্ধতা নিরসনে নানা পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। যদিও বাস্তবে এর তেমন কার্যকারিতা দেখা যায়নি। নাগরিকদের অভিযোগ বেশ কিছু স্থানে ড্রেনেজ ব্যবস্থা খারাপ থাকার কারণে অল্প বৃষ্টিতেই পানি জমে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা।

বৃষ্টিতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় দ্রুত পানি নিষ্কাশনে কাজ শুরু করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। বিশেষ করে গ্রিন রোড, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, শান্তিনগর, বেইলি রোড, কাকরাইল, পল্টন, সাত মসজিদ রোড ও ধানমন্ডি এলাকায় রাস্তায় পানি জমে যায়। এসব জায়গায় ইতোমধ্যে পাম্প বসিয়ে পানি সরানোর কাজ শুরু হয়েছে। প্রবল বৃষ্টি চলতে থাকলে কিছু এলাকায় অস্থায়ীভাবে পানিবদ্ধতা থাকতে পারে। তাই ডিএসসিসি নাগরিকদের নিরাপদ স্থানে অবস্থান করার পরামর্শ দিয়েছে এবং প্রয়োজন হলে দ্রুত জরুরি নম্বরে যোগাযোগ করতে বলেছে। বৃষ্টির কারণে কিছু সময় যান চলাচলে সমস্যা হলেও, ডিএসসিসির দ্রুত পদক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। পানি নিষ্কাশনের কাজে ব্যবহৃত পাম্পগুলো ২৪ ঘণ্টা সক্রিয় রাখা হবে বলে জানিয়েছে সিটি করপোরেশন।

ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. রাসেল রহমান জানান, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে ঢাকায় দমকা হাওয়ার সঙ্গে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। এতে কিছু এলাকায় অতি ভারী বর্ষণ হয়েছে, যার ফলে পানিবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। আমাদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মীরা প্রতিটি ওয়ার্ডে নিরলসভাবে কাজ করছেন। একইসঙ্গে ওয়ার্ডভিত্তিক ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিমও পরিস্থিতি নজরদারিতে রেখেছে। পানিবদ্ধতা নিরসনে ডিএসসিসি বর্তমানে অস্থায়ী পোর্টেবল পাম্প ব্যবহার করছে। তবে পানি নিষ্কাশনের আউটলেট এবং আশপাশের খাল-নদীর পানির স্তর প্রায় সমান হয়ে যাওয়ায় কিছু এলাকায় পানি সরে যেতে সময় লাগছে।

টিকাটুলীর বাসিন্দা রেজাউল করিম বলেন, ঢাকা কেন যেন দিনদিন বসবাসের অযোগ্য শহরে পরিণত হচ্ছে। সড়কের সংস্কারের কাজ চলমান থাকে দিনের পর দিন। মূল সড়কের বেহাল দশা। সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তায় পানি জমে যায়। বাসার সামনের রাস্তা থেকে শুরু করে শহরের প্রধান রাস্তাও পানিতে ঢুবে যায়। এতে মানুষের চলাচল করতে খুবই অসুবিধা হয়। অনেক সড়কে বিশাল বিশাল গর্ত হয়ে যানবাহন পড়ে যায়। ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন কার্যক্রম স্থবির।

বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রফেসর শামসুল হক বলেন, রাজধানী শহর, এই শহরে সারা বছর চলাচলযোগ্য রাখতে হলে মানসম্মত সড়ক বানাতে হবে। পাশাপাশি বর্ষায় পানিবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে হবে। পিচঢালাই দেওয়া সড়ক যত ভালোভাবেই তৈরি করা হোক না কেন, পানিবদ্ধতা হলে তা টিকিয়ে রাখা কঠিন। বর্ষা হলেই যে পানিবদ্ধতা হয় তা নয়, অনেক সময় ড্রেন উপচে, ম্যানহোল উপচেও সড়কে পানি আসে। গুণগত মান ঠিক না থাকায় অলিগলির রাস্তা টেকে না। তদারকির অভাব কমবেশি থাকেই। সড়কে কিছুদিন পর কাটাকাটির মানে হলো সঠিক পরিকল্পনার অভাব।


প্রিন্ট