যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় সফরে গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাজ্যের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সম্পর্কের প্রশংসা করে বলেছেন, ‘বিশেষ’ শব্দটি দিয়ে এই সম্পর্ককে পুরোপুরি বোঝানো যায় না। অন্যদিকে, ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস বিশ্বের সবচেয়ে জটিল সংকটগুলো সমাধানে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেন এবং ইউক্রেনকে রাশিয়ার স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে সমর্থন দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) উইন্ডসর ক্যাসলে আয়োজিত এক রাজকীয় নৈশভোজে রাজা এই কথাগুলো বলেন। বিবিসি সূত্রে এই খবর জানা গেছে।
রাজকীয় নৈশভোজে রাজা চার্লস দুই দেশের গভীর বন্ধন এবং সাংস্কৃতিক, বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্ক ধরে রাখার গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রিয় মূল্যবোধ রক্ষার জন্য আমাদের জনগণ একসঙ্গে লড়াই করেছে, প্রাণ দিয়েছে।’ ট্রাম্পের এই দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফর আজ বৃহস্পতিবারও চলবে। এই দিন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের সঙ্গে ব্রিটিশ রানি ক্যামিলা এবং প্রিন্সেস অব ওয়েলস অংশ নেবেন।
ছবি: বিবিসি
বুধবার উইন্ডসর ক্যাসলে ট্রাম্প এবং মেলানিয়াকে জাঁকজমকপূর্ণভাবে স্বাগত জানানো হয়। ব্রিটিশ রাজপ্রাসাদে পৌঁছানোর পর তাদের জন্য লালগালিচা সংবর্ধনা, তোপধ্বনি এবং অশ্বারোহী বাহিনীর প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।
ট্রাম্প যখন রাজার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছিলেন, তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ের ছয়টি কামান থেকে একযোগে ৪১ বার তোপধ্বনি করা হয়। একই সময়ে টাওয়ার অব লন্ডন থেকেও একই রকম তোপধ্বনি হয়। এই সংবর্ধনা আয়োজনে ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর ১,৩০০ সদস্য এবং শতাধিক ঘোড়া অংশ নেয়। যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য এটি ছিল স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা।
রাজকীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে ট্রাম্পের এই সফর রাজনৈতিক আলোচনায় রূপ নেবে। তিনি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে তার সরকারি বাসভবন চেকার্সে বৈঠক করবেন। ভোজসভায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রিন্স উইলিয়ামের প্রশংসা করেন এবং বলেন, ভবিষ্যতে তিনি ‘অসাধারণ সফল নেতা’ হবেন।
এছাড়া, তিনি প্রিন্সেস অব ওয়েলস ক্যাথরিনকে ‘দীপ্তিময়, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ও সুন্দরী’ হিসেবে আখ্যা দেন। ট্রাম্পের এই দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সফর প্রমাণ করে যে রাজা এবং তার মধ্যে সম্পর্ক বেশ ভালো। কুচকাওয়াজ চলাকালীন রাজা মজা করে ট্রাম্পকে সতর্ক করেন, যেন সৈন্যদের হাতে থাকা তলোয়ারে তার আঘাত না লাগে।
ছবি: বিবিসি
ছবি: বিবিসি
ট্রাম্প বহু বছর ধরে প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের একজন প্রশংসাকারী। তিনি তার উইন্ডসরে সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান। উল্লেখ্য, দায়িত্ব পালনকালে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের যুক্তরাজ্যে দুবার রাষ্ট্রীয় সফর করা একটি বিরল ঘটনা। ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে ২০১৯ সালের জুন মাসে প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রীয় সফরে যুক্তরাজ্যে গিয়েছিলেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নানা আন্তর্জাতিক সংকটের এই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রকে পাশে রাখার জন্য লন্ডন এই জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনের মাধ্যমে ট্রাম্পকে মুগ্ধ করতে চাইছে। ট্রাম্প ব্রিটিশ রাজপরিবার এবং জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন পছন্দ করেন বলে ২০১৯ সালের চেয়ে এবার বড় আয়োজন করা হয়েছে।
তবে ৭৯ বছর বয়সী ট্রাম্প যুক্তরাজ্যে অজনপ্রিয় বলে জরিপে দেখা গেছে, যার কারণে লন্ডন পুলিশ নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করেছে। রাজপ্রাসাদের চারপাশে ১,৬০০ পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
প্রিন্ট