স্বাধীন বাংলাদেশে অষ্টমবারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন। সবশেষ ২০১৯ সালের বিতর্কিত ডাকসু নির্বাচনের ছয় বছর পর আয়োজিত এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩৯ হাজার ৭৭৫ জন।
এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ২০ হাজার ৮৭৩ জন এবং নারী ভোটার ১৮ হাজার ৯০২ জন।
পুরুষ ও নারী ভোটারের সংখ্যায় পার্থক্য খুব বেশি নয়; মোট ভোটারের অর্ধেকের কাছাকাছি নারী ভোটার। আজ সকাল ৮টা থেকে আটটি কেন্দ্রের ৮১০টি বুথে ভোটগ্রহণ চলছে।
এবারের ডাকসু নির্বাচনে প্রতি ভোটার কেন্দ্রীয় সংসদের ২৮টি ও হল সংসদের ১৩টি পদ মিলিয়ে মোট ৪১টি পদে ভোট দেবেন।
আরও পড়ুন
ছাত্রদল আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছে, অভিযোগ সাদিক কায়েমের
ছাত্রদল আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছে, অভিযোগ সাদিক কায়েমের
স্বাধীনতার আগে ও পরে দেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিল ডাকসু নেতাদের, যার কারণে জাতীয় রাজনীতির বড় ক্যানভাসেই সাধারণত মাপা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে।
ফলে কেবল একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক হওয়া সত্ত্বেও, এই নির্বাচন শুরু থেকেই ছিল আলোচনার তুঙ্গে।
তবে বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এর নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকলেও, অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো তাতে ছিল অনেকটাই উপেক্ষিত।
আরও পড়ুন
শিক্ষার্থীরা যোগ্য ব্যক্তিকে নেতৃত্বে আনবেন: বাকের
শিক্ষার্থীরা যোগ্য ব্যক্তিকে নেতৃত্বে আনবেন: বাকের
১০০ বছরের পুরনো এই উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে থাকা, খাওয়ার মতো মৌলিক বিষয়গুলোরও সমাধান করা যায়নি। দীর্ঘ সময় ধরে চলেছে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের আধিপত্য ও দখলদারিত্ব।
প্রশ্ন উঠছে, জাতীয় রাজনীতির বড় ক্যানভাসে যে নির্বাচনকে দেখা হয়, তা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য আসলে কতটা ভূমিকা রাখতে পারে?
বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবার পর যে কয়টি ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, তার প্রতিটিই ছিল বিশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে।
ফলে জাতীয় রাজনীতিতে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা যেমন সোচ্চার ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান ও শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে তারা প্রত্যাশিত সেই ভূমিকাটি পালন করতে পারেননি।
আরও পড়ুন
‘সর্বোপরি, আল্লাহ সহায়’
‘সর্বোপরি, আল্লাহ সহায়’
‘আর এত বেশি তাদের জাতীয় রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়ে যেতে হয়েছে যে ক্যাম্পাসের শিক্ষানীতি কিংবা শিক্ষার্থীদের যে বৃহত্তর অংশগ্রহণ বা এখানে যারা অংশীজন আছেন, যারা নীতি-নির্ধারণ করেন, তাদের বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতাগুলোকে পাশে রেখে কীভাবে ডাকসুতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে, সম্ভবত ওই সুযোগ তারা পাননি বা ওই চিন্তার জায়গাটাও তখন হয়তো অতটা অনুকূল ছিল না’ বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক এস এম শামীম রেজা।
এবারের ডাকসু নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
যদিও গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ডাকসু নির্বাচনের পর ব্যাপক পরিবর্তনের প্রত্যাশা করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
প্রত্যাশা পূরণ কতটা সম্ভব?
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অধিকার সংরক্ষণের বৈধ প্ল্যাটফর্ম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)।
ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের বৈধ প্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগ পাবে, যারা শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া যথাযথ প্ল্যাটফর্মে তুলে ধরতে পারবে। কিন্তু তা পূরণ করার ক্ষমতা থাকবে কর্তৃপক্ষের হাতেই।
আরও পড়ুন
ডাকসুর মধ্য দিয়ে নির্বাচনের ট্রেনে উঠল বাংলাদেশ: ফারুকী
ডাকসুর মধ্য দিয়ে নির্বাচনের ট্রেনে উঠল বাংলাদেশ: ফারুকী
১৯৮৯-৯০ সনের ডাকসু নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন মুশতাক হোসেন। বলছিলেন, সেসময় ছাত্র সংগঠনগুলোর ঐক্যবদ্ধ হয়ে নেওয়া নানা উদ্যোগের কথা।
‘সংসদতো কোনো কর্তৃপক্ষ নয়, তারা পরিবর্তনের জন্য দেনদরবার করবে, চাপ দেবে। দেখার বিষয় হলো তারা এটার জন্য আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছে কিনা, বলেন তিনি।
ডাকসু সচল না থাকার পরও সেসময় ‘ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করে আন্দোলনের পাশাপাশি ‘ছাত্রদের ডাইনিং হলের সমস্যা, পরিবহন সমস্যা সমাধান’ করেছেন বলেও জানান ডাকসুর সাবেক এই জিএস।
আরও পড়ুন
সংবাদ মাধ্যমের কাছে যে অভিযোগ করলেন আবিদুল
সংবাদ মাধ্যমের কাছে যে অভিযোগ করলেন আবিদুল
অধ্যাপক শামীম রেজা বলছেন, প্রার্থীদের এবারের নির্বাচনি ইশতেহারেও ‘রাজনীতি বা বিশাল একটা চিন্তার প্রতিফলন বেশি দেখা গেছে – যেটা অনেকটা জাতীয় পর্যায়ের বা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপরিভাগের’।
‘তারপরও আমি মনে করি যে, এটা ইতিবাচকভাবে দেখা উচিৎ যে তারা চিন্তার পরিধি বিস্তৃত করছেন, হয়তো যখন এটা (ডাকসু নির্বাচন) নিয়মিতভাবে হবে, তারা নির্বাচিত হবেন- তখন বাস্তবতার নিরীখে তারা সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হবেন’, বলেন তিনি।
প্রিন্ট