ছবি: সংগৃহীত
সুদানের পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে ভূমিধসে একটি পুরো গ্রাম ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর দেশটি আন্তর্জাতিক সাহায্যের জন্য আবেদন করেছে। সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মধ্যে একটিতে ১ হাজার জনেরও বেশি লোকের মৃত্যু হয়েছে। গ্রামে থাকা মাত্র একজন বেঁচে গেছেন।
বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে আল জাজিরা জানিয়েছে, কয়েকদিন ধরে ভারী বৃষ্টিপাতের পর গত রোববার মধ্য দারফুরের মারাহ পর্বতমালায় অবস্থিত একটি গ্রামে এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে।
গতকাল মঙ্গলবার মৃতদেহ উদ্ধারের জন্য জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সাহায্য গোষ্ঠীর কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে এলাকা নিয়ন্ত্রণকারী বিদ্রোহী গোষ্ঠী সুদান লিবারেশন মুভমেন্ট-আর্মি (এসএলএম-এ) জানিয়েছে, ‘তারাসিন গ্রামটি সম্পূর্ণরূপে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে।’
বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘প্রাথমিক তথ্যে গ্রামের সকল বাসিন্দার মৃত্যুর ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, যার আনুমানিক সংখ্যা ১ হাজারেরও বেশি বলে জানা গেছে। বেঁচে গেছেন মাত্র একজন।’
খার্তুমের ক্ষমতাসীন সার্বভৌম পরিষদ জানিয়েছে, তারা মারাহ পর্বতমালার ভূমিধসে শত শত নিরীহ বাসিন্দার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে। এলাকাটিতে সহায়তার জন্য সকল সম্ভাব্য ক্ষমতা কাজে লাগানো হয়েছে।
সুদানে জাতিসংঘের মানবিক সমন্বয়কারী লুকা রেন্ডা বলেছেন ভূমিধসের খবরে গভীর শোক প্রকাশ করে বলেন, ‘জাতিসংঘ এবং তার অংশীদাররা ঘটনাস্থলে ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়ের সহায়তার জন্য একত্রিত হচ্ছে।’
এসএলএম-এ এর মুখপাত্র মোহাম্মদ আবদেল-রহমান আল-নাইর এপিকে বলে, ‘যে গ্রামটিতে ভূমিধস হয়েছে, সেটি বেশ দুর্গম। কেবল পায়ে হেঁটে বা গাধা দিয়ে সেখানে যাওয়া যায়।’
রোববারের ভূমিধস ছিল সুদানের সাম্প্রতিক ইতিহাসের সবচেয়ে মারাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মধ্যে একটি। জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত মৌসুমী বৃষ্টিপাতের ফলে প্রতি বছর শত শত মানুষ মারা যায়।
গত বছরের ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে পূর্ব লোহিত সাগর সংলগ্ন রাজ্যে একটি বাঁধ ভেঙে পড়ে, যার ফলে কমপক্ষে ৩০ জন নিহত হয়।
গৃহযুদ্ধ কবলিত সুদানে সংঘাতের তৃতীয় বছরে নতুন বিপর্যয়ের খবরটি এলো। এই সংঘাত দেশটিকে বিশ্বের অন্যতম ভয়াবহ মানবিক সংকটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। দারফুরের কিছু অংশে ইতোমধ্যেই দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা হয়েছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, উত্তর দারফুর রাজ্যে সরকার-সমর্থিত সুদানী সশস্ত্র বাহিনী (এসএএফ) এবং আধাসামরিক র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-এর মধ্যে সংঘর্ষের পর পালিয়ে আসা লোকেরা মারা পর্বতমালায় আশ্রয় নেয়। সেখানে তাদের খাবার ও ওষুধের অভাব রয়েছে।
এই অঞ্চলের বেশিরভাগ অংশই জাতিসংঘ এবং সাহায্য গোষ্ঠীগুলোর জন্য দুর্গম হয়ে পড়েছে। ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস সুদানের মানবিক প্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে এই অঞ্চলটিকে ‘ব্ল্যাক হোল’ হিসাবে বর্ণনা করেছে।
গত মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) এই অঞ্চলে নিরাপদ প্রবেশাধিকার এবং সহায়তা বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছে।
প্রিন্ট