উত্তরার মাইলস্টোন কলেজে প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনার পর ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বহু প্রাণহানি ও আহতের ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় কলেজের অনেক অংশ ধ্বংস হয়ে যায় এবং পুড়ে যাওয়া ধাতু, প্লাস্টিক ও ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ থেকে ডাইঅক্সিন, ফিউরান, ভারী ধাতু ও অন্যান্য বিষাক্ত রাসায়নিক বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। এসব পদার্থ দীর্ঘমেয়াদে ক্যান্সার, হৃদরোগ, শ্বাসকষ্ট, স্নায়ুবিক ব্যাধি, ত্বকের সমস্যা এবং হরমোনজনিত রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
এই ধরনের দুর্ঘটনার স্বাস্থ্যঝুঁকি তাৎক্ষণিকভাবে সীমিত না থেকে দীর্ঘ সময় ধরে প্রভাব ফেলে। তাই ক্যান্সার ও হৃদরোগসহ জটিল রোগগুলো প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা অত্যন্ত জরুরি, যাতে সময়মতো চিকিৎসা ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
প্রযুক্তির সহায়তা: স্বাস্থ্য সনাক্তে মোবাইল অ্যাপ
বর্তমানে বিশ্বজুড়ে মোবাইল অ্যাপভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এমন কিছু অ্যাপ তৈরি হয়েছে, যেগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে শ্বাসপ্রশ্বাসের কার্যক্ষমতা, হৃদস্পন্দন, অক্সিজেন লেভেল, ত্বকের পরিবর্তন, মানসিক চাপসহ নানা স্বাস্থ্যগত তথ্য বিশ্লেষণ করতে পারে। এর মাধ্যমে ক্যান্সার ও হার্টের সমস্যার মতো গুরুতর রোগও প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা সম্ভব।
ক্যান্সার শনাক্তে কার্যকর মোবাইল অ্যাপস
SkinVision – ত্বকের ক্যান্সার ঝুঁকি ছবি তুলে AI দিয়ে বিশ্লেষণ করে।
Miiskin – ত্বকের মোল বা দাগ পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ সহজ করে।
MoleScope – ক্লিনিকাল গ্রেড ক্যামেরায় ছবি তুলে চিকিৎসকের কাছে পাঠানোর সুযোগ দেয়।
Ada Health – বিভিন্ন উপসর্গ বিশ্লেষণ করে সম্ভাব্য রোগ চিহ্নিত করে।
SkinScan ও DermCheck – ছবি বিশ্লেষণ ও ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শের সুবিধা দেয়।
Cancer.Net Mobile – ক্যান্সার রোগীদের জন্য তথ্য, লক্ষণ ট্র্যাকিং ও সাপোর্ট দেয়।
হৃদরোগ শনাক্তে কার্যকর মোবাইল অ্যাপস
Cardiio – মোবাইল ক্যামেরায় মুখ স্ক্যান করে হৃদস্পন্দন ও হার্ট রেট ভ্যারিয়েবিলিটি বিশ্লেষণ করে।
FibriCheck – স্মার্টফোন দিয়ে অনিয়মিত হার্টবিট বা Atrial Fibrillation (AFib) শনাক্ত করে।
KardiaMobile (AliveCor) – ইসিজি রেকর্ড করে অ্যাপের মাধ্যমে বিশ্লেষণ দেয়।
Qardio – রক্তচাপ, হার্ট রেট ও ওজন মনিটরিংয়ের সুবিধা দেয়।
Instant Heart Rate – আঙুল ক্যামেরায় রাখলেই দ্রুত হার্ট রেট মাপা যায়।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে এই মোবাইল অ্যাপগুলোর ব্যবহার বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি। দুর্ঘটনার পর দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকি দ্রুত শনাক্ত করা সম্ভব হলে চিকিৎসা ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা আরও কার্যকর হবে। বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় মানুষ সহজে স্বাস্থ্যসেবা পেতে পারবে, স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়বে এবং সামগ্রিকভাবে জনস্বাস্থ্য উন্নত হবে।
বাস্তবায়নের জন্য করণীয়
নীতিমালা প্রণয়ন – সরকারকে স্বাস্থ্য ও আইসিটি মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে মোবাইল অ্যাপ অনুমোদন, প্রচার ও ডেটা সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা – শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যকর্মী ও সাধারণ জনগণকে এসব অ্যাপ ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
গবেষণা ও সহযোগিতা – ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বিএসএমএমইউ, বিইউইটি ও আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে।
অর্থায়ন ও সহায়তা – WHO, UNDP, বিশ্বব্যাংক, ADB এর মতো সংস্থার টেকনিক্যাল ও অর্থায়ন সহায়তা নিতে হবে।
এনজিও ও বেসরকারি খাত – BRAC, Gonoshasthaya Kendra, Red Crescent প্রভৃতি মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে পারে।
উপসংহার
মোবাইল ভিত্তিক স্বাস্থ্য প্রযুক্তি দ্রুত উন্নত ও জনপ্রিয় হচ্ছে। দুর্ঘটনার মতো সংকটময় পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক স্বাস্থ্য সনাক্তকরণ ও চিকিৎসায় এর ভূমিকা বিপ্লব ঘটাতে পারে। বিশেষ করে ক্যান্সার ও হৃদরোগ অগ্রিম শনাক্তে এ ধরনের অ্যাপ বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে চালু করা এখন সময়ের দাবি।
লেখক – মো: শোয়েব হোসেন
সংগীত প্রশিক্ষক, গবেষক, চিন্তাবিদ ও মানবাধিকার কর্মী।
প্রিন্ট