নানা দূর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে ঠাকুরগাঁওয়ে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সকল রিপোর্ট বয়কট করেছে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন ও ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন সহ জেলার সকল প্রাইভেট হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন। এছাড়াও মব সন্ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে চিকিৎসকদের হয়রানি,লাঞ্ছিত ও ফেসবুক সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হেয় প্রতিপন্ন করার প্রতিবাদে নিউক্লিয়ার নামের ওই ল্যাব এর রিপোট দেখা অনিদৃষ্টকালের জন্য বন্ধ করেছে জেলার সকল চিকিৎসকবৃন্দ।
জানাযায়, ঠাকুরগাঁওয়ের হাজিপাড়ায় অবস্থিত নিউক্লিয়ার ল্যাব নামের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার দীর্ঘদিন ধরেই তাদের নানা টেস্ট এ ৭০ শতাংশ কমিশন দিয়ে আসছে, যেখানে অন্যান্য ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলি ২০ থেকে ৩০ শতাংশের ওপরে কমিশন দিতে পারেনা। এমন অবস্থায় সে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের করা নানা রোগের রিপোর্টের মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে সাধারণ রোগী সহ চিকিৎসকদের মনে। দালালদের ব্যবহার করে গ্রামের রোগীদের নিয়ে এসে নিম্নমানের প্যাথলজিক্যাল সামগ্রির মাধ্যমে এসব রিপোর্ট তৈরী এবং ২ বা ৩টি টেস্ট এর জায়গায় ৫ থেকে ৬টি টেস্ট করারও অভিযোগ রয়েছে সে ডায়াগনস্টিক সেন্টারটির বিরুদ্ধে। এছাড়াও চিকিৎসকরা এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে চিকিৎসকদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ ও বহিরাগত সন্ত্রাসী দিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শণ করে তাদের রিপোর্ট দেখতে বাধ্য করা সহ মব সন্ত্রাসের মাধ্যমে চিকিৎসকদের হয়রানীর অভিযোগও রয়েছে ল্যাবটির বিরুদ্ধে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখাযায়, শহরের সেবা হাসপাতাল, নিরাপদ হাসপাতাল , রেইনবো সহ প্রায় সব প্রাইভেট ক্লিনিক ও হাসপাতালে এবং ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালেও ল্যাবটির বিরুদ্ধে বয়কটের নোটিশ ঝুলছে চিকিৎসকদের চেম্বারের দরজায় এবং দেয়ালে। আর এতেই আরো বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেছে অভিযুক্ত ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ল্যাব এর লোকেরা।
মব সন্ত্রাসের এর শিকার ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালের গাইনী ও স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ ডা: আইরিশ রহমান জানান, গত কদিন আগে এমন এমন একজন রোগীকে আমার দেখতে হয়েছিলো যার সব রিপোর্টই নিউক্লিয়ার ডায়গনস্টিক থেকে করা। যেহেতু ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন থেকে তাদের রিপোর্ট দেখতে বারন করা হয়েছে তাই আমি তাদের রিপোর্ট দেখতে অস্বীকৃতি জানাই এবং রিপোর্ট ছাড়াই আমি সে রোগীর ভালোভাবে চিকিৎসা করি। কিন্তু মূল ঝামেলাটা হয় পরে। সে ডায়গনস্টিক সেন্টারের রিপোর্ট দেখতে না চাওয়ায় ডায়গনস্টিক সেন্টারের লোকেরা রোগীর লোকেদের দিয়ে একটি মব তৈরী করে আমাকে ভীষণভাবে হেয় প্রতিপন্ন করে। এছাড়াও তাদের বিরুদ্ধে গেলে তারা চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের মব তৈরী করে চিকিৎসকদের হয়রানি ও মিথ্যে সংবাদ প্রচার করে।
অভিযুক্ত নিউক্লিয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ল্যাব এর পরিচালক এস এম মুন সকল অভিযোগ অস্বিকার করে বলেন, আমরা সবার চেয়ে কম রেটে সব টেস্ট করে থাকি বলে আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনছে সবাই। এছাড়াও মব সন্ত্রাস তৈরী করে চিকিৎসকদের হয়রানীর অভিযোগও অস্বিকার করেন তিনি বলেন, চিকিৎসকদের সাথে আমাদের একটা ভু’ল বোঝাবুঝি চলছে এই আরকি এছাড়াও বিএমএ বরাবর আত্মপক্ষ সমর্থনের একটা দরখাস্ত আমরা দিয়েছি ।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন ও ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন ঠাকুরগাঁও জেলা শাখার সভাপতি এবং সাবেক সিভিল সার্জন ডা: আবু মো: খায়রুল কবির জানান, বিএমএ ঠাকুরগাঁও থেকে তাদের ওপরে একটি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিলো যতদিন না তারা নিজেদের সমস্যা গুলি সমাধান করবে। তাদের তৈরীকৃত রিপোর্ট কোন ডাক্তাররাই দেখবেনা এমনটাই সিদ্ধান্ত হয়েছিলো।
ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা: ফিরোজ জামান বলেন, হাসপাতালে রোগীর চিকিৎসা নিয়ে যে মব তৈরী হয়েছিলো এবং চিকিৎসক এর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এসেছিলো তা আমরা ভালোভাবে খতিয়ে দেখেছি। সেখানে কোন অপচিকিৎসা হয়নি। রোগী স্বুস্থ্য ছিলো। চিকিৎসকের বিন্দু পরিমান ভু’ল থাকলে আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতাম। অভিযুক্ত নিউক্লিয়ার ল্যাব এর রোগ নির্নয়ের মান যাচাইয়ের পর তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রিন্ট
মো গোলাম রব্বানী, সদর প্রতিনিধি ঠাকুরগাঁও॥ 




















