ঢাকা ১১:১৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ অগাস্ট ২০২৫, ৭ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo গুম-খুনের শিকার পরিবারের কান্না বন্ধে সরকার ব্যর্থ: মির্জা ফখরুল Logo জামায়াত যদি বলে ৭১‘র যুদ্ধ ভারতের যুদ্ধ, তাহলে ওরা ভারতের দালাল: আমজনতার তারেক Logo জিয়াউর রহমান থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস : দিল্লির অপরাধী লালন-পালন আওয়ামী সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য ভারত! Logo গাজায় ইসরাইলি হামলায় ২৪ ঘণ্টায় নিহত আরও ৭০ ফিলিস্তিনি Logo উদ্বোধনের পরদিনই ৯২৫ কোটি টাকার সেতু থেকে বৈদ্যুতিক ক্যাবল চুরি Logo মাইলস্টোন কলেজ — শেষ পর্ব) হৃদরোগের প্রাথমিক ঝুঁকি জানাবে মোবাইল অ্যাপ:বাংলাদেশেও সম্ভব! Logo আগস্টে ইতালির প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে সফর বাতিলের সম্ভাবনা Logo জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রকাশ হতে পারে আগামী রোববার নির্বাচন কমিশনার (ইসি) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ Logo ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৩১১ Logo ৬১৫ কোটি টাকা আত্মসাত, নজরুলসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা

ফিচার রিপোর্ট নামিদামি সুনামধন্য আড়ং-এর ডেইলি ফার্ম এর ডিলারশিপ নিয়ে অনায়াসে করছে জামানত বানিজ্য, টাকা দিলেও সিলিংয়ে ঝুলছে শাকিলের লাশ

📸 তথ্য ও ছবি: শাহিন

পল্লবী থানার ঝিলপাড় এলাকায় প্রতিদিন ভোরেই ঘুম ভাঙে একদল ভ্যানচালকের। দেশীয় পণ্য আড়ং দুধের ভ্যানগুলো ভর্তি হয় দুধে, আর সেই ভ্যানগুলো টেনে নিয়ে শহরের আনাচে-কানাচে দোকানে দোকানে পৌঁছে দেন শ্রমজীবী এই মানুষগুলো। বেতন সামান্য, কাজ ক্লান্তিকর। তবুও তারা টিকে থাকেন—কারণ, চাকরিটুকুই তাদের বেঁচে থাকার একমাত্র ভরসা। কিন্তু এই চাকরি টিকিয়ে রাখার জন্য শুধু ঘাম ঝরানোই যথেষ্ট নয়। দিতে হয় মোটা অঙ্কের জামানত—যেটা শুরু হয় ২০ হাজার থেকে, তারপর ৫০ হাজার, পরে আরও বেড়ে দাঁড়ায় এক লক্ষ টাকায়। ভ্যানচালক শাকিলও এই বাস্তবতার শিকার হন।

এক বছর আগে আড়ং দুধের কোম্পানিতে ভ্যানচালক হিসেবে চাকরি পান শাকিল। প্রথমেই তার কাছ থেকে জামানত হিসেবে নেওয়া হয় ২০ হাজার টাকা। চাকরির এক বছর পূর্ণ হতেই তাকে দেওয়া হয় বড় ভ্যান। বড় ভ্যান মানেই বড় বোঝা—শুধু দুধ বহনের নয়, জামানতেরও। এবার দাবি করা হলো ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু দিন আনে দিন খায় শাকিল, তার পক্ষে এই অঙ্ক জোগাড় করা ছিল পাহাড়সম বোঝা। প্রতিদিন সকালে কাজে যেতেন, কিন্তু ম্যানেজারের চাপ তাকে মানসিকভাবে ভেঙে দিচ্ছিল। ১৬ আগস্ট ভোরে কাজের উদ্দেশ্যে বের হন শাকিল। দুপুরের পর, আড়ং দুধ ফ্যাক্টরির ভেতরেই তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরিবার ও প্রতিবেশীদের দাবি—এটি আত্মহত্যা নয়, বরং পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।

শাকিলের মা ও বোন ভেঙে পড়েছেন। তাদের দাবি, “ছেলেটা সংসারের হাল ধরেছিল। বোনের বিয়ের দেনা শোধ করলো কষ্ট করে। এমন কোন কারণই ছিল না, যাতে সে আত্মহত্যা করবে। জামানতের টাকা দিতে না পারার কারণেই তাকে মেরে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।” ৭ নম্বর ঝিলপাড় বস্তির প্রতিটি ঘরে ঘরে এখন শুধু একটাই আলোচনা—শাকিলের মৃত্যু। প্রতিবেশীরাও বলছেন, “এটা আত্মহত্যা নয়, এটা চাপ সৃষ্টি করে হত্যার ঘটনা।” আড়ং দুধ ফ্যাক্টরির এই জামানত বাণিজ্য আসলে কীসের প্রতিফলন? দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষদের রক্ত-ঘামে উপার্জিত টাকা কেড়ে নেওয়া হয় এক প্রকার চাকরি টিকিয়ে রাখার শর্ত হিসেবে। তারা চাকরির নিরাপত্তার জন্যই নিজের জীবন পর্যন্ত বাজি রাখেন। আর শাকিলের মৃত্যু যেন সেই অন্যায়ের নির্মম প্রমাণ।

শাকিলের মরদেহ বর্তমানে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে। এখনো মামলা হয়নি। তবে পরিবারের দাবি—তারা হত্যা মামলা করবেন আড়ং কোম্পানি এবং সংশ্লিষ্ট ম্যানেজারের বিরুদ্ধে। মামলা দায়েরের পরই হবে দাফন।

এখন প্রশ্ন—কতদিন এই জামানত বাণিজ্যের শিকার হবেন দরিদ্র শ্রমিকরা? আর কত শাকিলের লাশ ঝুলবে সিলিংয়ে?


প্রিন্ট
ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

গুম-খুনের শিকার পরিবারের কান্না বন্ধে সরকার ব্যর্থ: মির্জা ফখরুল

ফিচার রিপোর্ট নামিদামি সুনামধন্য আড়ং-এর ডেইলি ফার্ম এর ডিলারশিপ নিয়ে অনায়াসে করছে জামানত বানিজ্য, টাকা দিলেও সিলিংয়ে ঝুলছে শাকিলের লাশ

আপডেট সময় ০৩:০১:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫

📸 তথ্য ও ছবি: শাহিন

পল্লবী থানার ঝিলপাড় এলাকায় প্রতিদিন ভোরেই ঘুম ভাঙে একদল ভ্যানচালকের। দেশীয় পণ্য আড়ং দুধের ভ্যানগুলো ভর্তি হয় দুধে, আর সেই ভ্যানগুলো টেনে নিয়ে শহরের আনাচে-কানাচে দোকানে দোকানে পৌঁছে দেন শ্রমজীবী এই মানুষগুলো। বেতন সামান্য, কাজ ক্লান্তিকর। তবুও তারা টিকে থাকেন—কারণ, চাকরিটুকুই তাদের বেঁচে থাকার একমাত্র ভরসা। কিন্তু এই চাকরি টিকিয়ে রাখার জন্য শুধু ঘাম ঝরানোই যথেষ্ট নয়। দিতে হয় মোটা অঙ্কের জামানত—যেটা শুরু হয় ২০ হাজার থেকে, তারপর ৫০ হাজার, পরে আরও বেড়ে দাঁড়ায় এক লক্ষ টাকায়। ভ্যানচালক শাকিলও এই বাস্তবতার শিকার হন।

এক বছর আগে আড়ং দুধের কোম্পানিতে ভ্যানচালক হিসেবে চাকরি পান শাকিল। প্রথমেই তার কাছ থেকে জামানত হিসেবে নেওয়া হয় ২০ হাজার টাকা। চাকরির এক বছর পূর্ণ হতেই তাকে দেওয়া হয় বড় ভ্যান। বড় ভ্যান মানেই বড় বোঝা—শুধু দুধ বহনের নয়, জামানতেরও। এবার দাবি করা হলো ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু দিন আনে দিন খায় শাকিল, তার পক্ষে এই অঙ্ক জোগাড় করা ছিল পাহাড়সম বোঝা। প্রতিদিন সকালে কাজে যেতেন, কিন্তু ম্যানেজারের চাপ তাকে মানসিকভাবে ভেঙে দিচ্ছিল। ১৬ আগস্ট ভোরে কাজের উদ্দেশ্যে বের হন শাকিল। দুপুরের পর, আড়ং দুধ ফ্যাক্টরির ভেতরেই তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরিবার ও প্রতিবেশীদের দাবি—এটি আত্মহত্যা নয়, বরং পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।

শাকিলের মা ও বোন ভেঙে পড়েছেন। তাদের দাবি, “ছেলেটা সংসারের হাল ধরেছিল। বোনের বিয়ের দেনা শোধ করলো কষ্ট করে। এমন কোন কারণই ছিল না, যাতে সে আত্মহত্যা করবে। জামানতের টাকা দিতে না পারার কারণেই তাকে মেরে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।” ৭ নম্বর ঝিলপাড় বস্তির প্রতিটি ঘরে ঘরে এখন শুধু একটাই আলোচনা—শাকিলের মৃত্যু। প্রতিবেশীরাও বলছেন, “এটা আত্মহত্যা নয়, এটা চাপ সৃষ্টি করে হত্যার ঘটনা।” আড়ং দুধ ফ্যাক্টরির এই জামানত বাণিজ্য আসলে কীসের প্রতিফলন? দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষদের রক্ত-ঘামে উপার্জিত টাকা কেড়ে নেওয়া হয় এক প্রকার চাকরি টিকিয়ে রাখার শর্ত হিসেবে। তারা চাকরির নিরাপত্তার জন্যই নিজের জীবন পর্যন্ত বাজি রাখেন। আর শাকিলের মৃত্যু যেন সেই অন্যায়ের নির্মম প্রমাণ।

শাকিলের মরদেহ বর্তমানে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে। এখনো মামলা হয়নি। তবে পরিবারের দাবি—তারা হত্যা মামলা করবেন আড়ং কোম্পানি এবং সংশ্লিষ্ট ম্যানেজারের বিরুদ্ধে। মামলা দায়েরের পরই হবে দাফন।

এখন প্রশ্ন—কতদিন এই জামানত বাণিজ্যের শিকার হবেন দরিদ্র শ্রমিকরা? আর কত শাকিলের লাশ ঝুলবে সিলিংয়ে?


প্রিন্ট