গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে ২ বছর ১০ মাস বয়সের শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা
- আপডেট টাইম : ০৮:১৪:১২ অপরাহ্ণ, বুধবার, ৫ জুন ২০২৪
- / ১২৭ ৫০০০.০ বার পাঠক
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ১২ নং ওয়ার্ডের বাইমাইল এলাকায় ২ বছর ১০ মাস বয়সের ফারহানা নামের এক শিশুকে (৪ জুন) মঙ্গলবার ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা ঘটেছে। তিনি বাইমাইল এলাকার সোমেজ উদ্দিনের বাড়ির ভাড়াটিয়া শহীদুল ইসলামের ছোট মেয়ে ফারহানা (২ বছর ১০ মাস)।
প্রতিবেশী ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার (৪ জুন) দুপুর থেকে ফারহানা’কে বাড়িতে পাওয়া যাচ্ছিল না। অনেক খোঁজাখুঁজি করে ফারহানাকে না পেয়ে মাইকের মাধ্যমে কোনাবাড়ির আশপাশের এলাকায় নিখোঁজের ঘোষণা করা হয়। এরপরও ফারহানার কোন সন্ধান না পেয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন পরিবারের লোকজন। তারপরও খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন পরিবার ও প্রতিবেশিরা। পরে ঐ বাড়ির গলি থেকে (৫ জুন) বুধবার বস্তা বন্দি অবস্থায় শিশু ফারহানার মরদেহ উদ্ধার করে পরিবারের সদস্যরা ও প্রতিবেশিরা।
ওই বাড়ির মালিক সোমেজ উদ্দিনের ভগ্নিপতি সোহরাব হোসেন জানান, মঙ্গলবার অনেক খোঁজাখুঁজি করার পরেও শিশু ফারহানাকে না পেয়ে বুধবার এই বাড়ির গেটের সিসি ক্যামেরার রেকর্ডে দেখা যায়, শিশু ফারহানা মঙ্গলবার সকাল থেকে আজ বুধবার এখন পর্যন্ত বাড়ির বাইরে বের হয় নাই। এমন সময় বাড়িতে উপস্থিত সকল ভাড়াটিয়া ও বাড়ির মালিকসহ সকলেই বাড়ির আশপাশের সরু গলিসহ আনাচে-কানাচে খুঁজতে শুরু করি। এক পর্যায়ে ওই বাড়ির উত্তর-পশ্চিম পাশে ২৭ নম্বর কক্ষের উত্তর পাশে দুই ফুট গলিতে একটি বস্তা দেখা যায়। পরে বস্তার মুখ খুললে দেখা যায় শিশু ফারহানার হাত-পায়ে মুখে কস্টেপ পেঁচানো। এমন সময় আমাদের সাথে থাকা সাজেদুল ইসলাম দৌড়ে ওর ব্যবহৃত ২৭ নম্বর কক্ষের ভেতরে গিয়ে দরজা আটকে দেয়। তখন উপস্থিত সবাই সাজেদুল ইসলামকে দরজা খুলতে বললে, এক পর্যায়ে দরজা খুলে দেয় সাজেদুল ইসলাম। পরে আমরা ওই কক্ষের ভেতরে প্রবেশ করে দেখি কয়েক খন্ড কস্টেপ বিছানার উপর পড়ে আছে। তখন সাজেদুল ইসলাম কে জিজ্ঞেস করলে সে শিশু ফারহানাকে টেপ পেঁচিয়ে ধর্ষণের পর হত্যা করে বস্তার ভেতর ভরে গলিতে মরদেহ রাখার কথা স্বীকার করলে তাৎক্ষণিক ধর্ষক ও হত্যাকারী সাজেদুল ইসলামকে অন্য একটি কক্ষে আটকে রেখে ৯৯৯ কল দিলে কোনাবাড়ী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে শিশু ফারহানার মরদেহ উদ্ধার করে এবং দর্শক সাজেদুল ইসলামকে আটক করলে তাৎক্ষণিক জিজ্ঞাসাবাদ করলে সাজেদুল ইসলামের জবানবন্দিতে আব্দুল্লাহ আল নীরব নামের আরেকজন ধর্ষককেও আটক করে পুলিশ। পরে ধর্ষিতা শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর পাঠিয়েছে পুলিশ।
এদিকে কোনাবাড়ি থানা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক আখি ইসলাম বলেন, এরকম নৃশংস ঘটনা মেনে নেয়ার মতো না। এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি আর যেন না হয়, সেজন্য শিশু ফারহানার ধর্ষক ও হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি। তিনি এ ঘটনার কথা শুনে ধর্ষণের পর হত্যার স্বীকার হওয়া শিশু ফারহানার মা’কে সান্ত্বনা দেয়ার জন্য ওই বাড়িতে এসে এসব কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ওই বাড়ির ও আশপাশের অন্যান্য মহিলারাও তার সাথে একমত পোষণ করে গনমাধ্যমের ক্যামেরার সামনে বলেন,ধর্ষক (১) সাজেদুল ইসলাম ও (২) আব্দুল্লাহ আল নীরবকে সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দাবি জানাচ্ছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে।
এদিকে, ধর্ষণের পর হত্যার স্বীকার হওয়া শিশু ফারহানার মা মমতাজ বেগমের কান্না আহাজারি করে বলেন, ১৩/১৪ বছর আগে আমরা স্বামী স্ত্রী কোনাবাড়ি এলাকায় এসেছি। কয়েক বছর ধরে কোনাবাড়ি তুসোকা ডেনিম কারখানায় চাকুরী করতেছি। আমার ছোট মেয়ে ফারহানার ৩ জুলাই ২০২৪ ইং তারিখে তিন বছর পূর্ণ হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করছি, এমন ছোট শিশু বাচ্চাকে যে নরপশুরা মারছে, তাদের যেন সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি দেয়া হয়।
কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার শহিদুল ইসলামের ছোট মেয়ে ধর্ষণের পর হত্যার স্বীকার হওয়া শিশু ফারহানা। শহিদুল ইসলামের বড় মেয়ে ফারজানা নাগেশ্বরী দাদার বাড়িতে থেকে পড়াশুনা করে।
এদিকে, ঐ বাড়ির এক ভাড়াটিয়া রোকসানা আক্তার গনমাধ্যমের ক্যামেরার সামনে বলেন, আমি কোনাবাড়ি তুসোকা কারখানায় চাকুরী করছি। ভাড়া বাসায় আমার ছোট কন্যা সন্তানকে রেখে যেতে হয়। এমন ঘটনার প্রেক্ষিতে সন্তানের সুরক্ষার জন্য চাকুরী বাদ দিয়ে দিয়েছি। আর চাকুরী করবো না। এ সময় উপস্থিত আরও মহিলারাও বলেন, আমরা সবাই বিভিন্ন কারখানা নারী শ্রমিক। বাসায় রেখে যাওয়া সন্তানকে ধর্ষণের স্বীকার হতে হলে কিভাবে কারখানায় কাজে যাবো, আবার কাজে না গেলেও পেটে ভাত জুটবে না। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে হাত জোর করে দাবি জানাচ্ছি, শিশু ফারহানাকে ধর্ষণের পর হত্যাকারীদের ফাঁসি দেয়া হোক। যাতে এমন ঘটনা আর কোথাও না ঘটে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটনের কোনাবাড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম আশরাফ উদ্দিন দৈনিক সময়ের কন্ঠকে বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ধর্ষক (১) সাজেদুল ইসলাম(১৬) ও (২) আব্দুল্লাহ আল নীরব (১৬) দুজনকেই আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে এবং শিশু ফারহানার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আসামি সাজেদুল ইসলাম কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার চকবাটহাড়ী গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে এবং আসামি আব্দুল্লাহ আল নীরব চৌধুরীপাড়া এলাকার হানিফ মিয়ার ছেলে। এ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে মামলা প্রক্রিয়াধীন।