শরীয়তপুরে পদ্মা সেতুর ভূমি অধিগ্রহণে দালালী করে রসুন ব্যবসায়ী দেলোয়ার মুন্সী কোটিপতি
- আপডেট টাইম : ১১:৫২:১৫ পূর্বাহ্ণ, রবিবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩
- / ২১৭ ৫০০০.০ বার পাঠক
পদ্মা সেতুর বিভিন্ন প্রকল্প থেকে ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে ও বিভিন্ন প্রকল্পে অন্যের জমিতে চুক্তিপত্রের মাধ্যমে নতুন ঘর সহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান উঠিয়ে অবকাঠামো বিলের মাধ্যমে সরকারের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শরীয়তপুর জেলা প্রশাসন থেকে দালালের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে তারা হচ্ছেন- (১) দেলোয়ার মুন্সী পিতা:-মৃত রশিদ মুন্সী, স্থায়ী ঠিকানা :-পশ্চিম নাওডোবা বাজার সংলগ্ন হাজী মন্নাফ ফকির কান্দি, থানা:-পদ্মা সেতু দক্ষিণ,(২)বাহাদুর হাওলাদার পিতা:-কালু হাওলাদার, স্থায়ী ঠিকানা:-গ্রাম দোতারা, ইউনিয়ন কাঠালবাড়ি, থানা:- শিবচর, জেলা মাদারীপুর (৩) এমদাদ মাদবর, পিতা:- দোবির মাদবর, স্থায়ী ঠিকানা:-পশ্চিম নাওডোবা, জৈনুদ্দিন মাদবর কান্দি, থানা:-পদ্মা সেতু দক্ষিণ, জেলা শরীয়তপুর, (৪) লাল মিয়া মোলঙ্গী, পিতা:-হানিফা মোলঙ্গী, স্থায়ী ঠিকানা:-পশ্চিম নাওডোবা সিকিম আলী মোলঙ্গী কান্দি, থানা:-পদ্মা সেতু দক্ষিণ (৫) খোকন বাঙ্গি পিতা :-আলী আহমেদ বাঙ্গি, স্থায়ী ঠিকানা:-পশ্চিম নাওডোবা, মজিদ ঢালীর কান্দি, থানা:-পদ্মা সেতু দক্ষিণ (৬) লিপি, পিতা:-খালেক শিকদার, বর্তমান ঠিকানা:-পশ্চিম নাওডোবা মাইনুদ্দিন জমাদ্দার কান্দি, থানা:-পদ্মা সেতু দক্ষিণ (৭) মেজবা জমাদ্দার, পিতা:-মৃত শফিউদ্দিন জমাদ্দার, স্থায়ী ঠিকানা:-পশ্চিম নাওডোবা মাইনুদ্দিন জমাদ্দার কান্দি, থানা:-পদ্মা সেতু দক্ষিণ (৮) শাকিল মুন্সী ,পিতা :-মৃত লতিফ মুন্সি, স্থায়ী ঠিকানা:-কুতুবপুর, থানা:- শিবচর, জেলা:-মাদারীপুর(৯) সামাদ মাঝি, পিতা:-আবু আলী মাঝি, স্থায়ী ঠিকানা:-পশ্চিম নাডুবা সদাগর কান্দি, থানা:-পদ্মা সেতু দক্ষিণ, জেলা:-শরীয়তপুর, (১০) নাজমুল মোল্লা, পিতা:-মৃত সত্তর মোল্লা, স্থায়ী ঠিকানা:-পশ্চিম নাওডোবা বাজার সংলগ্ন, থানা:-পদ্মা সেতু দক্ষিণ, (১১) ইলিয়াস মাতবর, পিতা :-ইব্রাহিম মাদবর, স্থায়ী ঠিকানা:-পশ্চিম নাওডোবা, থানা:-পদ্মা সেতু দক্ষিণ, (১২) বাদল জমাদার, পিতা:-মৃত কবির জমাদ্দার, স্থায়ী ঠিকানা:-পশ্চিম নাওডোবা মাইনুদ্দিন জমাদ্দার কান্দি, থানা:-পদ্মা সেতু দক্ষিণ(১৩) একই গ্রামের , মিন্টু হাওলাদার (১৪) কাদির শিকদার, পিতা:-মৃত সামসু শিকদার, স্থায়ী ঠিকানা:-পশ্চিম নাওডোবা মজিদ ঢালীর কান্দি, থানা:-পদ্মা সেতু দক্ষিণ, (১৫) হারুন হাওলাদার, পিতা:-আক্তার হাওলাদার, স্থায়ী ঠিকানা:- পশ্চিম নাওডোবা মহসিনা মাদ্রাসা সংলগ্ন, থানা:-পদ্মা সেতু দক্ষিণ,(১৬) কাশেম ফকির,পিতা:- হামিজ উদ্দিন ফকির,স্থায়ী ঠিকানা:-পশ্চিম নাওডোবা সাকিম আলী পঞ্চায়েত কান্দি, থানা:- পদ্মা সেতু দক্ষিণ(১৭) মুজিবর মাদবর (১৮) মোহাম্মদ কাশি, সহ ২০-২৫. জনের জাজিরা উপজেলার, পশ্চিম নাওডোবা ও মাদারীপুর জেলার, শিবচর থানা এলাকার, সহ দুর্নীতিবাজ দালাল চক্র ।এসব দালালদের অনুসন্ধানের জন্য তালিকা ইতোমধ্যেই দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পাঠানো হয়েছে।
তালিকাভুক্ত দালালের মধ্যে শরিয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবা ইউনিয়নের নাওডোবা বাজার সংলগ্ন হাজী মন্নাফ ফকির কান্দি গ্রামের মৃত রশিদ মুন্সির ছেলে দেলোয়ার মুন্সী ৮ বছর আগেও জাজিরা উপজেলার কাজির হাটসহ কয়েকটি হাটে রসুন বিক্রির দালালীর পাশাপাশি জমিতে ট্রাক্টর চালিয়ে হাল চাষ করতেন।
দরিদ্র পরিবারের ও দিনমজুরের সন্তান দেলোয়ার মুন্সী এক সময় নিজের ভিটেমাটি ছাড়া আর কোনো জমি ছিল না। গত ৮ বছরে হয়েছেন কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক। নিজের নামে কোটি কোটি টাকার জমি ক্রয়েরও খবর পাওয়া গেছে। মাত্র কয়েক বছরে আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়া দেলোয়ার মুন্সী এখন মাদারীপুর ও শরিয়তপুর জেলার টক টপিক্সে পরিণত হয়েছে।
সরেজমিনে নাওডোবা-জাজিরা পদ্মা সেতুর আঞ্চলিক সড়কের নাওডোবা ইউনিয়নের মন্নাফ ফকির কান্দি এলাকায় দেলোয়ার মুন্সির বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, সেখানে দুই তলা বিশিষ্ট অট্টালিকা নির্মাণাধীন রয়েছে। এছাড়াও
শরীয়তপুর জেলার চার লেন সড়কের ২টি প্রকল্পে অর্ধশত কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছে শরীয়তপুর ডিসি অফিসের চিহ্নিত তালিকাভুক্ত দুর্নীতিবাজ দালাল দেলোয়ার মুন্সী গং। বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষের দুঃখ দুর্দশা দূর করার জন্য পদ্মা সেতু সহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেন, এবং শরীয়তপুর সদর থেকে সখিপুরের নরসিংহপুর ফেরিঘাট পর্যন্ত এবং পদ্মা সেতু অ্যাপ্রোচ থেকে শরীয়তপুর সদর পর্যন্ত ৫৮ কিলোমিটার দুটি ফোরলেন সড়কের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। শরীয়তপুর বাসীর স্বপ্নের এই সড়ক দুটির কাজ সম্পন্ন হলে ঢাকাসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলসহ সারাদেশের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগের নিরাপদ ও সহজ নেটওয়ার্ক তৈরির মাধ্যমে সড়ক যোগাযোগ এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন হবে; যা শরীয়তপুরকে যোগাযোগ, শিল্পায়ন ও কৃষিসহ সার্বিক উন্নয়নের শিখড়ে পৌঁছে দিবে।
তবে স্থানীয় ব্যক্তিরা জানিয়েছেন অনিয়ম ওদুর্নীতি বন্ধ না করতে পারলে এই প্রকল্পে ব্যয় অনেকটা বেড়ে যাবে ।
দালাল চক্র দেলোয়ার গংরা বর্তমানে শরীয়তপুর চারলেন রাস্তার ২টি প্রকল্পে সরকারি টাকা আত্মসাৎ এর চেষ্টায় মগ্ন , শরীয়তপুর ডিসি অফিসের মাধ্যমে জমি অধিগ্রহণের সাথে দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন অবকাঠামোর ক্ষতিপূরণ বিল।ক্ষতিপূরণ বিল দেয়ার ক্ষেত্রে, বিলের তালিকা প্রস্তুত করে গণপূর্ত বিভাগে পাঠানো হয় বিল তৈরি করার জন্য, পরবর্তীতে ডিসি অফিসের এল এ শাখা হতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের ব্যাংকের চেক এর মধ্য দিয়ে ক্ষতিপূরণ বুঝিয়ে দেওয়া হয় ।এ সুযোগ কাজে লাগাতে পাঁচটি মৌজার স্থানীয়দের লোভ লালসায় ফেলে স্থানীয়দের পুরনো অবকাঠামো এর সাথে নতুন অবকাঠামো,ঘর, বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তৈরি করে,এবং সমস্ত অবকাঠামোর ক্ষতিপূরণ উত্তোলন করার জন্য শরীয়তপুর ডিসি অফিসের এল এ শাখার কর্মকর্তাদের চোখে ধুলো দিয়ে ক্ষতিপূরণ বিল উত্তোলনের আশায় প্রতিনিয়ত ডিসি অফিসে দৌড়ঝাপ করছেন এ দালাল চক্রটি। শরীয়তপুর ডিসি অফিসের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানায় যতই দৌড় ঝাঁপ করুক দালাল চক্র কোন লাভ হবে না কারণ এই চক্রের বিরুদ্ধে মাঠে কাজ করছে, দুর্নীতি দমন কমিশন ( দুদক) । সরোজমিনে অনুসন্ধানে দেখা যায়
পদ্মা সেতুর জাজিরা পয়েন্টের নাওডোবা গোলচতর থেকে শরিয়তপুর সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় তিনটি প্যাকেজে ২৭ কিলোমিটার সড়ক চার লেন, ২৭টি কালভার্ট ও ২টি সেতু নির্মাণ করা হচ্ছ। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৬৮২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ হাজার ২৩১ কোটি ১৮ লাখ টাকা ধরা হয়েছে জমি অধিগ্রহণে। আর এই ক্ষতিপূরণের টাকা দিচ্ছে শরীয়তপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে। নাওডোবা থেকে শরিয়তপুর পর্যন্ত সড়ক চার লেন করার প্রকল্প অনুমোদন পাওয়ার পর থেকেই দুই পাশে স্থাপনা নির্মাণের হিড়িক পড়েছে।
দালাল দেলোয়ার মুন্সির যোগসাজশে গড়ে তোলা হয়েছে সুযোগ সন্ধানী একটি প্রতারক ও প্রভাবশালী দালাল চক্র। তাদের উদ্দেশ্য একটাই সরকারের কোটি কোটি টাকা কৌশলগতভাবে প্রতারক ও প্রভাবশালী দালাল চক্ররা নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে নেওয়া।
স্থানীয় , নশাসর মৌজা, ডগ্রি মৌজা, খিলগাঁও মৌজা, রাজনগর মৌজার লোকজন জানিয়েছেন, সড়ক প্রশস্ত করতে উভয় পাশেই জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। ক্ষতিপূরণ হিসেবে বেশি অর্থ হাতিয়ে নিতে এসব স্থাপনা নির্মাণ করছে একটি দালাল চক্র। এ জন্য রাতারাতি তোলা হয়েছে ঘর সহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লাগানো হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির চারাগাছ ।
সড়কের উভয় পাশেই দেখা গেছে নির্মাণাধীন পাকা, আধা পাকা ও টিনশেডের বসতঘর, দোকান, করাতকল, মাছ, মুরগির খামার
অন্যদিকে খিলগাঁও মৌজার বেলি ব্রিজ মসজিদের পেছনে,৫ টি ঘরের অবকাঠামো বিল চূড়ান্ত পর্যায় ৮ ধারা নোটিশ হাতে পেয়েছেন এর পিছনে সকল ধরনের সহযোগিতা করেন মোঃ শাকিল মুন্সী, পিতা: মৃত লতিফ মুন্সি ও খোকন বাঙ্গি, পিতা:- আলী আহমেদ বাঙ্গি , এ বিষয়ে যাদের নামে আট ধারা নোটিশ হয়েছে তাদের সাথে কথা বললে তারা জানায় উল্লিখিত দুই ব্যক্তি আমাদের বসতবাড়িতে তিনটি বড় চৌচালা ঘর নির্মাণ করেছেন এবং আমাদের পাঁচ জনের নামে ক্ষতিপূরণ বিল এর ৮ ধারা নোটিশ পেয়েছি আমরা উল্লেখিত দুই ব্যক্তির কাছে কৃতজ্ঞ তবে তাদেরকে বড় ধরনের অংশ দেয়া হবে ।কারণ এই দুই ব্যক্তি অধিগ্রহণের আগাম সংবাদ শরীয়তপুর ডিসি অফিস হতে জানতে পেরে আমাদের বসতবাড়িতে আগের দুইটি ঘর থাকা অবস্থায় তড়িঘড়ি করে আরো তিনটি ঘর নিজেদের টাকায় উত্তোলন করেছেন এবং গণপূর্ত বিভাগের অফিসে ও শরীয়তপুর ডিসি অফিসের এল এ শাখার সকল ধরনের দৌড় ঝাঁপ শাকিল মুন্সী ও খোকন বাঙ্গী নিজেরাই করেছেন। আট ধারা নোটিশ যাদের নামে হয়েছে (১) মফিজুল ঘোরামী পিতা:-আব্দুল গনি ঘোরামী (২) আজিজুল ঘোড়ামী পিতা:-আব্দুল গনি ঘোরামী (৩) মুজিবর ঘোরামী পিতা:-আব্দুল গনি ঘোরামী (৪) মোশারফ ঘোরামী পিতা:-আব্দুল গনি ঘোরামী (৫) আব্দুল গনি ঘোরামী,পিতা:- মৃত ওসমান ঘোরামী।এ এছাড়া খিলগাঁও মৌজায় পোড়া কান্দি তেলের মিল সংলগ্ন পশ্চিম নাওডোবার দালাল দেলোয়ার মুন্সী পিতা-মৃত রশিদ মুন্সী এর বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ পাওয়া যায়, খিলগাঁও মৌজার পোড়াকান্দি, অনিয়ম ও দুর্নীতির মধ্য দিয়ে যে সকল অবকাঠামো বিল চূড়ান্ত করা হয়েছে আংশিক নামের তালিকা দেওয়া হলো।
এই ব্যাপারে দেলোয়ার মুন্সীর বক্তব্য নিতে তার বাড়িতে গেলে তিনি পরিচয় গোপন করে কৌশলে সটকে পরেন। পরে তাকে ফোন করা হলে তিনি বিভিন্ন ব্যস্ততা দেখিয়ে বলেন, আমি বিদেশে ছিলাম, বর্তমানে দুবাই থেকে কসমেটিক্সের ব্যবসা করি। ব্যবসার লাইসেন্স নেই, তবে এয়ারপোর্টে ট্যাক্স দিই। আমার নানার কালে ৫০ বিঘা জমির বিল পেয়েছি। বাবার কালের দেড় কোটি টাকার জমি বিক্রি করেছি আমার ব্যাপারে উল্লেখিত অভিযোগ মিথ্যা ।
এ বিষয়ে শরিয়তপুর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বলেন, আমাদের এখান থেকে কোনো ধরনের অনৈতিক কাজ করার সুযোগ নেই। দালালদের তালিকা পেলে প্রয়োজনে আমাদের অফিসে টাঙিয়ে রাখা হবে। কেউ যাতে অনৈতিক সুবিধা না নিতে পারে তার জন্য আমরা প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।