অর্থনৈতিক সফলতার গল্প বিপুল জনসমর্থন ধরে রেখেছে আওয়ামী লীগ,বলেছেন-মাইকেল ক্লুগম্যান
- আপডেট টাইম : ০৩:৩৮:৫৫ অপরাহ্ণ, মঙ্গলবার, ১৭ জানুয়ারি ২০২৩
- / ২১৭ ৫০০০.০ বার পাঠক
তথ্য মতে-রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধসহ বিভিন্ন বৈশ্বিক সংকটের মধ্যেও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এখনো বাংলাদেশে ‘সবচেয়ে বেশি জনসমর্থন’ ধরে রেখেছে বলে মনে করছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত পররাষ্ট্রনীতি বিশ্লেষক মাইকেল ক্লুগম্যান।
গত ১১ জানুয়ারি (বুধবার) প্রভাবশালী মার্কিন সাময়িকী ফরেন পলিসির পডকাস্টে অংশ নিয়ে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, বর্তমান প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও সফলতার গল্পে উল্লেখ করার মতো নানান উপকরণ রয়েছে সরকারের জন্য। অর্থাৎ বিভিন্ন বৈশ্বিক সংকট থাকলেও বাংলাদেশের সরকারের সফলতার অনেক কিছু আছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল ক্লুগম্যান। ফরেন পলিসির অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বিরোধী দলগুলোর বিক্ষোভ নিয়েও কথা বলেন তিনি।
এ গবেষক বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে যে ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ এবং দলটি উল্লেখযোগ্য জনসমর্থন ধরে রেখেছে। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই ও অর্থনীতিতে সফলতার গল্পগুলো জনসমর্থন ধরে রাখতে আওয়ামী লীগকে সহায়তা করেছে বলে তিনি মনে করেন।
তাঁর মতে-কেউ যদি বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর ঘটনাগুলো নিয়েও আলোচনা করতে চান, তবুও সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, এখনও অনেক কিছু সরকারের হাতে আছে, যা দিয়ে নিজের সফলতা ভালোভাবেই ধরে রাখতে পারবে। আর এসব কারণেই আওয়ামী লীগকে সমর্থন করা যৌক্তিক বলে মনে করেন বাংলাদেশের জনগণ।
গেল ১৪ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার যে অর্থনৈতিক সফলতা দেখিয়েছে, তা আগামীতেও ধরে রাখতে পারবে বলে মনে করেন তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে ক্লুগম্যান বলেন, অর্থনীতিতে বাংলাদেশের আঞ্চলিক সফলতার গল্প আছে। এটি বৈশ্বিক সফলতার গল্প।
এ সময়ে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ, অতিমাত্রায় মুদ্রাস্ফীতি, জ্বালানি মূল্য বেড়ে যাওয়ার পরিণতি নিয়ে কথা বলেন তিনি। গেল কয়েক মাস ধরে এসব ঘটনা ঘটেছে। তাঁর মতে, প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও বলার মতো বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সফলতার গল্প আছে।
বিদ্যুৎ ঘাটতির মধ্যেও সরকার এ খাতে ভর্তুকি দিচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন এ বিশ্লেষক। ক্লুগম্যান বলেন, বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন অর্থনীতিতে বড় ধরনের চাপ তৈরি করেছিল। এ সময়ে উৎপাদন কমে যাওয়াকে রাস্তায় বিক্ষোভ নিয়ে নামার সুযোগ হিসেবে বেছে নিয়েছিল বিরোধী দলগুলো।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অন্যতম বাস্তবতা হলো দুর্নীতিসহ বিভিন্ন কেলেঙ্কারি। বিরোধী দলগুলোকে আন্দোলনে নামতে যা সুযোগ করে দিতে পারে। এরইমধ্যে অর্থনৈতিক সমস্যা ও দুর্নীতির দিকেই বেশি আলোকপাত করছেন বিরোধীরা।
বাংলাদেশে কোনো গণবিক্ষোভ হচ্ছে না জানিয়ে ক্লুগম্যান বলেন, যেসব বিক্ষোভ কর্মসূচি দেয়া হচ্ছে তা নিতান্তই দলীয়, এতে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ নেই। তাছাড়া ইউক্রেন যুদ্ধসহ বিভিন্ন বৈশ্বিক ঘটনাবলীর কারণে ক্ষণস্থায়ী সমস্যার ব্যাখ্যা দেয়ার সুযোগ সরকারের হাতে আছে।
‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশ সফলতা দেখিয়েছে। একটা সময় এই সন্ত্রাসবাদ বাংলাদেশের জন্য উল্লেখযোগ্য সমস্যা দেখা দিয়েছিল। যে কারণে অনেকগুলো প্রাণঘাতী জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছে,’ যোগ করেন ক্লুগম্যান।
যুক্তরাষ্ট্রের এই পররাষ্ট্রনীতি বিশ্লেষক মনে করেন, জঙ্গিদের দমনে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। গেল কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ আর কোনো সমস্যা হিসেবে দেখা যায়নি। এটি বর্তমান সরকারের একটি বড় সফলতার গল্প।
তাঁর পর্যবেক্ষণ বলছে, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ, নিরপেক্ষ ও ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতিসহ বৈশ্বিক পর্যায়ে বড় খেলোয়াড়ের ভূমিকা রাখছে বাংলাদেশ।
গণতন্ত্র থেকে পিছিয়ে যাওয়া নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অতীতের বিশাল ইতিহাসের দিকে নজর দেয়া জরুরি। এরআগে ক্ষমতায় থাকাকালে বিএনপিও একই ধরনের কৌশল বেছে নিয়েছিল। তখন ব্যাপক সংখ্যক গুম ও ধরপাকড়ের ঘটনা ঘটেছিল।
ক্লুগম্যানের মতে, এখন এমন কিছু ঘটছে, যা অতীতে বিএনপি সরকারের আমলেও হয়েছিল। এসব কিছু এখন নতুন কিছু না। দক্ষিণ এশিয়া ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অগণতান্ত্রিক কৌশলের আশ্রয় নেয়ার ঘটনা ঘটছে। এটিকে ‘মিশ্র গণতন্ত্র’ বলে আখ্যায়িত করেন তিনি।
আরেক প্রশ্নের জবাবে ক্লুগম্যান জানান, বাংলাদেশে শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে আমি মনে করি না। বরং দেশটিতে বিভিন্ন নিরাপত্তামূলক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
শ্রীলঙ্কার চেয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেক বেশি শক্তিশালী বলেও জানান তিনি। আর সংবিধান অনুসারে বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচন হবে বলে আশার কথা জানিয়েছেন এই পররাষ্ট্রনীতি বিশ্লেষক।