ঢাকা ০৮:৩১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
সংবাদ শিরোনাম ::
গরু বহনকারী ভটভটির ধাক্কায় প্রাণ হারালো  দুই যুবক ইবিতে ভর্তি পরীক্ষার্থীদের জন্য থাকছে না কোন পরিবহন সেবা নবাবগঞ্জ প্রেসক্লাবের সকল সাংবাদিকের সঙ্গে ওসির সৌজন্য সাক্ষাৎ ও মতবিনিময় পাকুন্দিয়া উপজেলায় ৪ মামলার পরোয়ানাভূক্ত পলাতক আসামী গ্রেফতার রাণীশংকৈলে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা কোনাবাড়ি পল্লী বিদ্যুৎ পাওয়ার সাবস্টেশনে আগুন তামাক হচ্ছে মাদকের মূল লক্ষ্য -ডাঃ মোঃ নজরুল ইসলাম কিরাটন ইউনিয়নের পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম আমাদের মাঝে আর নেই শিবগঞ্জে সানামসজিদ স্থলবন্দরে হিট স্ট্রোকে ট্রাফিক পরিদর্শকের মৃত্যু গাজীপুরবাসীর জন্য চরম “সৌভাগ্য’ বর্তমান ডিসি এডিসি রেভিনিউ চৌকস ও মেধাবী দুই কর্মকর্তার চিন্তা,চেতনায় কর্মে, সর্বোপরিভাবে সততাকে প্রাধাণ্য দিয়েই দায়িত্ব পালন করছেন

দু’তিন বছরে বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে সম্মানজনক স্থানে উন্নীত হবে ঢাবি’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মদিন আজ। ১০১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পেরিয়ে প্রৌঢ়ে পৌছানো উপমহাদেশের মধ্যে অন্যতম প্রাচীন প্রতিষ্ঠানটি আজও স্বমহিমায় ভাস্বর। দেশসেরা এই বিদ্যাপীঠ বৃটিশ আমল থেকে বহু ঘটনার স্বাক্ষী। একটি জাতিরাষ্ট্র তৈরির নেতৃত্ব দেওয়ার মতো বিরল কৃতিত্বের অধিকারী এ প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের সব অর্জনের পেছনে গৌরবজনক ও অনুঘটকের ভূমিকা রেখেছে।

বেশ কিছু ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনন্য। শিক্ষা-গবেষণার পাশাপাশি যেকোনো সময়-দু:সময়-সঙ্কটে জাতিকে দিশা দিয়ে আসছে এই বিদ্যাপীঠ। সারা দুনিয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই একমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেটি কিনা একটি জাতিকে স্বাধীন দেশের পতাকা দিয়েছে। শুধু তাই নয়, মাতৃভাষাকে রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবে স্বীকৃতির সংগ্রামে জীবন উৎসর্গ করার নজির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নেই। বাঙালির স্বাধীনতার রক্ষাকবচ তথা সবচেয়ে বড় অর্জন একাত্তরের মুক্তির সংগ্রামের আঁতুরঘর এই বিশ্ববিদ্যালয়। এখানকার ছাত্র-শিক্ষকরা মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছে। মুক্তির সংগ্রামে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের এত সংখ্যক শিক্ষকের রক্ত দেওয়ার ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে আজও অম্লান।

বৃটিশ শাসনামলে ১৯২১ সালের ১ জুলাই শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টির দ্বার উন্মুক্ত হয়। সে সময়কার ঢাকার সবচেয়ে অভিজাত ও সৌন্দর্যমণ্ডিত রমনা এলাকায় প্রায় ৬০০ একর জমির ওপর মনোরম পরিবেশে গড়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এই অঞ্চলের মানুষগুলোর কৃষ্টি-সংস্কৃতিকে ধারণ করে স্বগৌরবে শতাব্দী ধরে এগিয়ে চলেছে, তার এই পথচলা নিরন্তর।  শুধু তাই নয়, প্রতিষ্ঠার পর থেকে রাজনীতিসহ আমাদের সব অর্জনে সামনে থেকে পথ দেখানোর পাশাপাশি শিক্ষা-গবেষণায়ও রেখেছে অসামান্য অবদান। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, কালক্রমে সঠিক একাডেমিক পরিকল্পনার অভাব, বাজেট স্বল্পতা, আবাসন সঙ্কট, দলীয়বৃত্তির ছাত্ররাজনীতি, প্রশ্নবিদ্ধ শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ না থাকাসহ নানা কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কাজ তথা গবেষণা ও জ্ঞান সৃষ্টি থেকে কিছুটা দূরে সরে গেছে ঢাবি।

এরই চিত্র ফুটে উঠছে র‌্যাংকিংগুলোতে। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় র্যাং কিংয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান তলানিতে। সারাবিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র‌্যাংকিং নির্ণয় করা গ্রহণযোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা ও গবেষণা সংস্থা কোয়াককোয়ারেলি সায়মন্ডস (কিউএস)। এটি গত ১০ জুন ২০২৩ সালের বিশ্ববিদ্যালয় র্যাং কিং প্রকাশ করেছে। এতে ৮০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায়ও স্থান হয়নি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট)। টানা পঞ্চমবার কিউএস র‌্যাংঙ্কিংয়ে ৮০১ থেকে ১০০০তম অবস্থানে রয়েছে দেশসেরা এই বিশ্ববিদ্যালয়৷

‘কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‌্যাংঙ্কিংস ২০২৩: টপ গ্লোবাল ইউনিভার্সিটিস’ শীর্ষক এই র‌্যাংঙ্কিংয়ে সেরা ৫০০-এর পরে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সুনির্দিষ্ট অবস্থান প্রকাশ করা হয় না। এ কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান সুনির্দিষ্টভাবে কত নম্বরে, তা উল্লেখ করেনি কিউএস। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ৮০১ থেকে ১০০০তম—এর অর্থ হচ্ছে এটি র‌্যাংঙ্কিংয়ের সেরা ১০০০-এর শেষ ২০০-তে অবস্থান করছে।
এই র‌্যাংঙ্কিংয়ে এখন আটটি সূচকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক মান নিরূপণ করা হয়। প্রতিটি সূচকে ১০০ করে স্কোর থাকে। সব সূচকের যোগফলের গড়ের ভিত্তিতে সামগ্রিক স্কোর নির্ধারিত হয়।

র‌্যাংকিংয়ে গত ১০ বছরের মতো এবারও প্রথম স্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি), দ্বিতীয় অবস্থানে যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় এবং তৃতীয় যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়া চতুর্থ ও পঞ্চম অবস্থানে আছে যথাক্রমে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়।
র‌্যাংকিংয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের ৪৪টি ও পাকিস্তানের ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে ভারতের নয়টি ও পাকিস্তানের তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে বিশ্বসেরা ৪০০ এর মধ্যে। এবার ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সাইন্সের অবস্থান ১৫৫তম, গতবার যেটি ১৮৬তম ছিল। অথচ আমাদের সেরা প্রতিষ্ঠানটির নাম নেই র‌্যাংকিংয়ের ৮০০’র মধ্যেও।

বিশ্ববিদ্যালয় র‌্যাংকিং বিশ্লেষণে দেখা যায়, এক দশক আগেও বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে ঢাবি সন্তোষজনক অবস্থায় ছিল। ২০১২ সালে কিউএস’র তালিকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ছিল ৬০১ এর মধ্যে। ২০১৪ সালে তা পিছিয়ে ৭০১তম অবস্থানের পরে চলে যায়। ২০১৯ সালে তালিকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান আরও পেছনের দিকে চলে যায়।

র‌্যাংকিংয়ে কেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পিছিয়ে এর সামগ্রিক সুলোক সন্ধানে জানা গেছে, যে ৮টি সূচকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক মান নিরূপণ করা হয়, সেগুলোর বেশিরভাগেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পারফরমেন্স খুবই নাজুক।

র‌্যাংকিংয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পিছিয়ে পড়ার কারণ ও এ থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাকসুদ কামালের সঙ্গে। যুগান্তরকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি কীভাবে র‌্যাংকিংয়ে এগোনো যাবে সে বিষয়েও সুচিন্তিত মত ও বিশ্লেষণ দিয়েছেন। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেছেন, র‌্যাংকিংয়ে এগোনোর লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রতি যেসব পরিকল্পনা ও উদ্যোগ নিয়েছে এবং বাস্তবায়ন করছে তাতে আগামী দু’তিন বছরের মধ্যে বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে সম্মানজনক জায়গায় থাকবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সাক্ষাৎকারটি পাঠকদের উদ্দেশে তুলে ধরা হলো—

যুগান্তর : কোয়াককোয়ারেলি সায়মন্ডসের (কিউএস) বিশ্ববিদ্যালয় র‌্যাংকিংয়ে বিশ্বসেরা ৮০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় এবারও স্থান হয়নি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি)। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার‌্য (শিক্ষা) হিসেবে আপনার কাছে এর কারণ কী বলে আপনি মনে করেন?

অধ্যাপক মাকসুদ কামাল : শিক্ষার গুণ ও মান নির্নয়ের জন্য কতগুলো সূচকের উপর ভিত্তি করে বিশ্বব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের র‌্যাংকিং নিরূপণ করা হয়। এর মধ্যে কিউএস বা টাইমস হায়ার এডুকেশন এই দুইটি র‌্যাংকিং প্রক্রিয়া অন্যতম। যদিও র‌্যাংকিং বাণিজ্যিক ধারণাপ্রসূত কিন্তু গ্লোবালাইজেশনের এ যুগে র‌্যাংকিং এড়িয়ে চলাও সম্ভব নয়। যে সূচকগুলোর মাধ্যমে র‌্যাংকিং নিরূপণ করা হয়, তার অনেকগুলো সূচক অনুসরণ করা আমাদের পক্ষে সমসাময়িককালে প্রায় অসম্ভব। এ জন্য অনেক পূর্বেই বিশ্ববিদ্যালয় পর‌্যায় থেকে পরিকল্পনা নেওয়া প্রয়োজন ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষকে সামনে রেখে আমরা ইতোমধ্যে বেশ কিছু পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি, যার কোন কোনটি বাস্তবায়ন ও হচ্ছে।

পৃথিবীতে রিসার্চ ইনটেনসিভ যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আছে সেগুলো বৈশ্বিক র‌্যাংকিংয়ে এগিয়ে আছে। আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রিসার্চ ইনটেনসিভ বিশ্ববিদ্যালয় না। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সাধারণত আমরা সার্টিফিকেট প্রোভাইডিং ইউনিভার্সিটি হিসেবে গড়ে তুলেছি। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে পাশ করে স্বতন্ত্রভাবে কিছু একটা করবে, সেভাবে তাদের গড়ে না তুলে তাদেরকে সাধারন চাকরির জন্য আমরা তৈরি করছি। গবেষণা, উদ্ভাবন অথাৎ স্বতন্ত্রভাবে শিক্ষকশিক্ষার্থীদের জ্ঞানচর্চার জন্য যে সামগ্রিক পরিবেশ তথা একাডেমিক ও রিসার্চ অবকাঠামো দরকার – এ ধরনের শূন্যতা আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর রয়েছে। এ ধরনের পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় থেকে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন কিংবা সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ দেওয়ার প্রয়োজন ছিল। এসবের অভাবে র‌্যাংকিংয়ের সূচকগুলোতে আমরা বর্তমানে পিছিয়ে আছি।

যুগান্তর : বিশ্ববিদ্যালয় র‌্যাংকিং করার ক্ষেত্রে কোন কোন সূচক মানদণ্ড হিসেবে ধরা হয়?

মাকসুদ কামাল : বিশ্ববিদ্যালয়গুলো র‌্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি সূচক রয়েছে। কিউএস র‌্যাংকিং এ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক সুনাম, প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের চাকুরীর বাজারে সুনাম (এমপ্লয়ার রেপুটেশন), শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত, শিক্ষক প্রতি সাইটেশন, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর অনুপাত, আন্তর্জাতিক শিক্ষকের অনুপাত, ইত্যাদি সূচকের উপর ভিত্তি করে ১০০ নাম্বারের উপর একটি মূল্যায়ন করা হয়। জ্ঞানের আদান-প্রদানে একটি বিশ্ববিদ্যালয় নিজ দেশ ও বিশ্বব্যাপী কতটুকু পরিচিত; শিক্ষাব্যবস্থা মানসম্মত ও যুযোপযোগী কিনা মৌলিক, ও প্রায়োগিক গবেষণার ব্যবহার ও ব্যাপ্তি কেমন, সূচকগুলোর সঙ্গে এইসব উপাদান জড়িত।

আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা আমরা নিজ দেশ ও আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা অনুযায়ী গড়ে তুলতে পারি নাই। ইন্ডাস্ট্রি -বিশ্ববিদ্যালয়ের সমঝোতা ও পারস্পরিক গবেষণা নাই বললেই চলে। পৃথিবীর উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কার্যকর গবেষণা ও এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম নেই। কিউএস র‌্যাংকিংয়ে একাডেমিক সুনাম সূচকে যে ৪০ নম্বর আছে তাতে আমাদের স্কোর অনেক কম হয়। সাইটেশন ও এমপ্লয়ার রেপুটেশনেও আমরা অনেক পিছিয়ে। উল্লেখিত বাকী তিনটি সূচকে ও আমাদের অবস্থান বেশ কম। অন্যদিকে ওয়ার্ল্ড ইউনির্ভাসিটি র‌্যাঙকিং – এ টিচিং ইনভায়রনমেন্ট, গবেষণা ও গবেষণার ব্যবহার ও প্রভাব ইত্যাদি মুখ্য সূচক হিসাবে ব্যবহার হয়। কিউএস র‌্যাংকিং এবং ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‌্যাংকিং দুইটিতে আমাদের অবস্থান দুর্বল। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার দর্শন যেহেতু ওয়েলফেয়ার দেশগুলোর মত, তাই লেখাপড়ায় সব আগ্রহীকে রাষ্ট্র অনেকটা বিনামূল্যে শিক্ষার সুযোগ দিতে গিয়ে উচ্চশিক্ষার আনুভূমিক ব্যাপক প্রসার ঘটিয়েছে। মান এতদিন তেমন বিবেচ্য ছিল না। এখন সময় এসেছে মান উন্নয়নের।

ঢাবিতে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া কতটা স্বচ্ছ?

মাকসুদ কামাল : শিক্ষক নিয়োগ ও শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে আমরা কিছুটা এগিয়ে আছি। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মধ্য দিয়ে দেশের সেরাদের সেরা শিক্ষার্থীরা এখানে ভর্তি হচ্ছে। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। মেধাবীদের মধ্যে মেধাবী, একাডেমিক ফল যাদের সর্বোচ্চ বা কাছাকাছি, যাদের গবেষণার অভিজ্ঞতা আছে, উপস্থাপনা কনভিনসিং তাদেরকে শিক্ষক হিসেবে এখন নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। প্রতিযোগিতায় শিক্ষামানচিত্রে মানসম্মত অবস্থাপন যদি আমাদের নিশ্চিত করতে হয়, তবে শিক্ষক নিয়োগের ও প্রমোশনের পরিবর্তন আনা এখন সময়ের দাবি। পিএইডি বা সমমানের উচ্চতর ডিগ্রী ব্যতীত পৃথিবীর অনেক দেশে এন্ট্রি তথা প্রভাষক পর্যায়ে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয় না। আমরা স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী সম্পাদনের পর প্রভাষক হিসাবে নিয়োগ প্রদান করি। মানসম্মত বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষকের পদ এখন আর নেই। পিএইচডি সম্পাদনের পর সহকারী অধ্যাপক হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। আমাদের পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে ও এমটি হয়ে আসছে। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ও যোগ্যতায় পরিবর্তনের প্রয়োজন রয়েছে। নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আনায়নের জন্য আমরা কিছু পরিবর্তন করেছি। পিএইচডি ব্যতীত সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি বা নিয়োগ দেওয়া হবে না, সম্প্রতি আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আরও ব্যাপক পরিবর্তন প্রয়োজন আছে। সে ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক, কারিগরি ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও স্বক্ষমতা বহুলাংশে বাড়াতে হবে। যেখানে মঞ্জুরী কমিশন ও মন্ত্রণালয়ের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা প্রয়োজন।

যুগান্তর : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে ক্লাস সাইজ অনেক বড়, যেখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মিথস্ক্রিয়া প্রায়ই হয় না বলে অভিযোগ।

মাকসুদ কামাল : আমি আসছি সে বিষয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় র‌্যাংকিংয়ের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক হচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত। সাধারণত প্রতি ১০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন শিক্ষক থাকাটাকেই আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ‘রুল অব থাম্প’ হিসেবে ধরা হয়। যেসব বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বৈশ্বিক র‌্যাংকিংয়ে এগিয়ে তাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত কোথাও ১: ৮, ১: ৭। এমনও বিশ্ববিদ্যালয় আছে যেখানে ৫ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন ফ্যাকাল্টি মেম্বার রয়েছে।

অথচ দেশের প্রাচীনতম এই বিদ্যাপীঠে গড়ে ২০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে ১ জন শিক্ষক রয়েছেন। এই ক্ষেত্রে আমরা তেমন নম্বর পাই না। র‌্যাংকিংয়ে পিছিয়ে পড়ার এটিও একটি কারণ। কিউএস র‌্যাংকিং এ শিক্ষক/শিক্ষার্থী অনুপাতে ২০% নম্বর রয়েছে, যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ২০২২ এর র‌্যাংকিং-এ পেয়েছে ২.৮%। প্রতি শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক সংখ্যা কম থাকার কারণে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মিথস্ক্রিয়া খুবই কম। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মিথস্ক্রিয়া আরাে বাড়ানোর লক্ষ্যে ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষে আমরা প্রথম বর্ষে ভর্তির ক্ষেত্রে ছাত্র সংখ্যা প্রায় ১০০০ কমিয়ে ৭০০০ থেকে ৬০০০ নামিয়ে এনেছি। এক্ষেত্রে আমরা বাজারে গ্র্যাজুয়েটদের প্রয়োজনীয়তা ও দেখছি। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) টিচিং লোড ক্যালকুলেশনের একটি প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এই কাজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমরা ইউজিসিকে সব ধরনের সহায়তা করছি। টিচিং লোড ক্যালকুলেশন কমিটির আমি একজন সদস্য। কমিটি একটা নীতিমালা করছে। সেখানে একজন শিক্ষক একটিভ টিচিং আওয়ারের পাশাপাশি গবেষণায়, লেকচার তৈরিতে, এ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কার‌্যক্রমে, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কনসালটেশনে কতটুকু সময় দেবেন এগুলো নির্ধারণ করা হয়েছে। ইউজিসি যে নীতিমালা করছে তাতে ১৩ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন শিক্ষক পাওয়া যাবে। এটি বাস্তবায়ন হলে র‌্যাংকিংয়ের এই সূচকেও আমরা আরাে ভালো করব, তবে এ সম্পর্কে আরাে সংস্কারের প্রয়োজন আছে।

যুগান্তর : র‌্যাংকিংয়ে আর কোন সূচকে ঢাবি পিছিয়ে?

মাকসুদ কামাল : র‌্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে আরেকটা বিষয় দেখা হয় সেটি হচ্ছে-সাইটেশন পার ফ্যাকাল্টি। অর্থাৎ জার্নালে কোনো প্রবন্ধ যদি প্রকাশিত হয় সেই প্রবন্ধ যখন অন্যরা রেফারেন্স হিসেবে উল্লেখ করে সেটাকে সাইটেশন বলা হয়। সাইটেশন সূচকের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ২০২২ এর র‌্যাংকিং-এ ২০ এর স্থলে পেয়েছে ২.৫। আন্তর্জাতিক ছাত্র এবং শিক্ষকের অনুপাতও সূচক হিসেবে দেখা হয়। এই দুইটি সূচকে কিউএস র‌্যাংকিং এ ১০% নাম্বার বরাদ্দ আছে, যেখানে আমাদের অবস্থান নাই বললেই চলে। আন্তর্জাতিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ বাড়ানোর জন্য উন্নত দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নানা ধরনের শিক্ষা কর্মসূচী, বৃত্তি ও ইনসেনটিভ দিয়ে থাকে। এ সব আমাদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। সম্প্রতি আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশী শিক্ষার্থীদের আকর্ষণের জন্য বঙ্গবন্ধু ওভারসিজ স্কলারশিপ প্রোগ্রাম এর আওতায় বৃত্তি প্রোগ্রাম চালুর ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছি। বঙ্গবন্ধু ওভারসিজ স্কলারশিপ আমাদের শিক্ষকদের জন্য ২০১৭ সাল থেকে পুনঃচালু হয়েছে, যা জোট সরকার ২০০৩ সালে বন্ধ করে দিয়েছিল। এই বৃত্তির আওতায় প্রায় ১৪০ জন তরুণ শিক্ষক উন্নত বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পিএইচডি বা সমমানের ডিগ্রি গ্রহণ করছেন। ওয়ার্ল্ড ইউনির্ভাসিটি ব্যাংকিং – এ উচ্চতর ডিগ্রীপ্রাপ্ত ফ্যাকাল্টি মেম্বারদের সংখ্যাও দেখা হয়। বিদেশী মানসম্মত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাংলাদেশী নাগরিক যারা উন্নত দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছে, তাঁদের দেশে এনে নির্দিষ্ট সময় শিক্ষকতা ও গবেষণার সুযোগ আমরা সৃষ্টি করেছি। ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাকাল্টির গবেষণা ও শিক্ষকতার সুযোগ অতীতে আমাদের ছিল না।

প্রকাশনা ও গবেষণার জন্য আপনারা কী কী উদ্যোগ নিয়েছেন।

মাকসুদ কামাল : শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গবেষণায় উদ্বুদ্ধ ও মনোযোগী করতে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষকে সামনে রেখে বেশ কিছু উদ্যোগ হাতে নিয়েছি। তার মধ্যে সেন্টেনারী রিসার্চ প্রজেক্ট একটি। শিক্ষকরা এখন প্রায় ৫০০ গবেষণা কাজ পরিচালনা করছেন। শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ও গবেষণা প্রকল্পে অন্তভূক্ত করা হয়েছে। শর্ত দেওয়া আছে যে, প্রত্যেক শিক্ষক তার গবেষণা কাজ থেকে ইনডেক্স/ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর জার্নালে অন্তত একটি প্রকাশনা বাধ্যতামূলক ভাবে করবেন। এতে করে দেখা যাচ্ছে, মানসম্মত প্রায় ৫০০ আটিকেল প্রকাশিত হবে। এসব প্রকাশনা ও গবেষণা সম্পন্ন হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিবিলিটি ও সাইটেশন বাড়বে। এতে র‌্যাংকিংয়েও দ্রুত উন্নতি হবে। গবেষণা একটি চলমান প্রক্রিয়া। একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে এই গবেষণা কাজগুলো চলছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার গবেষণায় ক্রমশ আর্থিক বরাদ্দ বাড়াচ্ছে। ইউজিসি ও সেই কাজে আমাদের সহযোগিতা করছে। আগে গবেষণা ও প্রকাশনাকে আমাদের এখানে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। এখন আমরা সেই উদ্যোগ নিয়েছি। এ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১টি জার্নালকে ডিজিটাল অবজেক্ট আইডেনটিফায়ার এর আওতায় আনা হয়েছে। লন্ডনের ক্রস রেপ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বাংলাদেশ একাডেমি অব সাইন্সের অধীন বাংলাজল নামে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। বাংলাজলের সঙ্গে যোগাযোগ করে ক্রস রেপের মাধ্যমে ওই ১১টি জার্নালকে ডিজিটাল অবজেক্ট আইডেনটিফায়ারের আওতায় আমরা এনেছি। এর ফলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত জার্নালের প্রবন্ধগুলোর সাইটশন বাড়বে। আমরা ভবিষৎতে কোন কোন জার্নালের উন্নত ইনিডেসিং ও ইমফ্যাক্ট ফ্যাক্টর অর্জনের চেষ্টা করব। জার্নাল গুলোকে মানসম্মত করার জন্য এডিটোরিয়াল বোর্ড এবং রিভিউ প্রক্রিয়ার গুণগত পরিবর্তন আনা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৬ টি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের মধ্যে ৪৬ টিতে মাস্টার্স পর‌্যায়ে অতীতে ডেডিকেট গবেষণা ভিত্তিক থিথিস ছিলনা। একাডেমিক কাউন্সিল থেকে আইন করে গতবছর থেকে আমরা মাস্টার্স পর‌্যায়ে প্রতি বিভাগ থেকে অন্তত ৩০% শিক্ষার্থীর গবেষণাভিত্তিক থিসিস করণ আমরা বাধ্যতামূলক করেছি। পৃথিবীর সকল দেশের মানসম্মত বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব সময়-নির্ধারিত ফান্ডেড পিএইচডি এবং মাস্টার্স প্রোগ্রাম রয়েছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি এবং মাস্টার্স প্রোগাম আছে বটে, কিন্তু মানসম্মত গবেষণার জন্য আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতার অভাব আছে। মানসম্মত সময়-নির্ধারিত পিএইচডি গবেষণার জন্য আমরা ফান্ডেড পিএইচডি চালু করতে যাচ্ছি। এই পিএইচডি গবেষণা থেকে ইমফ্যাক্ট ফ্যাক্টর সম্পন্ন জার্নালে প্রকাশনা করা বাধ্যতামূলক থাকবে। এ ভাবে গবেষণা ও প্রকাশনা বাড়ানোর জন্য নানাবিধ প্রস্তুতি হাতে নেওয়া হয়েছে। ইন্ডাস্ট্রি-ইউনিভার্সিটি এবং একাডেমিয়ার কোলাবোরেশন ও কোঅপারেশরেনর জোরদার করার জন্য কাজ আমরা শুরু করেছি। নভেম্বর মাসে আমরা প্রকাশনা-গবেষণা মেলা করতে যাচ্ছি, যেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০ বছরের ইতিহাসে প্রথম। এই মেলায় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত জার্নাল ও বই পুস্তক প্রদর্শিত হবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যে সকল গ্রাউন্ড ব্রেকিং পাবলিকেশন আছে, সেগুলো মেলায় দেখানো হবে। দেশ-বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান সমূহকে মেলায় আমন্ত্রণ করা হবে। সর্বোপরি শতবর্ষী এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা চিত্র আমরা তুলে ধরতে চাই, যাতে দেশ ও বিদেশের প্রতিষ্ঠানের সাথে গবেষণা ও এক্সসেইন্স কার‌্যক্রম বাড়ে। এভাবে র‌্যাংকিংয়ে ভালো করার ক্ষেত্রে আমাদের যেসব দুর্বলতা অতীতে ছিল সেগুলো কাটিয়ে উঠতে আমরা কার‌্যক্রম হাতে নিয়েছি। সা¤প্রতিক কালে আমাদের নেওয়া উদ্যোগ গুলোর ফলাফল নিকট ভবিষৎতে পাওয়া যাবে।

দ্যোগ গুলোর ফলাফল নিকট ভবিষৎতে পাওয়া যাবে।

যুগান্তর : ঢাবিতে আগে বিদেশ থেকে অনেকে পড়তে আসত। এখন। তাদের চোখে পড়ে না। কারণ কী?

মাকসুদ কামাল : আমি সে বিষয়ে আসছি। র‌্যাংকিংয়ে আরেকটি বিষয় হচ্ছে-বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশী শিক্ষার্থী কতজন আছেন। অতীতে নেপাল, ভারত, মালয়েশিয়া, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও আরব দেশ থেকে বহু শিক্ষার্থী আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসতো। উচ্চশিক্ষার মান ও যুগােপযোগী কার‌্যক্রম হাতে নিয়ে এশিয়ার বহুদেশ এগিয়ে গেছে, কিন্তু আমরা পিছিয়ে পড়েছি। উল্লেখিত সূচকগুলোতে পিছিয়ে পড়ার কারণে বিদেশী শিক্ষার্থীরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসেন না। যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েটেড হবে, শিক্ষার্থীদের সাধারণত দেখে ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল আউটলুক কেমন। আউটলুক বলতে, গবেষণা, টিচিং, কোলাবোরেশন, ন্যাশনাল ও ইন্টারন্যাশনাল স্টাফের অনুপাত, ইত্যাদি বুঝায়। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা এসব দেখে বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে পড়তে আসেন। আমাদের এসবের অভাবহেতু বিদেশী শিক্ষার্থীদের সংখ্যা এখন খুবই কম। কিউএস র‌্যাংকিং – এ আন্তর্জাতিক ছাত্রের অনুপাতে আমরা ৫% নাম্বারের স্থলে পেয়েছি ০.০৫৫%।

ঢাবি বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌছতে কত সময় লাগবে বলে আপনি মনে করেন?

মাকসুদ কামাল : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শতবর্ষকে সামনে রেখে একাডেমিক সংস্কার কাজ হাতে নিয়েছে। সে সব বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে; আমি বিশ্বাস করি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে র‌্যাংকিংয়ে একটি সম্মানজনক জায়গায় নিজেকে উন্নীত করতে পারবে। কোন কোন অনুষদ ভিত্তিক র‌্যাংকিংয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে সম্মানজনক অবস্থানে আছে।

বিশ্বের সব বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক প্লান থাকে? ঢাবির নেই কেন?

মাকসুদ কামাল : শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, আমাদের দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়েই সঠিক একাডেমিক প্লান নেই। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি। কমিশন এখন পর্যন্ত সঠিক একাডেমিক পরিকল্পনা কী হবে সেটি উপস্থাপন করতে পারেননি। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এখন সেই পরিকল্পনাটা করতে যাচ্ছি। একাডেমিক প্লান তৈরি করার জন্য জ্যেষ্ঠ ও প্রথিতযশা শিক্ষকদের সমন্বয়ে সম্প্রতি একটি কমিটি করা হয়েছে। সেই কমিটি তিন মাসের মধ্যেই আমাদেরকে একটা পরিকল্পনা দেবে। সেই পরিকল্পনা মোতাবেক আগামী ৫ কিংবা ১০ বছরের জন্য বাস্তবতার আলোকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ভিন্ন একাডেমিক উচ্চতায় উন্নীত করতে একটি রোডম্যাপ ঠিক করা হবে। এক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সহযোগিতার প্রয়োজন আছে। অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন নানবিধ সহযোগিতা প্রদানের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

আরো খবর.......

জনপ্রিয় সংবাদ

গরু বহনকারী ভটভটির ধাক্কায় প্রাণ হারালো  দুই যুবক

দু’তিন বছরে বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে সম্মানজনক স্থানে উন্নীত হবে ঢাবি’

আপডেট টাইম : ০৭:০৩:২৬ পূর্বাহ্ণ, শুক্রবার, ১ জুলাই ২০২২

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মদিন আজ। ১০১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পেরিয়ে প্রৌঢ়ে পৌছানো উপমহাদেশের মধ্যে অন্যতম প্রাচীন প্রতিষ্ঠানটি আজও স্বমহিমায় ভাস্বর। দেশসেরা এই বিদ্যাপীঠ বৃটিশ আমল থেকে বহু ঘটনার স্বাক্ষী। একটি জাতিরাষ্ট্র তৈরির নেতৃত্ব দেওয়ার মতো বিরল কৃতিত্বের অধিকারী এ প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের সব অর্জনের পেছনে গৌরবজনক ও অনুঘটকের ভূমিকা রেখেছে।

বেশ কিছু ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনন্য। শিক্ষা-গবেষণার পাশাপাশি যেকোনো সময়-দু:সময়-সঙ্কটে জাতিকে দিশা দিয়ে আসছে এই বিদ্যাপীঠ। সারা দুনিয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই একমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেটি কিনা একটি জাতিকে স্বাধীন দেশের পতাকা দিয়েছে। শুধু তাই নয়, মাতৃভাষাকে রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবে স্বীকৃতির সংগ্রামে জীবন উৎসর্গ করার নজির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নেই। বাঙালির স্বাধীনতার রক্ষাকবচ তথা সবচেয়ে বড় অর্জন একাত্তরের মুক্তির সংগ্রামের আঁতুরঘর এই বিশ্ববিদ্যালয়। এখানকার ছাত্র-শিক্ষকরা মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছে। মুক্তির সংগ্রামে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের এত সংখ্যক শিক্ষকের রক্ত দেওয়ার ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে আজও অম্লান।

বৃটিশ শাসনামলে ১৯২১ সালের ১ জুলাই শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টির দ্বার উন্মুক্ত হয়। সে সময়কার ঢাকার সবচেয়ে অভিজাত ও সৌন্দর্যমণ্ডিত রমনা এলাকায় প্রায় ৬০০ একর জমির ওপর মনোরম পরিবেশে গড়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এই অঞ্চলের মানুষগুলোর কৃষ্টি-সংস্কৃতিকে ধারণ করে স্বগৌরবে শতাব্দী ধরে এগিয়ে চলেছে, তার এই পথচলা নিরন্তর।  শুধু তাই নয়, প্রতিষ্ঠার পর থেকে রাজনীতিসহ আমাদের সব অর্জনে সামনে থেকে পথ দেখানোর পাশাপাশি শিক্ষা-গবেষণায়ও রেখেছে অসামান্য অবদান। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, কালক্রমে সঠিক একাডেমিক পরিকল্পনার অভাব, বাজেট স্বল্পতা, আবাসন সঙ্কট, দলীয়বৃত্তির ছাত্ররাজনীতি, প্রশ্নবিদ্ধ শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ না থাকাসহ নানা কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কাজ তথা গবেষণা ও জ্ঞান সৃষ্টি থেকে কিছুটা দূরে সরে গেছে ঢাবি।

এরই চিত্র ফুটে উঠছে র‌্যাংকিংগুলোতে। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় র্যাং কিংয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান তলানিতে। সারাবিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র‌্যাংকিং নির্ণয় করা গ্রহণযোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা ও গবেষণা সংস্থা কোয়াককোয়ারেলি সায়মন্ডস (কিউএস)। এটি গত ১০ জুন ২০২৩ সালের বিশ্ববিদ্যালয় র্যাং কিং প্রকাশ করেছে। এতে ৮০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায়ও স্থান হয়নি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট)। টানা পঞ্চমবার কিউএস র‌্যাংঙ্কিংয়ে ৮০১ থেকে ১০০০তম অবস্থানে রয়েছে দেশসেরা এই বিশ্ববিদ্যালয়৷

‘কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‌্যাংঙ্কিংস ২০২৩: টপ গ্লোবাল ইউনিভার্সিটিস’ শীর্ষক এই র‌্যাংঙ্কিংয়ে সেরা ৫০০-এর পরে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সুনির্দিষ্ট অবস্থান প্রকাশ করা হয় না। এ কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান সুনির্দিষ্টভাবে কত নম্বরে, তা উল্লেখ করেনি কিউএস। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ৮০১ থেকে ১০০০তম—এর অর্থ হচ্ছে এটি র‌্যাংঙ্কিংয়ের সেরা ১০০০-এর শেষ ২০০-তে অবস্থান করছে।
এই র‌্যাংঙ্কিংয়ে এখন আটটি সূচকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক মান নিরূপণ করা হয়। প্রতিটি সূচকে ১০০ করে স্কোর থাকে। সব সূচকের যোগফলের গড়ের ভিত্তিতে সামগ্রিক স্কোর নির্ধারিত হয়।

র‌্যাংকিংয়ে গত ১০ বছরের মতো এবারও প্রথম স্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি), দ্বিতীয় অবস্থানে যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় এবং তৃতীয় যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়া চতুর্থ ও পঞ্চম অবস্থানে আছে যথাক্রমে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়।
র‌্যাংকিংয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের ৪৪টি ও পাকিস্তানের ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে ভারতের নয়টি ও পাকিস্তানের তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে বিশ্বসেরা ৪০০ এর মধ্যে। এবার ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সাইন্সের অবস্থান ১৫৫তম, গতবার যেটি ১৮৬তম ছিল। অথচ আমাদের সেরা প্রতিষ্ঠানটির নাম নেই র‌্যাংকিংয়ের ৮০০’র মধ্যেও।

বিশ্ববিদ্যালয় র‌্যাংকিং বিশ্লেষণে দেখা যায়, এক দশক আগেও বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে ঢাবি সন্তোষজনক অবস্থায় ছিল। ২০১২ সালে কিউএস’র তালিকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ছিল ৬০১ এর মধ্যে। ২০১৪ সালে তা পিছিয়ে ৭০১তম অবস্থানের পরে চলে যায়। ২০১৯ সালে তালিকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান আরও পেছনের দিকে চলে যায়।

র‌্যাংকিংয়ে কেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পিছিয়ে এর সামগ্রিক সুলোক সন্ধানে জানা গেছে, যে ৮টি সূচকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক মান নিরূপণ করা হয়, সেগুলোর বেশিরভাগেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পারফরমেন্স খুবই নাজুক।

র‌্যাংকিংয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পিছিয়ে পড়ার কারণ ও এ থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাকসুদ কামালের সঙ্গে। যুগান্তরকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি কীভাবে র‌্যাংকিংয়ে এগোনো যাবে সে বিষয়েও সুচিন্তিত মত ও বিশ্লেষণ দিয়েছেন। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেছেন, র‌্যাংকিংয়ে এগোনোর লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রতি যেসব পরিকল্পনা ও উদ্যোগ নিয়েছে এবং বাস্তবায়ন করছে তাতে আগামী দু’তিন বছরের মধ্যে বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে সম্মানজনক জায়গায় থাকবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সাক্ষাৎকারটি পাঠকদের উদ্দেশে তুলে ধরা হলো—

যুগান্তর : কোয়াককোয়ারেলি সায়মন্ডসের (কিউএস) বিশ্ববিদ্যালয় র‌্যাংকিংয়ে বিশ্বসেরা ৮০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় এবারও স্থান হয়নি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি)। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার‌্য (শিক্ষা) হিসেবে আপনার কাছে এর কারণ কী বলে আপনি মনে করেন?

অধ্যাপক মাকসুদ কামাল : শিক্ষার গুণ ও মান নির্নয়ের জন্য কতগুলো সূচকের উপর ভিত্তি করে বিশ্বব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের র‌্যাংকিং নিরূপণ করা হয়। এর মধ্যে কিউএস বা টাইমস হায়ার এডুকেশন এই দুইটি র‌্যাংকিং প্রক্রিয়া অন্যতম। যদিও র‌্যাংকিং বাণিজ্যিক ধারণাপ্রসূত কিন্তু গ্লোবালাইজেশনের এ যুগে র‌্যাংকিং এড়িয়ে চলাও সম্ভব নয়। যে সূচকগুলোর মাধ্যমে র‌্যাংকিং নিরূপণ করা হয়, তার অনেকগুলো সূচক অনুসরণ করা আমাদের পক্ষে সমসাময়িককালে প্রায় অসম্ভব। এ জন্য অনেক পূর্বেই বিশ্ববিদ্যালয় পর‌্যায় থেকে পরিকল্পনা নেওয়া প্রয়োজন ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষকে সামনে রেখে আমরা ইতোমধ্যে বেশ কিছু পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি, যার কোন কোনটি বাস্তবায়ন ও হচ্ছে।

পৃথিবীতে রিসার্চ ইনটেনসিভ যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আছে সেগুলো বৈশ্বিক র‌্যাংকিংয়ে এগিয়ে আছে। আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রিসার্চ ইনটেনসিভ বিশ্ববিদ্যালয় না। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সাধারণত আমরা সার্টিফিকেট প্রোভাইডিং ইউনিভার্সিটি হিসেবে গড়ে তুলেছি। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে পাশ করে স্বতন্ত্রভাবে কিছু একটা করবে, সেভাবে তাদের গড়ে না তুলে তাদেরকে সাধারন চাকরির জন্য আমরা তৈরি করছি। গবেষণা, উদ্ভাবন অথাৎ স্বতন্ত্রভাবে শিক্ষকশিক্ষার্থীদের জ্ঞানচর্চার জন্য যে সামগ্রিক পরিবেশ তথা একাডেমিক ও রিসার্চ অবকাঠামো দরকার – এ ধরনের শূন্যতা আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর রয়েছে। এ ধরনের পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় থেকে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন কিংবা সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ দেওয়ার প্রয়োজন ছিল। এসবের অভাবে র‌্যাংকিংয়ের সূচকগুলোতে আমরা বর্তমানে পিছিয়ে আছি।

যুগান্তর : বিশ্ববিদ্যালয় র‌্যাংকিং করার ক্ষেত্রে কোন কোন সূচক মানদণ্ড হিসেবে ধরা হয়?

মাকসুদ কামাল : বিশ্ববিদ্যালয়গুলো র‌্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি সূচক রয়েছে। কিউএস র‌্যাংকিং এ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক সুনাম, প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের চাকুরীর বাজারে সুনাম (এমপ্লয়ার রেপুটেশন), শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত, শিক্ষক প্রতি সাইটেশন, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর অনুপাত, আন্তর্জাতিক শিক্ষকের অনুপাত, ইত্যাদি সূচকের উপর ভিত্তি করে ১০০ নাম্বারের উপর একটি মূল্যায়ন করা হয়। জ্ঞানের আদান-প্রদানে একটি বিশ্ববিদ্যালয় নিজ দেশ ও বিশ্বব্যাপী কতটুকু পরিচিত; শিক্ষাব্যবস্থা মানসম্মত ও যুযোপযোগী কিনা মৌলিক, ও প্রায়োগিক গবেষণার ব্যবহার ও ব্যাপ্তি কেমন, সূচকগুলোর সঙ্গে এইসব উপাদান জড়িত।

আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা আমরা নিজ দেশ ও আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা অনুযায়ী গড়ে তুলতে পারি নাই। ইন্ডাস্ট্রি -বিশ্ববিদ্যালয়ের সমঝোতা ও পারস্পরিক গবেষণা নাই বললেই চলে। পৃথিবীর উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কার্যকর গবেষণা ও এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম নেই। কিউএস র‌্যাংকিংয়ে একাডেমিক সুনাম সূচকে যে ৪০ নম্বর আছে তাতে আমাদের স্কোর অনেক কম হয়। সাইটেশন ও এমপ্লয়ার রেপুটেশনেও আমরা অনেক পিছিয়ে। উল্লেখিত বাকী তিনটি সূচকে ও আমাদের অবস্থান বেশ কম। অন্যদিকে ওয়ার্ল্ড ইউনির্ভাসিটি র‌্যাঙকিং – এ টিচিং ইনভায়রনমেন্ট, গবেষণা ও গবেষণার ব্যবহার ও প্রভাব ইত্যাদি মুখ্য সূচক হিসাবে ব্যবহার হয়। কিউএস র‌্যাংকিং এবং ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‌্যাংকিং দুইটিতে আমাদের অবস্থান দুর্বল। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার দর্শন যেহেতু ওয়েলফেয়ার দেশগুলোর মত, তাই লেখাপড়ায় সব আগ্রহীকে রাষ্ট্র অনেকটা বিনামূল্যে শিক্ষার সুযোগ দিতে গিয়ে উচ্চশিক্ষার আনুভূমিক ব্যাপক প্রসার ঘটিয়েছে। মান এতদিন তেমন বিবেচ্য ছিল না। এখন সময় এসেছে মান উন্নয়নের।

ঢাবিতে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া কতটা স্বচ্ছ?

মাকসুদ কামাল : শিক্ষক নিয়োগ ও শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে আমরা কিছুটা এগিয়ে আছি। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মধ্য দিয়ে দেশের সেরাদের সেরা শিক্ষার্থীরা এখানে ভর্তি হচ্ছে। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। মেধাবীদের মধ্যে মেধাবী, একাডেমিক ফল যাদের সর্বোচ্চ বা কাছাকাছি, যাদের গবেষণার অভিজ্ঞতা আছে, উপস্থাপনা কনভিনসিং তাদেরকে শিক্ষক হিসেবে এখন নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। প্রতিযোগিতায় শিক্ষামানচিত্রে মানসম্মত অবস্থাপন যদি আমাদের নিশ্চিত করতে হয়, তবে শিক্ষক নিয়োগের ও প্রমোশনের পরিবর্তন আনা এখন সময়ের দাবি। পিএইডি বা সমমানের উচ্চতর ডিগ্রী ব্যতীত পৃথিবীর অনেক দেশে এন্ট্রি তথা প্রভাষক পর্যায়ে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয় না। আমরা স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী সম্পাদনের পর প্রভাষক হিসাবে নিয়োগ প্রদান করি। মানসম্মত বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষকের পদ এখন আর নেই। পিএইচডি সম্পাদনের পর সহকারী অধ্যাপক হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। আমাদের পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে ও এমটি হয়ে আসছে। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ও যোগ্যতায় পরিবর্তনের প্রয়োজন রয়েছে। নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আনায়নের জন্য আমরা কিছু পরিবর্তন করেছি। পিএইচডি ব্যতীত সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি বা নিয়োগ দেওয়া হবে না, সম্প্রতি আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আরও ব্যাপক পরিবর্তন প্রয়োজন আছে। সে ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক, কারিগরি ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও স্বক্ষমতা বহুলাংশে বাড়াতে হবে। যেখানে মঞ্জুরী কমিশন ও মন্ত্রণালয়ের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা প্রয়োজন।

যুগান্তর : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে ক্লাস সাইজ অনেক বড়, যেখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মিথস্ক্রিয়া প্রায়ই হয় না বলে অভিযোগ।

মাকসুদ কামাল : আমি আসছি সে বিষয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় র‌্যাংকিংয়ের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক হচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত। সাধারণত প্রতি ১০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন শিক্ষক থাকাটাকেই আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ‘রুল অব থাম্প’ হিসেবে ধরা হয়। যেসব বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বৈশ্বিক র‌্যাংকিংয়ে এগিয়ে তাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত কোথাও ১: ৮, ১: ৭। এমনও বিশ্ববিদ্যালয় আছে যেখানে ৫ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন ফ্যাকাল্টি মেম্বার রয়েছে।

অথচ দেশের প্রাচীনতম এই বিদ্যাপীঠে গড়ে ২০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে ১ জন শিক্ষক রয়েছেন। এই ক্ষেত্রে আমরা তেমন নম্বর পাই না। র‌্যাংকিংয়ে পিছিয়ে পড়ার এটিও একটি কারণ। কিউএস র‌্যাংকিং এ শিক্ষক/শিক্ষার্থী অনুপাতে ২০% নম্বর রয়েছে, যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ২০২২ এর র‌্যাংকিং-এ পেয়েছে ২.৮%। প্রতি শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক সংখ্যা কম থাকার কারণে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মিথস্ক্রিয়া খুবই কম। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মিথস্ক্রিয়া আরাে বাড়ানোর লক্ষ্যে ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষে আমরা প্রথম বর্ষে ভর্তির ক্ষেত্রে ছাত্র সংখ্যা প্রায় ১০০০ কমিয়ে ৭০০০ থেকে ৬০০০ নামিয়ে এনেছি। এক্ষেত্রে আমরা বাজারে গ্র্যাজুয়েটদের প্রয়োজনীয়তা ও দেখছি। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) টিচিং লোড ক্যালকুলেশনের একটি প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এই কাজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমরা ইউজিসিকে সব ধরনের সহায়তা করছি। টিচিং লোড ক্যালকুলেশন কমিটির আমি একজন সদস্য। কমিটি একটা নীতিমালা করছে। সেখানে একজন শিক্ষক একটিভ টিচিং আওয়ারের পাশাপাশি গবেষণায়, লেকচার তৈরিতে, এ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কার‌্যক্রমে, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কনসালটেশনে কতটুকু সময় দেবেন এগুলো নির্ধারণ করা হয়েছে। ইউজিসি যে নীতিমালা করছে তাতে ১৩ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন শিক্ষক পাওয়া যাবে। এটি বাস্তবায়ন হলে র‌্যাংকিংয়ের এই সূচকেও আমরা আরাে ভালো করব, তবে এ সম্পর্কে আরাে সংস্কারের প্রয়োজন আছে।

যুগান্তর : র‌্যাংকিংয়ে আর কোন সূচকে ঢাবি পিছিয়ে?

মাকসুদ কামাল : র‌্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে আরেকটা বিষয় দেখা হয় সেটি হচ্ছে-সাইটেশন পার ফ্যাকাল্টি। অর্থাৎ জার্নালে কোনো প্রবন্ধ যদি প্রকাশিত হয় সেই প্রবন্ধ যখন অন্যরা রেফারেন্স হিসেবে উল্লেখ করে সেটাকে সাইটেশন বলা হয়। সাইটেশন সূচকের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ২০২২ এর র‌্যাংকিং-এ ২০ এর স্থলে পেয়েছে ২.৫। আন্তর্জাতিক ছাত্র এবং শিক্ষকের অনুপাতও সূচক হিসেবে দেখা হয়। এই দুইটি সূচকে কিউএস র‌্যাংকিং এ ১০% নাম্বার বরাদ্দ আছে, যেখানে আমাদের অবস্থান নাই বললেই চলে। আন্তর্জাতিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ বাড়ানোর জন্য উন্নত দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নানা ধরনের শিক্ষা কর্মসূচী, বৃত্তি ও ইনসেনটিভ দিয়ে থাকে। এ সব আমাদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। সম্প্রতি আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশী শিক্ষার্থীদের আকর্ষণের জন্য বঙ্গবন্ধু ওভারসিজ স্কলারশিপ প্রোগ্রাম এর আওতায় বৃত্তি প্রোগ্রাম চালুর ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছি। বঙ্গবন্ধু ওভারসিজ স্কলারশিপ আমাদের শিক্ষকদের জন্য ২০১৭ সাল থেকে পুনঃচালু হয়েছে, যা জোট সরকার ২০০৩ সালে বন্ধ করে দিয়েছিল। এই বৃত্তির আওতায় প্রায় ১৪০ জন তরুণ শিক্ষক উন্নত বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পিএইচডি বা সমমানের ডিগ্রি গ্রহণ করছেন। ওয়ার্ল্ড ইউনির্ভাসিটি ব্যাংকিং – এ উচ্চতর ডিগ্রীপ্রাপ্ত ফ্যাকাল্টি মেম্বারদের সংখ্যাও দেখা হয়। বিদেশী মানসম্মত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাংলাদেশী নাগরিক যারা উন্নত দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছে, তাঁদের দেশে এনে নির্দিষ্ট সময় শিক্ষকতা ও গবেষণার সুযোগ আমরা সৃষ্টি করেছি। ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাকাল্টির গবেষণা ও শিক্ষকতার সুযোগ অতীতে আমাদের ছিল না।

প্রকাশনা ও গবেষণার জন্য আপনারা কী কী উদ্যোগ নিয়েছেন।

মাকসুদ কামাল : শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গবেষণায় উদ্বুদ্ধ ও মনোযোগী করতে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষকে সামনে রেখে বেশ কিছু উদ্যোগ হাতে নিয়েছি। তার মধ্যে সেন্টেনারী রিসার্চ প্রজেক্ট একটি। শিক্ষকরা এখন প্রায় ৫০০ গবেষণা কাজ পরিচালনা করছেন। শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ও গবেষণা প্রকল্পে অন্তভূক্ত করা হয়েছে। শর্ত দেওয়া আছে যে, প্রত্যেক শিক্ষক তার গবেষণা কাজ থেকে ইনডেক্স/ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর জার্নালে অন্তত একটি প্রকাশনা বাধ্যতামূলক ভাবে করবেন। এতে করে দেখা যাচ্ছে, মানসম্মত প্রায় ৫০০ আটিকেল প্রকাশিত হবে। এসব প্রকাশনা ও গবেষণা সম্পন্ন হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিবিলিটি ও সাইটেশন বাড়বে। এতে র‌্যাংকিংয়েও দ্রুত উন্নতি হবে। গবেষণা একটি চলমান প্রক্রিয়া। একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে এই গবেষণা কাজগুলো চলছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার গবেষণায় ক্রমশ আর্থিক বরাদ্দ বাড়াচ্ছে। ইউজিসি ও সেই কাজে আমাদের সহযোগিতা করছে। আগে গবেষণা ও প্রকাশনাকে আমাদের এখানে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। এখন আমরা সেই উদ্যোগ নিয়েছি। এ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১টি জার্নালকে ডিজিটাল অবজেক্ট আইডেনটিফায়ার এর আওতায় আনা হয়েছে। লন্ডনের ক্রস রেপ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বাংলাদেশ একাডেমি অব সাইন্সের অধীন বাংলাজল নামে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। বাংলাজলের সঙ্গে যোগাযোগ করে ক্রস রেপের মাধ্যমে ওই ১১টি জার্নালকে ডিজিটাল অবজেক্ট আইডেনটিফায়ারের আওতায় আমরা এনেছি। এর ফলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত জার্নালের প্রবন্ধগুলোর সাইটশন বাড়বে। আমরা ভবিষৎতে কোন কোন জার্নালের উন্নত ইনিডেসিং ও ইমফ্যাক্ট ফ্যাক্টর অর্জনের চেষ্টা করব। জার্নাল গুলোকে মানসম্মত করার জন্য এডিটোরিয়াল বোর্ড এবং রিভিউ প্রক্রিয়ার গুণগত পরিবর্তন আনা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৬ টি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের মধ্যে ৪৬ টিতে মাস্টার্স পর‌্যায়ে অতীতে ডেডিকেট গবেষণা ভিত্তিক থিথিস ছিলনা। একাডেমিক কাউন্সিল থেকে আইন করে গতবছর থেকে আমরা মাস্টার্স পর‌্যায়ে প্রতি বিভাগ থেকে অন্তত ৩০% শিক্ষার্থীর গবেষণাভিত্তিক থিসিস করণ আমরা বাধ্যতামূলক করেছি। পৃথিবীর সকল দেশের মানসম্মত বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব সময়-নির্ধারিত ফান্ডেড পিএইচডি এবং মাস্টার্স প্রোগ্রাম রয়েছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি এবং মাস্টার্স প্রোগাম আছে বটে, কিন্তু মানসম্মত গবেষণার জন্য আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতার অভাব আছে। মানসম্মত সময়-নির্ধারিত পিএইচডি গবেষণার জন্য আমরা ফান্ডেড পিএইচডি চালু করতে যাচ্ছি। এই পিএইচডি গবেষণা থেকে ইমফ্যাক্ট ফ্যাক্টর সম্পন্ন জার্নালে প্রকাশনা করা বাধ্যতামূলক থাকবে। এ ভাবে গবেষণা ও প্রকাশনা বাড়ানোর জন্য নানাবিধ প্রস্তুতি হাতে নেওয়া হয়েছে। ইন্ডাস্ট্রি-ইউনিভার্সিটি এবং একাডেমিয়ার কোলাবোরেশন ও কোঅপারেশরেনর জোরদার করার জন্য কাজ আমরা শুরু করেছি। নভেম্বর মাসে আমরা প্রকাশনা-গবেষণা মেলা করতে যাচ্ছি, যেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০ বছরের ইতিহাসে প্রথম। এই মেলায় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত জার্নাল ও বই পুস্তক প্রদর্শিত হবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যে সকল গ্রাউন্ড ব্রেকিং পাবলিকেশন আছে, সেগুলো মেলায় দেখানো হবে। দেশ-বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান সমূহকে মেলায় আমন্ত্রণ করা হবে। সর্বোপরি শতবর্ষী এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা চিত্র আমরা তুলে ধরতে চাই, যাতে দেশ ও বিদেশের প্রতিষ্ঠানের সাথে গবেষণা ও এক্সসেইন্স কার‌্যক্রম বাড়ে। এভাবে র‌্যাংকিংয়ে ভালো করার ক্ষেত্রে আমাদের যেসব দুর্বলতা অতীতে ছিল সেগুলো কাটিয়ে উঠতে আমরা কার‌্যক্রম হাতে নিয়েছি। সা¤প্রতিক কালে আমাদের নেওয়া উদ্যোগ গুলোর ফলাফল নিকট ভবিষৎতে পাওয়া যাবে।

দ্যোগ গুলোর ফলাফল নিকট ভবিষৎতে পাওয়া যাবে।

যুগান্তর : ঢাবিতে আগে বিদেশ থেকে অনেকে পড়তে আসত। এখন। তাদের চোখে পড়ে না। কারণ কী?

মাকসুদ কামাল : আমি সে বিষয়ে আসছি। র‌্যাংকিংয়ে আরেকটি বিষয় হচ্ছে-বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশী শিক্ষার্থী কতজন আছেন। অতীতে নেপাল, ভারত, মালয়েশিয়া, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও আরব দেশ থেকে বহু শিক্ষার্থী আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসতো। উচ্চশিক্ষার মান ও যুগােপযোগী কার‌্যক্রম হাতে নিয়ে এশিয়ার বহুদেশ এগিয়ে গেছে, কিন্তু আমরা পিছিয়ে পড়েছি। উল্লেখিত সূচকগুলোতে পিছিয়ে পড়ার কারণে বিদেশী শিক্ষার্থীরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসেন না। যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েটেড হবে, শিক্ষার্থীদের সাধারণত দেখে ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল আউটলুক কেমন। আউটলুক বলতে, গবেষণা, টিচিং, কোলাবোরেশন, ন্যাশনাল ও ইন্টারন্যাশনাল স্টাফের অনুপাত, ইত্যাদি বুঝায়। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা এসব দেখে বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে পড়তে আসেন। আমাদের এসবের অভাবহেতু বিদেশী শিক্ষার্থীদের সংখ্যা এখন খুবই কম। কিউএস র‌্যাংকিং – এ আন্তর্জাতিক ছাত্রের অনুপাতে আমরা ৫% নাম্বারের স্থলে পেয়েছি ০.০৫৫%।

ঢাবি বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌছতে কত সময় লাগবে বলে আপনি মনে করেন?

মাকসুদ কামাল : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শতবর্ষকে সামনে রেখে একাডেমিক সংস্কার কাজ হাতে নিয়েছে। সে সব বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে; আমি বিশ্বাস করি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে র‌্যাংকিংয়ে একটি সম্মানজনক জায়গায় নিজেকে উন্নীত করতে পারবে। কোন কোন অনুষদ ভিত্তিক র‌্যাংকিংয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে সম্মানজনক অবস্থানে আছে।

বিশ্বের সব বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক প্লান থাকে? ঢাবির নেই কেন?

মাকসুদ কামাল : শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, আমাদের দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়েই সঠিক একাডেমিক প্লান নেই। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি। কমিশন এখন পর্যন্ত সঠিক একাডেমিক পরিকল্পনা কী হবে সেটি উপস্থাপন করতে পারেননি। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এখন সেই পরিকল্পনাটা করতে যাচ্ছি। একাডেমিক প্লান তৈরি করার জন্য জ্যেষ্ঠ ও প্রথিতযশা শিক্ষকদের সমন্বয়ে সম্প্রতি একটি কমিটি করা হয়েছে। সেই কমিটি তিন মাসের মধ্যেই আমাদেরকে একটা পরিকল্পনা দেবে। সেই পরিকল্পনা মোতাবেক আগামী ৫ কিংবা ১০ বছরের জন্য বাস্তবতার আলোকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ভিন্ন একাডেমিক উচ্চতায় উন্নীত করতে একটি রোডম্যাপ ঠিক করা হবে। এক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সহযোগিতার প্রয়োজন আছে। অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন নানবিধ সহযোগিতা প্রদানের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।