সাবেক স্বামীর মানসিক নির্যাতনে স্ত্রীর আত্মহত্যা
- আপডেট টাইম : ০৮:২২:৪০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ জুন ২০২২
- / ২১৩ ৫০০০.০ বার পাঠক
রাজধানীর দক্ষিণখানে সাবেক স্বামীর মানসিক নির্যাতনের অভিযোগে সুরাইয়া আক্তার সম্পা (৩৫) নামের এক নারী আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ স্বজনদের। তাঁদের দাবি, সম্পদের লোভে সাবেক স্বামী জাহাঙ্গীর আলম বাবু সব সময় মানসিক নির্যাতন করতেন। যার কারণেই তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে দক্ষিণখানের প্রেম বাগান এলাকার কেসি স্কুলের পাশের এ ঘটনা ঘটে।
মৃত সম্পা প্রেম বাগানার এলাকার মৃত শওকত আলী ওরফে সুন্দর আলীর মেয়ে। একই এলাকার জাহাঙ্গীর বাবুর সঙ্গে তাঁর ১৬ বছর পূর্বে বিয়ে হয়। তাঁদের সংসারে দুই সন্তানও রয়েছে। কিন্তু বাবুর সঙ্গে সম্পার গত ৩ মাস ৭ দিন পূর্বে বিবাহবিচ্ছেদ হয়। নিজ বাড়ির টয়লেটের ভেন্টিলেটরের লোহার সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় সম্পাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করেন ভাড়াটিয়া মো. তৈয়বসহ অন্যরা। তৈয়ব আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুপুরে নামাজ পড়ার সময় কাজের লোক বৃষ্টির মা আমায় ডেকে বলে, সম্পা আপা বাথরুমে ঢুকেছে, কিন্তু অনেকক্ষণ হলো দরজা খুলে না। পরে ডাকাডাকি করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। পরে বটি দিয়ে দরজা কেটে ভেঙে ফেলা হয়। পরে দেখি তাঁর মরদেহের গলার হিজাব দিয়ে টয়লেটের জানালার রডের সঙ্গে ঝুলছিল।’
তিনি বলেন, ‘ওই সময় টয়লেটেই তাঁর মোবাইল পরে ছিল। তখন আমি ছুরি দিয়ে হিজাব কেটে তাঁকে টয়লেট থেকে বের করে বিছানায় শোয়াই। কিন্তু পরে আশপাশের নারীরা তেল মালিশ করে এবং আমরা অ্যাম্বুলেন্স ডেকে হাসপাতালে নিয়ে আসি। হাসপাতালে আসার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’
মৃত নারীর স্বজনেরা জানান, দক্ষিণখানের প্রেম বাগান এলাকায় নানির বাড়িতে বেড়ে উঠে জাহাঙ্গীর আলম বাবু। সেই সুবাদে সম্পার সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে ১৬ বছর পূর্বে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হোন। বিয়ের পর থেকে বাবু ঘরজামাই ছিলেন।
ওই নারীর চাচাতো ভাই মো. আমানুল্লাহ জানান, সম্পা তাঁর ছেলেকে নিয়ে উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরের আগা খা স্কুলে গিয়েছিলেন। সেখান থেকেই বাসায় ফিরে টয়লেটে গিয়ে আত্মহত্যা করেন।
আমানুল্লাহ অভিযোগ করে বলেন, ‘স্কুলে যাওয়ার পর পরই বাবু সঙ্গে সম্পার কিছু হয়েছে। যার কারণে বাসায় এসে আত্মহত্যা করেছে। বাবু রাস্তায় প্রায়ই উত্তপ্ত করতে বলে অভিযোগ উঠেছে । এ নিয়ে বাবুকে (সোমবার) নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু তবুও কোনো কিছুই মানত না।’
মৃত নারীর চাচাতো ভাই ইব্রাহিম আলী জানান, ‘সম্পা পৈত্রিকভাবেই স্বাবলম্বী ছিল। মাস শেষে বাড়ি ভাড়াই আসত প্রায় দেড় লাখ টাকা। এই সম্পদ বাবুকে লিখে দেওয়ার জন্য বিয়ের পর থেকেই সম্পাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করত, যার ফলে তাদের মধ্যে গত ৩ মাস ৭ দিন পূর্বে ছাড়াছাড়িও হয়ে যায়। ডিভোর্সের পরও রাস্তা ঘাটে, স্কুলে গিয়েও বাবু ও তাঁর খালাতো ভাই এপিবিএন এর এস,আই নাসির সম্পাকে নানাভাবে উত্ত্যক্ত এবং বিরক্ত করত। এ নিয়ে আমরা বারবার বাবুকে নিষেধ করেছি। কিন্তু বাবু কোনো কিছুতেই শুনতো না। বাবুর কারণেই সম্পা আত্মহত্যা করেছে।’
এ বিষয়ে দক্ষিণখান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোসাম্মৎ রেজিয়া খাতুন বলেন, মৃতের সুরতহাল প্রতিবেদনে শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। শুধু মাত্র গলায় ইউ আকৃতির ফাঁসির দাগ রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ির কারণে মানসিক বিষণ্নতার কারণে আত্মহত্যা করেছেন।
এস,আই আরও বলেন, এ ঘটনায় মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হবে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।