ঢাকা ০৮:৪৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪
সংবাদ শিরোনাম ::
নাহিদসহ তিন জন সমন্বয়ককে হাসপাতাল থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে আহতদের দেখতে ঢামেক হাসপাতালে প্রধানমন্ত্রী কোটা সংস্কার সিলেট: ১৮-২৩ জুলাইয়ের ঘটনাপ্রবাহ রক্তাক্ত জুলাই থেকে কি কোনো শিক্ষা হবে? সব দল নিয়ে জাতীয় ঐক্যের মাঠে নামছেন বিএনপি শিক্ষার্থীদের আমি রাজাকার বলিনি, বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরবে দেশের মানুষ: নৌবাহিনী প্রধান মেট্রোরেল স্টেশনের ধ্বংসলীলা দেখে কাঁদলেন প্রধানমন্ত্রী রুশ এমআই-২৮ সামরিক হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত মস্কোর দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত কালুগা অঞ্চলে আজ বৃহস্পতিবার হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয় কে হামলা চালাবে—বিএনপির নীল নকশা আগেই প্রস্তুত ছিল: কাদের

টুইন টাওযারে স্বামী হারানোর পর নিউইয়র্কে নিঃশ্বাস নিতে পারছিলেননা বারাহীন

  • আপডেট টাইম : ০৯:২৯:৪৮ পূর্বাহ্ণ, শনিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • / ২০৬ ৫০০.০০০ বার পাঠক

বিশ বছর আগে ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৯টার দিকে, টুইন টাওয়ারে এক নজীরবিহীন সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হয়েছিলেন প্রায় তিন হাজার মানুষ। এদের মধ্যে ১৫ জন ছিলেন বাংলাদেশী-বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক। তাদেরই একজন ছিলেন ৩৮-বছর বয়সী মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন চৌধুরী। কাজ করতেন তিনি টুইন টাওয়ারের একটি টাওয়ার ভবনে অবস্থিত ‘উইন্ডোজ অন দ্য ওয়ার্ল্ড’ নামের এক নামী রেস্তোরাঁয়। ওই সন্ত্রাসী হামলায় রেস্তোরাঁর আরও ৮৮জন সহকর্মীর সঙ্গে প্রাণ হারিয়েছিলেন মি. চৌধুরী।যাত্রীবাহী বিমান ব্যবহার করে টুইন টাওয়ারে চালানো সন্ত্রাসী হামলাকে আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলার ঘটনাগুলোর একটি বলে মনে করা হয়। ওই ঘটনার পর পুরো পৃথিবীর রাজনীতি এবং চিন্তা-ভাবনাই বদলে গিয়েছিল।

আর সেই সঙ্গে বদলে গিয়েছিল স্বজন হারানো বহু মানুষের জীবন, বহু পরিবারের জীবনধারা।

সা্লাহউদ্দিন চৌধুরীকে হারানোর কষ্ট স্ত্রী বারাহীন আশরাফী গত বিশ বছর ধরে অনেকটা একাই বয়ে বেড়াচ্ছেন – গণমাধ্যম এড়িয়েই চলছিলেন তিনি, তবে কথা বলেছেন বিবিসি বাংলার সঙ্গে। স্বামী হারানোর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সন্তান জন্ম দেয়া, মুসলিম পরিচয়ের কারণে বিদ্বেষের শিকার হওয়া, সন্তান পালনের জন্য তুলনামূলক কম ব্যস্ত একটি রাজ্যে স্থানান্তরিত হওয়া – গত দুই দশকে এমন নানা জটিলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে তাকে।

মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন চৌধুরী কে ছিলেন?

টুইন টাওয়ারের একটি টাওয়ারের ছিল ‘উইন্ডোজ অন দ্য ওয়ার্ল্ড’ রেস্তোরাঁ। সেখানে কাজ করতেন মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন চৌধুরী। যে ভবনটিতে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ছিল, সেই ভবনের ১০৬ ও ১০৭ তলা জুড়ে ছিল রেস্তোরাঁটি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাস করে ১৯৮৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন তিনি।

সেখানে গিয়ে সালাহউদ্দিন চৌধুরী কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশুনা করেন। শুরুতে বাল্টিমোরে পড়াশোনা এবং পরে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে চাকরির অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি নিউইয়র্কে চলে যান। এরপর এক সময় ‘উইন্ডোজ অন দ্য ওয়ার্ল্ড’ রেস্তোরাঁয় ওয়েটার হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। শহরের কুইন্স এলাকার বাড়িতে স্ত্রী বারাহীন আশরাফী আর পাঁচ বছর বয়েসী কন্যাকে নিয়ে ছিল তার সংসার। সেপ্টেম্বরের ওই সময়টায় প্রায় সাড়ে নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন বারাহীন।

যেভাবে ঘটনা ঘটেছিল সেদিন :

১১ই সেপ্টেম্বরের সন্ধ্যায় বারাহীনের ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল। সন্তান জন্মের আগে ফাইনাল চেকআপ। সে কারণে সালাহউদ্দিন চৌধুরী সেদিন আরেকজন সহকর্মীর সাথে শিফট বদলে সকালের নিয়েছিলেন। ঠিক সময়ে যাতে কাজে পৌঁছুতে পারেন, সেজন্য ঘড়িতে অ্যালার্ম দিয়ে রেখেছিলেন।

বারাহীন আশরাফীর মনে আছে, কুইন্সের বাড়িতে ভোররাত সাড়ে চারটার দিকে অ্যালার্ম ঘড়ির শব্দে স্বামী-স্ত্রী দুইজনেরই ঘুম ভেঙেছিল। উঠে স্ত্রীকে নিয়ে ফজর নামাজ পড়েন মি. চৌধুরী।এরপর দ্রুত হালকা নাস্তা করে তড়িঘড়ি তৈরি হয়ে নেন। বাড়ি থেকে বেরুনোর আগে স্ত্রী আর পাঁচ বছর বয়েসী কন্যার কপালে চুমু খেয়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন সালাহউদ্দিন চৌধুরী। আর বাড়িতেই সংসারের খুঁটিনাটি কাজ সেরে নিচ্ছিলেন বারাহীন। সকাল পৌনে দশটা নাগাদ তার বোন প্রথম ফোন করে টুইন টাওয়ারে হামলার খবর দেন তাকে।

“আমার বোন জিজ্ঞেস করলো দুলাভাই কোথায়? আমি বললাম কাজে গেছে। আমার বোন খুবই উত্তেজিত গলায় বললো, তুমি টিভি খোল, টুইন টাওয়ারে হামলা হয়েছে।

“আমি তখনও মাথার ভেতর প্রসেস করতে পারছিলাম না খবরটা। ও তো কাজ করে ১০৬ তলায়। হামলায় বিল্ডিংয়ের লিফট নিশ্চয়ই বিকল হয়ে গিয়েছে। আমি কেবলই মনে হচ্ছিল ও অত উঁচু থেকে নামবে কিভাবে!

সেদিনের কথা যখন স্মরণ করছিলেন বারাহীন, তখন পুরো সময়টা ধরেই কাঁদছিলেন তিনি। টুইন টাওয়ার ধসে পড়া, আর স্বামীর খোঁজ শুরু — এই ঘটনাগুলোর বর্ণনা দেয়ার সময় মনে হচ্ছিল তিনি যেন সেই দিনটিতেই ফিরে গেছেন। কিছুক্ষণ পরপরই তার কান্নাভেজা গলা কেঁপে কেঁপে উঠছিল। বারাহীনের বয়স তখন ২৯ বছর।

“টিভি খুলে চ্যানেলের পর চ্যানেল ঘুরছিলাম সর্বশেষ খবরের জন্য। ওর (মি. চৌধুরী) পেজার ছিল, সেখানে মেসেজ দিলাম – অনেকগুলো। কিন্তু কোন উত্তর আসে না।”

আর কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না তিনি।

“আমার দুনিয়া অন্ধকার হয়ে গেছে তখন।”

অল্প সময়ের মধ্যে বারাহীনের রক্তচাপ অনেক বেড়ে গেলে তাকে নেয়া হলো ফ্লাশিং হসপিটাল মেডিক্যাল সেন্টারে। ১৩ই সেপ্টেম্বর একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দিলেন তিনি।

টুইন টাওয়ার হামলায় মারা গেছেন, এমন ১০০ জনের বেশি ব্যক্তির স্ত্রী সে সময় অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। কখনও বাবাকে দেখতে না পাওয়া এই শিশুদের ‘নাইন-ইলেভেন বেবিস’ বলা হয় দেশটিতে। বারাহীনের পুত্র সন্তানটি ওই ঘটনার পর জন্ম নেয়া শিশুদের প্রথম কয়েক জনের মধ্যে একজন।

“আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলাম না যে আমার সন্তান তার বাবাকে দেখতে পাবে না কোনদিন। আমার বিশ্বাসও হচ্ছিল না আমার স্বামী মারা গেছে,” ছেলের জন্মের কথা স্মরণ করছিলেন বারাহীন।

“হাসপাতালে যখন আমাকে আমার ছেলের মুখ দেখানো হয়, আমি মনে পড়ছিল আমার স্বামী অনেক অপেক্ষা করে ছিলেন এই সন্তানটির জন্য। ও বলেছিল ‘আমাদের এবার ছেলেই হবে’।”

হিজাব, মুসলমান পরিচয়, রাস্তায় গালিগালাজ :

মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন চৌধুরী নিয়মিত নামাজ পড়তেন। তার সাথে সাথে বারাহীনও। তবে তিনি হিজাব পরতেন না। কিন্তু ৯/১১-এর পর, স্বামী যা যা পছন্দ করতেন, তাই করতে শুরু করেন বারাহীন। স্বামীর মৃত্যুর এক মাসের মধ্যেই তিনি হিজাব পরতে শুরু করেন।

আমেরিকা জুড়ে অবশ্য তখন ভিন্ন রকম পরিস্থিতি। ওই হামলার পর থেকে মুসলমান হলেই তাকে সন্দেহের চোখে দেখতো অনেকে, এমনকি অনেক বছরের চেনা প্রতিবেশীরাও, বলছিলেন বারাহীন।

“মুখে হয়তো কেউ কিছু বলছে না, কিন্তু টের পাওয়া যেত।”

একদিনের ঘটনা স্মরণ করেন তিনি। “নাইন-ইলেভেনের কয়েক মাস পরের ঘটনা। আমি একদিন আমার বাচ্চাদের নিয়ে বিকেলে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলাম, পথে হঠাৎ কয়েকজন তরুণ আমার হিজাব দেখে উত্তেজিতভাবে গালিগালাজ করতে শুরু করে।”

আরো খবর.......

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

টুইন টাওযারে স্বামী হারানোর পর নিউইয়র্কে নিঃশ্বাস নিতে পারছিলেননা বারাহীন

আপডেট টাইম : ০৯:২৯:৪৮ পূর্বাহ্ণ, শনিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১

বিশ বছর আগে ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৯টার দিকে, টুইন টাওয়ারে এক নজীরবিহীন সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হয়েছিলেন প্রায় তিন হাজার মানুষ। এদের মধ্যে ১৫ জন ছিলেন বাংলাদেশী-বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক। তাদেরই একজন ছিলেন ৩৮-বছর বয়সী মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন চৌধুরী। কাজ করতেন তিনি টুইন টাওয়ারের একটি টাওয়ার ভবনে অবস্থিত ‘উইন্ডোজ অন দ্য ওয়ার্ল্ড’ নামের এক নামী রেস্তোরাঁয়। ওই সন্ত্রাসী হামলায় রেস্তোরাঁর আরও ৮৮জন সহকর্মীর সঙ্গে প্রাণ হারিয়েছিলেন মি. চৌধুরী।যাত্রীবাহী বিমান ব্যবহার করে টুইন টাওয়ারে চালানো সন্ত্রাসী হামলাকে আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলার ঘটনাগুলোর একটি বলে মনে করা হয়। ওই ঘটনার পর পুরো পৃথিবীর রাজনীতি এবং চিন্তা-ভাবনাই বদলে গিয়েছিল।

আর সেই সঙ্গে বদলে গিয়েছিল স্বজন হারানো বহু মানুষের জীবন, বহু পরিবারের জীবনধারা।

সা্লাহউদ্দিন চৌধুরীকে হারানোর কষ্ট স্ত্রী বারাহীন আশরাফী গত বিশ বছর ধরে অনেকটা একাই বয়ে বেড়াচ্ছেন – গণমাধ্যম এড়িয়েই চলছিলেন তিনি, তবে কথা বলেছেন বিবিসি বাংলার সঙ্গে। স্বামী হারানোর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সন্তান জন্ম দেয়া, মুসলিম পরিচয়ের কারণে বিদ্বেষের শিকার হওয়া, সন্তান পালনের জন্য তুলনামূলক কম ব্যস্ত একটি রাজ্যে স্থানান্তরিত হওয়া – গত দুই দশকে এমন নানা জটিলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে তাকে।

মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন চৌধুরী কে ছিলেন?

টুইন টাওয়ারের একটি টাওয়ারের ছিল ‘উইন্ডোজ অন দ্য ওয়ার্ল্ড’ রেস্তোরাঁ। সেখানে কাজ করতেন মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন চৌধুরী। যে ভবনটিতে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ছিল, সেই ভবনের ১০৬ ও ১০৭ তলা জুড়ে ছিল রেস্তোরাঁটি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাস করে ১৯৮৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন তিনি।

সেখানে গিয়ে সালাহউদ্দিন চৌধুরী কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশুনা করেন। শুরুতে বাল্টিমোরে পড়াশোনা এবং পরে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে চাকরির অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি নিউইয়র্কে চলে যান। এরপর এক সময় ‘উইন্ডোজ অন দ্য ওয়ার্ল্ড’ রেস্তোরাঁয় ওয়েটার হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। শহরের কুইন্স এলাকার বাড়িতে স্ত্রী বারাহীন আশরাফী আর পাঁচ বছর বয়েসী কন্যাকে নিয়ে ছিল তার সংসার। সেপ্টেম্বরের ওই সময়টায় প্রায় সাড়ে নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন বারাহীন।

যেভাবে ঘটনা ঘটেছিল সেদিন :

১১ই সেপ্টেম্বরের সন্ধ্যায় বারাহীনের ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল। সন্তান জন্মের আগে ফাইনাল চেকআপ। সে কারণে সালাহউদ্দিন চৌধুরী সেদিন আরেকজন সহকর্মীর সাথে শিফট বদলে সকালের নিয়েছিলেন। ঠিক সময়ে যাতে কাজে পৌঁছুতে পারেন, সেজন্য ঘড়িতে অ্যালার্ম দিয়ে রেখেছিলেন।

বারাহীন আশরাফীর মনে আছে, কুইন্সের বাড়িতে ভোররাত সাড়ে চারটার দিকে অ্যালার্ম ঘড়ির শব্দে স্বামী-স্ত্রী দুইজনেরই ঘুম ভেঙেছিল। উঠে স্ত্রীকে নিয়ে ফজর নামাজ পড়েন মি. চৌধুরী।এরপর দ্রুত হালকা নাস্তা করে তড়িঘড়ি তৈরি হয়ে নেন। বাড়ি থেকে বেরুনোর আগে স্ত্রী আর পাঁচ বছর বয়েসী কন্যার কপালে চুমু খেয়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন সালাহউদ্দিন চৌধুরী। আর বাড়িতেই সংসারের খুঁটিনাটি কাজ সেরে নিচ্ছিলেন বারাহীন। সকাল পৌনে দশটা নাগাদ তার বোন প্রথম ফোন করে টুইন টাওয়ারে হামলার খবর দেন তাকে।

“আমার বোন জিজ্ঞেস করলো দুলাভাই কোথায়? আমি বললাম কাজে গেছে। আমার বোন খুবই উত্তেজিত গলায় বললো, তুমি টিভি খোল, টুইন টাওয়ারে হামলা হয়েছে।

“আমি তখনও মাথার ভেতর প্রসেস করতে পারছিলাম না খবরটা। ও তো কাজ করে ১০৬ তলায়। হামলায় বিল্ডিংয়ের লিফট নিশ্চয়ই বিকল হয়ে গিয়েছে। আমি কেবলই মনে হচ্ছিল ও অত উঁচু থেকে নামবে কিভাবে!

সেদিনের কথা যখন স্মরণ করছিলেন বারাহীন, তখন পুরো সময়টা ধরেই কাঁদছিলেন তিনি। টুইন টাওয়ার ধসে পড়া, আর স্বামীর খোঁজ শুরু — এই ঘটনাগুলোর বর্ণনা দেয়ার সময় মনে হচ্ছিল তিনি যেন সেই দিনটিতেই ফিরে গেছেন। কিছুক্ষণ পরপরই তার কান্নাভেজা গলা কেঁপে কেঁপে উঠছিল। বারাহীনের বয়স তখন ২৯ বছর।

“টিভি খুলে চ্যানেলের পর চ্যানেল ঘুরছিলাম সর্বশেষ খবরের জন্য। ওর (মি. চৌধুরী) পেজার ছিল, সেখানে মেসেজ দিলাম – অনেকগুলো। কিন্তু কোন উত্তর আসে না।”

আর কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না তিনি।

“আমার দুনিয়া অন্ধকার হয়ে গেছে তখন।”

অল্প সময়ের মধ্যে বারাহীনের রক্তচাপ অনেক বেড়ে গেলে তাকে নেয়া হলো ফ্লাশিং হসপিটাল মেডিক্যাল সেন্টারে। ১৩ই সেপ্টেম্বর একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দিলেন তিনি।

টুইন টাওয়ার হামলায় মারা গেছেন, এমন ১০০ জনের বেশি ব্যক্তির স্ত্রী সে সময় অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। কখনও বাবাকে দেখতে না পাওয়া এই শিশুদের ‘নাইন-ইলেভেন বেবিস’ বলা হয় দেশটিতে। বারাহীনের পুত্র সন্তানটি ওই ঘটনার পর জন্ম নেয়া শিশুদের প্রথম কয়েক জনের মধ্যে একজন।

“আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলাম না যে আমার সন্তান তার বাবাকে দেখতে পাবে না কোনদিন। আমার বিশ্বাসও হচ্ছিল না আমার স্বামী মারা গেছে,” ছেলের জন্মের কথা স্মরণ করছিলেন বারাহীন।

“হাসপাতালে যখন আমাকে আমার ছেলের মুখ দেখানো হয়, আমি মনে পড়ছিল আমার স্বামী অনেক অপেক্ষা করে ছিলেন এই সন্তানটির জন্য। ও বলেছিল ‘আমাদের এবার ছেলেই হবে’।”

হিজাব, মুসলমান পরিচয়, রাস্তায় গালিগালাজ :

মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন চৌধুরী নিয়মিত নামাজ পড়তেন। তার সাথে সাথে বারাহীনও। তবে তিনি হিজাব পরতেন না। কিন্তু ৯/১১-এর পর, স্বামী যা যা পছন্দ করতেন, তাই করতে শুরু করেন বারাহীন। স্বামীর মৃত্যুর এক মাসের মধ্যেই তিনি হিজাব পরতে শুরু করেন।

আমেরিকা জুড়ে অবশ্য তখন ভিন্ন রকম পরিস্থিতি। ওই হামলার পর থেকে মুসলমান হলেই তাকে সন্দেহের চোখে দেখতো অনেকে, এমনকি অনেক বছরের চেনা প্রতিবেশীরাও, বলছিলেন বারাহীন।

“মুখে হয়তো কেউ কিছু বলছে না, কিন্তু টের পাওয়া যেত।”

একদিনের ঘটনা স্মরণ করেন তিনি। “নাইন-ইলেভেনের কয়েক মাস পরের ঘটনা। আমি একদিন আমার বাচ্চাদের নিয়ে বিকেলে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলাম, পথে হঠাৎ কয়েকজন তরুণ আমার হিজাব দেখে উত্তেজিতভাবে গালিগালাজ করতে শুরু করে।”