ঢাকা ০৬:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
সংবাদ শিরোনাম ::
ময়মনসিংহে আন্তর্জাতিক শব্দদূষণ দিবস উদযাপিত উজিরপুরে সাব রেজিষ্টার মোঃ ইমরান খান এর বিদায় উপলক্ষে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত রায়পুরে আলোচনায় চেয়ারম্যান প্রার্থী অধ্যক্ষ মামুনুর রশিদ জামালপুরে বিনা খেসারি-১ এর চাষের উজ্জল সম্ভাবনা ব্যাংককের উদ্দেশে বাংলাদেশ ছেড়েছেন প্রধানমন্ত্রী মনোহরদী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হলেন এড.মো. মাসউদ তারাকান্দা উপজেলায় ছেঁড়া ১০টাকা নিয়ে সংঘর্ষে ছেলে নিহত-বাবা সংকটাপন্ন কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী তিনজন পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান একজন মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া থানা পুলিশের অভিযানে ৪১ পিছ ইয়াবা ট্যাবলেট সহ ১আসামী গ্রেফতার নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৫ জনসহ ১২ জন প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ

কে একজন সন্তোষ হইতে মাইল দুই পশ্চিমে ধলেশ্বরী নদীর ঘাটে আসিয়া নামিয়াছেন।

সময়ের কন্ঠ রিপোর্ট।।
১৯৩১ সালের বর্ষা মৌসুমের কথা। কে একজন সন্তোষ হইতে মাইল দুই পশ্চিমে ধলেশ্বরী নদীর ঘাটে আসিয়া নামিয়াছেন। সাথে অনেকগুলি ছোট বড় নৌকা। ধান, চাউল, ঔষধ, কাপড়, বাঁশ, কাঠ ইত্যাদিতে সবগুলি বোঝাই। বেশ কয়েকজন লোকও তাঁহার সাথি। কেউ বাংলায় কথা বলে, কেউ বা বলেন অহমীয়া ভাষায়। দলপতি লম্বা চওড়া তেমন কিছু নন। ধবধবে সাদা লুঙ্গি, সাদা কোর্তা আর পাগড়ীতে তাঁহাকে বেশ মানাইয়াছে। নদীর তীরে তিনি পায়চারী করিতেছেন। নৌকার বহর আর অচেনা লোকজন দেখিয়া চ্যাংড়া-যুবা-বুড়া সবাই ভিড় জমাইল। সবার মনে প্রশ্ন- ইহারা কাহারা, বিশেষ করিয়া ইনি কে?
সাহস করিয়া পাশের গ্রাম গোয়ালপাড়ার আশেক মণ্ডল আগাইয়া আসিলেন। চোখে-মুখে প্রশ্নের বান। কিন্তু তাহার মুখ খুলিবার আগেই পাগড়ীধারী জিজ্ঞাসা করিলেন, বন্যার ক্ষতি বেশী কোনদিকে?
গম্ভীর মুখে কথা ফুটিয়াছে। একে একে সবাই আগাইয়া আসিল। দলপতির সাথিদের একজন বলিল, আপনারা এখানকার বন্যার কথা বলুন। মানুষের দুঃখের কথা বলুন। চিনছেন না বুঝি? ইনিই ভাসান চরের মওলানা।
এক রকম সমস্বরে সবাই বলিয়া উঠিল, হাঁ হাঁ চিনছি। কেউ কেউ বলিল, ইনিই তো বছর কয় আগে ভাসান চরে সভা করলেন। চাষা-ভুষাদের কথা বললেন। এদিক থেকেও কতজন সভায় গেল। সবাই এসে বলেছে ইনি জবরদস্ত ফকীর। বহু জীনকে হাতি ঘোড়া বানিয়ে রেখেছেন। খালি হাতি-ঘোড়া দাবড়ান। এক দিনেই গোটা আসাম চষে বেড়ান। দুঃখী মানুষের খোঁজ-খবর নেন। উনি নাকি সুলেমানী ইস্‌ম্‌ জানেন। জীন-পরী উনার সব কাজ কাম করে দেয়।
কিছুক্ষণের মধ্যে নৌকা হইতে একটি তাজী ঘোড়া নামানো হইল। আসাম হইতে ঘোড়াটিকে লইয়া আসা হইয়াছে। ভাসান চরের মওলানা ঘোড়ায় চাপিলেন। সবাই বলিল, বন্যার খবর পাবেন করটিয়ায়। পন্নী সা’বের কলেজের প্রিন্সিপাল খবর রাখেন। কোথাকার কি হালত।
মওলানার স্মৃতিতে একটি নাম উঁকি দিল। পন্নী। হাঁ, ওয়াজেদ আলী খান পন্নী। চান্দের মত সুন্দর। তাই সবাই সোহাগ করিয়া ডাকে চান মিয়া সাব। জমিদার হইলেও লোক ভাল। মনে পড়িল, খিলাফত আন্দোলনে এক সাথে জেল খাটিয়াছেন। সে তো বছর দশ আগের কথা।
মওলানা ঘোড়ার লাগাম ধরিলেন। কয়জন আগাইয়া আসিয়া বলিল, হুজুর এ পথ সন্তোষের পথ। মস্ত মহারাজের বাড়ী সামনে। বড়ই অত্যাচারী। কেউ ঘোড়ায় চড়ে এ পথে যেতে পারে না।
ভ্রূক্ষেপ করিবার মানুষ তিনি নন। মওলানার লাল ঘোড়া কদম তুলিয়া ছুট দিল।
হঠাৎ পথ রুদ্ধ হইল। বরকন্দাজ দলবল সহ ছুটিয়া আসিয়াছে। রেওয়াজ, নামিয়া যাইতে হইবে। কে কার কথা শুনিবে। মওলানা লাগাম ঝাঁকিলেন। ঘোড়া আগাইতে চাহিল। কি আস্পর্ধা! মহারাজের লোকজন জিদ ধরিল। ছাড়া যাইবে না। ঊর্ধ্বতন কর্মচারীরা দৌড়াইল। রাজ পরিবারের লোকজন আসিল। হুকুম তামিল করাইতে সকলের উৎসাহ বাড়িয়া গেল। এইবার যায় কোথায়!
ভীড় ঠেলিয়া মওলানার ঘোড়া কদম কদম আগাইতে লাগিল। মওলানা হুঙ্কার ছাড়িলেন, লাগাম ছাড়। নেমে যাব না। আমি ভাসান চরের মওলানা।
যাহারা বুঝিবার বুঝিল। যাহারা চিনিবার চিনিয়া লইল। কিংবদন্তীর মত বুড়া-বুড়ির মুখে আজও মওলানার একটি কথা চালু আছে। ঘোড়ায় চাবুক কষিতে কষিতে তিনি বলিয়াছিলেন, নামব-তবে যেদিন এ বাড়িতে বাগুন টাল (বেগুন ক্ষেত) দিতে পারব।
আল্লাহর বিধান ছিল, মওলানাকে নামিতে হইবে। তবে সন্তোষে নয়। রাজ-হুকুমেও নয়। নামিতে হইল কাগমারীতে। সন্তোষ হইতে এক কিলোমিটার পূর্বে। রাজগিরি উৎখাতের সংগ্রামী বীজ বপন করিয়া যাইতে। কাগমারী পরগণার ওয়াকফ্‌ সম্পত্তির প্রথম মুতাওয়াল্লী পীর শাহজামানের (রঃ) পবিত্র মাজার মেরামত করিতে। সেই কথা, সেই কাহিনী আজ নয়। অন্য প্রসঙ্গ। অন্য দিন হইবে।
[আমার ভালোবাসা মওলানা ভাসানী, সৈয়দ ইরফানুল বারী] প্রচারেরঃ

জাতীয় বঙ্গলীগের সভাপতি বোরহান হাওলাদার জসিম

আরো খবর.......

জনপ্রিয় সংবাদ

ময়মনসিংহে আন্তর্জাতিক শব্দদূষণ দিবস উদযাপিত

কে একজন সন্তোষ হইতে মাইল দুই পশ্চিমে ধলেশ্বরী নদীর ঘাটে আসিয়া নামিয়াছেন।

আপডেট টাইম : ০৯:৫৮:৩৭ পূর্বাহ্ণ, বুধবার, ৪ আগস্ট ২০২১

সময়ের কন্ঠ রিপোর্ট।।
১৯৩১ সালের বর্ষা মৌসুমের কথা। কে একজন সন্তোষ হইতে মাইল দুই পশ্চিমে ধলেশ্বরী নদীর ঘাটে আসিয়া নামিয়াছেন। সাথে অনেকগুলি ছোট বড় নৌকা। ধান, চাউল, ঔষধ, কাপড়, বাঁশ, কাঠ ইত্যাদিতে সবগুলি বোঝাই। বেশ কয়েকজন লোকও তাঁহার সাথি। কেউ বাংলায় কথা বলে, কেউ বা বলেন অহমীয়া ভাষায়। দলপতি লম্বা চওড়া তেমন কিছু নন। ধবধবে সাদা লুঙ্গি, সাদা কোর্তা আর পাগড়ীতে তাঁহাকে বেশ মানাইয়াছে। নদীর তীরে তিনি পায়চারী করিতেছেন। নৌকার বহর আর অচেনা লোকজন দেখিয়া চ্যাংড়া-যুবা-বুড়া সবাই ভিড় জমাইল। সবার মনে প্রশ্ন- ইহারা কাহারা, বিশেষ করিয়া ইনি কে?
সাহস করিয়া পাশের গ্রাম গোয়ালপাড়ার আশেক মণ্ডল আগাইয়া আসিলেন। চোখে-মুখে প্রশ্নের বান। কিন্তু তাহার মুখ খুলিবার আগেই পাগড়ীধারী জিজ্ঞাসা করিলেন, বন্যার ক্ষতি বেশী কোনদিকে?
গম্ভীর মুখে কথা ফুটিয়াছে। একে একে সবাই আগাইয়া আসিল। দলপতির সাথিদের একজন বলিল, আপনারা এখানকার বন্যার কথা বলুন। মানুষের দুঃখের কথা বলুন। চিনছেন না বুঝি? ইনিই ভাসান চরের মওলানা।
এক রকম সমস্বরে সবাই বলিয়া উঠিল, হাঁ হাঁ চিনছি। কেউ কেউ বলিল, ইনিই তো বছর কয় আগে ভাসান চরে সভা করলেন। চাষা-ভুষাদের কথা বললেন। এদিক থেকেও কতজন সভায় গেল। সবাই এসে বলেছে ইনি জবরদস্ত ফকীর। বহু জীনকে হাতি ঘোড়া বানিয়ে রেখেছেন। খালি হাতি-ঘোড়া দাবড়ান। এক দিনেই গোটা আসাম চষে বেড়ান। দুঃখী মানুষের খোঁজ-খবর নেন। উনি নাকি সুলেমানী ইস্‌ম্‌ জানেন। জীন-পরী উনার সব কাজ কাম করে দেয়।
কিছুক্ষণের মধ্যে নৌকা হইতে একটি তাজী ঘোড়া নামানো হইল। আসাম হইতে ঘোড়াটিকে লইয়া আসা হইয়াছে। ভাসান চরের মওলানা ঘোড়ায় চাপিলেন। সবাই বলিল, বন্যার খবর পাবেন করটিয়ায়। পন্নী সা’বের কলেজের প্রিন্সিপাল খবর রাখেন। কোথাকার কি হালত।
মওলানার স্মৃতিতে একটি নাম উঁকি দিল। পন্নী। হাঁ, ওয়াজেদ আলী খান পন্নী। চান্দের মত সুন্দর। তাই সবাই সোহাগ করিয়া ডাকে চান মিয়া সাব। জমিদার হইলেও লোক ভাল। মনে পড়িল, খিলাফত আন্দোলনে এক সাথে জেল খাটিয়াছেন। সে তো বছর দশ আগের কথা।
মওলানা ঘোড়ার লাগাম ধরিলেন। কয়জন আগাইয়া আসিয়া বলিল, হুজুর এ পথ সন্তোষের পথ। মস্ত মহারাজের বাড়ী সামনে। বড়ই অত্যাচারী। কেউ ঘোড়ায় চড়ে এ পথে যেতে পারে না।
ভ্রূক্ষেপ করিবার মানুষ তিনি নন। মওলানার লাল ঘোড়া কদম তুলিয়া ছুট দিল।
হঠাৎ পথ রুদ্ধ হইল। বরকন্দাজ দলবল সহ ছুটিয়া আসিয়াছে। রেওয়াজ, নামিয়া যাইতে হইবে। কে কার কথা শুনিবে। মওলানা লাগাম ঝাঁকিলেন। ঘোড়া আগাইতে চাহিল। কি আস্পর্ধা! মহারাজের লোকজন জিদ ধরিল। ছাড়া যাইবে না। ঊর্ধ্বতন কর্মচারীরা দৌড়াইল। রাজ পরিবারের লোকজন আসিল। হুকুম তামিল করাইতে সকলের উৎসাহ বাড়িয়া গেল। এইবার যায় কোথায়!
ভীড় ঠেলিয়া মওলানার ঘোড়া কদম কদম আগাইতে লাগিল। মওলানা হুঙ্কার ছাড়িলেন, লাগাম ছাড়। নেমে যাব না। আমি ভাসান চরের মওলানা।
যাহারা বুঝিবার বুঝিল। যাহারা চিনিবার চিনিয়া লইল। কিংবদন্তীর মত বুড়া-বুড়ির মুখে আজও মওলানার একটি কথা চালু আছে। ঘোড়ায় চাবুক কষিতে কষিতে তিনি বলিয়াছিলেন, নামব-তবে যেদিন এ বাড়িতে বাগুন টাল (বেগুন ক্ষেত) দিতে পারব।
আল্লাহর বিধান ছিল, মওলানাকে নামিতে হইবে। তবে সন্তোষে নয়। রাজ-হুকুমেও নয়। নামিতে হইল কাগমারীতে। সন্তোষ হইতে এক কিলোমিটার পূর্বে। রাজগিরি উৎখাতের সংগ্রামী বীজ বপন করিয়া যাইতে। কাগমারী পরগণার ওয়াকফ্‌ সম্পত্তির প্রথম মুতাওয়াল্লী পীর শাহজামানের (রঃ) পবিত্র মাজার মেরামত করিতে। সেই কথা, সেই কাহিনী আজ নয়। অন্য প্রসঙ্গ। অন্য দিন হইবে।
[আমার ভালোবাসা মওলানা ভাসানী, সৈয়দ ইরফানুল বারী] প্রচারেরঃ

জাতীয় বঙ্গলীগের সভাপতি বোরহান হাওলাদার জসিম