ঢাকা ০৫:৩০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo ক্যালেন্ডার মেনে বিসিএস পরীক্ষা আয়োজনের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার Logo জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মইনুদ্দীন কাদেরী শওকতের জন্মদিনে শ্রদ্ধা, শুভকামনা ও অনুপ্রেরণার স্মৃতি Logo ঠাকুরগাঁওয়ে ৮ বছর পর বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন// পরিদর্শনে মহাসচিব মির্জা ফখরুল Logo সাভারে বিএনপির পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি পালিত Logo কাশিমপুরে ডাকাতি প্রস্তুতিকালে দুই জনকে আটক করেছে পুলিশ Logo নেতাদের তেল দিয়েন না: পুলিশের উদ্দেশ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা Logo আশুলিয়ায় আবাসিক হোটেলে অভিযান, অনৈতিক কার্যক্রমে জড়িত ৮ জন গ্রেপ্তার Logo ভুয়া জ্বালানির খরচ দেখিয়ে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ নগর ভবনে দুদকের অভিযান Logo ফের বেড়েছে পদ্মার পানি, বিপাকে ১৫ চরের মানুষ Logo পিত্তথলিতে পাথর কেন হয়, কারা বেশি ঝুঁকিতে?

প্রথম দেশ হিসেবে তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিল রাশিয়া

ছবি: সংগৃহীত
রাশিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে তালেবান প্রশাসনকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া বিশ্বের প্রথম দেশ হলো রাশিয়া। আফগানিস্তানে নিযুক্ত তালেবান সরকারের নতুন রাষ্ট্রদূতের পরিচয়পত্র গ্রহণ করে এই স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) কাবুলে আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে বৈঠকে রুশ রাষ্ট্রদূত দিমিত্রি ঝিরনোভ এই স্বীকৃতির বিষয়টি জানিয়ে দেন। মুত্তাকি একে ‘সাহসী সিদ্ধান্ত’ হিসেবে অভিহিত করে বলেন, ‘এটি ইতিবাচক সম্পর্ক, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং গঠনমূলক সহযোগিতার এক নতুন অধ্যায়। রাশিয়ার এই সিদ্ধান্ত অন্য দেশগুলোর জন্যও একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা বিশ্বাস করি, ইসলামিক এমিরেট অব আফগানিস্তানের সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার এই পদক্ষেপ দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতাকে আরও গতিশীল করে তুলবে।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আফগানিস্তানের জ্বালানি, পরিবহন, কৃষি এবং অবকাঠামো খাতে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব গড়ার সুযোগ রয়েছে। পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদ ও মাদক পাচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কাবুলকে সহায়তা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে মস্কো।

২০২১ সালের আগস্টে তালেবান ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই তারা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণের চেষ্টা চালিয়ে আসছিল। তবে এতদিন কোনো দেশ তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়নি। রাশিয়াই প্রথম দেশ হিসেবে সেই সিদ্ধান্ত নিল।

চলতি বছরের এপ্রিলে রাশিয়ার সুপ্রিম কোর্ট তালেবানকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে যে তালিকাভুক্তি করেছিল, তা তুলে নেয়। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গত বছর তালেবানকে ‘সন্ত্রাসবিরোধী মিত্র’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। ২০১৮ সাল থেকেই তালেবানের প্রতিনিধিরা নিয়মিত মস্কো সফর করে আসছেন।

রাশিয়া ২০২২ সালে আফগানিস্তানের সঙ্গে আন্তর্জাতিক একটি অর্থনৈতিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। ওই চুক্তি অনুযায়ী, আফগানিস্তানকে তেল, গ্যাস এবং গম সরবরাহে সম্মত হয় তারা। এমনকি তালেবান ক্ষমতা গ্রহণের পরও কাবুলে দূতাবাস বন্ধ না করা দেশগুলোর অন্যতম ছিল রাশিয়া।

টেলিগ্রামে এক বার্তায় কাবুলে রুশ দূতাবাস জানায়, আফগানিস্তানের সঙ্গে সংলাপ সম্প্রসারণ আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য।

অন্যদিকে, পশ্চিমা সরকার ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো তালেবান সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা অব্যাহত রেখেছে। তাদের অভিযোগ, তালেবান সরকার নারী শিক্ষা ও স্বাধীনতা খর্ব করছে এবং কঠোর শরিয়া আইন প্রয়োগ করছে। এ ছাড়া জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ২০২১ সালেই আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলার জব্দ করে, যা এখনো ফেরত দেওয়া হয়নি।

চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, পাকিস্তান ও উজবেকিস্তান কাবুলে দূতাবাস চালু রাখলেও, তারা এখনো তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি। ভারতও কূটনৈতিক আলোচনা করলেও সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। ফলে, তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়া প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়ার পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ নজির স্থাপন করল।


প্রিন্ট
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

ক্যালেন্ডার মেনে বিসিএস পরীক্ষা আয়োজনের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

প্রথম দেশ হিসেবে তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিল রাশিয়া

আপডেট সময় ১২:৫৯:০৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ জুলাই ২০২৫

ছবি: সংগৃহীত
রাশিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে তালেবান প্রশাসনকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া বিশ্বের প্রথম দেশ হলো রাশিয়া। আফগানিস্তানে নিযুক্ত তালেবান সরকারের নতুন রাষ্ট্রদূতের পরিচয়পত্র গ্রহণ করে এই স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) কাবুলে আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে বৈঠকে রুশ রাষ্ট্রদূত দিমিত্রি ঝিরনোভ এই স্বীকৃতির বিষয়টি জানিয়ে দেন। মুত্তাকি একে ‘সাহসী সিদ্ধান্ত’ হিসেবে অভিহিত করে বলেন, ‘এটি ইতিবাচক সম্পর্ক, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং গঠনমূলক সহযোগিতার এক নতুন অধ্যায়। রাশিয়ার এই সিদ্ধান্ত অন্য দেশগুলোর জন্যও একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা বিশ্বাস করি, ইসলামিক এমিরেট অব আফগানিস্তানের সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার এই পদক্ষেপ দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতাকে আরও গতিশীল করে তুলবে।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আফগানিস্তানের জ্বালানি, পরিবহন, কৃষি এবং অবকাঠামো খাতে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব গড়ার সুযোগ রয়েছে। পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদ ও মাদক পাচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কাবুলকে সহায়তা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে মস্কো।

২০২১ সালের আগস্টে তালেবান ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই তারা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণের চেষ্টা চালিয়ে আসছিল। তবে এতদিন কোনো দেশ তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়নি। রাশিয়াই প্রথম দেশ হিসেবে সেই সিদ্ধান্ত নিল।

চলতি বছরের এপ্রিলে রাশিয়ার সুপ্রিম কোর্ট তালেবানকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে যে তালিকাভুক্তি করেছিল, তা তুলে নেয়। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গত বছর তালেবানকে ‘সন্ত্রাসবিরোধী মিত্র’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। ২০১৮ সাল থেকেই তালেবানের প্রতিনিধিরা নিয়মিত মস্কো সফর করে আসছেন।

রাশিয়া ২০২২ সালে আফগানিস্তানের সঙ্গে আন্তর্জাতিক একটি অর্থনৈতিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। ওই চুক্তি অনুযায়ী, আফগানিস্তানকে তেল, গ্যাস এবং গম সরবরাহে সম্মত হয় তারা। এমনকি তালেবান ক্ষমতা গ্রহণের পরও কাবুলে দূতাবাস বন্ধ না করা দেশগুলোর অন্যতম ছিল রাশিয়া।

টেলিগ্রামে এক বার্তায় কাবুলে রুশ দূতাবাস জানায়, আফগানিস্তানের সঙ্গে সংলাপ সম্প্রসারণ আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য।

অন্যদিকে, পশ্চিমা সরকার ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো তালেবান সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা অব্যাহত রেখেছে। তাদের অভিযোগ, তালেবান সরকার নারী শিক্ষা ও স্বাধীনতা খর্ব করছে এবং কঠোর শরিয়া আইন প্রয়োগ করছে। এ ছাড়া জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ২০২১ সালেই আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলার জব্দ করে, যা এখনো ফেরত দেওয়া হয়নি।

চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, পাকিস্তান ও উজবেকিস্তান কাবুলে দূতাবাস চালু রাখলেও, তারা এখনো তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি। ভারতও কূটনৈতিক আলোচনা করলেও সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। ফলে, তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়া প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়ার পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ নজির স্থাপন করল।


প্রিন্ট