ঢাকা ১২:৪৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo কালিয়াকৈরে জমির পাওয়ার অফ এ্যাটর্নি দলিল জাল জালিয়াতির অভিযোগ Logo ভৈরব জেলা বাস্তবায়নের দাবীতে মানব বন্ধন Logo আগামীর বাংলাদেশ হবে ইসলামের বাংলাদেশ-আল্লামা মামুনুল হক। Logo ভাঙ্গুড়ায় তারেক রহমানের সাক্ষাৎকার প্রদর্শনী, নেতাকর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস Logo ইলিশ রক্ষায় ব্যার্থ মৎস অধিদপ্তর সাংবাদিক দেখে দৌড়ে পালালেন ইলিশ বোঝায় ট্রলার Logo সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সাথে নাগরিক প্লাটফর্ম ও যুব ফোরামের পরামর্শ সভা Logo মিরপুরে গার্মেন্টস ও কেমিক্যাল গোডাউনে আগুন Logo মার্চ টু সচিবালয়’ এ অংশ নিতে শহীদ মিনারে শিক্ষকদের ঢল Logo রাজধানীতে জামায়াতসহ সাত দলের মানববন্ধন কর্মসূচি শুরু Logo আমরা কারাগারে নয়, ছিলাম এক কসাইখানায়

বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে নির্বাচন ঠেকানোর নতুন কৌশল সেনাবাহিনীকে উসকানি দিয়ে প্রচারণার নেপথ্যে ভারতের ইন্ধন থাকতে পারে :ড. নুরুল আমিন ব্যাপারী গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সাবেক সেনাপ্রধান নুরুদ্দিন খান ও জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান নজির স্থাপন করেছেন টার্গেট এবার সেনাবাহিনী?

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ১১:৪০:৫৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৫
  • ১০ ১০.০০০ বার পড়া হয়েছে

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষায় যখন ‘নির্বাচনী ট্রেন চলতে শুরু করেছে’ তখন নানা পন্থায় নির্বাচনী ট্রেন থামানো (ঠেকানো), নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। এ উদ্দেশে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করা এবং আওয়ামী লীগকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। এটি করতে দিল্লির থিঙ্কট্যাঙ্করা যেমন কোমড় বেঁধে মাঠে নেমেছে; তেমনি দেশের কিছু রাজনৈতিক দল সে ফাঁদে পা দিয়ে কখনো পিআর পদ্ধতির নির্বাচন, কখনো জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট দাবি করছে। এখন তারা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একটি মামলা ইস্যু করে সরকারের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীকে ক্ষেপিয়ে তোলার চেষ্টায় নেমেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এ নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছে।

ক্ষমতাচ্যুত মনস্টার শেখ হাসিনা পালানোর পর থেকে ভারত নানাভাবে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। জুডিশিয়াল ক্যু, আনছার বাহিনীর সচিবালয় ঘেরাও, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের নানা দাবির আন্দোলন, কথিত সংখ্যালঘু নির্যাতন, গার্মেন্টসে বিশৃঙ্খলা, পাহাড়ে অশান্তির চেষ্টা করে অস্থিরতা সৃষ্টির অপচেষ্টা করে এবং নেট দুনিয়ায় এসব নিয়ে প্রচারণা চালায়। জনগণ, রাজনৈতিক দলকে সঙ্গে নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ভারতের সব ষড়যন্ত্র নসাৎ করে দেয়। অতঃপর দিল্লির থিঙ্কট্যাঙ্করা আগামী সংসদে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন, পিআর পদ্ধতি নির্বাচন, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট ইত্যাদি ফর্মুলার আবির্ভাব ঘটায়। আর্থিক সুবিধা ও আগামীতে ক্ষমতায় বসানোর লোভ দেখিয়ে কিছু রাজনৈতিক দলকে ‘দিল্লির ফর্মুলা’ গলধঃকরণ করাতে সক্ষম হয়। একই সঙ্গে সরকারের ভেতরের কিছু উপদেষ্টা ও গুরুত্বপূর্ণ পদধারীকে অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতার মেয়াদ দীর্ঘায়িত করা টোপ দিয়ে এসব ফর্মুলার পক্ষে নেয়। তারা অন্তর্বর্তী সরকারকে জনগণ দীর্ঘদিন ক্ষমতায় দেখতে চায়, নির্বাচনী পরিবেশ নেই ইত্যাদি প্রচারণা চালায়। কেউ কেউ সংস্কারের অজুহাতে ক্ষমতা দীর্ঘমেয়াদি করার ফন্দিফিকির করেন। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যাপারে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করেন। দেশ-বিদেশে তিনি রমজানের আগে নির্বাচনের চূড়ান্ত বার্তা দিয়ে নির্বাচন কমিশনকে ভোটের প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশনা দেন। বিগত এক বছরে ভারত, পলাতক হাসিনা ও তার অলিগার্কদের ষড়যন্ত্রের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় এবার টার্গেট করা হয়েছে সেনাবাহিনীকে। তাদের ধারণা, সেনাবাহিনীকে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলা গেলে তারা আসন্ন নির্বাচন ভ-ুল করে দেবেন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে গুমের মাধ্যমে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ৮ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনাসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। আসামিদের আগামী ২২ অক্টোবরের মধ্যে গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেয়া হয়। এই আসামির মধ্যে ডিজিএফআইয়ের সাবেক পাঁচ মহাপরিচালক এবং সেনাবাহিনীর বর্তমান ১৫ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নাম রয়েছে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হয়েছে, যেসব সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হয়েছে তাদের ১৫ জনের মধ্যে ১৪ জনকে সেনা হেফাজতে নেয়া হয়েছে। তারপরও এটিকে ইস্যু করে দেশপ্রেমী সেনাবাহিনীকে উসকানি দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারণা চালানো হচ্ছে। আদালতের মামলাকে ইস্যু করে অন্তর্বর্তী সরকার ও সেনাবাহিনীকে মুখোমুখি করার অপচেষ্টা চলছে।

২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার মনস্টার হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুতির অভ্যুত্থানে ‘ছাত্র-জনতা-সেনাবাহিনী ভাই ভাই’ স্লেøাগান দিয়ে ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটিয়েছে। সেই সেনাবাহিনীকে সরকারের মুখোমুখি করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মাধ্যমে লাইনে উঠা নির্বাচনী ট্রেন থামিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে। অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীকে বিক্ষুব্ধ করে তুলতে নেট দুনিয়ায় ঝড় তোলা হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত এবার কি সেনাবাহিনীকে টার্গেট করেছে? পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদে পুনর্বাসনের দিল্লির প্রচেষ্টা চূর্ণ করে দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। আবার পাহাড়ে অশান্তির সৃষ্টির ভারতীয় অ্যাজেন্ডা ভ-ুল করেছে দেশপ্রেমী সেনাবাহিনী। এমনকি মিয়ানমারে ত্রাণ পাঠানোর নামে আরাকান আর্মিকে করিডোর দেয়ার মার্কিন প্রস্তাবে অন্তর্বর্তী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কিছু ব্যক্তি সায় দিলেও দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের কথা চিন্তা করে সেনাবাহিনী সেটি হতে দেয়নি। মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও আরাকান সেনাবাহিনীর যুদ্ধে বাংলাদেশকে না জড়ানোর সেনাবাহিনীর সিদ্ধান্ত প্রশংসিত হয়েছে সর্বমহলে। এ কারণেই কি সেনাবাহিনীকে টার্গেট করা হচ্ছে? জুলাই অভ্যুত্থান আন্দোলনে বিজয়ের পর শিক্ষার্থীরা সেনাবাহিনীর ট্যাঙ্কে উঠে নৃত্য করেছে; সেনাবাহিনীর সদস্যরা ছাত্রদের সঙ্গে মিলেমিশে স্বৈরাচার হাসিনাকে তাড়িয়েছে। সে সময় আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে গুলি করে হত্যার হাসিনার হিং¯্র নির্দেশনা অমান্য করেছে দেশপ্রেমী সেনাবাহিনী। রাষ্ট্রের জনগণের ট্যাক্সের অর্থে পরিচালিত অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা যখন হাসিনার অন্যায় নির্দেশে ছাত্র-জনতার উপর গুলি ছুড়েছে; ঢাকার রাজপথ মানুষের লাশ আর রক্তে রঞ্জিত করেছে; তখন সেনাবাহিনীর সদস্যরা মিরপুরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী অস্ত্রধারীদের হটিয়ে দিয়েছে। অভ্যুত্থানের আগে গণভবনে কি হয়েছিল সে তথ্য এখন নানাভাবে প্রকাশ পাচ্ছে। ওই সময় স্লøাগান উঠেছিল ‘ছাত্র-জনতা-সেনাবাহিনী ভাই ভাই’ এবং ‘এই মুহূর্তে দরকার সেনাবাহিনীর সরকার।’ অথচ দেশপ্রেমী সেনাবাহিনী ক্ষমতা নেয়নি; বরং তখন থেকে দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সেনাপ্রধানের বক্তব্যে সেটি উঠে এসেছে।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. নুরুল আমিন ব্যাপারী বলেন, গুম মামলা ইস্যু করে সরকারের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীকে উসকানি দিয়ে প্রচারণার নেপথ্যে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের ইন্ধন থাকতে পারে। টাকা পয়সা খরচ করে নেট দুনিয়ায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। হাসিনার নির্দেশ অমান্য করে ছাত্র-জনতার উপর সেনাসদস্যরা গুলি চালায়নি। ছাত্র-জনতার পাশে সেনাবাহিনীর দাঁড়ানোয় হাসিনাকে পালাতে হয়েছে; এটি দিল্লির মনোকষ্টের কারণ। দিল্লির ষড়যন্ত্রে ২০০৭ সালে ওয়ান-ইলেভেন এসেছিল। হাসিনার সময় ১৫ বছর বাংলাদেশের সম্পদ লুটেপুটে খেয়েছে ভারত। তারা ফের বাংলাদেশে আধিপত্য বিস্তার করতে চায়। সে জন্য দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকার ও সেনাবাহিনীকে মুখোমুখি করতে চাচ্ছে। আর এটা করছে এদেশের তাদের ধামাধরাদের কাজে লাগিয়ে। পালানোর আগে হাসিনা গং যে বিপুল অর্থ বিদেশে পাচার করেছে সেটি খরচ করে কিছু দলকে কাজে লাগাচ্ছে। তবে আমি মনে করি, ভারত এতে সফল হবে না। অপরাধ করলে তার বিচার হবে। সেটি সেনাবাহিনী-পুলিশ বাহিনী যেকোনো বাহিনীর সদস্য হোক। ব্যক্তি অপরাধ প্রতিষ্ঠানের দায় নয়। আর এ বিচার সেনাবাহিনীর নিজস্ব কোর্টে এবং সিভিল কোটে দু’ভাবেই হতে পারে; এটি সিদ্ধান্তের ব্যাপার। এর আগে অনেক সেনা সদস্যের অপরাধের বিচার সিভিল কোর্টে হয়েছে; বরং এদের বিচার সিভিল কোর্টে করতে দেয়া উচিত। এতে সেনাবাহিনীর ভাবমর্যাদা আরো বাড়বে। তাছাড়া সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে যে ঐতিহাসিক ভূমিকা রেখেছেন জাতি তাকে বহুদিন স্মরণ রাখবে। তিনি তো মঈন ইউ আহমদের মতো ক্ষমতা দখল না করে দেশের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় বারবার নির্বাচনের কথাই বলছেন। হাসিনার অন্যায় নির্দেশ অমান্য করে জনতার পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করায় সেনাবাহিনীর মর্যাদা বেড়েছে। এটি তো ঠিক সেদিন সেনাবাহিনী ছাত্রজনতার পক্ষ না দিলে গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত করা কঠিন হতো।

দেশে এখন চলছে নির্বাচনী হাওয়া। সারা দেশের মানুষ ভোট দেয়ার জন্য মুখিয়ে রয়েছে। ভারতের নীলনকশায় বিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে ভোটের নামে পাতানো নাটক হওয়ায় জনগণ ভোট দিতে যায়নি। হাসিনার পালানো এবং অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে মানুষ ভোট দিয়ে নিজেদের জনপ্রতিনিধি বেছে নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর যখন ‘এ মুহূর্তে দরকার সেনাবাহিনীর সরকার’ স্লোগান রাজপথে উঠেছিল তখন সেনাপ্রধান বলেছিলেন, সেনাবাহিনীর সদস্যরা ব্যারাকের বাইরে থাকতে চায় না। দেড় বছরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। পরে তিনি চলতি বছরের ডিসেম্বরে নির্বাচন দেয়া যেতে পারে এমন বক্তব্য দিয়েছিলেন নির্বাচনের পর সেনাবাহিনী ব্যারাকে ফিরে যাবে; এটি পরিষ্কার বার্তা। তারপরও কিছু কন্টেইন ক্রিয়েটর, বিদেশে থাকা ইউটিউবার কয়েক মাস আগে অপপ্রচার চালিয়েছিল ‘প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সেনাবাহিনীর প্রধানের বিরোধ চলছে।’ পলাতক হাসিনা ও ভারতের টাকায় সরকারের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর সদস্যদের উসকে দেয়ার সেই চেষ্টা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গুম নিয়ে মামলায় সার্জশিট দেয়ার পর ফের শুরু হয়েছে। দিল্লির তাবেদার ও মনস্টার হাসিনার অলিগার্ক চক্র অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীকে উসকে দিতে ১৯৯৬ সালের তৎকালীণ সেনাপ্রধান নাসিমের ব্যর্থ গণ-অভ্যুত্থানের কাহিনী নেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে দিয়েছে। অথচ নব্বইয়ের রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের আগে সাবেক সেনাপ্রধান নুরুদ্দিন খান, সাবেক সেনা প্রধান মাহবুবুর রহমানের গণতন্ত্রের পক্ষ্যে অবস্থান নেয়ার চিত্র তুলে ধরছেন না। বাংলাদেশের ইতিহাসে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে দুজন সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব) নুরুদ্দিন খান এবং জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান নজির স্থাপন করেছেন। রচনা করেছেন নতুন ইতিহাস। নব্বইয়ে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় তৎকালীন প্রেসিডেন্ট এইচ এম এরশাদ সেনাশাসন চেয়েছিলেন। কিন্তু লেফটেন্যান্ট জেনারেল নুরুদ্দিন তা প্রত্যাখ্যান করেন এবং জনতার পাশে দাঁড়ান। এরপর ইতিহাস রচনা করেন বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তিনি হাসিনার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ছাত্র-জনতার পাশে দাঁড়ান। শেখ হাসিনা তাকে আন্দোলনকারীদের উপর বিরামহীনভাবে গুলি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু জেনারেল ওয়াকার সেনাবাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি করতে সায় দেননি। এটি ছিল এক অভাবনীয় সিদ্ধান্ত। হাসিনার সঙ্গে জেনারেল ওয়াকারের একদিকে আত্মীয়তা, অন্যদিকে দেশ। কোনটি বেছে নেবেন জেনারেল ওয়াকার! সে সময় সবার মুখে এটিই ছিল মুখ্য প্রশ্ন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি দেশ ও গণতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান নিয়ে অনন্য ইতিহাস নির্মাণ করেন। এক বছর পরও তিনি তার অবস্থানে অনড় এবং দ্রুত নির্বাচনের পক্ষে তার অবস্থান জননন্দিত হয়েছেন। জেনারেল ওয়াকার একাধিকবার বলেছেন, দেশটা আমাদের সবার। সেনাবাহিনী আলাদা কোনো দ্বীপের বাসিন্দা নয়। তাই আমরা জনগণের পাশেই থাকব। এটিই আমাদের প্রতিশ্রুতি।

সেনাপ্রধানের এমন বক্তব্যের পরও প্রশ্ন হচ্ছে সেনাবাহিনীকে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে উসকে দেয়ার প্রচারণা কারা করছে এবং কেন করছে? রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, প্রশাসন হাতছাড়া এবং নিয়োগ-বদলি-টেন্ডার বাণিজ্য হারানোর ভয়ে এসব হচ্ছে। যারা অন্তর্বর্তী সরকারকে দীর্ঘমেয়াদে রাখা গেলে প্রশাসনে বদলি-নিয়োগ বাণিজ্য দীর্ঘদিন চালানো যাবেÑ অথচ ভোট হলে সেটিই অবৈধ আয়-রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে যাবে ভাবছেন, তারা করছেন। আবার কেউ আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের দিল্লির নীলনকশার বাস্তবায়নে জন্য করছেন। তারা বিশৃঙ্খলা চাচ্ছেন যাতে নির্বাচনের পরিবেশ নেই অজুহাত তুলে নির্বাচন পেছানো যায়। এই প্রক্রিয়ায় যারা রয়েছেন তারা নির্বাচন পেছাতে এবং দিল্লির অ্যাজেন্ডা আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনে পিআর পদ্ধতির নির্বাচন দাবি করছেন। সংস্কারের অজুহাতে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের দাবি তুলছেন। কারণ জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট হলে দিল্লির তাঁবেদার রিফাইন আওয়ামী লীগ পুনঃপ্রতিষ্ঠা সহজ হয়। আর জাতীয় নির্বাচন হলে এবং বিএনপি জনগণের ভোটের নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় গেলে সবকিছু তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। এতে জুলাই অভ্যুত্থান পুঁজি করে প্রশাসনে দলীয় কর্মকর্তাদের নিয়োগ-প্রমোশন দেয়ার উৎসব মাঠে মারা যাবে। আবার প্রশাসনে নিয়োগ-বদলি বাণিজ্য, টেন্ডার-চাকরির সুপারিশ বাণিজ্য মাঠে মারা যাবে।


প্রিন্ট
ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

কালিয়াকৈরে জমির পাওয়ার অফ এ্যাটর্নি দলিল জাল জালিয়াতির অভিযোগ

বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে নির্বাচন ঠেকানোর নতুন কৌশল সেনাবাহিনীকে উসকানি দিয়ে প্রচারণার নেপথ্যে ভারতের ইন্ধন থাকতে পারে :ড. নুরুল আমিন ব্যাপারী গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সাবেক সেনাপ্রধান নুরুদ্দিন খান ও জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান নজির স্থাপন করেছেন টার্গেট এবার সেনাবাহিনী?

আপডেট সময় ১১:৪০:৫৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৫

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষায় যখন ‘নির্বাচনী ট্রেন চলতে শুরু করেছে’ তখন নানা পন্থায় নির্বাচনী ট্রেন থামানো (ঠেকানো), নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। এ উদ্দেশে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করা এবং আওয়ামী লীগকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। এটি করতে দিল্লির থিঙ্কট্যাঙ্করা যেমন কোমড় বেঁধে মাঠে নেমেছে; তেমনি দেশের কিছু রাজনৈতিক দল সে ফাঁদে পা দিয়ে কখনো পিআর পদ্ধতির নির্বাচন, কখনো জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট দাবি করছে। এখন তারা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একটি মামলা ইস্যু করে সরকারের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীকে ক্ষেপিয়ে তোলার চেষ্টায় নেমেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এ নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছে।

ক্ষমতাচ্যুত মনস্টার শেখ হাসিনা পালানোর পর থেকে ভারত নানাভাবে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। জুডিশিয়াল ক্যু, আনছার বাহিনীর সচিবালয় ঘেরাও, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের নানা দাবির আন্দোলন, কথিত সংখ্যালঘু নির্যাতন, গার্মেন্টসে বিশৃঙ্খলা, পাহাড়ে অশান্তির চেষ্টা করে অস্থিরতা সৃষ্টির অপচেষ্টা করে এবং নেট দুনিয়ায় এসব নিয়ে প্রচারণা চালায়। জনগণ, রাজনৈতিক দলকে সঙ্গে নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ভারতের সব ষড়যন্ত্র নসাৎ করে দেয়। অতঃপর দিল্লির থিঙ্কট্যাঙ্করা আগামী সংসদে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন, পিআর পদ্ধতি নির্বাচন, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট ইত্যাদি ফর্মুলার আবির্ভাব ঘটায়। আর্থিক সুবিধা ও আগামীতে ক্ষমতায় বসানোর লোভ দেখিয়ে কিছু রাজনৈতিক দলকে ‘দিল্লির ফর্মুলা’ গলধঃকরণ করাতে সক্ষম হয়। একই সঙ্গে সরকারের ভেতরের কিছু উপদেষ্টা ও গুরুত্বপূর্ণ পদধারীকে অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতার মেয়াদ দীর্ঘায়িত করা টোপ দিয়ে এসব ফর্মুলার পক্ষে নেয়। তারা অন্তর্বর্তী সরকারকে জনগণ দীর্ঘদিন ক্ষমতায় দেখতে চায়, নির্বাচনী পরিবেশ নেই ইত্যাদি প্রচারণা চালায়। কেউ কেউ সংস্কারের অজুহাতে ক্ষমতা দীর্ঘমেয়াদি করার ফন্দিফিকির করেন। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যাপারে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করেন। দেশ-বিদেশে তিনি রমজানের আগে নির্বাচনের চূড়ান্ত বার্তা দিয়ে নির্বাচন কমিশনকে ভোটের প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশনা দেন। বিগত এক বছরে ভারত, পলাতক হাসিনা ও তার অলিগার্কদের ষড়যন্ত্রের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় এবার টার্গেট করা হয়েছে সেনাবাহিনীকে। তাদের ধারণা, সেনাবাহিনীকে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলা গেলে তারা আসন্ন নির্বাচন ভ-ুল করে দেবেন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে গুমের মাধ্যমে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ৮ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনাসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। আসামিদের আগামী ২২ অক্টোবরের মধ্যে গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেয়া হয়। এই আসামির মধ্যে ডিজিএফআইয়ের সাবেক পাঁচ মহাপরিচালক এবং সেনাবাহিনীর বর্তমান ১৫ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নাম রয়েছে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হয়েছে, যেসব সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হয়েছে তাদের ১৫ জনের মধ্যে ১৪ জনকে সেনা হেফাজতে নেয়া হয়েছে। তারপরও এটিকে ইস্যু করে দেশপ্রেমী সেনাবাহিনীকে উসকানি দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারণা চালানো হচ্ছে। আদালতের মামলাকে ইস্যু করে অন্তর্বর্তী সরকার ও সেনাবাহিনীকে মুখোমুখি করার অপচেষ্টা চলছে।

২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার মনস্টার হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুতির অভ্যুত্থানে ‘ছাত্র-জনতা-সেনাবাহিনী ভাই ভাই’ স্লেøাগান দিয়ে ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটিয়েছে। সেই সেনাবাহিনীকে সরকারের মুখোমুখি করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মাধ্যমে লাইনে উঠা নির্বাচনী ট্রেন থামিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে। অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীকে বিক্ষুব্ধ করে তুলতে নেট দুনিয়ায় ঝড় তোলা হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত এবার কি সেনাবাহিনীকে টার্গেট করেছে? পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদে পুনর্বাসনের দিল্লির প্রচেষ্টা চূর্ণ করে দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। আবার পাহাড়ে অশান্তির সৃষ্টির ভারতীয় অ্যাজেন্ডা ভ-ুল করেছে দেশপ্রেমী সেনাবাহিনী। এমনকি মিয়ানমারে ত্রাণ পাঠানোর নামে আরাকান আর্মিকে করিডোর দেয়ার মার্কিন প্রস্তাবে অন্তর্বর্তী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কিছু ব্যক্তি সায় দিলেও দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের কথা চিন্তা করে সেনাবাহিনী সেটি হতে দেয়নি। মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও আরাকান সেনাবাহিনীর যুদ্ধে বাংলাদেশকে না জড়ানোর সেনাবাহিনীর সিদ্ধান্ত প্রশংসিত হয়েছে সর্বমহলে। এ কারণেই কি সেনাবাহিনীকে টার্গেট করা হচ্ছে? জুলাই অভ্যুত্থান আন্দোলনে বিজয়ের পর শিক্ষার্থীরা সেনাবাহিনীর ট্যাঙ্কে উঠে নৃত্য করেছে; সেনাবাহিনীর সদস্যরা ছাত্রদের সঙ্গে মিলেমিশে স্বৈরাচার হাসিনাকে তাড়িয়েছে। সে সময় আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে গুলি করে হত্যার হাসিনার হিং¯্র নির্দেশনা অমান্য করেছে দেশপ্রেমী সেনাবাহিনী। রাষ্ট্রের জনগণের ট্যাক্সের অর্থে পরিচালিত অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা যখন হাসিনার অন্যায় নির্দেশে ছাত্র-জনতার উপর গুলি ছুড়েছে; ঢাকার রাজপথ মানুষের লাশ আর রক্তে রঞ্জিত করেছে; তখন সেনাবাহিনীর সদস্যরা মিরপুরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী অস্ত্রধারীদের হটিয়ে দিয়েছে। অভ্যুত্থানের আগে গণভবনে কি হয়েছিল সে তথ্য এখন নানাভাবে প্রকাশ পাচ্ছে। ওই সময় স্লøাগান উঠেছিল ‘ছাত্র-জনতা-সেনাবাহিনী ভাই ভাই’ এবং ‘এই মুহূর্তে দরকার সেনাবাহিনীর সরকার।’ অথচ দেশপ্রেমী সেনাবাহিনী ক্ষমতা নেয়নি; বরং তখন থেকে দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সেনাপ্রধানের বক্তব্যে সেটি উঠে এসেছে।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. নুরুল আমিন ব্যাপারী বলেন, গুম মামলা ইস্যু করে সরকারের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীকে উসকানি দিয়ে প্রচারণার নেপথ্যে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের ইন্ধন থাকতে পারে। টাকা পয়সা খরচ করে নেট দুনিয়ায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। হাসিনার নির্দেশ অমান্য করে ছাত্র-জনতার উপর সেনাসদস্যরা গুলি চালায়নি। ছাত্র-জনতার পাশে সেনাবাহিনীর দাঁড়ানোয় হাসিনাকে পালাতে হয়েছে; এটি দিল্লির মনোকষ্টের কারণ। দিল্লির ষড়যন্ত্রে ২০০৭ সালে ওয়ান-ইলেভেন এসেছিল। হাসিনার সময় ১৫ বছর বাংলাদেশের সম্পদ লুটেপুটে খেয়েছে ভারত। তারা ফের বাংলাদেশে আধিপত্য বিস্তার করতে চায়। সে জন্য দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকার ও সেনাবাহিনীকে মুখোমুখি করতে চাচ্ছে। আর এটা করছে এদেশের তাদের ধামাধরাদের কাজে লাগিয়ে। পালানোর আগে হাসিনা গং যে বিপুল অর্থ বিদেশে পাচার করেছে সেটি খরচ করে কিছু দলকে কাজে লাগাচ্ছে। তবে আমি মনে করি, ভারত এতে সফল হবে না। অপরাধ করলে তার বিচার হবে। সেটি সেনাবাহিনী-পুলিশ বাহিনী যেকোনো বাহিনীর সদস্য হোক। ব্যক্তি অপরাধ প্রতিষ্ঠানের দায় নয়। আর এ বিচার সেনাবাহিনীর নিজস্ব কোর্টে এবং সিভিল কোটে দু’ভাবেই হতে পারে; এটি সিদ্ধান্তের ব্যাপার। এর আগে অনেক সেনা সদস্যের অপরাধের বিচার সিভিল কোর্টে হয়েছে; বরং এদের বিচার সিভিল কোর্টে করতে দেয়া উচিত। এতে সেনাবাহিনীর ভাবমর্যাদা আরো বাড়বে। তাছাড়া সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে যে ঐতিহাসিক ভূমিকা রেখেছেন জাতি তাকে বহুদিন স্মরণ রাখবে। তিনি তো মঈন ইউ আহমদের মতো ক্ষমতা দখল না করে দেশের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় বারবার নির্বাচনের কথাই বলছেন। হাসিনার অন্যায় নির্দেশ অমান্য করে জনতার পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করায় সেনাবাহিনীর মর্যাদা বেড়েছে। এটি তো ঠিক সেদিন সেনাবাহিনী ছাত্রজনতার পক্ষ না দিলে গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত করা কঠিন হতো।

দেশে এখন চলছে নির্বাচনী হাওয়া। সারা দেশের মানুষ ভোট দেয়ার জন্য মুখিয়ে রয়েছে। ভারতের নীলনকশায় বিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে ভোটের নামে পাতানো নাটক হওয়ায় জনগণ ভোট দিতে যায়নি। হাসিনার পালানো এবং অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে মানুষ ভোট দিয়ে নিজেদের জনপ্রতিনিধি বেছে নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর যখন ‘এ মুহূর্তে দরকার সেনাবাহিনীর সরকার’ স্লোগান রাজপথে উঠেছিল তখন সেনাপ্রধান বলেছিলেন, সেনাবাহিনীর সদস্যরা ব্যারাকের বাইরে থাকতে চায় না। দেড় বছরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। পরে তিনি চলতি বছরের ডিসেম্বরে নির্বাচন দেয়া যেতে পারে এমন বক্তব্য দিয়েছিলেন নির্বাচনের পর সেনাবাহিনী ব্যারাকে ফিরে যাবে; এটি পরিষ্কার বার্তা। তারপরও কিছু কন্টেইন ক্রিয়েটর, বিদেশে থাকা ইউটিউবার কয়েক মাস আগে অপপ্রচার চালিয়েছিল ‘প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সেনাবাহিনীর প্রধানের বিরোধ চলছে।’ পলাতক হাসিনা ও ভারতের টাকায় সরকারের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর সদস্যদের উসকে দেয়ার সেই চেষ্টা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গুম নিয়ে মামলায় সার্জশিট দেয়ার পর ফের শুরু হয়েছে। দিল্লির তাবেদার ও মনস্টার হাসিনার অলিগার্ক চক্র অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীকে উসকে দিতে ১৯৯৬ সালের তৎকালীণ সেনাপ্রধান নাসিমের ব্যর্থ গণ-অভ্যুত্থানের কাহিনী নেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে দিয়েছে। অথচ নব্বইয়ের রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের আগে সাবেক সেনাপ্রধান নুরুদ্দিন খান, সাবেক সেনা প্রধান মাহবুবুর রহমানের গণতন্ত্রের পক্ষ্যে অবস্থান নেয়ার চিত্র তুলে ধরছেন না। বাংলাদেশের ইতিহাসে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে দুজন সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব) নুরুদ্দিন খান এবং জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান নজির স্থাপন করেছেন। রচনা করেছেন নতুন ইতিহাস। নব্বইয়ে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় তৎকালীন প্রেসিডেন্ট এইচ এম এরশাদ সেনাশাসন চেয়েছিলেন। কিন্তু লেফটেন্যান্ট জেনারেল নুরুদ্দিন তা প্রত্যাখ্যান করেন এবং জনতার পাশে দাঁড়ান। এরপর ইতিহাস রচনা করেন বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তিনি হাসিনার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ছাত্র-জনতার পাশে দাঁড়ান। শেখ হাসিনা তাকে আন্দোলনকারীদের উপর বিরামহীনভাবে গুলি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু জেনারেল ওয়াকার সেনাবাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি করতে সায় দেননি। এটি ছিল এক অভাবনীয় সিদ্ধান্ত। হাসিনার সঙ্গে জেনারেল ওয়াকারের একদিকে আত্মীয়তা, অন্যদিকে দেশ। কোনটি বেছে নেবেন জেনারেল ওয়াকার! সে সময় সবার মুখে এটিই ছিল মুখ্য প্রশ্ন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি দেশ ও গণতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান নিয়ে অনন্য ইতিহাস নির্মাণ করেন। এক বছর পরও তিনি তার অবস্থানে অনড় এবং দ্রুত নির্বাচনের পক্ষে তার অবস্থান জননন্দিত হয়েছেন। জেনারেল ওয়াকার একাধিকবার বলেছেন, দেশটা আমাদের সবার। সেনাবাহিনী আলাদা কোনো দ্বীপের বাসিন্দা নয়। তাই আমরা জনগণের পাশেই থাকব। এটিই আমাদের প্রতিশ্রুতি।

সেনাপ্রধানের এমন বক্তব্যের পরও প্রশ্ন হচ্ছে সেনাবাহিনীকে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে উসকে দেয়ার প্রচারণা কারা করছে এবং কেন করছে? রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, প্রশাসন হাতছাড়া এবং নিয়োগ-বদলি-টেন্ডার বাণিজ্য হারানোর ভয়ে এসব হচ্ছে। যারা অন্তর্বর্তী সরকারকে দীর্ঘমেয়াদে রাখা গেলে প্রশাসনে বদলি-নিয়োগ বাণিজ্য দীর্ঘদিন চালানো যাবেÑ অথচ ভোট হলে সেটিই অবৈধ আয়-রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে যাবে ভাবছেন, তারা করছেন। আবার কেউ আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের দিল্লির নীলনকশার বাস্তবায়নে জন্য করছেন। তারা বিশৃঙ্খলা চাচ্ছেন যাতে নির্বাচনের পরিবেশ নেই অজুহাত তুলে নির্বাচন পেছানো যায়। এই প্রক্রিয়ায় যারা রয়েছেন তারা নির্বাচন পেছাতে এবং দিল্লির অ্যাজেন্ডা আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনে পিআর পদ্ধতির নির্বাচন দাবি করছেন। সংস্কারের অজুহাতে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের দাবি তুলছেন। কারণ জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট হলে দিল্লির তাঁবেদার রিফাইন আওয়ামী লীগ পুনঃপ্রতিষ্ঠা সহজ হয়। আর জাতীয় নির্বাচন হলে এবং বিএনপি জনগণের ভোটের নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় গেলে সবকিছু তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। এতে জুলাই অভ্যুত্থান পুঁজি করে প্রশাসনে দলীয় কর্মকর্তাদের নিয়োগ-প্রমোশন দেয়ার উৎসব মাঠে মারা যাবে। আবার প্রশাসনে নিয়োগ-বদলি বাণিজ্য, টেন্ডার-চাকরির সুপারিশ বাণিজ্য মাঠে মারা যাবে।


প্রিন্ট