ফাইল ছবি
কালের পরিক্রমায় উত্তপ্ত বরেন্দ্রভূমি এখন দেশের অন্যতম শস্যভান্ডার। সারা বছরই ধানসহ নানা ফসল ফলছে এ ভূমিতে। তবে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, আশঙ্কাজনকভাবে কমছে এ অঞ্চলের ফসলি জমি। এ অঞ্চলের কৃষকরা এখন লাভজনক কৃষিপণ্য উৎপাদনের দিকে ঝুঁকছে-ধানের জমিতে তৈরি হচ্ছে আমসহ বিভিন্ন ফলের বাগান। তিন ফসলি জমি কেটে খনন করা হচ্ছে পুকুর। এভাবে গত কয়েক দশকে বরেন্দ্রভূমির ১ লাখ ৩২ হাজার হেক্টরেরও বেশি ফসলি জমি কমে গেছে। এর প্রভাব পড়ছে ধানের উৎপাদনে। পদ্মা অববাহিকার চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী জেলার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে কয়েক দশক ধরে চলছে নদীভাঙন। এতে উদ্বাস্তু হয়ে প্রতিবছরই বহু মানুষ বরেন্দ্রভূমির ফসলি জমিতে গিয়ে বসতি গড়ছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক এক জরিপের তথ্যানুযায়ী অপরিকল্পিত আবাসন, শিল্প-কারখানা, সড়ক নির্মাণসহ নানা স্থাপনা নির্মাণের কারণে বরেন্দ্রভূমিতে প্রতিদিন কমছে ২২০ হেক্টর করে কৃষিজমি। বস্তুত নানা কারণে সারা দেশেই প্রতিদিন কমছে কৃষিজমি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ থেকে ২০২৩ সময়ে দেশে আবাদি জমি কমেছে প্রায় ১ শতাংশ, যা গত এক দশকে সর্বোচ্চ হ্রাসের ঘটনা। বস্তুত নতুন আবাসন, রাস্তাঘাট, শিল্পকারখানাসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণের কারণে সারা দেশে ফসলি জমি কমে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের ‘রাইস ভিশন ফর বাংলাদেশ ২০৫০ অ্যান্ড বিয়ন্ড’ শীর্ষক এক গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, ২০৫০ সালে দেশের জনসংখ্যা হবে ২১ কোটি ৫৪ লাখ। তখন দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে ধান চাষের জমি যাতে না কমে, তা নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমানে সারা দেশেই ধানের জমিতে গড়ে উঠছে নানা ধরনের স্থাপনা; বিভিন্ন ফলের বাগান। এতে ধান চাষের উপযোগী জমি কমে যাচ্ছে। কৃষকরা বলছেন, ফসলি জমি রক্ষায় আইন থাকলেও স্থানীয় প্রশাসন এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশের উপকূলীয় জেলাগুলোর বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলি জমির উর্বরতা শক্তি কমে যাচ্ছে। দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় এর প্রভাবও পড়বে। কাজেই সংশ্লিষ্ট সবাইকে সম্মিলিতভাবে দায়িত্ব নিতে হবে যাতে কোনো ফসলি জমি ইটভাটা, রিসোর্ট বা আবাসিক প্রকল্পের নামে ধ্বংস না হয়। আগামীতে এমন পরিস্থিতিও তৈরি হতে পারে, যখন পর্যাপ্ত অর্থের বিনিময়েও সময়মতো খাদ্য আমদানি করা সম্ভব হবে না। কাজেই দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে যেভাবেই হোক ধান চাষের জমি যাতে না কমে, তা নিশ্চিত করতে হবে।
প্রিন্ট