এবার দুদক নামছে নির্বাচনের ফলকনামা আয় ব্যয় নিয়ে
- আপডেট টাইম : ০৩:৩১:০৮ পূর্বাহ্ণ, বুধবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩
- / ৮৬ ৫০০০.০ বার পাঠক
২০০৮ সাল থেকে নির্বাচন কমিশনে দাখিলকৃত হলফনামায় প্রার্থীর আয়-ব্যয়ের হিসাব দাখিলের প্রচলন করা হয়। এর মধ্যে প্রার্থীর আয়-ব্যয়, সম্পদের হিসাব, তার ওপর নির্ভরশীলদের আয়-ব্যয়, সম্পদের হিসাব সম্পর্কিত তথ্যাদি অন্তর্ভুক্ত থাকে। সুশাসন প্রশ্নে প্রার্থীর সম্পদের তথ্য প্রদান বাধ্যতামূলক করা হয়।
নির্বাচনের আইন অনুযায়ী, প্রার্থীরা তাদের মনোনয়নপত্রের সঙ্গে হলফনামা দাখিল করেন। তাতে অন্তত ৮ ধরনের তথ্য উল্লেখ করতে হয়। এসব তথ্যের মধ্যে রয়েছে শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশা ও আয়ের উৎস, মামলার বিবরণী, প্রার্থীর নিজের ও তার ওপর নির্ভরশীলদের আয়-ব্যয়, সম্পদ এবং দায়দেনা। হলফনামায় এসব তথ্য সংযোজন করে তা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে জমা দিতে হয়। নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে এই হলফনামা সবার জন্য উন্মুক্ত করার নিয়ম।
নির্বাচনের প্রার্থীদের এসব তথ্য দেয়া এবং তা প্রকাশের বাধ্যবাধকতার উদ্দেশ্য হচ্ছে ভোটারদের তথ্য দিয়ে ওই প্রার্থী সম্পর্কে জানানো। তারা যাতে জেনে-বুঝে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন।
প্রথাগতভাবে এবারও প্রার্থীরা হলফনামায় সম্পদের তথ্য দাখিল করেছেন। কিন্তু দাখিলকৃত এসব তথ্য জনমানুষের মধ্যে ব্যাপক সন্দেহের সঞ্চার করেছে। কারণ, অধিকাংশ তথ্যই মিথ্যা, প্রতারণামূলক ও শুভঙ্করের ফাঁকি বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। অনেক প্রার্থীরই আয়ের বিশ্বাসযোগ্য উৎস নেই। স্থাবর সম্পদের তথ্য উল্লেখ করা হলেও সেগুলোর মূল্য দেখানো হচ্ছে অবিশ্বাস্য কম। অস্থাবর সম্পদের মূল্য দেখানো হচ্ছে ইচ্ছেমতো। অনেকে আয়ের উৎস দেখিয়েছেন মৎস্য চাষ, হাঁস-মুরগির খামার, কৃষিকর্ম। শেয়ার মার্কেটে ব্যবসালব্ধ আয়ও দেখাচ্ছেন কেউ কেউ। নিজের সম্পদ না থাকলেও অবিশ্বাস্য হারে বেড়েছে প্রার্থীর স্ত্রীর সম্পদ। সংযুক্ত আয়কর নথিতে থাকছে সম্পদের বহু সন্দেহনজন উৎস। হলফনামায় সম্পদের পরিমাণ উল্লেখ থাকলেও সাদা চোখেই ধরা পড়ে-সম্পদের উৎসের অসঙ্গতি। নির্বাচন কমিশনকে কখনও দাখিলকৃত তথ্য স্বউদ্যোগে যাচাই করতে দেখা যায় না। তবে সম্পদের তথ্য কখনও কখনও দুর্নীতি দমন কমিশন ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে যাচাই করতে দেখা যায়।
বেসরকারি সংস্থা ‘সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন’ ২০১৪ সালে নির্বাচনে অংশ নেয়া গুরুত্বপূর্ণ ৪৮ প্রার্থীর ২০০৮ সালের হলফনামা ও ২০১৪ সালের হফলনামা পর্যালোচনা করে। এতে দেখা যায় ওই ৪৮ প্রার্থীর মধ্যে অনেকের আয় ২০০৮ সালের তুলনায় ২০১৪ সালে ৮ হাজার গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়া গুরুত্বপূর্ণ ৫৩ জন প্রার্থীর সম্পদ বিবরণী পর্যালোচনা করে সুজন। এ প্রার্থীগণ দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও অংশ নিয়েছিলেন। তাতে দেখা যায়, ৫৩ জন প্রার্থীর আয় গড়ে ১০৬.৭৩ শতাংশ বেড়েছে। আয় বৃদ্ধির এই হার ১০.৯১ শতাংশ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১১৫২.০৭ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। এবারও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। গত পাঁচ বছরে অনেক প্রার্থীর নিজের সম্পদ বেড়েছে মাত্র দেড় থেকে দুই গুণ। কিন্তু তাদের স্ত্রী-সন্তানদের নামে সম্পদ বেড়েছে ৫০ থেকে ৬০ গুণ। অস্বাভাবিক এই সম্পদের হিসাব দেখে দুদকের চোখ কপালে ওঠার কথা থাকলেও আশ্চর্যজনকভাবে সংস্থাটি এবার নির্বিকার। পিয়ন-চাপরাশি, ছাপোষা কর্মচারী, স্কুলশিক্ষক, এসিল্যান্ড অফিসের উমেদার, এমএলএস, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অবৈধ সম্পদের তত্ত্ব-তালাশ নিতেই সংস্থাটিকে বছরজুড়ে যতটা ব্যতিব্যস্ত থাকতে দেখা যায় ততটা আগ্রহ নেই প্রার্থীদের হফলনামায় উল্লেখিত সম্পদের অবিশ্বাস্য হিসাব নিয়ে।
সংবাদ মাধ্যমগুলো বলছে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন অনেক দুর্নীতিবাজ, রাঘব বোয়াল। অথচ তাদের দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ নিয়ে মাথা ব্যথা নেই সংস্থাটির। দুদক যেন এবার চোখ থাকতেও অন্ধ। যদিও নির্বাচনের পূর্বমুহূর্তে দুদকের এহেন নির্বিকার ভূমিকায় সমালোচনায় মুখর বিশ্লেষকরা। গত ৫ বছরে অনেক প্রার্থীর স্বনামে অর্জিত সম্পদ বেড়েছে দেড়-দুই গুণ। কিন্তু তাদের স্ত্রী-সন্তানদের নামে সম্পদ বেড়েছে ৫০ থেকে ৬০ গুণ। কয়েকটি দৃষ্টান্ত দিলেই বিষয়টি অনুমান করা যায়।
শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি এবার নির্বাচন করছেন চাঁদপুর-৩ আসন থেকে। দাখিলকৃত হলফনামার তথ্য মতে, ডা: দীপু মনির ঢাকার ধানমন্ডিতে রয়েছে দু’টি ফ্ল্যাট। যার দলিল মূল্য দেখিয়েছেন ৩৫ লাখ টাকা। বলাবাহুল্য, মৌজা রেট অনুযায়ী দলিলে সম্পত্তির মূল্য উল্লেখ করা হয়। প্রকৃত মূল্য বহুগুণ বেশি। যে প্রতিষ্ঠান থেকে ফ্ল্যাটগুলো কেনা হয়েছে সেই প্রতিষ্ঠান বা এর মালিকের অনুকূলে পরিশোধিত অর্থের হিসাব ধরে টান দিলেই প্রকৃত মূল্য জানা সম্ভব। প্রকৃত মূল্য অনুসন্ধান দুর্নীতি দমন কমিশনের কাজ।
ডা: দীপুমনির স্থাবর সম্পদ উল্লেখ করেছেন, ৩৪ লাখ এক হাজার ৯৫৭ টাকা মূল্যের ১০ কাঠা জমি আছে। ২৫ তোলা স্বর্ণের মূল্য দেখিয়েছেন মাত্র ৯ লাখ টাকা। একটি ফ্ল্যাটের মালিকানা দেখিয়েছেন স্বামীর নামে। মূল্য দেখানো হয়েছে ১৫ লাখ টাকা। বাস্তবিক অর্থে যা অবিশ্বাস্য। আসবাব দেখিয়েছেন ১ লাখ টাকার। তবে স্বামীর নামে কেনা আসবাবপত্রের মূল্য দেখিয়েছেন ১০ লাখ ৫ হাজার টাকা।
হবিগঞ্জ-৪ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী। তিনি ঢাকায় নিজ মালিকানাধীন ৪তলা ভবনের মূল্য দেখিয়েছেন মাত্র ৩৬ লাখ টাকা। নিজ এলাকায় ২৪ বিঘা জমির মূল্য দেখিয়েছেন ৪ লাখ টাকা, যা অবাস্তবই শুধু নয়-অবিশ্বাস্যও বটে। ২০১৮ সালে মাহবুব আলীর হলফনামায় তার ওপর নির্ভরশীল সদস্যদের কোনো সম্পদ ছিল না। এবারের হফলনামায় স্ত্রীসহ অন্য নির্ভরশীলদের সম্পদ দেখানো হয়েছে ১ কোটি ৭০ লাখ ৫৩৫ টাকা। যদিও স্ত্রীর নামে অর্জিত সম্পদের কোনো উৎস দেখানো হয়নি। তবু পাঁচ বছরে তার সম্পদ বেড়েছে ২৫ দশমিক ২৯ গুণ। তার স্বর্ণালঙ্কার ৩০ ভরি। স্ত্রীর স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে ১৫ লাখ ৫০ হাজার ৭০০ টাকার চা বাগান, রাবার বাগান ও মৎস্য খামার।
মাদারীপুর-২ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাবেক নৌ-পরিবহণ মন্ত্রী শাজাহান খান। হলফনামার তথ্য অনুযায়ী তার সম্পদ বেড়েছে ৩২ গুণ। বেড়েছে স্ত্রীর সম্পদও।
২০০৮ ও ২০২৩ সালে মনোনয়নপত্রের হলফনামা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ২০০৮ সালে শাজাহান খানের বার্ষিক আয় ছিল ৬ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। এবার আয় দেখিয়েছেন ২ কোটি ২১ লাখ টাকা। ২০০৮ সালে তার অস্থাবর সম্পদ ছিল অন্তত ৫৭ লাখ টাকার। এখন তা দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৮৫ লাখ টাকায় (আসবাব, ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম ও বন্দুকের মূল্য ব্যতীত)। অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে পাঁচ গুণ। তার ব্যবহৃত গাড়ি আছে ২টি। একটির দাম ১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। একটি বন্দুক ও পিস্তল রয়েছে। স্ত্রীর রয়েছে ৮০ ভরি স্বর্ণ। ২০০৮ সালে শাজাহান খান ২টি বাস, একটি গাড়ি ও একটি মাইক্রোবাস, ১৫ ভরি সোনাসহ প্রায় ৪১ লাখ টাকার সম্পদ দেখিয়েছিলেন। শাজাহান খান ও তার স্ত্রীর রয়েছে বেশ কিছু কৃষি ও অকৃষি জমি। এছাড়া ৬ কোটি টাকা মূল্যের ভবন রয়েছে। এটি তিনি ‘দানসূত্রে’ পেয়েছেন মর্মে উল্লেখ করেছেন হলফনামায়। স্ত্রীর নামে রয়েছে রাজউকের ১০ কাঠার প্লট।
বিএনপি থেকে পল্টি খেয়ে আওয়ামী লীগের নৌকায় ওঠা ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ঝালকাঠি-১ আসন থেকে। হলফনামায় তিনি কোনো স্থাবর সম্পত্তির তথ্য দেননি। যদিও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় তিনি বাড়ি, কৃষিজমি এবং অ্যাপার্টমেন্টের তথ্য উল্লেখ করেছেন। শাহজাহান ওমর এবার ‘আয়’ দেখিয়েছেন, কৃষি খাত থেকে ১ লাখ ৫ হাজার টাকা। বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট থেকে আয় দেখান ১৯ লাখ ৪৫ হাজার ২৭৭ টাকা। ব্যবসালব্ধ আয় দেখান ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬৬৭ টাকা। পুঁজিবাজার ও ব্যাংকের লভ্যাংশ থেকে আয় ৯ লাখ ১৬ হাজার ২২৬ টাকা। যদিও ২০১৮ সালে তিনি কৃষি খাতের আয় ১ লাখ ৮২ হাজার, শেয়ার ও ব্যাংক লভ্যাংশ থেকে ১৬ লাখ ৫৬ হাজার ২৩২ ও আইন পেশা থেকে ১০ লাখ ২১ হাজার ৬০০ টাকা উল্লেখ করেন।
অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে শাহজাহান ওমরের কাছে নগদ ৬ লাখ ৬৪ হাজার ৫২৭, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ৭ লাখ ৮৩ হাজার ৮৫৭, এফডিআর হিসেবে ১ কোটি ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা আছে। তবে ৫ বছর আগের হলফনামায় নগদ ৭ লাখ ৭১ হাজার ৩৪৪, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ৫ লাখ ৪৯ হাজার ৯১৩ এবং এফডিআর হিসেবে ২ কোটি ১২ লাখ ৪২ হাজার টাকা ছিল। এ হিসাব অনুযায়ী পাঁচ বছরে তার অস্থাবর সম্পত্তি হ্রাস পেয়েছে। বেড়েছে স্ত্রীর সম্পত্তি। ২০১৮ সালে তাঁর স্ত্রীর নামে নগদ ৭০ হাজার ৮৭৭ টাকা থাকলেও ২০২৩ সালে ৩৫ লাখ ১৪ হাজার ৪৫০ টাকা আছে। অর্থাৎ ৫ বছরে স্ত্রীর কাছে প্রায় ৫০ গুণ নগদ টাকা বেড়েছে। এ ছাড়া স্ত্রীর নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৯১৩ টাকা, স্থায়ী আমানত ও এফডিআর বাবদ ১ কোটি ১ লাখ টাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় স্ত্রীর নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ছিল ৩ লাখ ৪৭ হাজার ২১২, স্থায়ী আমানত ও এফডিআর ১ কোটি ৮ লাখ ২৯ হাজার ৮৮৯ টাকা ছিল।
শাহজাহান ওমরের ৬০ লাখ ৭০ হাজার দামের একটি গাড়ি আছে। স্ত্রীর গাড়ির দাম দেখানো হয়েছে ১৭ লাখ ৪ হাজার টাকা। উভয়ের আসবাবপত্রসহ আরো ১৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য উল্লেখ করেন হলফনামায়। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় নিজের ও স্ত্রীর নামে স্থাবর সম্পদ হিসেবে কৃষিজমি, অকৃষিজমি, বাড়ি ও অ্যাপার্টমেন্টের হিসাব দিয়েছিলেন ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর। ২০১৮ সালে তাদের উভয়ের নামে কৃষি ও অকৃষিজমির দাম দেখান ৪৫ লাখ ৮৭ হাজার ৭৬১ টাকা। বরিশাল ও রাজাপুরে ৩টি বাড়ি ও ভবনের দাম দেখানো হয় ১ কোটি ৭৮ লাখ ৪০ হাজার ৫০৮ টাকা। ঢাকায় একটি খামারের মূল্য দেখান ৪৮ লাখ ২৪ হাজার ৫০৮ টাকা। পাঁচ বছরের ব্যবধানে এবারের হলফনামায় স্থাবর কোনো সম্পদের হিসাব তিনি দেননি। তবে বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া বাবদ ১৯ লাখ ৪৫ হাজার ২৭৭ টাকা আয়ের তথ্য উল্লেখ করেছেন।
সিলেট-৬ আসন থেকে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন শমসের মুবিন চৌধুরী। দাখিলকৃত হলফনামায় তার সম্পদের পরিমাণ কমেছে মর্মে উল্লেখ করেছেন। ২০১৮ সালে হলফনামায় তার বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন পৌনে ২ কোটি টাকা। এবার দেখিয়েছেন ৮ লাখ টাকার সামান্য বেশি। আয়ের সমুদয় অর্থ তিনি শেয়ারবাজার, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানত থেকে পেয়েছেন মর্মে দাবি করেন। আয় কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন, ২০১৮ সালের মতো এবার তার ব্যাংক ডিপোজিট ও সেভিং সার্টিফিকেট মুনাফা এবং পেশাগত আয় নেই। ২০১৮ সালে এ তিন খাতে তিনি বার্ষিক ২৫ লাখ ৫৩ হাজার ২১৫ টাকা আয় করতেন। ২০১৮ সালে ‘শেয়ার, সঞ্চয়পত্র/ব্যাংক আমানত’ খাত থেকেই তিনি বার্ষিক আয় করতেন ১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।
সিলেট-৪ আসন থেকে আওয়ামী লীগের টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। গত ১৫ বছরে তার আয় বেড়েছে ৩ গুণ। কিন্তু স্ত্রীর সম্পদ বেড়েছে ২২ গুণ। ২০০৮ সালের হলফনামায় স্ত্রীর সম্পদ ছিল ৩৪ লাখ ৮ হাজার টাকা। এবারের হলফনামায় সেটি দেখানো হয়েছে ৭ কোটি ৫ হাজার ২৮ টাকা।
খুলনা-৪ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ব্যবসায়ী আবদুস সালাম মুর্শেদী। গত ৫ বছরে তার সম্পদ বেড়েছে ৪৩ কোটি টাকা। ২০০৮ সালের হলফনামায় সম্পদ ছিল ৯৫ কোটি ১১ লাখ টাকা। এবার উল্লেখ করা হয়েছে ১৩৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।
রাজশাহী-২ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। হলফনামা অনুযায়ী এবার তার আয় এবং সম্পদ দুটোই বেড়েছে।
হফলনামা অনুযায়ী এবার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বেড়েছে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমানের। বেড়েছে ঋণের পরিমাণও। নড়াইল-২ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। তার আয় কম উল্লেখ করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম-১৫ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভী। স্ত্রীর তুলনায় নিজের স্বর্ণালঙ্কার (৫০ ভরি) দেখিয়েছেন বেশি। চট্টগ্রাম-১২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন আওয়ামী লীগ নেতা সামশুল হক চৌধুরী। গত ১৫ বছরে তার স্ত্রীর সম্পত্তির পরিমাণ বেড়েছে ৪১ গুণ (৩ কোটি ৫০ লাখ ১৭ হাজার ১৭২ টাকা)। এবার নিজের অবস্থাবর সম্পদ উল্লেখ করেছেন ৫ কোটি ৪১ লাখ ১৯ হাজার ৫৯০ টাকার।
এভাবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন প্রায় ৩ হাজার প্রার্থী। তাদের হলফনামার তথ্যের সত্যাসত্য যাচাই করার দায়িত্ব দুর্নীতি দমন কমিশনের। দুদক এবার এ কাজটি করবে কি নাÑ জানতে চাওয়া হয় সংস্থার সচিব মো: মাহবুব হোসেনের কাছে। জবাবে তিনি বলেন, দুদক তার ম্যান্ডেট অনুযায়ী কাজ করে। নির্বাচন আলাদা বিষয়। নির্বাচনকে উদ্দেশ্য করে সুনির্দিষ্ট কিছু করার সুযোগ আমাদের নেই। হলফনামা ধরে এখনই কারো পেছনে দৌড়াবÑ বিষয়টি এমন নয়।
এদিকে ‘সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন’ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, হলফনামায় দাখিলকৃত তথ্যগুলো ভোটার পর্যন্ত পৌঁছানো গুরুত্বপূর্ণ। এ কাজ নির্বাচন কমিশনের করার কথা। কিন্তু তারা এগুলো নিয়ে ওয়েবসাইটেও ঠিকমতো দেয় না।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানের মতে, সততার সাথে বা দুর্নীতিমুক্ত হয়ে জনপ্রতিনিধিত্বের অবস্থানটাকে প্রতিপালন করছেন কি না সেগুলো জানার সুযোগ হয়। তবে এগুলো নিয়ে নির্বাচন কমিশন সত্যিকার অর্থে তার নির্ধারিত দায়িত্বটা পালন করে না।