ঢাকা ০২:৫৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ৯ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার বদরপুরে একটি পুকুর থেকে কামদেব দাস নামে উনিশ বছর বয়সী এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ Logo ভৈরবে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে অস্ত্র সহ রগ কাটা ফজলু ডাকাত গ্রেফতার Logo উদীচী ছায়ানট ও গণমাধ্যমে হামলার প্রতিবাদে দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ এর আয়োজন করেন বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোস্ঠী মঠবাড়ীয়া শাখা Logo তারেক রহমানের  আসার উপলক্ষে ভৈরবে বিএনপির আনন্দ র‍্যালি Logo দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ, ব্যারিকেড ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা Logo বলিউডের ১২ হাজার কোটির বছর: শীর্ষ ১০ সিনেমায় বক্স অফিস রেকর্ড Logo এবার ১৪ ঘণ্টায় এলো ২৩ লাখ ৬৮ হাজার টাকা ডা. তাসনিম জারা Logo কপাল পুড়ল’ রুমিন ফারহানার, জুনায়েদকে সমর্থন বিএনপির Logo একনেকে ৪৬ হাজার ৪১৯ কোটি টাকার ২২ প্রকল্প অনুমোদন Logo পাবনার বাজারে বিক্রি হওয়া দুধে মিলল ডিটারজেন্ট

এক বছরেও ভাঙেনি আওয়ামী সিন্ডিকেট

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় ১২:১৮:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ অগাস্ট ২০২৫
  • ১৫৭ ১৮৪৪.০০০ বার পড়া হয়েছে

রাজশাহীর রাজবাড়িহাট আঞ্চলিক দুগ্ধ ও গবাদি উন্নয়ন খামারে দাপটের সঙ্গে এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছে আওয়ামীপন্থি ঠিকাদার সিন্ডিকেট। দলটি এক বছর আগে ক্ষমতাচ্যুত হলেও দেশের অন্যতম বৃহৎ এ পশু খামারটিতে খাদ্য সরবরাহের টেন্ডার এখনো নিয়ন্ত্রণ করছে এ প্রভাবশালী চক্রটি। গত পাঁচ অর্থবছরে এ সিন্ডিকেটটি কম দামের নিম্নমানের খাদ্য সরবরাহ করে হাতিয়ে নিয়েছে অন্তত ১৫ কোটি টাকা।

অভিযোগ উঠেছে, সংশ্লিষ্টদের ‘ম্যানেজ’ করে ২০২৫-২৬ অর্থবছরেও খাদ্য সরবরাহের একটি প্যাকেজের চারটির মধ্যে তিন গ্রুপের কাজের অনুমোদন পেয়েছে আওয়ামীপন্থি সিন্ডিকেটটি। ৮ জুলাই প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (উৎপাদন) ড. এবিএম খালেদুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক পত্রে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। তিনটি গ্রুপে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন না দেওয়ায় সরকারের ৯১ লাখ ৮১ হাজার ৪৭২ টাকা তছরুপ করা হয়েছে। টেন্ডার প্রক্রিয়ার সংশ্লিষ্ট সব নথিপত্র যুগান্তরের হাতে এসেছে।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ তিন গ্রুপের মধ্যে দুটির অনুমোদন রাজশাহী জেলা কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইমন মন্ডলের বাবা রবিউল করিমের মালিকানাধীন মেসার্স করিম ট্রেডার্সকে দিয়েছে। মূলত গত এক যুগ থেকে ইমন বাবার পক্ষে করিম ট্রেডার্সের সব কর্মকাণ্ড দেখভাল করেন। ৫ আগস্টের পর তিনি আত্মগোপন করেছেন। এছাড়া আরেকটি গ্রুপে খাদ্য সরবরাহের অনুমোদন পেয়েছে সাবেক প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাসের এপিএস হিলটন সাহার মালিকানাধীন এইচএন এন্টারপ্রাইজ।

এদিকে টেন্ডার প্রক্রিয়ার নিয়মানুযায়ী, অনুমোদন পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিককে সশরীরে উপস্থিত হয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করতে হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গা ঢাকা দেন এইচএন এন্টারপ্রাইজের মালিক হিলটন সাহা। তবে তার পক্ষে নিয়ম ভেঙে চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন স্থানীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স করিম ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী রবিউল করিম এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় অন্যান্য ঠিকাদারদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ এবং অসন্তোষ বিরাজ করেছে।

নথিপত্র পর্যালোচনায় দেখা গেছে, প্যাকেজের দুই নম্বর গ্রুপে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসাবে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার কানাইডাঙা এলাকার মেসার্স করিম ট্রেডার্সকে আস্ত ছোলা ও রাইস ব্রানসহ অন্যান্য খাদ্য সরবরাহের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। করিম ট্রেডার্স এ সরবরাহে এক কোটি ৩৬ লাখ ৬ হাজার ৪৪৯ টাকা দর প্রদান করে। অথচ টেন্ডারে অংশ নেওয়া সর্বনিম্ন দরদাতা হিসাবে রাজশাহীর মেসার্স সদর অ্যান্ড ব্রাদার্স ৬৯ লাখ ৯১ হাজার ৫৫৫ টাকা প্রদান করেছে। এছাড়া আরও দুটি প্রতিষ্ঠান মেসার্স বেতাগা ট্রেডার্স ৭১ লাখ ১৬ হাজার ১৪৮ টাকা এবং এইচএন এন্টারপ্রাইজ ১ কোটি ১১ লাখ ৬৩ হাজার ৩১৪ টাকা দর প্রদান করে। ফলে সর্বোচ্চ দরদাতা করিম ট্রেডার্সকে খাদ্য সরবরাহের অনুমোদন দেওয়ায় ৬৬ লাখ ১৪ হাজার ৮৯৪ টাকা তছরুপ করা হয়েছে। এর বিনিময়ে অনৈতিক সুবিধা নিয়েছেন খামারটির অসাধু কর্মকর্তারা।

একইভাবে প্যাকেজের তিন নম্বর গ্রুপের আস্ত ভুট্টা এবং লাইম স্টোনসহ অন্য খাদ্য সরবরাহে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা হিসাবে করিম ট্রেডার্সকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ৮৪ লাখ ৫৯ হাজার ৮৮৩ টাকা দর প্রদান করে। সর্বনিম্ন দরদাতা হিসাবে মেসার্স বেতাগা ট্রেডার্স প্রদান করে ৬১ লাখ ৯৮ হাজার ৩৮২ টাকা। আর মেসার্স সদর অ্যান্ড ব্রাদার্সের দর ছিল ৬৯ লাখ ৩০ হাজার ১৮৮ টাকা। এক্ষেত্রেও সরকারের ২২ লাখ ৬১ হাজার ৪৯৬ টাকা ক্ষতি হয়েছে।

এছাড়া প্যাকেজের ৪ নম্বর গ্রুপে হিলটন সাহার এইচএন এন্টারপ্রাইজকে ধানের শুকনো খড় এবং ডালের ভুসিসহ অন্য খাদ্য সরবরাহের অনুমোদন দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি দর প্রদান করেছে ৭০ লাখ ৪৯ হাজার ৯৩৭ টাকা। অথচ সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে মেসার্স সদর অ্যান্ড ব্রাদার্স দর প্রদান করে ৬৭ লাখ ৪৪ হাজার ৮৫৫ টাকা। এক্ষেত্রেও সরকারের তিন লাখ ৫ হাজার ৮২ টাকা তছরুপ করা হয়েছে।

খামারটির সাবেক ঠিকাদার শামসুল খান বলেন, গত পাঁচ অর্থবছর থেকে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের দাপট দেখিয়ে এইচএন এন্টারপ্রাইজ এবং করিম ট্রেডার্স দুগ্ধ খামারের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করেছে। কারণ প্রতিষ্ঠান দুটির মালিক আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন। এ দুটি প্রতিষ্ঠানের দাপটে আমরা ছিলাম অসহায়। এ কারণে দীর্ঘ সময় কাজ না পেয়ে খামারে ঠিকাদারি বন্ধ করে দিয়েছি।

তিনি বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দুটি খামারটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে অবৈধ লেনদেনের বিনিময়ে নিম্নমানের কম দামি খাদ্য সরবরাহ করে গত কয়েকটি অর্থ বছরে অন্তত ১৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। আওয়ামী লীগের পতন হলেও এ ধারা অব্যাহত রয়েছে। এ সিন্ডিকেটটিই জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসে আছে। বিধি-বিধানের তোয়াক্কা না করে তাদের সরবরাহের অনুমোদন দিয়ে সরকারি অর্থ তছরুপ করা হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, এইচএন এন্টারপ্রাইজ এবং করিম ট্রেডার্স খামারের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণে একে অপরের সহযোগী। করিম ট্রেডার্স স্থানীয় প্রতিষ্ঠান। এ কারণে এইচএন এন্টারপ্রাইজের মালিক হিলটন সাহা আত্মগোগনে থাকলেও তার অনুপস্থিতিতে চুক্তি স্বাক্ষরের জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন করিম ট্রেডার্সের মালিক রবিউল করিম।

তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, হিলটন সাহার পক্ষে চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য আমার কোনো তৎপরতা নেই। এ ধরনের অভিযোগ ভিত্তিহীন।

সর্বোচ্চ দরদাতাকে খাদ্য সরবরাহের অনুমোদনের মাধ্যমে অর্থ তছরুপ এবং হিলটন সাহার অনুপস্থিতিতে চুক্তি স্বাক্ষরের তৎপরতার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন খামারের উপপরিচালক ড. মো. ইসমাইল হক। তিনি বলেন, ‘আমি টেন্ডার মূল্যায়ন কমিটির সদস্য না। যারা এ কমিটির সদস্য তারা বলতে পারবেন। এছাড়া কোনো দলীয় সিন্ডিকেট খামারের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করে না। তাদের সঙ্গে অনৈতিক লেনদেনের অভিযোগ ভিত্তিহীন।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তিনজন কর্মকর্তা মূল্যায়ন কমিটির সদস্য। এ কমিটির অন্যতম সদস্য সহকারী পরিচালক ডা. মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘নিম্ন দারদাতাদের অনুমোদন না দেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।


প্রিন্ট
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার বদরপুরে একটি পুকুর থেকে কামদেব দাস নামে উনিশ বছর বয়সী এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ

এক বছরেও ভাঙেনি আওয়ামী সিন্ডিকেট

আপডেট সময় ১২:১৮:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ অগাস্ট ২০২৫

রাজশাহীর রাজবাড়িহাট আঞ্চলিক দুগ্ধ ও গবাদি উন্নয়ন খামারে দাপটের সঙ্গে এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছে আওয়ামীপন্থি ঠিকাদার সিন্ডিকেট। দলটি এক বছর আগে ক্ষমতাচ্যুত হলেও দেশের অন্যতম বৃহৎ এ পশু খামারটিতে খাদ্য সরবরাহের টেন্ডার এখনো নিয়ন্ত্রণ করছে এ প্রভাবশালী চক্রটি। গত পাঁচ অর্থবছরে এ সিন্ডিকেটটি কম দামের নিম্নমানের খাদ্য সরবরাহ করে হাতিয়ে নিয়েছে অন্তত ১৫ কোটি টাকা।

অভিযোগ উঠেছে, সংশ্লিষ্টদের ‘ম্যানেজ’ করে ২০২৫-২৬ অর্থবছরেও খাদ্য সরবরাহের একটি প্যাকেজের চারটির মধ্যে তিন গ্রুপের কাজের অনুমোদন পেয়েছে আওয়ামীপন্থি সিন্ডিকেটটি। ৮ জুলাই প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (উৎপাদন) ড. এবিএম খালেদুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক পত্রে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। তিনটি গ্রুপে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন না দেওয়ায় সরকারের ৯১ লাখ ৮১ হাজার ৪৭২ টাকা তছরুপ করা হয়েছে। টেন্ডার প্রক্রিয়ার সংশ্লিষ্ট সব নথিপত্র যুগান্তরের হাতে এসেছে।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ তিন গ্রুপের মধ্যে দুটির অনুমোদন রাজশাহী জেলা কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইমন মন্ডলের বাবা রবিউল করিমের মালিকানাধীন মেসার্স করিম ট্রেডার্সকে দিয়েছে। মূলত গত এক যুগ থেকে ইমন বাবার পক্ষে করিম ট্রেডার্সের সব কর্মকাণ্ড দেখভাল করেন। ৫ আগস্টের পর তিনি আত্মগোপন করেছেন। এছাড়া আরেকটি গ্রুপে খাদ্য সরবরাহের অনুমোদন পেয়েছে সাবেক প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাসের এপিএস হিলটন সাহার মালিকানাধীন এইচএন এন্টারপ্রাইজ।

এদিকে টেন্ডার প্রক্রিয়ার নিয়মানুযায়ী, অনুমোদন পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিককে সশরীরে উপস্থিত হয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করতে হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গা ঢাকা দেন এইচএন এন্টারপ্রাইজের মালিক হিলটন সাহা। তবে তার পক্ষে নিয়ম ভেঙে চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন স্থানীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স করিম ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী রবিউল করিম এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় অন্যান্য ঠিকাদারদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ এবং অসন্তোষ বিরাজ করেছে।

নথিপত্র পর্যালোচনায় দেখা গেছে, প্যাকেজের দুই নম্বর গ্রুপে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসাবে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার কানাইডাঙা এলাকার মেসার্স করিম ট্রেডার্সকে আস্ত ছোলা ও রাইস ব্রানসহ অন্যান্য খাদ্য সরবরাহের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। করিম ট্রেডার্স এ সরবরাহে এক কোটি ৩৬ লাখ ৬ হাজার ৪৪৯ টাকা দর প্রদান করে। অথচ টেন্ডারে অংশ নেওয়া সর্বনিম্ন দরদাতা হিসাবে রাজশাহীর মেসার্স সদর অ্যান্ড ব্রাদার্স ৬৯ লাখ ৯১ হাজার ৫৫৫ টাকা প্রদান করেছে। এছাড়া আরও দুটি প্রতিষ্ঠান মেসার্স বেতাগা ট্রেডার্স ৭১ লাখ ১৬ হাজার ১৪৮ টাকা এবং এইচএন এন্টারপ্রাইজ ১ কোটি ১১ লাখ ৬৩ হাজার ৩১৪ টাকা দর প্রদান করে। ফলে সর্বোচ্চ দরদাতা করিম ট্রেডার্সকে খাদ্য সরবরাহের অনুমোদন দেওয়ায় ৬৬ লাখ ১৪ হাজার ৮৯৪ টাকা তছরুপ করা হয়েছে। এর বিনিময়ে অনৈতিক সুবিধা নিয়েছেন খামারটির অসাধু কর্মকর্তারা।

একইভাবে প্যাকেজের তিন নম্বর গ্রুপের আস্ত ভুট্টা এবং লাইম স্টোনসহ অন্য খাদ্য সরবরাহে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা হিসাবে করিম ট্রেডার্সকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ৮৪ লাখ ৫৯ হাজার ৮৮৩ টাকা দর প্রদান করে। সর্বনিম্ন দরদাতা হিসাবে মেসার্স বেতাগা ট্রেডার্স প্রদান করে ৬১ লাখ ৯৮ হাজার ৩৮২ টাকা। আর মেসার্স সদর অ্যান্ড ব্রাদার্সের দর ছিল ৬৯ লাখ ৩০ হাজার ১৮৮ টাকা। এক্ষেত্রেও সরকারের ২২ লাখ ৬১ হাজার ৪৯৬ টাকা ক্ষতি হয়েছে।

এছাড়া প্যাকেজের ৪ নম্বর গ্রুপে হিলটন সাহার এইচএন এন্টারপ্রাইজকে ধানের শুকনো খড় এবং ডালের ভুসিসহ অন্য খাদ্য সরবরাহের অনুমোদন দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি দর প্রদান করেছে ৭০ লাখ ৪৯ হাজার ৯৩৭ টাকা। অথচ সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে মেসার্স সদর অ্যান্ড ব্রাদার্স দর প্রদান করে ৬৭ লাখ ৪৪ হাজার ৮৫৫ টাকা। এক্ষেত্রেও সরকারের তিন লাখ ৫ হাজার ৮২ টাকা তছরুপ করা হয়েছে।

খামারটির সাবেক ঠিকাদার শামসুল খান বলেন, গত পাঁচ অর্থবছর থেকে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের দাপট দেখিয়ে এইচএন এন্টারপ্রাইজ এবং করিম ট্রেডার্স দুগ্ধ খামারের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করেছে। কারণ প্রতিষ্ঠান দুটির মালিক আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন। এ দুটি প্রতিষ্ঠানের দাপটে আমরা ছিলাম অসহায়। এ কারণে দীর্ঘ সময় কাজ না পেয়ে খামারে ঠিকাদারি বন্ধ করে দিয়েছি।

তিনি বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দুটি খামারটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে অবৈধ লেনদেনের বিনিময়ে নিম্নমানের কম দামি খাদ্য সরবরাহ করে গত কয়েকটি অর্থ বছরে অন্তত ১৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। আওয়ামী লীগের পতন হলেও এ ধারা অব্যাহত রয়েছে। এ সিন্ডিকেটটিই জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসে আছে। বিধি-বিধানের তোয়াক্কা না করে তাদের সরবরাহের অনুমোদন দিয়ে সরকারি অর্থ তছরুপ করা হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, এইচএন এন্টারপ্রাইজ এবং করিম ট্রেডার্স খামারের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণে একে অপরের সহযোগী। করিম ট্রেডার্স স্থানীয় প্রতিষ্ঠান। এ কারণে এইচএন এন্টারপ্রাইজের মালিক হিলটন সাহা আত্মগোগনে থাকলেও তার অনুপস্থিতিতে চুক্তি স্বাক্ষরের জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন করিম ট্রেডার্সের মালিক রবিউল করিম।

তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, হিলটন সাহার পক্ষে চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য আমার কোনো তৎপরতা নেই। এ ধরনের অভিযোগ ভিত্তিহীন।

সর্বোচ্চ দরদাতাকে খাদ্য সরবরাহের অনুমোদনের মাধ্যমে অর্থ তছরুপ এবং হিলটন সাহার অনুপস্থিতিতে চুক্তি স্বাক্ষরের তৎপরতার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন খামারের উপপরিচালক ড. মো. ইসমাইল হক। তিনি বলেন, ‘আমি টেন্ডার মূল্যায়ন কমিটির সদস্য না। যারা এ কমিটির সদস্য তারা বলতে পারবেন। এছাড়া কোনো দলীয় সিন্ডিকেট খামারের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করে না। তাদের সঙ্গে অনৈতিক লেনদেনের অভিযোগ ভিত্তিহীন।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তিনজন কর্মকর্তা মূল্যায়ন কমিটির সদস্য। এ কমিটির অন্যতম সদস্য সহকারী পরিচালক ডা. মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘নিম্ন দারদাতাদের অনুমোদন না দেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।


প্রিন্ট