আফগানিস্তানে বিদায়ী প্রশাসনের সবাইকে কাজে ফিরতে বলছে তালেবান
- আপডেট টাইম : ০৬:৪৭:৩০ পূর্বাহ্ণ, বুধবার, ২৫ আগস্ট ২০২১
- / ২০২ ৫০০০.০ বার পাঠক
আন্তর্জাতিক রিপোর্ট।।
আফগান অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতিবিদ আশরাফ হায়দারিকে তালেবানের একজন কমান্ডার নির্দেশ দিয়েছেন কাজে যোগ দিতে। পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ট বিদায়ী প্রশাসনের আরও হাজার হাজার কর্মীর মতো, তিনিও তালেবানের প্রতিহিংসার শিকার হওয়ার আতঙ্কে ছিলেন।
হায়দারি (৪৭) রয়টার্সকে বলেন, তালেবান কমান্ডার তাকে বলছিলেন, মন্ত্রণালয়ে তার দপ্তরে গিয়ে কাজ শুরু করতে যেখানে বসে তিনি দেশের ৩৪টি প্রদেশের জন্য অর্থ ছাড় করতেন।
“তিনি বলেছিলেন, ‘ভয় পাবেন না বা লুকিয়ে থাকার চেষ্টা করবেন না, উন্মাদ বিদেশিরা চলে যাওয়ার পর আমাদের দেশটাকে পরিচালনা করার জন্য কর্মকর্তারা আপনার দক্ষতা কাজে লাগাতে চায়’।”
তালেবান শাসনের রীতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হায়দারি দাড়ি রাখতে শুরু করেছেন। রোববার টেলিফোন কলটি পাওয়ার পর তিনি তার স্যুট বদলে ঐতিহ্যবাহী আফগান জোব্বা পড়ে নতুন বসের সঙ্গে দেখা করতে যান। মঙ্গলবার তালেবানের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ কাবুলে সাংবাদিকদের বলেন, “এখন সময় হয়েছে জনগণকে দেশের জন্য কাজ করতে হবে।”
নারী সরকারী কর্মকর্তাদের কাজে ফেরত নেওয়ার কাঠামো তৈরি করতে তালেবান কাজ করছে বলেও জানান তিনি। তবে ‘নিরাপত্তার’ কারণে তাদের এ মুহূর্তে বাড়িতেই থাকা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি। আফগানিস্তানের অর্থ মন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যম-পর্যায়ের আরও তিন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে রয়টার্স; যারা জানিয়েছেন, তালেবান তাদেরকে কাজে যোগ দিতে বলেছে, যেহেতু দেশটি একটি অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে এবং সেখানে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে।অর্থ মন্ত্রণালয়ের রাজস্ব বিভাগের কর্মী সোহরাব সিকান্দার জানান, তালেবান নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের পর তিনি দপ্তরে যোগ দিয়ে কোনো নারী সহকর্মীকে দেখতে পাননি। তালেবানের আগের শাসনামলে (১৯৯৬-২০০১) নারীরা কাজে যেতে পারতেন না, তাদের মুখ ঢেকে রাখতে হতো এবং বাড়ি থেকে বের হলে তাদের সঙ্গে একজন পুরুষ আত্মীয়কে সঙ্গী হিসেবে থাকতে হতো। এবার ক্ষমতা দখলের পর তালেবানের মুখপাত্ররা সাধারণ আফগানদের আশ্বস্ত করতে চাইছেন, তারা প্রতিশোধ নিতে যাচ্ছে না এবং তারা নারীদেরকেও কাজে যোগ দেওয়ার অনুমতি দেবে, যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের কাজ ইসলামি আইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ থাকছে। তবে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের খোঁজ করা, কাজ থেকে জোর করে নারীদের বের করে দেওয়া এবং সাবেক আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তা ও সংখ্যালঘু আদিবাসীদের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসাপূর্ণ আচরণের বিভিন্ন খবর ছড়িয়ে পড়ায় জনমনে উদ্বেগ বেড়েছে। তালেবান অবশ্য হয়রানির অভিযোগগুলো তদন্ত করার কথা বলেছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্রদের সঙ্গে তালেবানের দুই দশকের যুদ্ধ, রাজনৈতিক অস্থিরতা, সাম্প্রতিক বিদেশি সেনা প্রত্যাহারের কারণে স্থানীয়ভাবে ব্যয় কমে যাওয়া এবং ডলারের মজুদে ঘাটতির কারণে আফগানিস্তানে আর্থিক সংকট বেড়ে গেছে। কাজে যোগ দেওয়া একজন আফগান কর্মকর্তা বলেন, এখন পর্যন্ত হাতেগোণা কয়েকজন কর্মকর্তাকে কাজে ফেরত এনেছে তালেবান, যাদের বেশিরভাগই অর্থ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা। অর্থনীতিবিদ হায়দারি বলেন, সোমবার তালেবানের অধীনে প্রথম কাজে যোগ দেওয়ার দিনে তিনি যখন বাসা থেকে বের হন, তার পরিবারের সদস্যদের না জানিয়েই কার্যালয়ে যান যাতে তারা ‘আতঙ্কিত হয়ে না পড়ে’।
তার দফতরে তালেবানের তিন কর্মকর্তা তাকে স্বাগত জানান এবং বলেন দ্রুতই অন্য সহকর্মীরাও তার সঙ্গে যোগ দেবেন এবং বিভিন্ন প্রদেশে অর্থ ছাড় করার বিষয়টিতে মনোযোগ দেওয়ার নির্দেশ দেন তালেবান সদস্যরা।
হায়দারি বলেন, “ভবনের ভেতরে তাদের হাতে বন্দুক ছিলো না এবং তাদের একজন বলেছিলো যে ‘আমরা আপনার কাছ থেকে কাজ শিখতে পারবো’।”
অন্য নাগরিকদের মতো মরিয়া হয়ে দেশ ছাড়ার চেষ্টা না করে এখন আপাতত দেশেই চুপচাপ অবস্থান করার পরিকল্পনা করছেন বলে জানিয়েছেন হায়দারি।