পরীমণিকে ধর্ষণচেষ্টা, নাসিরসহ ৫ জন গ্রেপ্তার
- আপডেট টাইম : ১১:৫২:২৮ পূর্বাহ্ণ, সোমবার, ১৪ জুন ২০২১
- / ৩৩৪ ৫০০০.০ বার পাঠক
সময়ের কন্ঠ রিপোর্টার।।
ঢালিউডের জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে করা মামলার প্রধান আসামি নাসির উদ্দিন মাহমুদসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।
সোমবার (১৪ জুন) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশিদ।
উত্তরা ১ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর রোডে নাসির উদ্দিনের বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে। এর আগে সকালে ব্যবসায়ী নাছির মাহমুদসহ ছয়জনকে আসামি করে সাভার থানায় মামলা দায়ের করেন পরীমনি। মামলায় নাসির উদ্দিন ও তার বন্ধু অমির নাম উল্লেখ করে আরও ৪ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। এর আগে সকালে রূপনগর থানার মাধ্যমে লিখিত অভিযোগ করেন পরীমণি।এদিকে পরীমণি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন, গণমাধ্যমে এমন অভিযোগের পর তার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। তার রাজধানীর বনানীর বাসার সামনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
সোমবার দুপুরে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আযম মিয়া বলেন, পরীমণি গণমাধ্যমে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানিয়েছেন। এরপর আমরা তার নিরাপত্তা জোরদার করেছি। আমাদের একটা টহল টিম সেখানে আছে, সদস্য চার জন।
রোববার (১৩ জুন) রাত সাড়ে ১০টায় তার বনানীর বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিনেত্রী অভিযোগ করেন, ঘটনার পর চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। যদিও মধ্যরাতে সংবাদ সম্মেলন শেষেই পরীর বনানীর বাসার সামনে পুলিশের অবস্থান দেখা যায়।সংবাদ সম্মেলনে পরীমণি অভিযোগ করেন, চার দিন আগে আশুলিয়ার একটি ক্লাবে তার সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত এক ব্যবসায়ী ক্লাবকর্তা অশোভন আচারণ করেছেন এবং শারীরিক নির্যাতন করেছেন।
এ ঘটনায় তিনি বনানী থানায় মামলা করতে গেলেও কোনো সহযোগিতা পাননি। সংবাদ সম্মেলনে নিজের সঙ্গে ঘটা ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে একাধিকবার কান্নায় ভেঙে পড়েন এই চিত্রনায়িকা।
সংবাদ সম্মেলনে এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন পরীমনি। তার অভিযোগ ঢাকা বোট ক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য (বিনোদন ও সংস্কৃতি) নাসির উদ্দিন মাহমুদের বিরুদ্ধে। ঢাকা বোট ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য নাসির উদ্দিন একজন আবাসন ব্যবসায়ী। তিনি উত্তরা ক্লাবের সাবেক সভাপতি। অভিযোগের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত নাসির উদ্দিন মাহমুদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
পরীমনি বলেন, উত্তরার বোট ক্লাবে (ঢাকা বোট ক্লাব) তার সঙ্গে ঘটনাটি ঘটে। নাসির উদ্দিন নামে একজন নেশাজাতীয় কিছু খাইয়ে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। চার মদ্যপ ব্যক্তি তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন। চড়-থাপ্পড় মারেন। গায়ে আঘাত করেন।পরীমনি বলেন, আমি সুইসাইড করার মতো মেয়ে না। আমি যদি মরে যাই, আপনারা বুঝবেন আমাকে মেরে ফেলা হয়েছে। আমি সুইসাইড করতে পারি না। আমি সুইসাইড করব না। আমি আমার বিচার নিয়ে মরব। আমার সাথে অন্যায় করা হয়েছে। আমার সাথে অন্যায় হয়েছে, বিচার চাই। আমি আজকে মরে গেলে… আমি সুইসাইড করি নাই, সবাই জেনে রাখেন। আর আমাকে যদি কেউ মারে, আমি যদি মরে যাই; ভাইয়ারা আপনারা বিচার কইরেন, আল্লাহর কসম।
বিচার না পাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, চার দিন ধরে একদম সাধারণ মেয়ের মতো মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। কিন্তু আমাকে কেউ সাহায্য করেনি। পরীমনি হিসেবে যখন স্ট্যাটাসটা দিলাম তখনই সবাই আসলেন।
পরীমনি বলেন, এমন ঘটনায় সাধারণ মেয়েরা প্রথমে কোথায় যায়? থানায় যায়। আমিও থানায় গিয়েছি। আমি বারবার বলেছি, ঘটনাটা যদি নিজের সঙ্গে না ঘটে তাহলে কেউ বুঝবে না।পরীমনি আরও বলেন, সাধারণ কোনো মেয়ের হলে সে খবর হয়তো আপনাদের কাছে পৌঁছায় না। সাংবাদিকদের কাছে খবর পৌঁছানো হয় না। আমার মতো যখন কোনো মেয়েকে ভয় দেখানো হয় তখন সাধারণ মেয়ের খবর তো পাবেন না!
এর আগে রোববার (১৩ জুন) সন্ধ্যায় পরীমনি ফেসবুক পেজে জানান, তাকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে। এর প্রতিকার চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে খোলা চিঠি পোস্ট করেন পরীমনি।
‘‘বরাবর,
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আমি পরীমণি।এই দেশের একজন বাধ্যগত নাগরিক। আমার পেশা চলচ্চিত্র।
আমি শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছি।
আমাকে রেপ এবং হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে।
আমি এর বিচার চাই।
এই বিচার কই চাইবো আমি? কোথায় চাইবো? কে করবে সঠিক বিচার ? আমি খুঁজে পাইনি গত চার দিন ধরে। থানা থেকে শুরু করে আমাদের চলচ্চিত্রবন্ধু বেনজির আহমেদ আইজিপি স্যার! আমি কাউকে পাইনা মা।
যাদেরকে পেয়েছি সবাই শুধু ঘটনা বিস্তারিত জেনে, দেখছি বলে চুপ হয়ে যায়!
আমি মেয়ে, আমি নায়িকা, তার আগে আমি মানুষ। আমি চুপ করে থাকতে পারিনা। আজ আমার সাথে যা হয়েছে তা যদি আমি কেবল মেয়ে বলে, লোকে কী বলবে এই গিলানো বাক্য মেনে নিয়ে চুপ হয়ে যাই, তাহলে অনেকের মতো (যাদের অনেক নাম এক্ষুণি মনে পরে গেল) তাদের মতো আমিও কেবল তাদের দল ভারী করতে চলেছি হয়তো।
আফসোস ছাড়া কারোর কি করবার থাকবে তখন!
আমি তাদের মতো চুপ কি করে থাকতে পারি মা?
আমি তো আপনাকে দেখিনি চুপ থেকে কোন অন্যায় মেনে নিতে!
আমার মা যখন মারা যান তখন আমার বয়স আড়াই বছর। এতদিনে কখনো আমার এক মুহুর্ত মাকে খুব দরকার এখন, মনে হয়নি এটা। আজ মনে হচ্ছে, ভীষণ রকম মনে হচ্ছে মাকে দরকার, একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরার জন্য দরকার। আমার আপনাকে দরকার মা। আমার এখন বেঁচে থাকার জন্য
আপনাকে দরকার মা।
মা আমি বাচঁতে চাই।
আমাকে বাঁচিয়ে নাও মা’