চলুন এবার মূল কথায় আসি।
আমি আগেও বহুবার বলেছি—আমার জন্মদেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক নেতার সন্তানরা বিদেশে লেখাপড়া করে কিংবা সেখানেই স্থায়ী হয়। রাজনৈতিক ক্ষমতার রদবদল হলেই তারা উন্নত দেশগুলোতে আশ্রয় নেয়। সেখানে তাদের নিজস্ব বাড়িঘর রয়েছে। আরাম-আয়েশে তারা বসবাস করে।
আর আপনি পল্টনে লগির মাথায় ঝান্ডা ওড়ানো ডান্ডা হাতে দাঁড়িয়ে নেতার জন্য স্লোগান দেন, অথচ বিপদের সময় সেই নেতা ঠিকই আপনাকে ছেড়ে চলে যায় বিদেশে। আপনি কি কখনো একবারও চিন্তা করেছেন—পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলো কীভাবে এগিয়ে যাচ্ছে আর আমরা কেন পিছিয়ে আছি?
উন্নত দেশগুলোতে কোনো সন্তানের পিতা-মাতা মারা গেলেও সরকার তার দায়িত্ব নেয়। সরকারই তাদের লালন-পালন করে এবং উচ্চশিক্ষিত করে তোলে। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার জন্য কাউকে কারো দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয় না।
আর আমার জন্মদেশে? আপনি যদি মারা যান, আপনার কোনো নেতা বা রাজনীতিবিদ কি আপনার সন্তানকে দেখতে আসবে? তার ভরণপোষণ বা লেখাপড়ার দায়িত্ব নেবে? বিবাহযোগ্য মেয়ে থাকলে, তার বিবাহের ব্যবস্থা করবে?
স্বাধীনতার এত বছর পেরিয়ে গেলেও—আজও আমাদের নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। আমরা কি আমাদের জন্য সঠিক নেতৃত্ব বেছে নিতে পারি না?
সরকারি হাসপাতালগুলোতে গিয়ে দেখা যায়—হাজার হাজার মানুষ চিকিৎসার জন্য ঘুরছে, কিন্তু কেউ সঠিক চিকিৎসাটা পর্যন্ত পাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে মানুষ প্রতিবেশী দেশগুলোতে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছে। স্বাধীনতার এত বছর পরেও কেন লক্ষ লক্ষ মানুষ বিনা চিকিৎসায় মারা যায়? কখনো কি ভেবে দেখেছি? নাকি চাটুকারিতা আমাদের বিবেকের চোখকে অন্ধ করে দিয়েছে?
কেউ কথা রাখে না, স্বাধীনতার ৫৪ বছর পেরিয়ে গেল মা, কেউ কথা রাখলো না। সবাই শুধু জনগণের চোখের সামনে মূলা ঝুলিয়ে রেখেছে।
পরিশেষে এইটুকুই বলবো—জুলাই বিপ্লব আমাদের জন্য নতুন এক সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। আগামীতে আমাদের ভাগ্য আমাদেরই গড়তে হবে। হয়তো এই সুযোগ দ্বিতীয়বার আসতে বহু বছর পেরিয়ে যাবে। তাই সিদ্ধান্ত আপনার হাতেই—আপনি কি আপনার সন্তান ও পরিবারের ভবিষ্যতের জন্য একটি সুন্দর রাষ্ট্র গড়বেন, নাকি চাটুকারিতার জন্য ঝান্ডা হাতে পল্টনে দাঁড়িয়ে থাকবেন?
প্রিন্ট