ঢাকা ০৫:৫৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫, ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo জুলাই শহীদ স্মরণে ঠাকুরগাঁওয়ে স্কাউটস এর পুরস্কার বিতরণী Logo কোস্টগার্ডের অভিযানে ১ টি একনলা বন্দুক ও ২ রাউন্ড তাজা কার্তুজ জব্দ Logo শেষ মিনিটে মেসি-জাদু, দে পলের অভিষেকে মিয়ামির নাটকীয় জয় Logo নাহিদের পোস্ট ফখরুলের বক্তব্য সত্য নয়, জাতীয় সরকারের প্রস্তাবে রাজি হননি তারেক রহমান Logo প্লট জালিয়াতি: ফ্যাসিস্ট হাসিনা, জয় ও পুতুলের বিচার শুরু, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা Logo ইরানি বাণিজ্যে সংশ্লিষ্টতা ভারতের ৬ প্রতিষ্ঠানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা Logo গাইবান্ধা-১ সুন্দরগঞ্জ বাসীর সুখ-দুঃখের সাথী হয়ে থাকতে চান মাহমুদুল ইসলাম প্রামানিক Logo সারা দেশে বৃষ্টির আভাস, যেসব বিভাগে হতে পারে ভারি বর্ষণ Logo কোস্টগার্ডের অভিযানে ৩২ কেজি হরিণের মাংস জব্দ Logo আজমিরীগঞ্জে শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ সম্পন্ন 

গনহত্যার মাস্টারমাইন্ড আওয়ামী দোসর পারভেজ!

★ ঢাকা ও কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় পারভেজ নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামিলীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের সশস্ত্র ক্যাডারদের অর্থের যোগান ও আন্দোলন দমনে মাস্টারমাইন্ড হিসেবে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকা পালন করেছেন যা একটি গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছেন সংস্থাটির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা।

বিশেষ প্রতিনিধি:
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের অন্যতম দোসর সাংবাদিক নেতা সাবান মাহমুদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ভূয়া সাংবাদিক সাইফুল আলম ভূইয়া ওরফে পারভেজ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে আন্দোলন দমনে প্রতিবশী দেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে কাজ করেছেন। তিনি প্রধানত তহবিল সংগ্রহ, বিতরণ ও আন্দোলন দমনে মাস্টারমাইন্ড হিসেবে অন্যতম ভূমিকা পালন করেছেন। ঢাকা ও কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় পারভেজ নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামিলীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের সশস্ত্র ক্যাডারদের অর্থের যোগান ও আন্দোলন দমনের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকা পালন করেছেন যা একটি গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছেন সংস্থাটির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। তিনি আরও বলেন, পারভেজের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে, তবে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত মন্তব্য করা উচিত হবে না। এছাড়া পারভেজের বিরুদ্ধে সাগর হত্যাকান্ড মিশনে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সৈরাচার আওয়ামিলীগ সরকারের মদদে সরকারি চাকরিতে অন্যায় ও বৈষম্যমূলক কোটা ব্যবস্থা বহাল এবং পুন: প্রর্তাপর্নের মাধ্যমে আওয়ামিলীগ ও তাদের মদদপুষ্ট অনুগতদের চাকরিতে নিয়োগের সুযোগ প্রদানের চক্রান্ত ও অপচেষ্টা করলে দেশের সমগ্র ছাত্র সমাজ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরকারের এই বৈসম্যমূলক অন্যায় ও উদ্দশ্য প্রনোদিত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন শুরু করে। ছাত্রজনতার শান্তিপূর্ণ গণআন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রভাহিত করার এবং বিতর্কিত করার হীন উদ্দেশ্যে আওয়ামী সরকারের অন্যতম দোসর সাংবাদিক নেতা সাবান মাহমুদের সহযোগী সাইফুল আলম ভূইয়া ওরফে পারভেজসহ আরও অনেকেরই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নির্দেশে গত ২০/০৭/২০২৪ইং তারিখে ঘৃণ্য, মিথ্যা, কুৎসা ও উসকানিমূলক এবং অপমানজনক বক্তব্য দিয়ে পরিকল্পিতভাবে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের চলমান শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে উস্কে দিয়ে সারাদেশে সহিংস আন্দোলনের পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। এছাড়া তারা আন্দোলনকারী কোমলমতি শিক্ষার্থী ও জনতার উপর গুরুতর রক্তাক্ত আঘাত, অঙ্গহানি, নারীর শ্লীলতাহানিসহ নারকীয় গনহত্যা ও হত্যাকান্ড সংঘটনের অপরাধমূলক পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র করে। ঘটনার ধারাবাহিকতায় স্বৈরাচার শাসক সরকারের এরূপ দমন-পীড়ন, হত্যা, গুম, খুনসহ সকল প্রকার অত্যাচার নির্যাতনের প্রতিবাদে ভিকটিম সাগরসহ কয়েকশত ছাত্রজনতা বিগত ২০/০৭/২০২৪ইং তারিখে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতার একটি মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। বিকেল আনুমানিক ২:৩০ ঘটিকায় মাস্টারমাইন্ড পারভেজসহ অন্যান্য আসামীগণের নির্দেশে, অসাধু উদ্দেশ্য অর্জনের লক্ষ্যে পূর্বপরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রাণঘাতী আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে শান্তিপূর্ণ বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতার মিছিলে আক্রমণ চালিয়ে মুক্তিকামী ছাত্রজনতার আন্দোলন স্তদ্ধ করার প্রয়াসে আসামীগণের কাছে থাকা অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা গুলিবর্ষণ শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় আসামী তাইজুল ইসলাম চৌধুরী বাপ্পির ছোঁড়া বুলেটে অত্র মামলার ভিকটিম গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। একপর্যায়ে আসামীগণ ধাওয়া দিলে স্বাক্ষীগণ ও অন্যান্য আন্দোলনরত নিরস্ত্র ছাত্রজনতা ভিকটিম সাগর এর নিথর দেহ ফেলে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়। পরবর্তীতে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় বাদী এবং স্বাক্ষীগণ শাহআলীবাগ থানাধীন ঘটনাস্থল থেকে ভিকটিম এর নিথর দেহ উদ্ধার করে তাৎক্ষনিকভাবে আলোক হাসপাতাল লিমিটেড এ নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২০/০৭/২০২৪ইং তারিখ বিকেল ৫:০০ ঘটিকায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। যা জুলাই-আগষ্ট ২০২৪ বিপ্লবী শহীদদের গেজেটের ক্রমিক নং-১১৩ তালিকা ও মেডিকেল কেস আইডি নং-১৭২৫১-তে ভিকটিমের নাম উল্লেখ আছে। অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, সাবান মাহমুদের ছত্রছায়ায় পারভেজ কোনরূপ যোগ্যতা অভিজ্ঞতা না থাকলেও একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার কার্ড ব্যবহার করে রাতারাতি বনে যান সাংবাদিক। তবে অত্যন্ত কৌশলী ও চতুরতার কারণে তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সাবান মাহমুদের ছত্রছায়ায় একের পর এক প্রতারণার মাধ্যমে কামিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা। তার প্রতারণার ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব হারিয়েছেন অনেকেই। তার প্রতারণার ছোবল থেকে রক্ষা পায়নি বহু সাংবাদিক, এমনকি বিএনপি পন্থি সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদও। তিনি সাধারণত টাকা পয়সা আছে এমন ব্যক্তি টার্গেট করে সুকৌশলে তার সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে থাকেন। গোলগাল ভদ্রবেশী চেহারা ও কৌশলী হওয়ায় কোনরূপ সন্দেহই করতে পারেননা পারভেজের টার্গেটকৃত ব্যক্তি। টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে পারভেজ নামাজ-কালাম ও হাদিস-কুরআনের বয়ান দিয়ে তার হৃদয়ে জায়গা করে নেন। এভাবে টার্গেটকৃত ব্যক্তির সাথে পারভেজ প্রতিনিয়ত যোগাযোগের মাধ্যমে তার দূর্বলতা বুজে টোপ ফেলেন। টোপ গিল্লেই ছলে বলে কৌশলে তার কাছ থেকে হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা। সম্প্রতি বিএসএমএমইউ এর একজন ডাক্তার পারভেজের প্রতারণার শিকার হয়ে ২০,০০০০০/-(বিশ লাখ) টাকা খুঁইয়েছেন বলে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। ভুক্তভোগী ডাক্তারের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, তার ছোট বোন জামাইয়ের আপন চাচাতো ভাই পারভেজ। গত অনুমান ০২(দুই) বছর পূর্বে পারভেজ চিকিৎসা নিতে আসার কারণে আমার সাথে পরিচয় হয়। পরিচয়ের একপর্যায়ে পারভেজ নিজেকে একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার সাংবাদিক পরিচয় দেয় এবং একটি কার্ড দেয়। আমার কর্মস্থলে সে চিকিৎসা নিতে আসা যাওয়া করার কারণে প্রায় সময় সে আমার চেম্বারে আসতো এবং সে খুবই ধার্মিক হিসেবে নিজেকে প্রকাশ করতো। একপর্যায়ে সে পূর্বাচলে রাজউকের ০৩(তিন)টি প্লট পেয়েছে বলে জানায়। তাদের সাংবাদিক সমিতির অনুমতি সাপেক্ষে তার ০৩(তিন)টি প্লট হতে আমাকে একটি প্লট দিবে বলে বিভিন্ন ধরনের প্রস্তাব দিতে থাকে। পারভেজ আমার ছোট বোন জামাইয়ের চাচাতো ভাই হওয়ায় এবং সে নিজে ধার্মিক ও সাংবাদিক হওয়ায় আমি তাকে বিশ্বাস করে তার নিকট হতে ০১(এক)টি প্লট কেনার জন্য রাজি হইলে পারভেজ ১৩/০৫/২০২৩ খ্রি. হতে ৩০/০৭/২০২৩ খ্রি. তারিখের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে প্লটের ক্রয়ের কিস্তি বাবদ, বিদ্যুৎ ও গ্যাস লাইন বাবদ এবং ধার হিসেবে সর্বমোট নগদ ২০,০০০০০/- (বিশ লাখ) টাকা নেয়। আমি তখন তাকে টাকা নেওয়ার পেপার চাইলে সে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্লটের কাগজপত্রসহ আমার নিকট হতে টাকা নেওয়ার সকল পেপার আমাকে বুঝিয়ে দিবে বলে অঙ্গীকার করে। একপর্যায়ে পারভেজ আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিলে আমি তার পত্রিকা অফিসসহ বিভিন্নভাবে খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারি সে একজন প্রতারক। সে সাংবাদিকতাসহ বিভিন্ন পরিচয় দিয়ে লোকজনের নিকট হতে প্রতারণামূলকভাবে টাকা পয়সা আত্মসাৎ করে বেড়ায়। আমি পারভেজকে মোবাইল ফোনে এবং আমার ছোট বোন জামাইয়ের মাধ্যমে আমার টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ করলে সে বিভিন্ন ধরনের তালবাহানা করতে থাকে। গত ০৭/০২/২০২৫ খ্রি. তারিখ আনুমানিক ১১:৪৫ ঘটিকায় আমি পারভেজের ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারে ম্যাসেজ দিয়ে আমার টাকা ফেরত চাইলে সে আমাকে ফোন করে টাকা ফেরত দিবে না বলে বিভিন্ন ধরনের হুমকি প্রদান করেন। শেষ আমি শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করতে বাধ্য হয়েছি। এছাড়া পারভেজ ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরিদর্শক আরিফের নিকট থেকে ১৫,০০০০০/-(পনের লাখ), মুগদা এলাকার মনিরুজ্জামানের নিকট থেকে ৫,০০০০০/-(পাঁচ লাখ), রাজউকের দুইজন কর্মকর্তার নিকট থেকে যথাক্রমে ১২,০০০০০/-(বার লাখ) ও ৮৫,০০০০০/-(পঁচাশি লাখ) টাকা, এমনকি তার আপন চাচাতো ভাই শহিদুজ্জামানের নিকট থেকেও ২,০০০০০/-(দুই লাখ) টাকা বিভিন্ন কৌশলে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন যা সরেজমিনে অনুসন্ধান করলে এসব তথ্য উঠে আসে। এছাড়া পারভেজ বেশ কয়েক বছর আগে মিরপুর পল্লবীতে ম্যাজিষ্ট্রেট পরিচয়ে প্রতারণা করতে গিয়ে পাবলিকের কাছে ধরা খেয়ে উত্তম-মাধ্যমের শিকার হন ও পরবর্তীতে তাকে থানায় সোপর্দ করা হয়। পারভেজের প্রতারণার বিষয়ে একাধিক ভুক্তভোগীর সাথে কথা বলে জানা যায়, পারভেজ কখনো রাজউকের প্লট বরাদ্দ, কখনো গাড়ীর শোরুমের মালিক সেজে প্রাইভেট কার বিক্রি, কখনোবা মানুষের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের কথা বলে এসব টাকা পয়সা হাতিয়ে নিয়েছেন। ভুক্তভোগীর কেউ কেউ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন।ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পতন হলে পারভেজের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হলেও সে এখনো রয়ে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। প্রশাসনের নাকের ডগায় ফ্যাসিস্ট সরকারের অন্যতম সহযোগী এখনো গ্রেফতার না হওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। এছাড়া পারভেজ প্রতারণার টাকায় রাজধানীর মিরপুরে একাধিক ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন, নিজ এলাকা মৌলভীপাড়া সিরাজগঞ্জে বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণাধীন ও কোটি টাকার জমিজমা ক্রয় করেছেন এবং তিনি কোটি টাকা খরচ করে বড় মেয়ে ঐশীকে ডাক্তারী ও ছোট মেয়ে ঐশ্বর্য্যকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। প্রতারণার টাকায় পারভেজের অবৈধ সম্পদের ব্যাপারে সেগুনবাগিচায় দূদক কার্যালয়ে যোগাযোগ করলে দূদকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিভিন্ন অভিযোগের ব্যাপারে কথা বলতে পারভেজের মোবাইলে ফোন দিয়ে বিভিন্ন অভিযোগের ব্যাপারে কথা বলতে চাইলে তিনি ফোন কেটে দেন। পরবর্তীতে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি। এমনকি পরিচয় দিয়ে ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও ফোন ধরায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।


প্রিন্ট
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

জুলাই শহীদ স্মরণে ঠাকুরগাঁওয়ে স্কাউটস এর পুরস্কার বিতরণী

গনহত্যার মাস্টারমাইন্ড আওয়ামী দোসর পারভেজ!

আপডেট সময় ১০:০২:০৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫

★ ঢাকা ও কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় পারভেজ নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামিলীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের সশস্ত্র ক্যাডারদের অর্থের যোগান ও আন্দোলন দমনে মাস্টারমাইন্ড হিসেবে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকা পালন করেছেন যা একটি গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছেন সংস্থাটির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা।

বিশেষ প্রতিনিধি:
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের অন্যতম দোসর সাংবাদিক নেতা সাবান মাহমুদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ভূয়া সাংবাদিক সাইফুল আলম ভূইয়া ওরফে পারভেজ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে আন্দোলন দমনে প্রতিবশী দেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে কাজ করেছেন। তিনি প্রধানত তহবিল সংগ্রহ, বিতরণ ও আন্দোলন দমনে মাস্টারমাইন্ড হিসেবে অন্যতম ভূমিকা পালন করেছেন। ঢাকা ও কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় পারভেজ নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামিলীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের সশস্ত্র ক্যাডারদের অর্থের যোগান ও আন্দোলন দমনের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকা পালন করেছেন যা একটি গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছেন সংস্থাটির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। তিনি আরও বলেন, পারভেজের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে, তবে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত মন্তব্য করা উচিত হবে না। এছাড়া পারভেজের বিরুদ্ধে সাগর হত্যাকান্ড মিশনে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সৈরাচার আওয়ামিলীগ সরকারের মদদে সরকারি চাকরিতে অন্যায় ও বৈষম্যমূলক কোটা ব্যবস্থা বহাল এবং পুন: প্রর্তাপর্নের মাধ্যমে আওয়ামিলীগ ও তাদের মদদপুষ্ট অনুগতদের চাকরিতে নিয়োগের সুযোগ প্রদানের চক্রান্ত ও অপচেষ্টা করলে দেশের সমগ্র ছাত্র সমাজ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরকারের এই বৈসম্যমূলক অন্যায় ও উদ্দশ্য প্রনোদিত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন শুরু করে। ছাত্রজনতার শান্তিপূর্ণ গণআন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রভাহিত করার এবং বিতর্কিত করার হীন উদ্দেশ্যে আওয়ামী সরকারের অন্যতম দোসর সাংবাদিক নেতা সাবান মাহমুদের সহযোগী সাইফুল আলম ভূইয়া ওরফে পারভেজসহ আরও অনেকেরই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নির্দেশে গত ২০/০৭/২০২৪ইং তারিখে ঘৃণ্য, মিথ্যা, কুৎসা ও উসকানিমূলক এবং অপমানজনক বক্তব্য দিয়ে পরিকল্পিতভাবে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের চলমান শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে উস্কে দিয়ে সারাদেশে সহিংস আন্দোলনের পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। এছাড়া তারা আন্দোলনকারী কোমলমতি শিক্ষার্থী ও জনতার উপর গুরুতর রক্তাক্ত আঘাত, অঙ্গহানি, নারীর শ্লীলতাহানিসহ নারকীয় গনহত্যা ও হত্যাকান্ড সংঘটনের অপরাধমূলক পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র করে। ঘটনার ধারাবাহিকতায় স্বৈরাচার শাসক সরকারের এরূপ দমন-পীড়ন, হত্যা, গুম, খুনসহ সকল প্রকার অত্যাচার নির্যাতনের প্রতিবাদে ভিকটিম সাগরসহ কয়েকশত ছাত্রজনতা বিগত ২০/০৭/২০২৪ইং তারিখে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতার একটি মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। বিকেল আনুমানিক ২:৩০ ঘটিকায় মাস্টারমাইন্ড পারভেজসহ অন্যান্য আসামীগণের নির্দেশে, অসাধু উদ্দেশ্য অর্জনের লক্ষ্যে পূর্বপরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রাণঘাতী আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে শান্তিপূর্ণ বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতার মিছিলে আক্রমণ চালিয়ে মুক্তিকামী ছাত্রজনতার আন্দোলন স্তদ্ধ করার প্রয়াসে আসামীগণের কাছে থাকা অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা গুলিবর্ষণ শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় আসামী তাইজুল ইসলাম চৌধুরী বাপ্পির ছোঁড়া বুলেটে অত্র মামলার ভিকটিম গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। একপর্যায়ে আসামীগণ ধাওয়া দিলে স্বাক্ষীগণ ও অন্যান্য আন্দোলনরত নিরস্ত্র ছাত্রজনতা ভিকটিম সাগর এর নিথর দেহ ফেলে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়। পরবর্তীতে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় বাদী এবং স্বাক্ষীগণ শাহআলীবাগ থানাধীন ঘটনাস্থল থেকে ভিকটিম এর নিথর দেহ উদ্ধার করে তাৎক্ষনিকভাবে আলোক হাসপাতাল লিমিটেড এ নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২০/০৭/২০২৪ইং তারিখ বিকেল ৫:০০ ঘটিকায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। যা জুলাই-আগষ্ট ২০২৪ বিপ্লবী শহীদদের গেজেটের ক্রমিক নং-১১৩ তালিকা ও মেডিকেল কেস আইডি নং-১৭২৫১-তে ভিকটিমের নাম উল্লেখ আছে। অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, সাবান মাহমুদের ছত্রছায়ায় পারভেজ কোনরূপ যোগ্যতা অভিজ্ঞতা না থাকলেও একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার কার্ড ব্যবহার করে রাতারাতি বনে যান সাংবাদিক। তবে অত্যন্ত কৌশলী ও চতুরতার কারণে তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সাবান মাহমুদের ছত্রছায়ায় একের পর এক প্রতারণার মাধ্যমে কামিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা। তার প্রতারণার ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব হারিয়েছেন অনেকেই। তার প্রতারণার ছোবল থেকে রক্ষা পায়নি বহু সাংবাদিক, এমনকি বিএনপি পন্থি সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদও। তিনি সাধারণত টাকা পয়সা আছে এমন ব্যক্তি টার্গেট করে সুকৌশলে তার সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে থাকেন। গোলগাল ভদ্রবেশী চেহারা ও কৌশলী হওয়ায় কোনরূপ সন্দেহই করতে পারেননা পারভেজের টার্গেটকৃত ব্যক্তি। টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে পারভেজ নামাজ-কালাম ও হাদিস-কুরআনের বয়ান দিয়ে তার হৃদয়ে জায়গা করে নেন। এভাবে টার্গেটকৃত ব্যক্তির সাথে পারভেজ প্রতিনিয়ত যোগাযোগের মাধ্যমে তার দূর্বলতা বুজে টোপ ফেলেন। টোপ গিল্লেই ছলে বলে কৌশলে তার কাছ থেকে হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা। সম্প্রতি বিএসএমএমইউ এর একজন ডাক্তার পারভেজের প্রতারণার শিকার হয়ে ২০,০০০০০/-(বিশ লাখ) টাকা খুঁইয়েছেন বলে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। ভুক্তভোগী ডাক্তারের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, তার ছোট বোন জামাইয়ের আপন চাচাতো ভাই পারভেজ। গত অনুমান ০২(দুই) বছর পূর্বে পারভেজ চিকিৎসা নিতে আসার কারণে আমার সাথে পরিচয় হয়। পরিচয়ের একপর্যায়ে পারভেজ নিজেকে একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার সাংবাদিক পরিচয় দেয় এবং একটি কার্ড দেয়। আমার কর্মস্থলে সে চিকিৎসা নিতে আসা যাওয়া করার কারণে প্রায় সময় সে আমার চেম্বারে আসতো এবং সে খুবই ধার্মিক হিসেবে নিজেকে প্রকাশ করতো। একপর্যায়ে সে পূর্বাচলে রাজউকের ০৩(তিন)টি প্লট পেয়েছে বলে জানায়। তাদের সাংবাদিক সমিতির অনুমতি সাপেক্ষে তার ০৩(তিন)টি প্লট হতে আমাকে একটি প্লট দিবে বলে বিভিন্ন ধরনের প্রস্তাব দিতে থাকে। পারভেজ আমার ছোট বোন জামাইয়ের চাচাতো ভাই হওয়ায় এবং সে নিজে ধার্মিক ও সাংবাদিক হওয়ায় আমি তাকে বিশ্বাস করে তার নিকট হতে ০১(এক)টি প্লট কেনার জন্য রাজি হইলে পারভেজ ১৩/০৫/২০২৩ খ্রি. হতে ৩০/০৭/২০২৩ খ্রি. তারিখের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে প্লটের ক্রয়ের কিস্তি বাবদ, বিদ্যুৎ ও গ্যাস লাইন বাবদ এবং ধার হিসেবে সর্বমোট নগদ ২০,০০০০০/- (বিশ লাখ) টাকা নেয়। আমি তখন তাকে টাকা নেওয়ার পেপার চাইলে সে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্লটের কাগজপত্রসহ আমার নিকট হতে টাকা নেওয়ার সকল পেপার আমাকে বুঝিয়ে দিবে বলে অঙ্গীকার করে। একপর্যায়ে পারভেজ আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিলে আমি তার পত্রিকা অফিসসহ বিভিন্নভাবে খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারি সে একজন প্রতারক। সে সাংবাদিকতাসহ বিভিন্ন পরিচয় দিয়ে লোকজনের নিকট হতে প্রতারণামূলকভাবে টাকা পয়সা আত্মসাৎ করে বেড়ায়। আমি পারভেজকে মোবাইল ফোনে এবং আমার ছোট বোন জামাইয়ের মাধ্যমে আমার টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ করলে সে বিভিন্ন ধরনের তালবাহানা করতে থাকে। গত ০৭/০২/২০২৫ খ্রি. তারিখ আনুমানিক ১১:৪৫ ঘটিকায় আমি পারভেজের ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারে ম্যাসেজ দিয়ে আমার টাকা ফেরত চাইলে সে আমাকে ফোন করে টাকা ফেরত দিবে না বলে বিভিন্ন ধরনের হুমকি প্রদান করেন। শেষ আমি শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করতে বাধ্য হয়েছি। এছাড়া পারভেজ ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরিদর্শক আরিফের নিকট থেকে ১৫,০০০০০/-(পনের লাখ), মুগদা এলাকার মনিরুজ্জামানের নিকট থেকে ৫,০০০০০/-(পাঁচ লাখ), রাজউকের দুইজন কর্মকর্তার নিকট থেকে যথাক্রমে ১২,০০০০০/-(বার লাখ) ও ৮৫,০০০০০/-(পঁচাশি লাখ) টাকা, এমনকি তার আপন চাচাতো ভাই শহিদুজ্জামানের নিকট থেকেও ২,০০০০০/-(দুই লাখ) টাকা বিভিন্ন কৌশলে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন যা সরেজমিনে অনুসন্ধান করলে এসব তথ্য উঠে আসে। এছাড়া পারভেজ বেশ কয়েক বছর আগে মিরপুর পল্লবীতে ম্যাজিষ্ট্রেট পরিচয়ে প্রতারণা করতে গিয়ে পাবলিকের কাছে ধরা খেয়ে উত্তম-মাধ্যমের শিকার হন ও পরবর্তীতে তাকে থানায় সোপর্দ করা হয়। পারভেজের প্রতারণার বিষয়ে একাধিক ভুক্তভোগীর সাথে কথা বলে জানা যায়, পারভেজ কখনো রাজউকের প্লট বরাদ্দ, কখনো গাড়ীর শোরুমের মালিক সেজে প্রাইভেট কার বিক্রি, কখনোবা মানুষের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের কথা বলে এসব টাকা পয়সা হাতিয়ে নিয়েছেন। ভুক্তভোগীর কেউ কেউ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন।ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পতন হলে পারভেজের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হলেও সে এখনো রয়ে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। প্রশাসনের নাকের ডগায় ফ্যাসিস্ট সরকারের অন্যতম সহযোগী এখনো গ্রেফতার না হওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। এছাড়া পারভেজ প্রতারণার টাকায় রাজধানীর মিরপুরে একাধিক ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন, নিজ এলাকা মৌলভীপাড়া সিরাজগঞ্জে বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণাধীন ও কোটি টাকার জমিজমা ক্রয় করেছেন এবং তিনি কোটি টাকা খরচ করে বড় মেয়ে ঐশীকে ডাক্তারী ও ছোট মেয়ে ঐশ্বর্য্যকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। প্রতারণার টাকায় পারভেজের অবৈধ সম্পদের ব্যাপারে সেগুনবাগিচায় দূদক কার্যালয়ে যোগাযোগ করলে দূদকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিভিন্ন অভিযোগের ব্যাপারে কথা বলতে পারভেজের মোবাইলে ফোন দিয়ে বিভিন্ন অভিযোগের ব্যাপারে কথা বলতে চাইলে তিনি ফোন কেটে দেন। পরবর্তীতে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি। এমনকি পরিচয় দিয়ে ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও ফোন ধরায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।


প্রিন্ট