ঢাকা ০৫:০৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৫, ৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo কাশিমপুরে চলমান অভিযানে ২জনকে আটক করেছে কাশিমপুর থানা পুলিশ। Logo পলাশে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উদ্বোধন ও পুরষ্কার বিতরণ Logo সাবেক ডিবিপ্রধান হারুনসহ পুলিশের ১৮ কর্মকর্তা বরখাস্ত Logo রাস্তার পাশে ২ মহিলার লাশ উদ্ধার Logo বার্তা ফাঁসকারী সেই পুলিশ সদস্য গ্রেফতার Logo ৩ দিন ধরে সমুদ্রে ভাসতে থাকা ৮ জন জেলেকে উদ্ধার করেছে কোস্ট গার্ড Logo কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে উপজেলা বালিবাহী ট্রাক্টর – মোটরসাইকেল  মুখোমুখি‌ Logo সিএমপি’র বন্দর থানার শ্বাসরুদ্ধকার অভিযানে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী শাকিল ও সহযোগী গ্রেফতার Logo কক্সবাজারে অবৈধ স্পা ও হোটেল অভিযানে নেতৃত্ব দিয়ে প্রশংসিত ডিআইজি আপেল মাহমুদ Logo পলাশে হাফিজিয়া মাদ্রাসা দখল ও ভাড়া আত্মসাতের অভিযোগ—শিক্ষক-শিক্ষার্থী উচ্ছেদ,শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়ার শঙ্কা

গাজায় ৩৫ দিনের শিশুর অনাহারে মৃত্যু, ইসরাইলি হামলায় নিহত আরও ১১৬

ছবি: সংগৃহীত

দখলদার ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলের মানবিক সহায়তা বন্ধ ও কঠোর অবরোধের মধ্যে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় মাত্র ৩৫ দিন বয়সী এক শিশুর অনাহারে মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। গাজা সিটির আল-শিফা হাসপাতালে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে।

এদিকে, গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর লাগাতার নৃশংস হামলায় আরও ১১৬ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ৩৮ জন যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) সহায়তা কেন্দ্রের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন।

রোববার (২০ জুলাই) সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ তথ্য জানিয়েছে।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ইসরাইলের মানবিক সহায়তা বন্ধ এবং যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত বিতর্কিত ত্রাণ কেন্দ্রগুলোতে ক্ষুধার্ত মানুষের ওপর গুলি চালানোর মধ্যেই গাজায় আবারও একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে। সেখানে মাত্র ৩৫ দিন বয়সী এক নবজাতক অনাহারে মারা গেছে।

ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল ইসরাইল, নিহত ২৫
শনিবার গাজা সিটির আল-শিফা হাসপাতালে শিশুটির মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল পরিচালক ডা. মুহাম্মদ আবু সালমিয়া। তিনি বলেন, ‘অপুষ্টি বা অপর্যাপ্ত খাদ্যগ্রহণে মৃতদের মধ্যে এই নবজাতকও রয়েছে। এদিন অন্তত দুজন ব্যক্তি অনাহারে মারা যান আমাদের হাসপাতালে’।

এই ঘটনাগুলো ঘটেছে এমন এক সময় যখন গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘হাসপাতালের জরুরি বিভাগগুলো খাবারের অভাবে কাতর হাজার হাজার মানুষের ভিড়ে উপচে পড়ছে। অন্তত ১৭ হাজার শিশু মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে।’

এদিকে ইসরাইলি বাহিনীর লাগাতার হামলায় শনিবার ভোর থেকে গাজা উপত্যকার বিভিন্ন অংশে কমপক্ষে ১১৬ জন নিহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে ৩৮ জন নিহত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) সহায়তা কেন্দ্রের সামনে গুলি খেয়ে। এমনটাই জানিয়েছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।

গাজার দক্ষিণে খান ইউনিসের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও রাফাহের উত্তর-পশ্চিমে দুটি আলাদা স্থানে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে গাজার সিভিল ডিফেন্স সংস্থা। তারা এই প্রাণহানির পেছনে ইসরাইলি হামলাকে দায়ী করেছেন।

মোহাম্মদ আল-খালিদি নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী আল জাজিরাকে বলেন, ‘তারা ইচ্ছা করে গুলি চালিয়েছে। একদিকে জিপ আর অন্যদিকে ট্যাংক আসতে দেখে আমরা পালাতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তারা গুলি শুরু করে’।

আরেক প্রত্যক্ষদর্শী মোহাম্মদ আল-বারবারি তার চাচাতো ভাইকে হারিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এই কেন্দ্রগুলো আসলে মৃত্যু ফাঁদ। মানুষ শুধু একটু খাবারের আশায় আসে, কিন্তু ফিরে যায় লাশ হয়ে’।

আন্তর্জাতিক রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট ফেডারেশনের মহাসচিব জগন চাপাগাইন বলেন,‘গাজায় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। কাউকে যেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এক মুঠো খাবার সংগ্রহ করতে না হয়’।

গাজার বাজারগুলোতে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নেই, আর খাদ্যদ্রব্যের দাম এতটাই বেড়ে গেছে যে ২৩ লাখ মানুষের পক্ষে দৈনন্দিন পুষ্টি চাহিদা পূরণ করা অসম্ভব হয়ে উঠেছে।

নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের প্রধান ইয়ান এগেল্যান্ড জানান, ‘গত ১৪২ দিনে আমরা একটি ট্রাকও গাজায় প্রবেশ করাতে পারিনি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের যে নেতা বলছেন সহায়তা প্রবাহ স্বাভাবিক হচ্ছে, তা বাস্তবের সঙ্গে মেলে না’।

এছাড়া জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানায়, তারা পুরো গাজার জন্য যথেষ্ট খাদ্য মজুত রেখেছে মিসরের সীমান্তে, কিন্তু ইসরাইলি নিষেধাজ্ঞার কারণে সেগুলো প্রবেশ করতে পারছে না। সংস্থাটি বলছে, ‘সীমান্ত খুলুন, অবরোধ তুলে নিন এবং আমাদের কাজ করতে দিন’।


প্রিন্ট
ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

কাশিমপুরে চলমান অভিযানে ২জনকে আটক করেছে কাশিমপুর থানা পুলিশ।

গাজায় ৩৫ দিনের শিশুর অনাহারে মৃত্যু, ইসরাইলি হামলায় নিহত আরও ১১৬

আপডেট সময় ১২:২১:৫০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫

ছবি: সংগৃহীত

দখলদার ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলের মানবিক সহায়তা বন্ধ ও কঠোর অবরোধের মধ্যে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় মাত্র ৩৫ দিন বয়সী এক শিশুর অনাহারে মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। গাজা সিটির আল-শিফা হাসপাতালে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে।

এদিকে, গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর লাগাতার নৃশংস হামলায় আরও ১১৬ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ৩৮ জন যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) সহায়তা কেন্দ্রের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন।

রোববার (২০ জুলাই) সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ তথ্য জানিয়েছে।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ইসরাইলের মানবিক সহায়তা বন্ধ এবং যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত বিতর্কিত ত্রাণ কেন্দ্রগুলোতে ক্ষুধার্ত মানুষের ওপর গুলি চালানোর মধ্যেই গাজায় আবারও একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে। সেখানে মাত্র ৩৫ দিন বয়সী এক নবজাতক অনাহারে মারা গেছে।

ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল ইসরাইল, নিহত ২৫
শনিবার গাজা সিটির আল-শিফা হাসপাতালে শিশুটির মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল পরিচালক ডা. মুহাম্মদ আবু সালমিয়া। তিনি বলেন, ‘অপুষ্টি বা অপর্যাপ্ত খাদ্যগ্রহণে মৃতদের মধ্যে এই নবজাতকও রয়েছে। এদিন অন্তত দুজন ব্যক্তি অনাহারে মারা যান আমাদের হাসপাতালে’।

এই ঘটনাগুলো ঘটেছে এমন এক সময় যখন গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘হাসপাতালের জরুরি বিভাগগুলো খাবারের অভাবে কাতর হাজার হাজার মানুষের ভিড়ে উপচে পড়ছে। অন্তত ১৭ হাজার শিশু মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে।’

এদিকে ইসরাইলি বাহিনীর লাগাতার হামলায় শনিবার ভোর থেকে গাজা উপত্যকার বিভিন্ন অংশে কমপক্ষে ১১৬ জন নিহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে ৩৮ জন নিহত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) সহায়তা কেন্দ্রের সামনে গুলি খেয়ে। এমনটাই জানিয়েছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।

গাজার দক্ষিণে খান ইউনিসের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও রাফাহের উত্তর-পশ্চিমে দুটি আলাদা স্থানে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে গাজার সিভিল ডিফেন্স সংস্থা। তারা এই প্রাণহানির পেছনে ইসরাইলি হামলাকে দায়ী করেছেন।

মোহাম্মদ আল-খালিদি নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী আল জাজিরাকে বলেন, ‘তারা ইচ্ছা করে গুলি চালিয়েছে। একদিকে জিপ আর অন্যদিকে ট্যাংক আসতে দেখে আমরা পালাতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তারা গুলি শুরু করে’।

আরেক প্রত্যক্ষদর্শী মোহাম্মদ আল-বারবারি তার চাচাতো ভাইকে হারিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এই কেন্দ্রগুলো আসলে মৃত্যু ফাঁদ। মানুষ শুধু একটু খাবারের আশায় আসে, কিন্তু ফিরে যায় লাশ হয়ে’।

আন্তর্জাতিক রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট ফেডারেশনের মহাসচিব জগন চাপাগাইন বলেন,‘গাজায় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। কাউকে যেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এক মুঠো খাবার সংগ্রহ করতে না হয়’।

গাজার বাজারগুলোতে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নেই, আর খাদ্যদ্রব্যের দাম এতটাই বেড়ে গেছে যে ২৩ লাখ মানুষের পক্ষে দৈনন্দিন পুষ্টি চাহিদা পূরণ করা অসম্ভব হয়ে উঠেছে।

নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের প্রধান ইয়ান এগেল্যান্ড জানান, ‘গত ১৪২ দিনে আমরা একটি ট্রাকও গাজায় প্রবেশ করাতে পারিনি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের যে নেতা বলছেন সহায়তা প্রবাহ স্বাভাবিক হচ্ছে, তা বাস্তবের সঙ্গে মেলে না’।

এছাড়া জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানায়, তারা পুরো গাজার জন্য যথেষ্ট খাদ্য মজুত রেখেছে মিসরের সীমান্তে, কিন্তু ইসরাইলি নিষেধাজ্ঞার কারণে সেগুলো প্রবেশ করতে পারছে না। সংস্থাটি বলছে, ‘সীমান্ত খুলুন, অবরোধ তুলে নিন এবং আমাদের কাজ করতে দিন’।


প্রিন্ট