নারী সংস্কার কমিশনের ‘বিতর্কিত’ ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জের রিট খারিজ

- আপডেট টাইম : ০৬:৪০:১৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ মে ২০২৫
- / ১৪ ১৫০.০০০ বার পাঠক
ছবি: সংগৃহীত
নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশের কয়েকটি বিতর্কিত ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।
সোমবার (২৬ মে) বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রিটটি খারিজ করে দেন।
গত সোমবার (১৯ মে) নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশের কয়েকটি বিতর্কিত ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিটের শুনানি শেষ হয়। শুনানি শেষে আদেশের জন্য আজকের দিন ধার্য করেছিলেন হাইকোর্ট।
এর আগে নারী সংস্কার কমিশনের বিতর্কিত ও সাংঘর্ষিক বিষয় পর্যালোচনর জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। রিটে নারী সংস্কার কমিশনের বিতর্কিত ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রওশন আলী এ রিট দায়ের করেন।
নারী সংস্কার কমিশন যেসব সুপারিশ করেছে তাদের প্রতিবেদনে, সেসব যাতে বাস্তবায়ন করা না হয়, সেজন্য স্থগিতাদেশ চাওয়া হয়েছিল রিট আবেদনে।
পাশাপাশি রিট আবেদনে সংবিধান বিশেষজ্ঞ, ইসলামিক আইনজ্ঞ এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের জন্য আদালতের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছিল যাতে ওই কমিটি ভবিষ্যতে ধর্মীয় ও পারিবারিক আইন সংক্রান্ত যে কোনো সংস্কারের বিষয়ে পর্যালোচনা ও পরামর্শ দিতে পারে।
সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের একাদশ অধ্যায়ে সম্পত্তিতে পুরুষ ও নারীর জন্য সমান উত্তরাধিকার দেওয়ার যে প্রস্তাব করা হয়েছে, তা ‘সরাসরি কোরআনের সুরা নিসার পরিপস্থি’ বলে দাবি রিটকারী আইনজীবীর।
সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বহুবিবাহ নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব এসেছে। রিট আবেদনের বলা হয়, বহুবিবাহ ‘ইসলামী শরীয়তে অনুমোদিত’ একটি বিধান। ফলে কমিশনের ওই সুপারিশ সংবিধানের ৪১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ‘ধর্মচর্চার অধিকার ক্ষুণ্ন করে’।
রিট আবেদনে বলা হয়েছিল, ‘মাই বডি, মাই চয়েজ স্লোগানকে অন্ধভাবে সমর্থন দিয়ে শরিয়তের ওপর ভিত্তি না রেখে (ওই প্রতিবেদনে) নৈতিকতার সীমা অতিক্রম করার চেষ্টা করা হয়েছে।
যৌনকর্মীর পেশাকে (সেক্স ওয়ার্ক) বৈধ পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের প্রস্তাব ইসলামি মূল্যবোধ এবং সংবিধানের ২(ক) ও ২৬ অনুচ্ছেদের পরিপন্থি।
প্রতিবেদনে লিঙ্গ পরিচয় এবং ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ে যে ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে, তা ‘শরিয়তবিরোধী এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক’ বলে রিট আবেদনকারীর ভাষ্য।
রওশন আলী বলেছিলেন, ‘রিপোর্টের বিভিন্ন সুপারিশ ইসলামী শরিয়ত, আমাদের সংবিধান এবং দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের মূল্যবোধের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক। এ রিট আবেদন কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নয়। এটি দেশের ধর্মীয় মূল্যবোধ, সংবিধানিক ভারসাম্য এবং সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষার্থে গ্রহণ করা একটি আইনগত পদক্ষেপ।’
অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৪ সালের নভেম্বরে নারী বিষয়ক কমিশন গঠন করে। ডিসেম্বর থেকে কমিশন কাজ শুরু করে। কমিশনের মেয়াদ ছিল ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত। এই কমিশন নিয়ে বিভিন্ন সংগঠনের বিরোধিতার মধ্যেই নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের মেয়াদ ৩১ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
গত ১৯ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয় নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন। ৩১৮ পৃষ্ঠার এ প্রতিবেদনে ৪৩৩টি সুপারিশ করা হয়।
অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত নারী সংস্কার কমিশন গত ১৯ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টার কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর থেকেই ধর্মভিত্তিক দলগুলো এর বিরোধিতা করে আসছে।
দেশের ইসলামপন্থীদের অন্যতম প্ল্যাটফরম ‘হেফাজতে ইসলামে’র নারী সংস্কার কমিশন বাতিলের দাবি তুলেছে। জামায়াতে ইসলাম কমিশনের দেওয়া প্রতিবেদন ‘প্রত্যাখ্যান’ করেছে।
ইসলামি উত্তরাধিকার আইন ও ইসলামি পারিবারিক আইন নিয়ে যে পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ কমিশন দিয়েছে, হেফাজতের আপত্তি মূলত সেই জায়গায়।
আর জামায়াতে ইসলামী কিছু সুপারিশকে ‘গর্হিত’ আখ্যা দিয়ে বলেছে, এসব বিষয় সমাজকে ‘চরম অস্থিতিশীলতার’ দিকে ঠেলে দেবে। তরুণদের দল এনসিপিও অভিযোগ করে বলেছে, এই সংস্কার কমিশনের সুপারিশে সমাজের সব স্তরের নারীর অন্তর্ভুক্তি পুরোপুরি নিশ্চিত করা হয়নি।
কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলো হল–
• অভিন্ন পারিবারিক আইনের মাধ্যমে সব ধর্মের নারীদের জন্য বিয়ে, তালাক, উত্তরাধিকার ও ভরণপোষণে সমান অধিকার নিশ্চিত করা।
• অভিভাবক ও প্রতিপাল্য আইন, ১৮৯০ সংশোধন করে সন্তানের ওপর নারীর জন্য সমান অধিকার নিশ্চিত করা।
• পরবর্তী সময়ে নির্বাচিত সরকারের জন্য বিভিন্ন ধর্মের পারিবারিক আইন সংশোধন করা এবং মুসলিম ও অন্যান্য ধর্মীয় উত্তরাধিকার আইন সংশোধন করে নারীদের সম্পত্তিতে ৫০–৫০ ভাগ নিশ্চিত করা।
• সংসদীয় আসন বাড়িয়ে ৬০০ করে সেই আসন থেকে ৩০০ আসন নারীর জন্য সংরক্ষিত রেখে সরাসরি নির্বাচন।
• বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্যে জোরপূর্বক যৌন সম্পর্ককে ধর্ষণ হিসেবে ফৌজদারি আইনে অন্তর্ভুক্ত করা।
• যে কোনো উপস্থাপনায় অহেতুক নারীর প্রসঙ্গ টেনে নারীবিদ্বেষী বয়ান, বক্তব্য ও ছবি পরিবেশন থেকে বিরত থাকা।
• শ্রম আইন সংশোধন করে যৌনকর্মীদের মর্যাদা ও শ্রম অধিকার নিশ্চিত করা।