মা-তুমি অনন্ত, তুমি মহাসমুদ্র, তুমি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ

- আপডেট টাইম : ০৯:৩৯:০৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১১ মে ২০২৫
- / ৩ ১৫০০০.০ বার পাঠক
“মা”এ যে অলৌকিক শব্দ, যার মধ্যে লুকিয়ে আছে পৃথিবীর সব চেয়ে পবিত্র, নিঃস্বার্থ ও চিরন্তণ ভালোবাসা। এই একটি শব্দ উচ্চারণেই সন্তানের হৃদয় প্রশান্তিতে ভরে ওঠে। জীবনভর সংগ্রামের পর ক্লান্ত, বিধ্বস্ত মানুষটি যখন বলে, “মা” তখন যেন সমস্ত দুঃখ, হতাশা, যন্ত্রণাকে পাশ কাটিয়ে বাঁচার এক নতুন অনুপ্রেরণা খুঁজে পায়। মা শব্দটি যেন সেই অলৌকিক মহা ঔষধ, যা জীবনের হাজারো বিষাক্ত ব্যথা ভুলিয়ে দিতে জীবনের
একজন মা নিজের সন্তানের জন্য যা করেন, তার কোনো তুলনা নেই, কোনো পরিমাপ নেই। ১০ মাস গর্ভে ধারণ, অসংখ্য রাত্রির নিদ্রাহীন প্রহর, নিজের স্বাস্থ্যের অবহেলা, জীবনের স্বপ্নগুলোকে পেছনে ফেলে সন্তানের ভবিষ্যৎ গড়ার নিরন্তর চেষ্টা সব মিলিয়ে মা এক অবিনশ্বর প্রতিমূর্তি। তিনি সৃষ্টিকর্তার সবচেয়ে কাছের প্রতিনিধি, যিনি নিঃস্বার্থ ভালোবাসা দিতে জানেন, বিনিময়ে কিছু না চেয়েও সন্তানের এক ফোঁটা হাসিতে নিজের শত কষ্ট ভুলে যান।
এই পৃথিবীতে প্রতিটি সম্পর্কের মাঝে লুকিয়ে থাকে কোনো না কোনো স্বার্থ। কিন্তু মা-সন্তানের সম্পর্ক এমন এক আধ্যাত্মিক বন্ধন, যেখানে কেবল আত্মত্যাগ আর দয়া জড়িয়ে থাকে। সন্তান যখন অসুস্থ হয়ে পড়ে, তখন মায়ের উদ্বিগ্ন মুখ দেখে বোঝা যায় কতখানি হৃদয়ের রক্তক্ষরণ ঘটে তার ভেতরে। সন্তানের একটিবার মা ডাকে যে আলো জ্বলে ওঠে তার চোখে, তা অন্য কোনো আবেগের সাথে তুলনীয় নয়।
আমাদের সমাজে মায়ের অবদান অনেক সময় অবহেলিত হয়। কেবল একটি দিবসকে ‘মা দিবস’ হিসেবে পালনের মধ্যেই আমাদের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, যত্ন এসব হওয়া উচিত প্রতিটি দিনের, প্রতিটি মুহূর্তের। তার অমর ভালোবাসার প্রতিদান হয়তো দেওয়া সম্ভব নয়, কিন্তু আমরা তাকে সম্মান দিয়ে, পাশে থেকে, ভালোবেসে তার জীবনের শেষ সময়গুলো আনন্দময় করে তুলতে পারি।
মায়ের কষ্টগুলো সাধারণ চোখে ধরা পড়ে না। যখন সন্তানের জন্য ভোরের সূর্য ওঠার আগেই রান্নাঘরে প্রবেশ করেন, কিংবা গভীর রাতে সন্তানের জ্বরের পাশে বসে থাকেন তখন এসব ছোট ছোট দৃশ্যের মাঝে এক মহৎ আত্মত্যাগ গাঁথা থাকে। মা কখনও কাঁদেন না সামনে, তবুও তিনি ভেতরে কেঁদে ভেঙে পড়েন সন্তানের সামান্য দুঃখে। এই মধুর যন্ত্রণা, এই নিঃস্বার্থ ভালোবাসার ভাষা পৃথিবীর কোনো সাহিত্যও পুরোপুরি ধারণ করতে পারে না।
শিশু থেকে বৃদ্ধ প্রতিটি মানুষের জীবনে মায়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এমনকি মৃত্যুশয্যাতেও মানুষ মায়ের কথা ভাবে, তার মায়ায় বন্দী থাকে। মা মানে শুধুই একজন নারী নন; মা মানে একজন যোদ্ধা, শিক্ষক, অভিভাবক, পথপ্রদর্শক এবং সবচেয়ে বড় কথা, একজন নিঃস্বার্থ আশ্রয়দাত্রী।
শেষ কথায় বলা যায়, মা হচ্ছেন সেই বিশাল বৃক্ষ, যার ছায়ায় দাঁড়িয়ে আমরা শান্তি খুঁজি, জীবনের ঝড় থেকে বাঁচি। মা হচ্ছেন সেই নদী, যিনি ধুয়ে দেন আমাদের সব পাপ, ক্লান্তি, দুঃখ। মা হচ্ছেন জীবনের সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়, এক স্বর্গীয় অনুভব।
তাই আসুন, এই যান্ত্রিক সময়েও আমরা মায়ের ভালোবাসার উষ্ণতা টের পাই, তাকে ভালোবাসি, শ্রদ্ধা করি, সময় দিই। মাকে খুশি রাখার জন্য প্রতিদিন কিছু না কিছু করি। কারণ, মা একদিন থাকবেন না- তখন শুধুই ফাকা শূন্যতা, অনুশোচনা আর “ইশ! যদি আরো একটু সময় দিতাম…” এই বেদনায় আমাদের ঘিরে ধরবে।