আমতলীতে লকডাউনে পুলিশের লাঠির আঘাতে আহত ১৫
- আপডেট টাইম : ০৮:৫২:১১ পূর্বাহ্ণ, শুক্রবার, ১৬ এপ্রিল ২০২১
- / ৩৩৮ ৫০০০.০ বার পাঠক
পাথরঘাটা প্রতিনিধি
বরগুনার আমতলীতে লকডাউন চলাকালে বুধবার সকালে চৌরাস্তা মোড় এলাকায় মাছ ও কাঁচা বাজারের ব্যবসায়ীদের উপর পুলিশের অতর্কিত লাঠি চার্জে ১৫ ব্যবসায়ী আহত হয়েছে। আহতদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পুলিশের এ হামলার প্রতিবাদে ব্যবসায়ীরা সড়কে বিক্ষোভ করে।
জানাগেছে, প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকার ৭ দিনে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। এই সাধারণ ছুটির মধ্যে মাছ ও কাঁচা বাজার সকাল ৯ টা থেকে ৩ টা পর্যন্ত খোলা রাখার নির্দেশনা রয়েছে। ওই নির্দেশনা অনুসারে বুধবার আমতলী পৌর শহরের চৌরাস্তা মোড় এলাকায় মাছ ও কাঁচা বাজার ব্যবসায়ীরা দোকান খুলে বসে। সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে আমতলী থানার এসআই আব্দুল মান্নানের নেতৃত্বে দুই পুলিশ সদস্য গিয়ে বাজারের ব্যবসায়ীদের উপর অতর্কিত লাঠি চার্জ শুরু করেন। এ সময় বাজারে ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মানুষ হুড়োহুড়ি করে পুলিশ হামলা থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করে। এতে ওই পুলিশ আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ব্যবসায়ীদের উপর চড়াও হয় এমন দাবী ব্যবসায়ীদের।এক পর্যায় ব্যবসায়ীরা পুলিশের লাঠিচার্জ থেকে রক্ষা পেতে সড়কে বিক্ষোভ শুরু করে। পরে পুলিশ শান্ত হয়। এতে পুলিশের হামলায় অন্তত ১৫ জন ব্যবসায়ী আহত হয়েছে। আহত আব্দুল করিম, উজ্জল হাওলাদার, মজিবুর মোল্লা, কাওসার মিয়া, মোজাম্মেল, রাজা মিয়া, রুবেল হাওলাদার, রাজিব, জাকারিয়া ও বাতেনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
আমতলী থানার এস আই আব্দুল মান্নান বলেন, ব্যবসায়ীদের ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে বলে তিনি দাবী করেন। পরে পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে ব্যবসায়ীরা শান্ত হয়। ঘটনার ঘন্টাখানের পরে বেলা ১১ টার দিকে ইউএনও মোঃ আসাদুজ্জামান ঘটনাস্থলে গিয়ে ব্যবসায়ীদের শান্ত করেন। পরে তিনি সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ব্যবসা করতে তাদের নির্দেশ দেন।
মুদি মনোহরী ব্যবসায়ী আহত আব্দুল করিম বলেন, সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে দোকান খোলা মাত্রই এসআই মান্নান এসে কিছু না বলেই মারধর শুরু করে। তিনি আরো বলেন, পুলিশ আমার ১০ ব্যাগ মুড়ি রাস্তায় ফেলে দিয়েছে।
কাঁচা পণ্য ব্যবসায়ী আহত বৃদ্ধ মোঃ মজিবুর মোল্লা বলেন, কিছু না বলেই পুলিশ এসে আমাকে মারধর শুরু করেছে। আমি দিশেহারা হয়ে ইউএনও স্যারের দোহাই দিয়েছি কিন্তু তাতেও রক্ষা পায়নি। আমাকে লাঠি দিয়ে অন্তত ১০ টি আঘাত করেছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।
কাঁচা পণ্য ব্যবসায়ী উজ্জল হাওলাদার বলেন, পুলিশের এস আই মান্নান ও দুই পুলিশ সদস্য এসে আমাকে বেধড়ক মারধর করেছে। তিনি আরো বলেন, আমার ৭ হাজার টাকার ফুটি (বাঙ্গি) সড়কে ফেলে নষ্ট করে দিয়েছে। ওই ফুটি আমার লোকসানে বিক্রি করতে হচ্ছে।
মারধরের শিকার মৎস্য ব্যবসায়ী রাজিব, কাওসার ও জাকারিয়া বলেন, পুলিশের এস আই মান্নান ও মহিবুল এসে আমাদের উপর বিনা কারণে অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। আমরা এ ঘটনার বিচার দাবী করছি।
কাঁচার বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোঃ মাহবুবুর রহমান হিমু গাজী ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নিয়ম মেনেই কাঁচা ও মাছ বাজার ব্যবসায়ীরা দোকান খুলেছে। কিন্তু পুলিশের এসআই আব্দুল মান্নান ও তার সহযোগীরা আমার ব্যবসায়ীদের উপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। এতে আমার অনেক ব্যবসায়ী আহত হয়েছে। আমি এ ঘটনার বিচার দাবী করছি।
আমতলী থানার ওসি মো. শাহ আলম হাওলাদার বলেন, লকডাউনে দোকান খোলা নিয়ে ব্যবসায়ীদের সাথে একটু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল তা সমাধান হয়েছে।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল গিয়ে ব্যবসায়ীদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সরকারী নির্দেশনা মেনে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। তিনি আরো বলেন, পুলিশের সাথে অপ্রীতিকর ঘটনায় উভয় পক্ষকে শান্ত করা হয়েছে।