ঢাকা ০৬:০২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
ঠাকুরগাঁও বাস মালিক সমিতির নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা তুলসীর বক্তব্যে সরকারের দেওয়া প্রতিবাদ শেয়ার করল ঢাকাস্থ ফরাসি দূতাবাস এবার ঈদুল ফিতরে সরকারি ছুটি ৫ দিন সুন্দরবনে ফের বেপরোয়া হয়ে উঠছে বনদস্যুরা গুম তদন্ত কমিশনের মেয়াদ বাড়ল ৩০ জুন পর্যন্ত ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনার পর ইসরায়েলের মুহুর্মুহু হামলা গাজায় লাফিয়ে বাড়ছে নিহতের সংখ্যা হরিপুর ইউনিয়ন বিএনপির উদ্যোগে ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত দুর্নীতির সীমা পেরিয়ে প্রায় ১০ থেকে ১২ বছর ফটিকছড়িতে অবৈধভাবে মাটি পাচার,বালু উত্তোলন ,পরিবেশ বিপন্ন দেখার মত কেউ নেই।। মদনায় ওয়ার্ড বিএনপির আয়োজনে দোয়া ও ইফতার মাহফিল সম্পন্ন বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে ছাত্র হত্যা, আহত ও অপহরণ মামলার আসামির টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবে প্রকাশ্যে সংবাদ সম্মেলন আগামীকাল

সুন্দরবনে ফের বেপরোয়া হয়ে উঠছে বনদস্যুরা

খুলনা বিভাগীয় অফিস থেকে
  • আপডেট টাইম : ০৬:০৬:০৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫
  • / ১ ৫০০০.০ বার পাঠক

পূর্ব ও পশ্চিম সুন্দরবনে আবারও কয়েকটি বনদস্যু বাহিনী বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এসব বাহিনীর সদস্যরা মাঝেমধ্যে ফ্রি স্টাইলে হামলা চালিয়ে বনজীবীদের জিম্মি করে লাখ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করে চলেছে। ফলে এ দস্যু বাহিনীর অত্যাচারে জেলে বাওয়ালিরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। এমনকি বাহিনীর টোকেন ছাড়া জেলেদের মৎস্য ও কাঁকড়া আহরণ অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী জেলে বাওয়ালি সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবনে প্রশাসনের একের পর এক অভিযানে প্রায় সব বনদস্যু বাহিনীর সদস্য ২০১৮ সালে অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করে। ফলে বেশ কয়েক বছর সুন্দরবন দস্যুমুক্ত থাকলেও সম্প্রতি আবারও পূর্ব ও পশ্চিম সুন্দরবনে পৃথক কয়েকটি বনদস্যু বাহিনী নতুন করে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত এবং জনবল নিয়ে পুরোনো পেশায় ফিরে এসে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

এদের মধ্যে শরীফ বাহিনী, মজনু বাহিনী, রবিউল বাহিনী, জাহাঙ্গীর বাহিনী, ভাই ভাই বাহিনী ও মামা-ভাগনে বাহিনী উল্লেখযোগ্য। এসব দস্যু বাহিনীতে ১০/১২ জন থেকে শুরু করে ২৬/২৭ জন পর্যন্ত সদস্য রয়েছে। এদের কাছে কাঁটারাইফেল, দেশীয় বন্দুক, পাইপগান ও দেশীয় অস্ত্র রয়েছে। এ বাহিনীর সদস্যরা পৃথক পৃথকভাবে পূর্ব ও পশ্চিম সুন্দরবনের একেকটি এলাকা নিয়ন্ত্রণে রেখে প্রায়ই জেলে নৌকায় অতর্কিত হামলা চালিয়ে তাদের জাল, নৌকা, ডিজেল, চাল, ডাল ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় মালামাল লুটে নিয়ে মুক্তিপণের দাবিতে অপহরণ করছে বলে জানা গেছে।

পশ্চিম বন বিভাগের খুলনা রেঞ্জ এলাকায় এসব বাহিনীর সদস্যরা অধিকাংশ সময়ে বিচারণ করে থাকে। তবে বাহিনী ছয়টির মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেপরোয়া হয়েছে শরীফ বাহিনী। আর এ দস্যু বাহিনীকে মুক্তিপণ না দিয়ে কোনো জেলে বাড়ি ফিরতে পারছে না বলে তাদের পরিবারের অভিযোগ। এমনকি ঐ দস্যু বাহিনীর টোকেন ছাড়া বনের ঐ সব এলাকায় জেলেদের মৎস্য ও কাঁকড়া আহরণ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। টোকেনবিহীন জেলেদের অপহরণ করে জিম্মি রেখে মুক্তিপণ আদায় করছে বলে জানা গেছে।

ইতিমধ্যে কালাবগিসহ বিভিন্ন এলাকার ২০ থেকে ২২ জন জেলে অপহরণ করে। অপহৃত জেলেদের মধ্যে ১৬ থেকে ১৭ জন জেলে এসব বাহিনীর নির্ধারিত ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিয়ে বাড়ি ফিরেছে বলে জানা গেছে। এখনো শরীফ বাহিনীর কাছে চার থেকে পাঁচ জন জেলে জিম্মি রয়েছে।

এদের মধ্যে দুই জনের মুক্তিপণের ৫০ হাজার টাকা জমা দেওয়া হয়েছে। দুই-এক দিনের মধ্যে ঐ দুই জন ফিরবে বলে আশা করা হচ্ছে। আর এ বাহিনীর খাদ্য-বাজারসহ প্রয়োজনীয় মালামাল সরবরাহ করছে কালাবণি এলাকার চার থেকে পাঁচ জন কথিত জেলে ব্যবসায়ী। এসব বাহিনীর বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে উপকূলীয় অঞ্চলের সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল হাজারো জেলে ও তাদের পরিবারগুলো। আপনজন হারানোর ভয়ে ভুক্তভোগীরা কাউকে কিছু বলতে সাহস পাচ্ছেন না। জেলেদের এই টাকা লেনদেন হয়ে থাকে সুন্দরবনে মৎস্য ব্যবসায়ী ও ডিপো মালিকদের মাধ্যমে। চলতি গোলপাতা আহরণ মৌসুমেও নৌকাপ্রতি ৫ হাজার টাকা করে একাধিক বাহিনীকে চাঁদা দিতে হচ্ছে। আর এই টাকা আদায় করা হচ্ছে বহর মালিকদের মাধ্যমে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক জেলে জানান, এসব বনদস্যু বাহিনীর টোকেন ছাড়া মাছ ও কাঁকড়া আহরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। মাছ ও কাঁকড়া আহরণ করা জলেদের ‘আটনের’ নৌকাপ্রতি ১০ থেকে ১২ হাজার আর ‘দোনদড়ি’ নৌকাপ্রতি ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার টোকেন নিতে হচ্ছে। এছাড়া তাদের সঙ্গে দেখা হলে ‘ডিউটি’র ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা দিতে হয়। টোকেন এবং ডিউটির টাকা না দিলে দস্যুরা জেলেদের অপহরণ করে।

এ ব্যাপারে পশ্চিম সুন্দরবনের খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘ভুক্তভোগী এমন কোনো জেলে বাওয়ালি এ ব্যাপারে আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ করেনি। তবে বিভিন্ন জনের মাধ্যমে বনদস্যুদের বেপরোয়া কর্মকাণ্ডের কথা শুনেছি। আর এ বিষয়টি আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।”

আরো খবর.......

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

সুন্দরবনে ফের বেপরোয়া হয়ে উঠছে বনদস্যুরা

আপডেট টাইম : ০৬:০৬:০৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫

পূর্ব ও পশ্চিম সুন্দরবনে আবারও কয়েকটি বনদস্যু বাহিনী বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এসব বাহিনীর সদস্যরা মাঝেমধ্যে ফ্রি স্টাইলে হামলা চালিয়ে বনজীবীদের জিম্মি করে লাখ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করে চলেছে। ফলে এ দস্যু বাহিনীর অত্যাচারে জেলে বাওয়ালিরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। এমনকি বাহিনীর টোকেন ছাড়া জেলেদের মৎস্য ও কাঁকড়া আহরণ অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী জেলে বাওয়ালি সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবনে প্রশাসনের একের পর এক অভিযানে প্রায় সব বনদস্যু বাহিনীর সদস্য ২০১৮ সালে অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করে। ফলে বেশ কয়েক বছর সুন্দরবন দস্যুমুক্ত থাকলেও সম্প্রতি আবারও পূর্ব ও পশ্চিম সুন্দরবনে পৃথক কয়েকটি বনদস্যু বাহিনী নতুন করে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত এবং জনবল নিয়ে পুরোনো পেশায় ফিরে এসে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

এদের মধ্যে শরীফ বাহিনী, মজনু বাহিনী, রবিউল বাহিনী, জাহাঙ্গীর বাহিনী, ভাই ভাই বাহিনী ও মামা-ভাগনে বাহিনী উল্লেখযোগ্য। এসব দস্যু বাহিনীতে ১০/১২ জন থেকে শুরু করে ২৬/২৭ জন পর্যন্ত সদস্য রয়েছে। এদের কাছে কাঁটারাইফেল, দেশীয় বন্দুক, পাইপগান ও দেশীয় অস্ত্র রয়েছে। এ বাহিনীর সদস্যরা পৃথক পৃথকভাবে পূর্ব ও পশ্চিম সুন্দরবনের একেকটি এলাকা নিয়ন্ত্রণে রেখে প্রায়ই জেলে নৌকায় অতর্কিত হামলা চালিয়ে তাদের জাল, নৌকা, ডিজেল, চাল, ডাল ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় মালামাল লুটে নিয়ে মুক্তিপণের দাবিতে অপহরণ করছে বলে জানা গেছে।

পশ্চিম বন বিভাগের খুলনা রেঞ্জ এলাকায় এসব বাহিনীর সদস্যরা অধিকাংশ সময়ে বিচারণ করে থাকে। তবে বাহিনী ছয়টির মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেপরোয়া হয়েছে শরীফ বাহিনী। আর এ দস্যু বাহিনীকে মুক্তিপণ না দিয়ে কোনো জেলে বাড়ি ফিরতে পারছে না বলে তাদের পরিবারের অভিযোগ। এমনকি ঐ দস্যু বাহিনীর টোকেন ছাড়া বনের ঐ সব এলাকায় জেলেদের মৎস্য ও কাঁকড়া আহরণ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। টোকেনবিহীন জেলেদের অপহরণ করে জিম্মি রেখে মুক্তিপণ আদায় করছে বলে জানা গেছে।

ইতিমধ্যে কালাবগিসহ বিভিন্ন এলাকার ২০ থেকে ২২ জন জেলে অপহরণ করে। অপহৃত জেলেদের মধ্যে ১৬ থেকে ১৭ জন জেলে এসব বাহিনীর নির্ধারিত ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিয়ে বাড়ি ফিরেছে বলে জানা গেছে। এখনো শরীফ বাহিনীর কাছে চার থেকে পাঁচ জন জেলে জিম্মি রয়েছে।

এদের মধ্যে দুই জনের মুক্তিপণের ৫০ হাজার টাকা জমা দেওয়া হয়েছে। দুই-এক দিনের মধ্যে ঐ দুই জন ফিরবে বলে আশা করা হচ্ছে। আর এ বাহিনীর খাদ্য-বাজারসহ প্রয়োজনীয় মালামাল সরবরাহ করছে কালাবণি এলাকার চার থেকে পাঁচ জন কথিত জেলে ব্যবসায়ী। এসব বাহিনীর বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে উপকূলীয় অঞ্চলের সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল হাজারো জেলে ও তাদের পরিবারগুলো। আপনজন হারানোর ভয়ে ভুক্তভোগীরা কাউকে কিছু বলতে সাহস পাচ্ছেন না। জেলেদের এই টাকা লেনদেন হয়ে থাকে সুন্দরবনে মৎস্য ব্যবসায়ী ও ডিপো মালিকদের মাধ্যমে। চলতি গোলপাতা আহরণ মৌসুমেও নৌকাপ্রতি ৫ হাজার টাকা করে একাধিক বাহিনীকে চাঁদা দিতে হচ্ছে। আর এই টাকা আদায় করা হচ্ছে বহর মালিকদের মাধ্যমে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক জেলে জানান, এসব বনদস্যু বাহিনীর টোকেন ছাড়া মাছ ও কাঁকড়া আহরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। মাছ ও কাঁকড়া আহরণ করা জলেদের ‘আটনের’ নৌকাপ্রতি ১০ থেকে ১২ হাজার আর ‘দোনদড়ি’ নৌকাপ্রতি ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার টোকেন নিতে হচ্ছে। এছাড়া তাদের সঙ্গে দেখা হলে ‘ডিউটি’র ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা দিতে হয়। টোকেন এবং ডিউটির টাকা না দিলে দস্যুরা জেলেদের অপহরণ করে।

এ ব্যাপারে পশ্চিম সুন্দরবনের খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘ভুক্তভোগী এমন কোনো জেলে বাওয়ালি এ ব্যাপারে আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ করেনি। তবে বিভিন্ন জনের মাধ্যমে বনদস্যুদের বেপরোয়া কর্মকাণ্ডের কথা শুনেছি। আর এ বিষয়টি আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।”