সাভারে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে একাধিক মামলার আসামী সন্ত্রাসী ইমন

- আপডেট টাইম : ০৪:৫০:৩৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / ৫ ৫০০০.০ বার পাঠক
সাভারে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে একাধিক মামলার আসামী একরামুল হুদা খান ওরফে ইমন(৪৩)। সন্ত্রাসী ইমন ঢাকার ধামরাইয়ের বালিয়া ইউনিয়নের নয়াবাড়ি এলাকার মৃত মনিরুল ইসলাম খানের ছেলে। তবে বর্তমানে এই সন্ত্রাসী সাভার পৌরসভার ব্যাংক কলোনী এলাকায় বসবাস করেন।
জানা যায়, গ্রামের বাড়ি ধারমরাইয়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলে হলেও তার বেড়ে উঠা সাভার পৌর এলাকায়। ছোটবেলা থেকেই তার বসবাস পৌরসভার তালবাগ ও ব্যাংক কলোনীতে। আর সেই সুবাদে প্রায় দেড় যুগ আগে পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় তার আধিপত্য বিস্তার করতে শুরু করেন তিনি। আর কয়েক বছরেই এই এলাকায় গড়ে তুলেন অপারধের সাম্রাজ্য। তার বিরুদ্ধে আশুলিয়া ও সাভার একাধিক মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।
স্থানীয়রা জানান, সন্ত্রাসী ইমন সাভারে সাবেক সদস্যদের ক্যাডার হিসেবে পরিচিত। তার অপরাধ কার্যক্রম শুরু হয় মুরাদ জং এর শাসনামলে। ২০০৮ সালে মুরাদ জং ক্ষমতায় আসার পর সাভারের বিভিন্ন এলাকায় শুরু করেন আধিপত্য বিস্তার।
সাভার বাসস্ট্যান্ড, ব্যাংক কলোনী, তালবাগ, থানারোড, গেন্ডা ও আনন্দপুরসহ পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে তুলেন অপরাধের সাম্রাজ্য। তার নিয়ন্ত্রণে এসব এলাকায় চলে দখলবাজি, টেন্ডারবাজি, হামলা ও মাদকের বিভিন্ন সিন্ডিকেট। এসব এলাকার বিভিন্ন স্থানে তার উপস্থিতিতেই বসে মাদক সেবনের আড্ডা। এখনো তার এসব অবৈধ কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে জানায় স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা সূত্রে জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মুরাদ জং প্রার্থী হলে ইমন সাবেক এই সাংসদের হয়ে আবারো ক্যাডার হিসেবে নির্বাচনী মাঠে বিভিন্ন প্রকার কার্যক্রম চালায় এবং অবৈধভাবে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেন। এছাড়াও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী ক্যাডার হিসেবে নিরীহ ছাত্র-জনতার উপর হামলা চালিয়েছে। এঘটনায় তার বিরুদ্ধে আশুলিয়া ও সাভার থানায় পৃথক দুটি হত্যাচেষ্টা মামলা হয়েছে।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, সন্ত্রাসী ইমনের বিরুদ্ধে আশুলিয়া ও সাভার থানায় মোট চারটি পৃথক মামলা রয়েছে। এরমধ্যে আশুলিয়া ও সাভার থানায় পৃথক দুটি ছাত্র হত্যাচেষ্টা মামলা রয়েছে। আশুলিয়ার থানার মামলায় (মামলা নং-৪২/৬০৫) ১০ নাম্বার ও সাভার থানার মামলায় (মামলা নং-৩৫/৫২৭) ৫২ নাম্বার আসামী হিসেবে তার নাম উল্লেখ রয়েছে। এছাড়াও ২০১৬ সালে তার বিরুদ্ধে সাভার থানায় একটি মাদক মামলা (মামলা নং-৫/২৩৩) ও ২০২৩ সালের ২৬শে নভেম্বর একটি ধর্ষন মামলার (মামলা নং-৫৩) তথ্য পাওয়া গেছে এবং প্রায় এক যুগে আগে একটি হত্যা মামলার অভিযোগও পাওয়া যায় তার রিরুদ্ধে।
একাধিক মামলার আসামী ইমন প্রকাশ্যে সাভারে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে এখনো বিভিন্ন অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে এমনটাই দাবি স্থানীয়দের। এতে জনমনে সংশয় তৈরি হয়েছে এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাভার ব্যাংক কলোনীর কয়েকজন বাসিন্দা জানান, এই ইমন ধামরাই থেকে সাভার আসে অনেক বছর আগে। এরপর থেকে আস্তে আস্তে সে এই এলাকায় বিভিন্ন প্রকার অপরাধমূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। দিন দিন তার অপরাধের মাত্রা বেড়েই চলছে। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকা সত্ত্বেও এই চিহ্নিত আসামী কেন গ্রেপ্তার হচ্ছে না, তা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে!
ধর্ষন মামলার বাদী এক নারী জানান, আমার ছেলে ব্যাংক কলোনী একটি স্কুলে পড়াশোনা করার সুবাদে ইমনের সাথে আমার পরিচয় হয়। পরে বিভিন্ন কৌশলে আমার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। এরপর থেকেই সে বিভিন্ন সময় আমার বাসায় যাতায়াত করতো। এই সুযোগে দীর্ঘদিন সে আমাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করেছেন। এক পর্যায়ে আমি তাকে বিয়ে করা জন্য চাপ দিলে তা অস্বীকার করে এবং আমাকে বিভিন্ন প্রকার হুমকি দেয়। এতে বাধ্য হয়ে আমি আইনের আশ্রয় নেই এবং তার বিরুদ্ধে প্রায় দেড় বছর আগে সাভার থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করি। মামলার পর পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায়। পরে জামিনে বেড়িয়ে এসে আমাকে মামলা তুলে নিতে বিভিন্ন প্রকার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। এমনকি তার কারণে বহু নারীর সংসার ভেঙ্গে গেছে বলে দাবি এই নারীর।
এব্যাপারে সাভারের বৈষম্যেবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা আসাদুল ইসলাম মকুল বলেন, এসব আসামীরা এখনো কিভাবে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে তা অবাক করার মত বিষয়। আমরা চাই দ্রুত এদেরকে আইনের আওতায় আনা হোক। তা না হলে এসবের দায়ভার প্রশাসনকেই নিতে হবে।
ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) শাহীনুর কবির বলেন, সব আসামীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার অভিযান চলমান রয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা অনেক আসামিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি এবং বাকি আসামীদেরও দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।