মহিমান্বিত মধ্য-শাবানের রজনি- সম্পাদকীয়

- আপডেট টাইম : ০৭:১৬:১২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / ৫ ৫০০০.০ বার পাঠক
বিগত পবিত্র শবেবরাত। ফারসি শব্দ ‘শব’ অর্থ রাত্রি। আর বরাত অর্থ মুক্তি; অর্থাৎ শবেবরাত অর্থ মুক্তির রজনি। আরবিতে ইহাকে বলা হয় ‘লাইলাতুল বারাআত’। ইহার অর্থও একই, অর্থাৎ মুক্তির রাত্রি। হিজরি সালের অষ্টম মাস শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত্রিকে শবেবরাত বলা হয়। পবিত্র কুরআন শরিফে লাইলাতুল কদরের কথা সুস্পষ্ট বলা হইয়াছে। এমনকি সুরাতুল কদর নামে এই সম্পর্কিত একটি স্বতন্ত্র সুরাও রহিয়াছে; কিন্তু আল কুরআনে লাইলাতুল বারাআতের কথা বলা হয় নাই। ইহার প্রসঙ্গটি আসিয়াছে আসলে হাদিস শরিফে। হাদিসের পরিভাষায় ইহার নাম ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’, তথা মধ্য-শাবানের রজনি। এই রাত্রির তাৎপর্য সম্পর্কে হাদিসে বলা হইলেও তাহাকে উপেক্ষা করিবার কোনো কারণ নাই। মূলত মহিমান্বিত রাত্রিসমূহের অন্যতম লাইলাতুল বারাআত।
ইসলামি বিশ্বাস অনুযায়ী, এই রাত্রিতে মহান আল্লাহ তাহার বান্দাদের ক্ষমা করেন, দোয়া কবুল করেন এবং অনুগ্রহ প্রদান করেন। এই জন্য বিশেষ এই রাত্রিটি মুসলিম বিশ্বে ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে পালন করা হয়। এই রাত্রি সম্পর্কে একটি সহিহ হাদিস পাওয়া যায় সুনানে ইবনে মাজাহ্-এর ইকামাতুস্ সালাত অধ্যায় হইতে। হজরত আবু মুসা আশয়ারি (রা.) হইতে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (স.) বলিয়াছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ-তায়ালা মধ্য-শাবানের রাত্রিতে সমস্ত সৃষ্টির দিকে বিশেষ নজর প্রদান করেন এবং মুশরিক ও হিংসুক ব্যতীত সবাইকে ক্ষমা করিয়া দেন। কোনো কোনো হাদিসে ব্যভিচারিণী ও নিরপরাধ ব্যক্তিকে হত্যাকারীর কথাও বলা হইয়াছে, যাহারা ক্ষমার অযোগ্য। অন্যদিকে হজরত আয়েশা (রা.) হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবি করিম (স.) এই রাত্রিতে মদিনার কবরস্থান ‘জান্নাতুল বাকি’তে আসিয়া মৃতদের জন্য দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা করিতেন। তিনি আরো বলেন, নবি (স.) তাহাকে বলিয়াছেন, এই রাত্রিতে বনি কালবের ভেড়া-বকরির পশমের পরিমাণের চাইতেও অধিকসংখ্যক গুনাহগারকে আল্লাহ্-তায়ালা ক্ষমা করিয়া দেন (তিরমিজি শরিফ: ৭৩৯)।
ইহাতে বোঝা গেল, শবেবরাতের রাত্রিতে আল্লাহর নিকট মাগফিরাত কামনা করাটাই বড় আমল। এই জন্য এই রাত্রিতে আমাদের উচিত, বেশি বেশি নফল নামাজ আদায়, ইস্তিগফার, তাসবিহ-তাহলিল, কুরআন তেলাওয়াত, জিকির-আজকার, কবর জিয়ারত ইত্যাদির মাধ্যমে মহান আল্লাহর ক্ষমা লাভ ও অন্যের জন্য অনুরূপ দোয়া করিবার চেষ্টা করা। এই জন্য নির্দিষ্ট সুরা বা নিয়ম-পদ্ধতিতে নামাজ আদায় কিংবা জিকির-আজকার প্রযোজ্য নহে। আবার শুধু বিশেষ রাত্রিতে নহে, আমাদের উচিত, বৎসরের প্রতি রাত্রির শেষাংশের বরকতময় সময়ে তাহাজ্জুদসহ অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগি করিবার জন্য উদ্গ্রীব হওয়া। ইহা ছাড়া শবেবরাতের সহিত ভাগ্য পরিবর্তনের কোনো সম্পর্ক নাই।
এইখানে উল্লেখ্য যে, শবেবরাতের ইবাদত ও আমল লইয়া আমাদের সমাজে কিছু প্রচলিত ভুলবিভ্রান্তি রহিয়াছে। ইসলাম মধ্যপন্থাকে শ্রেয় মনে করে। তাই কোনো কিছুর ব্যাপারে বাড়াবাড়ি কিংবা ছাড়াছাড়ির কোনো অবকাশ নাই। এই রাত্রিতে করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়গুলি সম্পর্কে আমাদের স্পষ্ট ধারণা থাকা আবশ্যক; যেমন-রাত্রি জাগরণ করিতে গিয়া যেন ফজরের নামাজ তরক না হয়। ইহা ছাড়া পরিবার-পরিজন, আত্মীয়স্বজন, পাড়াপ্রতিবেশী-সকলের জন্য বেশি বেশি দোয়া করা উত্তম। অন্যদিকে অগ্রহণযোগ্য ও বিদআতি কাজকর্ম হইতে বিরত থাকা প্রয়োজন; যেমন-পটকা ফোটানো, তারাবাতি জ্বালানো, আতশবাজি করা ও আলোকসজ্জাসহ উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি করা ইত্যাদি। এই ধরনের কাজ ইসলামের মূল আদর্শের পরিপন্থি। এই রাত্রি উপলক্ষ্যে হালুয়া-রুটিসহ বিশেষ খাবারদাবার রান্না করাও অপরিহার্য নহে। আবার ইহা উপলক্ষ্যে মসজিদে বা পাড়ায়-পাড়ায় হইচই বা শোরগোল করাও অনুচিত। দলবদ্ধভাবে কবর জিয়ারতের কথাও কোথাও বলা হয় নাই। যেহেতু আজ ইহার পাশাপাশি পহেলা ফাল্গুন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবসও পালন করা হইবে, তাই এই ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদা সতর্ক থাকিতে হইবে। যাহাতে এই ধরনের কোনো অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে কেহ অশ্লীলতা বা উচ্ছৃঙ্খলতার পরিচয় দিতে না পারে।